রচনা

মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস রচনা

1 min read

মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস রচনা

ভূমিকা: শ্রমের মর্যাদা, মূল্য ও, ন্যায্য মজুরি শুধু নয়, গত ১৩৬ বছরের অনেক পরিবর্তন হয়েছে মানুষের সমাজ ও সভ্যতার ।শ্রম ছাড়া কোন কিছুই উৎপাদন করা যায় না। এ সত্য অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর বিজয় লাভের শেষ সংগ্রাম পর্যন্ত  । শ্রমিক দিবস শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের আত্মদানে প্রতিষ্ঠিত’’ মে দিবস’’ পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে। মে দিবস আজ হাজার হাজার শ্রমিকের পায়ে চলা মিছিলের কথা আপোসিন সংগ্রামের কথা। মে দিবস দুনিয়ার শ্রমিকের এক হওয়ার সংগ্রাম। মে দিবস  শ্রমজীবী মানুষের উৎসবের দিন ।জাগরণের গান, সংগ্রামের ঐক্য ও গভীর  প্রেরণা । মে দিবস মুক্তির অঙ্গীকার, দিন বদলে শপথ । 

বিশ্বের কতটি দেশের  শ্রম দিবসে ছুটি থাকে?

বাংলাদেশসহ ও বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটি  দিন  ঘোষণা করা হয়। আরো অনেক দেশ বেসরকারিভাবে পালিত করে। মে দিবস, শ্রমিক দিবস বিশ্ব শ্রমিক দিবস যে নামে ডাকা হোক না কেন দিনটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান সংহতি জানানোর দিন হিসেবে পালিত হয়ে যাচ্ছে ১৯০৪ সাল থেকে ।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস/ মে দিবস

১৮৮৬ সালের ১ মে  যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো নগরীর লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ৮ ঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণ ও ন্যায্য মজুরি দাবীতে ধর্মঘট শুরু করে। তাদের আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ 3 ও  4 মে । আন্দোলনের কন্ঠরুদ্ধ করার জন্য পুলিশ গুলি চালায় এবং দশ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। সেইসঙ্গে বহু শ্রমিক আহত হয়। গ্রেফতার হয় অগণিত শ্রমিক।  গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকদের মধ্যে ৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। জেলখানা বন্দি অবস্থায় আত্মহন করেন এক শ্রমিক নেতা। শ্রমিক আন্দোলনের এই গৌরবময় অধ্যায় কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বের সকল দেশেই মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় মহান মে দিবস যা শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাদের দৈনিক আট ঘন্টা  কাজের  জন্য শ্রমিকরা জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক  অজ্ঞাতনামা পর পুলিশ শ্রমিকদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে ।

দেশে দেশে মে দিবস:

প্যারিস সম্মেলনে ঘোষণার পর থেকেই দেশে মে দিবস পালিত হয় ।   গ্রেট ব্রিটেনে ১৮৯০ সালে  পহেলা ১ এর পরিবর্তে  ৪ মে হাইট পার্কে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস উদযাপিত হয় । আমেরিকায় ১৮৯০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত হয় ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের মাধ্যমে । ফ্রান্সে মিছিল সমাবেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে  মেদিবস পালিত হয় ১৮৯০ ।রাশিয়ায় ১৮৯৬ সালে মে দিবস উদযাপিত হয় ধর্মঘটের ভেতর দিয়ে ।  চীনে মে দিবস পালিত হয় ১৯২৪ সালে । তাছাড়া আজ এশিয়া আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিকা, ছোট বড় সমস্ত দেশজুড়ে আন্তর্জাতিক  শ্রমিক দিবস পালিত হচ্ছে।

মে দিবসে তাৎপর্য:

মে দিবস হল দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সংকল্প গ্রহণের দিন। এই সংকল্প হল সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রেণী বৈষম্যের বিলোপ সাধন। পুঁজিবাদী দাসত্ব শৃংখল থেকে মুক্তির দির অঙ্গীকার ।  সাম্রবাদী  যুদ্ধ চক্রান্তে তীব্র প্রতিবাদ, দুনিয়া শ্রমিক এক হওয়ার উজ্জীবন মন্ত্র। মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর চিন্তা চেতনা এনেছে এক বৈপ্লবিক  তাৎপর্য ।মে দিবস দুনিয়া জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তির সংগ্রামের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ।

মে দিবসের   নৈপথ  ইতিহাস:

আন্দোলনের পথ কখনোই মসৃণ ছিল না। ছিল নানা ঘটনার প্রতি ঘাটে, জুলুম, অত্যাচার , প্রতিরোধে, ধর্মঘটে, মিছিল, সংগ্রামী রক্ত লাঞ্চিত। মে দিবস একদিনে এই আন্তর্জাতিক চেহারা পায়নি । এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস । রয়েছে অনেক রক্ত ঝরার কাহিনী । জন্ম লগ্ন থেকেই শ্রমিক শ্রেণীর ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস । আট ঘন্টা , ১২ ঘন্টা, এমনকি  ২০ ঘন্টা ছিল কাজের সময়সীমা । মে দিবসের জন্ম কাহিনী অবিচিতভাবে জড়িয়ে আছে কাজে ঘন্টা কমাবার আন্দোলনের সঙ্গে । ১৮০৬ সালে কারখানায় ২০ ঘন্টা পর্যন্ত ছিল কাজের সময়সীমা । মালিকরা কম মজুরিতে নারী শ্রমিক নিয়োগ করত । অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে ১৮৮৬ সালে ১ মে ৮ঘন্টাকে কাজের দিন বলে আইনগত গণ্য করা হয়  তাই এখন পর্যন্ত  বলবত আছে ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবস

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এদেশের শাসকগোষ্ঠীর শ্রমিকদের স্বার্থর অপেক্ষায় সর্বদাই রয়েছে উদাসীন । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবস শুধু একটি ছুটির দিন বলেই বিবেচিত। শ্রমিকের দাবি আদায়ের জন্য যারা রক্ত জড়িয়েছেন নিজের জীবন দিয়েছেন তাদের স্মৃতিতে মে দিবস সীমাবদ্ধ । আমাদের দেশে শ্রমিকদের তুচ্ছ বলে মূল্যায়ন করা হয় । বারবার  শ্রমিকরা নির্যাতিত হচ্ছে । কাজের তুলনায় পারি শ্রমিক ঠিকমতো তারা পায় না । বিভিন্ন শিল্প কারখানা দেখা যায় সেখানে আট ঘন্টার বেশি কাজ করতে হচ্ছে । মালিকদের নিষ্ঠুর  শোষণ  মুখ  বুঝে সহ্য করে যায়  নির্যাতিত শ্রমিক । তারা অনেক ভয়ে কিছু বলতে চায় না কেন অবাধ্য হলে চলে যাবে তাদের চাকরি । শ্রমিক জানে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি দিন আছে যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত । তারা জানে না তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লক্ষ লক্ষ শ্রমিক একদিন রাজপথে নেমে আন্দোলন মিছিল করেছিল, রক্ত ও জীবন উৎসর্গ করেছিল ।

বাংলাদেশ মে দিবস উদযাপন:

বাংলাদেশে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয় ঐদিন সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয় । দিনটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বানী নিয়ে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন সভা আলোচনা সমাবেশ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকে । বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে স্মরণ করে তাদের  আন্দোলনের কথা সংগ্রাম ও মুক্তির কথা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে মে দিবস :

১৯৫৪ সালে  যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী লাভ করলেও বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিপুল উৎসাহ নিয়ে শ্রমিক মে দিবস পালন করে । প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সেদিন লাল পতাকা হাতে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে মিছিল সমাবেশ করেছিল । ১৯৫৮ সালে ১ মে দিনটিকের সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয় । আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে জয় লাভের পর শ্রমিকদের বিরাট একটি অংশ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করে তখন মে দিবস এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে 1971 সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয় । ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু থেকে মে দিবস  রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে মে দিবস উপলক্ষে তৎকালীন সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ।

বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা :

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ । একটি দেশের উন্নয়নের অন্তরালে থাকে শ্রমিক মজুরদের অক্লান্ত পরিশ্রম,  ব্যথা- বেদনা। কিন্তু সে অনুযায়ী শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না । বরঞ্চ তারা  নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে । যাদের ঘামে একটি ইট সাজিয়ে বড় বড় ইমারত দৃশ্য দেশে এগিয়ে যাচ্ছে । তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া উচিত । শ্রমিকদের যথাযথভাবে মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও তাদের মৌলিক চাহিদা  গুলো অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে ।

উপসংহার : মে দিবসের এই সংগ্রাম অনেক অন্ধকার দূর করেছে । বিশ্বের এক তৃতীয়াংশে মানুষ আজ রয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় । দুনিয়া জুড়ে মে দিবসের যে বিজয় অভিযান সেখানে শ্রমিক  শ্রীনির  বৈপ্লবিক সংগ্রাম । মে দিবস আজ  দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সংগ্রামের দিন । মে দিবস এখন শ্রমিক শ্রেণীর সামনে নতুন ভাবে  পথ চলার  স্বর্ণ দুয়ার । অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া  দুর্লভ এক সম্পদ । আজপৃথিবীর সব দেশেই একক  বন্ধনের মাধ্যমে মে দিবস ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয় । ১মে কে  বিশ্বব্যাপী শ্রমিক দিবস হিসেবে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা সাথে পালন করা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । এই দিনে শ্রমিকরা তাদের কর্মের বিনিময়ে দেশকে   এগিয়ে নেওয়ার জন্য পতিকাবদ্ধ হয় । এই দিনে মিলিত কন্ঠে তারা বলে

’’ আসুক অরাজকতার মহান দিন

আসবো আমরা এক হয়ে, করব স্লোগান মিলেমিশে

অন্ধকারের গত দুনিয়াকে ফিরে আসতে দেবো না বারে বারে ।’’

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x