লেথক: অমৃতা বনিক, eduicon.com ব্লগ এর সৌজন্যে
আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা । কম খরচে পড়ালেখা, শিক্ষাজীবন শেষে সহজেই পছন্দনীয় পেশায় যোগদান, নাগরিক সুবিধার কারণে অন্যান্য দেশের ন্যয় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছেও বিদেশে উচ্চ শিক্ষার পছন্দনীয় দেশের একটি কানাডা।
ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টরিয়া, ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো ও কুইনস ইউনিভার্সিটির মত বিশ্বের সব নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার একটি বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। স্বনামধন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও ক্যারিয়ার গঠনে যা বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।
কানাডায় শিক্ষা ব্যবস্থায় মূলত চার ধরনের ডিগ্রি দেওয়া হয়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডক্টরেট ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি। এছাড়াও এখানে একজন শিক্ষার্থী ফুলটাইম অথবা পার্টটাইম পড়াশোনা করতে পারে। শিক্ষার পাশাপাশি এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কো-অপারেটিভ অ্যাডুকেশন, ডিস্ট্যান্ট লার্নিং, কন্টিনিউয়িং অ্যাডুকেশনের কোর্স রয়েছে। জানুয়ারী থেকে এপ্রিল- উইন্টার সেমিস্টার, মে থেকে আগষ্ট- সামার সেমিস্টার ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর ফল সেমিস্টার। যেহেতু ফল সেমিস্টারে অ্যাকাডেমিক ইয়ার শুরু হয় তাই এই সেমিস্টারে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ থাকে বেশি।
স্নাতক পর্যায়ে প্রায় দশ হাজার এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- অ্যাডুকেশন, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইংরেজি, কম্পিউটার সায়েন্স, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, আইন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।
ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ এই দুইটি ভাষা প্রচলিত রয়েছে কানাডায়। তাই সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই এ দু’ভাষাতেই পড়াশোনা সুযোগ আছে। তবে কোন ভাষায় শিক্ষার্থী পরতে ইচ্ছুক তা আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। শিক্ষার্থী যদি ইংরেজি ভাষা পড়তে আগ্রহী হয় তাহলে টোফেল-এ স্কোর থাকতে হবে ৬এর অধিক। আর ফ্রেঞ্চ ভাষায় পড়তে চাইলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
স্নাতক ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার জন্য অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে ১২ বৎসর মেয়াদী শিক্ষাসার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এছাড়া আইএলটিএস-এ কমপক্ষে পেতে হবে ৬-৬.৫ স্কোর। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে স্যাট-২ এর সার্টিফিকেট ও বাধ্যতামূলক করেছে। এই ডিগ্রি পেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪বছর। এছাড়া স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে ১৬বৎসর মেয়াদী শিক্ষাসার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এছাড়া এখানেও আইইএলটিএস এ পেতে হবে কমপক্ষে ৬-৬.৫ স্কোর। এর পাশাপাশি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জিআরই, জিএমএটির প্রয়োজন হয়। এই ডিগ্রি ১বৎসর মেয়াদের। পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ৩বৎসর পূর্ণকালীন গবেষণা করার সুযোগ পাওয়া যায় কানাডায়।
ভর্তি হতে ইচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফরম, মানি অর্ডার রশিদ, সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও মার্কশিটের ইংরেজি ভার্সনের ফটোকপি, সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র। টোফেল বা আইইএলটিএস এর স্কোর শিট, এসএটি, জিআরই, জিএমএটি, (চাহিদা সাপেক্ষে) এর স্কোর শিট। স্পন্সর এর পক্ষ থেকে আর্থিক সচ্ছলতার নিশ্চয়তাপত্র ও পাসপোর্টের ফটোকপি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে, এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য জানতে মেইল করতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন অফিসে।অফিস থেকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি, ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে। ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সাধারণত ১বছর সময় হাতে রেখে শুরু করতে হয়। সাধারণত আবেদন করার শেষ সময়সীমার ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়।
ভিসার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা অফারলেটার, আর্থিক স্বচ্ছলতার কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশের কানাডিয়ান দূতাবাসে দেখিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। আর ভিসা সংগ্রহের সময় স্টাডি পারমিটের প্রয়োজন হয়। এসময় ৭ থেকে ১৩ হাজার টাকায় স্টাডি পারমিট সংগ্রহ করতে হয় দূতাবাস থেকে। স্টাডি পারমিট পেলেই ভিসা প্রসেসিং শেষ হয়।
কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে টিউশন ফি বিভিন্ন রকম। অঞ্চল ও পড়ানোর ধরন অনুযায়ী এখানে টিউশন ফি নেওয়া হয়। তবে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাহিরের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বেশি দিতে হয়।সাধারণত শিক্ষার্থীদের স্নাতক ডিগ্রির জন্য খরচ হয় ১৭ থেকে ২০ হাজার ডলার। এবং স্নাতকোত্তর, ডক্টরাল ও অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রির জন্য খরচ পড়ে ১২ থেকে ২০ হাজার ডলার। এছাড়াও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রথম ছয় মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা বাধ্যতামূলক। তবে পরে তারা ক্যাম্পাসের বাইরেও থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে।
কানাডায় যাপিত জীবনেও আছে ভিন্নতা। ক্যাম্পাসে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরিতে থাকতে হয়।তাতে প্রতি ৪মাসে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় ৩ থেকে ৭ হাজার ডলার। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে চাইলে বাসা ভাড়ায় ব্যয় হয় মাসে ২৫০ থেকে ৮০০ ডলার। ২০০ থেকে ৬০০ডলার এর মধ্যে একমাসের খাবার খরচ হয়ে যায়। সাধারণত পরিবহনে মাসে ৬০ থেকে ১৫০ডলার এর মতো খরচ হয়।তবে অনেক জায়গাতে শিক্ষার্থীদের পরিবহনে টাকার প্রয়োজন হয় না।ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ পরে ৫০ থেকে ১০০ডলার।তবে কানাডার বিভিন্ন শহরের খরচ বিভিন্ন রকম।এই খরচের পরিমান নির্ভর করে শিক্ষার্থীরা কোন শহরের বসবাস করবে তার ওপর।শহর অঞ্চলে ব্যয়টা একটু বেশি।রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ১ হাজার ডলার।প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ডলার এর মধ্যেই মেটানো যাবে খাবারের খরচ।সেই হিসেবে প্রতিমাসে খরচ ৫০০ থেকে ৮০০ ডলার পর্যন্ত।
কানাডাতে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ রয়েছে।তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্য ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন রয়েছে।ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে সেই প্রতিষ্ঠান যদি ক্লাশ চলাকালে শিক্ষার্থীদের ছুটি দেয় তাহলেই সেই শিক্ষার্থী ওয়ার্ক পারমিট পাবে। এছাড়াও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ আছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার জন্য অবশ্য ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হয় না। সুবিধা অনুযায়ি কাজ করতে পারলে এখানে থাকা খাওয়া পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে নিজের দেশেও টাকা পাঠানো সম্ভব।
কানাডায় বড় অংকের টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হলেও, স্কলারশিপের প্রচুর ব্যবস্থাও আছে।এজন্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। এরপর যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ সেখানকার Financial Aid officeএ যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়াও কানাডার প্রধান স্কলারশিপগুলো হলো-
শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় স্কলারশিপ এটি। কানাডার সরকার এ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এই স্কলারশিপে শিক্ষার্থীকে বছরে ৫০ হাজার কানাডীয় ডলার দেয়া হয়। যার মেয়াদ তিন বছর। সাধারণত পিএইচডি গবেষণার জন্য এ বৃত্তি দেয়া হয়ে থাকে। http://goo.gl/JgFnNx লিংকটি শিক্ষার্থীদের ভেনিয়ার কানাডা গ্রাজুয়েট স্কলারশীপের জন্য সাহায্য করবে।
এ স্কলারশিপটি বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা বেশি অগ্রাধিকার পায়।প্রতিবছরই এ বৃত্তি প্রদান করা হয়। http://goo.gl/5EvIbc লিংকটি শিক্ষার্থীদের আইডআরসি ডক্টরাল রিসার্চ এ্যাওয়াড স্কলারশিপের জন্য সাহায্য করবে।
এ ফেলোশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের তরুণ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদেরকে কানাডার সরকারী ল্যাবরেটরীতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।http://goo.gl/13NVaB লিংকটি শিক্ষার্থীদের ভিজিটিং ফেলোশিপ ইন কানাডিয়ান গভমেন্ট ল্যাবরেটরীজ স্কলারশিপের জন্য সাহায্য করবে।
পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা ও সহযোগিতার জন্য কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে কানাডায় উচ্চশিক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শদান সহ অন্যান্য সহযোগিতায় কাজ করছে এক্সা এডুকেশন, ইউনিভার্স ইমিগ্রেশন এন্ড এডুকেশন এব্রোড এবং ওভারসিজ অ্যামবিশন সলিউশন লিঃ। কানাডায় উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারবে এই পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
এছাড়াও কানাডায় উচ্চশিক্ষায় যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিজেদের ফ্রি অ্যাসেসমেন্ট করাতে পারবে। লেথক: অমৃতা বনিক, eduicon.com ব্লগ এর সৌজন্যে