হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল
যার হাতের লেখা ভালো তাকে সবাই আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে।কিন্তু যার হাতের লেখা ভালো নয় সে অনেকের মধ্যে যখন লেখার প্রয়োজন পড়ে তখন দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায়। তখন ভাবে যদি আমার হাতের লেখাটা অনেক সুন্দর হতো তাহলে আজকে আমাকে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। আর যেহেতু হাতের লেখা একটা শিল্প তাই এটাকে সুন্দর করা উচিত। হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল সম্পর্কে আপনার যদি ভাল ধারনা থাকে তবে আপনার হাতের লেখা সুন্দর হবেই। তাই আজকে আমি এই আর্টিকেলে হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করব।
সঠিক সরঞ্জাম নির্বাচন
হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশলগুলোর মধ্যে প্রথমত হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য প্রথমেই যে জিনিসটির দরকার হবে সেটি হচ্ছে সঠিক সরঞ্জাম নির্বাচন করা। সঠিক সরঞ্জাম এর মধ্যে পড়ে কলম, খাতা, পেন্সিল, স্কেল ইত্যাদি। কোন ধরনের কলম আপনার হাতের জন্য উপযোগী সেটা আগে বুঝতে হবে। যদি শিশু হয় তবে তাদের জন্য এক ধরনের কলম এবং বড়দের জন্য আলাদা কলম হতে পারে। তবে আমরা বাজারে যে সচরাচর মোটা কলম গুলা দেখতে পাই সেগুলো সব সময় হাতে লেখার জন্য ভালো হয় না।
হাতের লেখা ভালো করার জন্য মাঝারি আকৃতির কলম প্রয়োজন। এছাড়া পেন্সিল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের পেন্সিল আছে বাজারে। এর মধ্যে কোনটির মোটা এবং চিকন। আপনাকে প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে আপনি আসলে ছবি আঁকতে চান নাকি লিখতে চান। যদি লিখতে চান তাহলে চিকন কার্বনের পেন্সিল নির্বাচন করুন। শিশুদের হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য স্কেল এর প্রয়োজন আছে। স্কেল দিয়ে দাগ দিয়ে দিলে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের লেখা ভালো হবে। হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল বেশ কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো।
দেহের অবস্থান ঠিক রাখা
দেহের সঠিক অবস্থান হাতের লেখা সুন্দর করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেখার সময় টেবিল চেয়ার ব্যবহার এবং লেখার স্থানে পর্যাপ্ত আলোর উপস্থিতি আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। পিঠ সোজা করে, পা মেঝের সমতলে রাখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারা খাতার পাশে হাত বাঁকা করে লেখে। এটি ঠিক নয়। হাত ও কবজিকে নমনীয় রেখে আঙ্গুলগুলো দিয়ে লিখলে হাতের লেখা অনেক সুন্দর হয়।
বারবার অনুশীলন
হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার জন্য বারবার অনুশীলন ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। ইংরেজীতে একটা কথা আছে,Practice makes a man perfect. তাই আপনার হাতে লেখাকে সুন্দর করার জন্য বেশি বেশি প্র্যাকটিস বা অনুশীলন করতে হবে। যেহেতু হাতে লেখা একটা শিল্প তাই একে সুন্দর করার জন্য মনের ভিতর থেকে চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে দেখবেন এক সময় আপনার হাতের লেখা অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।
মোটর দক্ষতা (Motor Skill) বৃদ্ধি
অনেক সময় দেখা যায় শিশুর মোটর দক্ষতা (Motor Skill) পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করে না, যার কারণে লেখা খারাপ হয়। মোটর দক্ষতা হলো, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পরিচালনা করার ক্ষমতা। স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং পেশী- এই তিনের সঠিক সমন্বয়ে মোটর দক্ষতা পরিপূর্ণতা লাভ করে। কাপড় ভাঁজ করা, কাগজ কাটা, চামচ ব্যবহারের মত সহজ কাজগুলো শিশুর মোটর দক্ষতা বিকাশে ভূমিকা রাখে।
বর্ণের আকৃতি
বর্ণের আকৃতি ঠিক রাখাটাও জরুরি। একটি বর্ণ ছোট, আরেকটি বর্ণ বড় এমন হলে লেখা সুন্দর হয় না। সেই সাথে দুটি লাইন সমান্তরাল হওয়াটাও জরুরি। অনেক শিশুর বাংলা হাতের লেখা তুলনামূলকভাবে খারাপ হয়। বাংলা বর্ণে বক্রতা এবং বৈচিত্র্য অনেক বেশি থাকায় শিশুদের তা শিখে নিতে একটু সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ, মাত্রা ও অর্ধমাত্রা, বক্রতার দিকটা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডট লাইনের ওপর হাত ঘুরিয়ে অনুশীলন করা যেতে পারে।
সঠিক উপায়ে কলম ধরা
অনেকের হাতের লেখা খারাপ হয় শুধুমাত্র সঠিক উপায়ে কলম ধরতে না জানার কারণে। তাই, সঠিক উপায়ে কলম ধরার অভ্যাস করুন দেখবেন লেখা এমনিতে সুন্দর হয়ে উঠবে।
সঠিকভাবে পেন্সিল ধরা
পেন্সিল ধরার সাধারণ কিছু নিয়ম আছে। পেন্সিল ধরতে হবে বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী এবং মধ্যমা দিয়ে।লেখার সময় পেন্সিল খুব শক্ত করে ধরা বা অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে করে যেমন সময় অপচয় কম হয় তেমনই লেখা সুন্দর হয়। সেই সাথে হাতের পেশীকে নমনীয় রাখতে হবে এবং বাহু ও কবজিকে সমান অবস্থানে রাখতে হবে।
সঠিকভাবে অক্ষর লেখা
বর্ণ বা অক্ষরগুলো লেখার সময় স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভাবে লেখার চেষ্টা করতে হবে। বক্রতা এবং মাত্রাগুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুটি বর্ণের মাঝে প্রয়োজনীয় জায়গা রাখতে হবে। এক বর্ণের সাথে অন্য বর্ণ যেন লেগে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সাথে দুই শব্দের মাঝেও প্রয়োজনীয় জায়গা রাখতে হবে। অনেক বেশি ফাঁকা রাখলে যেমন দেখতে ভালো লাগে না তেমনই খুব ঘন ঘন লিখলেও লেখা হিজিবিজি মনে হয়।
শিশুদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
আজকাল শিশুর কাছে লেখালিখির বিষয়টি আকর্ষণীয় করে তোলাও খুব বেশি কঠিন নয়। কেননা এখন অনেক ধরনের ওয়ার্কশিট এবং লেখা অনুশীলন করার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যায়। প্রয়োজনে সুন্দর হাতের লেখা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
হাতের উপর চাপ প্রদান থেকে বিরত থাকুন
অনেক সময় আমরা লেখার ক্ষেত্রে আমাদের হাতের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে থাকি। তখন আমাদের হাতের লিখার মধ্যে তারতম্য দেখা দেয়। তাই লেখার সময় হাতে চাপ প্রয়োগ কম করবেন। এতে লেখা সুন্দর হবে।
লেখার ক্ষেত্রে হাত ও কনুই নমনীয় রাখা
হাতের লেখা সুন্দর করার ক্ষেত্রে হাত নমনীয় রাখা জরুরি। বর্ণের আকৃতি আপনি যে পেপারে লিখেন না কেন, লিখার সময় অবশ্যই আপনার হাত এবং সেই সাথে আপনার কনুই এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে হাত কিংবা কনুই এর উপর অতিরিক্ত চাপ না পরে। চাপ পড়লে লেখা খারাপ হতে পারে।
উপযুক্ত স্থানে বসে লেখার অভ্যাস করুন
হাতের লেখা সুন্দর করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি চেয়ারে বসে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তবে একটি চেয়ারের ব্যবস্থা করুন। অনেকে ফ্লোরে বসে লিখতে পারে।তবে সে ক্ষেত্রে হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
অনুসরণ করুণ বইয়ের লেখা
এমন কিছু লেখা অনুসরণ করুন যেগুলো অনেক সুন্দর এবং রুচিসম্মত। এক্ষেত্রে বই আপনাকে সহায়তা করতে পারে। খেয়াল করে দেখবেন সহায়তা করতে পারে খেয়াল করে দেখবেন বইয়ের লেখা গুলো অনেক সুন্দর ।আপনি যদি সেই লেখাগুলোকে লক্ষ করে ধীরে ধীরে অনুশীলন করুন তাহলে একটা সময় আপনার হাতে লেখা গুলো অনেক সুন্দর হয়ে যাবে।
দ্রুত লেখার অভ্যাস ত্যাগ করুন
হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল কাজে লাগানোর পাশাপাশি দ্রুত লেখার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক সময় দ্রুত লেখার কারণে আমাদের হাতের লেখা অনেক খারাপ হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের ব্যস্ততার জীবনের সময় স্বল্পতার কারণে আমরা অনেক দ্রুত লিখে থাকি। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় যখন আমাদের সময় থাকবে তখন যদি আমরা ধীরে ধীরে অনুশীলন করি তাহলে হাতের লেখা অনেক সুন্দর হবে। এরপর যদি অনুশীলন করতে করতে আপনি আপনার হাতের লেখা দ্রুত করতে পারেন তখন দেখবেন আপনার হাতে লেখা আর খারাপ হবে না কিন্তু আপনি দ্রুত লিখতে পারছেন।
‘আপনি যদি হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল’ আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই এখানে হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল সম্পর্কে বেশকিছু ধারণা পেয়েছেন। আপনি আপনার হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য এই কৌশল গুলো প্রয়োগ করতে পারেন।যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে আমরা ধন্য।