অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং দেওয়ার নিয়ম

১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার এই দেশে না আছে পর্যাপ্ত যানবাহন, না আছে পর্যাপ্ত মহাসড়ক। এতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে আমাদেরকে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

দূরে কোথাও ভ্রমণে যেতে এ দেশের মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা ট্রেনকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। কিন্তু সবার তো ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, ট্রেন-ই তাদের শেষ ভরসা।

আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো অনলাইনে কিভাবে ট্রেনের টিকিট বুকিং দেওয়া যায় সে সম্বন্ধে। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিট বুকিং এর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের যাত্রী হয়রানির ঘটনা আমরা সবাই-ই জানি।
একারনে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন ও কার্যকর করতে চেষ্টা করেছে। আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন নতুন নিয়মে অনলাইনে কিভাবে ট্রেনের টিকিট বুকিং দিতে হয়।

কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং দিতে হয়?

এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমরা দুইটা অংশে ভাগ করবো। প্রথম অংশে জানবো, কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং দেওয়ার জন্য একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। আর দ্বিতীয় অংশে জানবো, কিভাবে নতুন নিয়মে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং দিতে হয়।

১. একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করা

একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা খুব জটিল কিছু নয়। মাত্র কয়েক মিনিটে একটি একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। এজন্য আপনার সাথে অবশ্যই নিজের এনআইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে।

এছাড়া একটি সচল ফোন নাম্বার ও ইমেইল অ্যাড্রেস-ও প্রয়োজন হবে। একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ-১ঃ আপনার ফোন অথবা কম্পিউটারে যেকোনো ব্রাউজার থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের e-Ticket ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখান থেকে মেনুবারে ক্লিক করলে Register নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন, সেটাতে ক্লিক করুন। অথবা এখানে ক্লিক করে সরাসরি রেজিষ্ট্রেশন পেইজে যেতে পারেন।

ধাপ-২ঃ রেজিস্ট্রেশন পেইজে গেলে কয়েকটি বক্সসহ একটি ফর্ম দেখতে পারবেন। সেখানে আপনার নাম, ইমেইল অ্যাড্রেস, মোবাইল নাম্বার, পাসওয়ার্ড, আইডেন্টিফিকেশন টাইপ, আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার এবং সর্বশেষ ঠিকানা লিখতে হবে। সকল তথ্য অবশ্যই ইংরেজিতে লিখতে হবে।

আপনি যদি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করেন তাহলে Identification Type-এ NID অন্যথায় Birth Certificate নির্বাচন করবেন।

ধাপ-৩ঃ সকল তথ্য পূরণ করা হয়ে গেলে আরেকবার মিলিয়ে দেখবেন সবকিছু সঠিক আছে কিনা। সঠিক থাকলে Sign Up লেখা বাটনে ক্লিক করবেন।

এ পর্যায়ে আপনার ফোনে একটি মেসেজ আসবে এবং সেখানে একটি OTP থাকবে। এই OTP কোডটি বক্সে লিখে Continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।

ব্যাস! আপনার একাউন্টটি সচল হয়ে গেছে। এবার আপনার একাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবসাইটে লগিন হয়ে যাবে, তা না হলে কিছুক্ষণ আগে লেখা ফোন নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করতে পারবেন।

২. অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং দেওয়া

আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো কিভাবে নতুন নিয়মে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং দিতে হয়। এজন্য উপরে উল্লিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে অবশ্যই একটি অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনলাইন ট্রেনের টিকিট বুকিং দিতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ-১ঃ আপনি ওয়েবসাইটের প্রোফাইল পেইজে থাকলে হোম পেইজে ফিরে যান অথবা এই লিংকে ক্লিক করে টিকিট বুকিং দেওয়ার পেইজে যান।

ধাপ-২ঃ প্রথমেই আপনাকে ট্রেন খুজে বের করতে হবে। এজন্য From বক্সে আপনি যেখান থেকে ট্রেনে উঠতে চান সেই জেলার নাম লিখুন। To বক্সে আপনি যে জেলায় যেতে চান তার নাম লিখুন। এরপর ভ্রমণের তারিখ ও সিটের ক্লাস সিলেক্ট করুন সিলেক্ট করুন।

এরপর Search Train বাটনে ক্লিক করলে আপনার ভ্রমণের তারিখে যে ট্রেনগুলো থাকলে সেগুলোর নাম দেখতে পাবেন।

ধাপ-৩ঃ এ পর্যায়ে আপনার ভ্রমণের তারিখ ও সময় অনুযায়ী পছন্দের ট্রেন ও সেই ট্রেনের সিট সিলেক্ট করতে হবে।

এজন্য পছন্দের ট্রেনের নামের পাশে Book Now বাটনে ক্লিক করলেই খালি থাকা সিটগুলো (হালকা সবুজ রঙের) দেখতে পাবেন। সেখানে থেকে প্রয়োজনীয় সিট সিলেক্ট করে নিচের দিকে থাকা Continue Purchase বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।

ধাপ-৪ঃ এবার যাত্রীর প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। যাত্রীর নাম, যাত্রীর ধরন (বাচ্চা অথবা প্রাপ্তবয়স্ক) লিখতে হবে। এরপর কিছুটা নিচের দিকে স্ক্রল করলে পেমেন্ট অপশন দেখতে পাবেন।

এখানে দুই ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং (bKash, Nagad, Rocket) ও এটিএম কার্ড (Visa, Mastercard, DBBL Nexus)। আপনার পছন্দের পেমেন্ট অপশনটি সিলেক করে Proceed To Payment বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ-৩ঃ এরপর সহজের পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেমে রিডাইরেক্ট করা হবে। সেখানে আপনার সিলেক্ট করা পেমেন্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং হয়ে যাবে।

সফলভালে টিকিট বুকিং হয়ে গেলে আপনার প্রদত্ত ইমেইল অ্যাড্রেসে একটি মেইল আসবে। সেখানে ই-টিকেট এর পিডিএফ দেখতে পাবেন। সেটা ডাউনলোড করে A4 সাইজ কাগজে প্রিন্ট করে ভ্রমণের তারিখে সাথে নিয়ে যেতে হবে।

ইমেইল বক্সে কোনো মেইল না পেলে Spam ফোল্ডার চেক করুন, সেখানে থাকতে পারে। অথবা রেলওয়ের ওয়েবসাইটে লগিন করে Purchase History-তে গেলেও সেখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

ইতিকথা

এই ছিলো অনলাইনে নতুন নিয়মে ট্রেনের টিকিট বুকিং দেওয়ার সম্পূর্ণ সঠিক নিয়ম। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে পুরো বিষয়টা বুঝতে পারবেন। এছাড়া অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ক্রয় সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *