গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

আসসালামু আলাইকুম আজ গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। প্রত্যেকটা মাতৃকালীন মায়েদের উচিত গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন এই বিষয়গুলোর প্রতি অবশ্যই ধারণা থাকা বা  খেয়াল রাখা  তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

পৃথিবীতে সবচাইতে আনন্দ এবং সুখী কথা হচ্ছে যখন সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। তাহলে শুরু করুন আপনার সন্তান জন্মদানের পরিকল্পনা। গর্ভধারণ কালীন সুস্থতা নিশ্চিত ও একটি সুস্থ সন্তান জন্মদানের আগে অবশ্যই  আমাদের এই  আর্টিকেলটি পড়বেন।

গর্ভধারণের উপযুক্ত সময় বিবেচনা করুন

আপনি যদি কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন তাহলে গর্ভধারণের আগে ভাগ্যে  হিসাব নিকাশ  করে সিদ্ধান্ত নিন। ঋতুস্রাবের কোন সময় আপনার শরীর গর্ভধারণ করতে সক্ষম সেই হিসেবে করে  নেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করুন

গর্ভবস্থায়  হরমোন পরিবর্তনের জন্য পারিপার্শ্বিক  কারণে একজন মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য খুবই খারাপ হয়ে যেতে পারে। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা পিপিডি হার দিন দিন বেড়েই চলছে বিশ্বব্যাপী। তাই গর্ভধারণের আগে মানসিক প্রস্তুতি খুবই দরকার। সবার আগে বিবেচনা করে দেখুন আপনি নিজের শরীরের মাঝে আরেকটা শরীর বহনের জন্য প্রস্তুত কি না।

তার জন্মের পরে তাকে আপনার পূর্ণ মনোযোগ ও সময় দিতে হবে। এসব বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকে সেরে রাখুন। আপনার পরিবার মূলত আপনার স্বামী কেউ এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। গর্ভাবস্থায়  বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা প্রয়োজনে মানসিক রোগের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

চিকিৎসকের পরামর্শ

বাচ্চা জন্মদানের জন্য আগেই আপনাকে একজন চিকিৎসক বা ধাত্রী ঠিক করে  রাখতে বলছি না। কিন্তু গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেক করে নিন। আপনার ব্যাক্তিগত বা  পারিবারিক  রোগ ব্যাধির ইতিহাস, আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা, কোন ঔষধ খাচ্ছেন কি না সেসব খতিয়ে দেখবেন চিকিৎসক। কিছু কিছু ঔষধ গর্ভের শিশু যা বদলানো বদলানোর  প্রয়োজন হতে পারে।

গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার চিকিৎসক আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে আপনার খাদ্যভ্যাস, ওজন কত অবস্থা, ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা, মাল্টিভিটামিন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা, ধূমপান অ্যালকোহল  গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা বাদ দেওয়ার ইত্যাদি সম্পর্কে সম্পর্কে ধারণা দেন। তাছাড়া রুবেলা ভাইরাস সংক্রামক বা চিকেন পক্স ইত্যাদি প্রতিষেধক নেওয়া আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবেন তিনি। কারো আসমা, এজমা ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ থাকলে ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক  এর কাছে যাওয়া লাগবে কিনা তাও নির্ধারণ করতে পারে তিনি।

জিনগত কোন সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা

বাবা-মায়ের কারো সিস্টিক  ফিব্রোশিস, সি কোড  ইত্যাদির মতো রোগ আছে কিনা তার ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখবেন। কারণ, গর্ভের শিশুদের মাঝে এসব রোগ চলে ঝুঁকি থাকে।

ফলিক এসিড ভিটামিন এ

গর্ভধারণের এক মাসআগে থেকে এবং গর্ভধারণের পর প্রথম তিন মাস প্রতিদিন একটা করে সম্পূরক ফলিক এসিড( 400 মাইক্রোগ্রাম  পরিমাণের) খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে আপনার শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের  স্পিনা ফিডার  মত সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়ার আশঙ্কা 50 থেকে 70 শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। আলাদা করে ফলিক এসিড ছাড়াও মাল্টিভিটামিন খেতে পারেন যে 400 মাইক্রোগ্রাম মাত্রার ফলিক এসিড আছে।

আপনার মাল্টিভিটামিন  770 মাইক্রো গ্রামের বেশি ভিটামিন এ আছে কিনা তাও খেয়াল রাখুন। কারণ, অতিরিক্ত ভিটামিন  এ গ্রহণ করলে জন্ম থেকে শিশুরা সমস্যা হওয়ার  সম্ভাবনা  বেড়ে যায় । তবে কোন সাপ্লিমেন্ট বাসন্তী চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা ঠিক না।

মদ্যপান, ধূমপান ও নেশাদ্রব্য বাদ দেয়া

গবেষণায় দেখা  দেখা গেছে উপরের একটি অভ্যাস যদি আপনার থাকে তাহলে তা আপনার গর্ভজাত সন্তান মিসক্যারেজ  হওয়া,সময়ের আগে শিশুর জন্ম , কম ওজন নিয়ে জন্ম ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও টোবাকো তামাকজাত সামগ্রী মায়ের উর্বরতা ও পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

গবেষণা দেখাচ্ছে পরোক্ষ ধূমপানেও সন্তান জন্মদানে বাধা সৃষ্টি হয়। গর্ভধারণের আগে দিন অল্প মাত্রায় মদ্যপান ক্ষতিকর না হলেও গর্ভধারণের পর থেকে দূরে থাকতেই বলছেন গবেষকরা। কারণ এটা গর্ভের শিশু বেড়ে ওঠার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ছেড়ে দেয়া কঠিন হতে পারে। গর্ভধারণের আগে তাই এসব বদ অভ্যাস দূর করতে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না এই। গর্ভধারণের পরিকল্পনা পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো  খেয়াল রাখবেন তারমধ্যে ধূমপান মদ্যপান নেশাদ্রব্য জিনিস একেবারেই গ্রহণ করা যাবে না।

স্বাস্থ্যকর খাবার

দুজনের পরিমাণ খাবার খেতে হবে তা নয়, তবে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে যাতে গর্ভধারণের আগেই আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে। গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন দিনে অন্তত 2 কাপ ফল, আড়াই কাপ নানা রকম সবজি, হোল গ্রেইন শস্য জাতীয় খাবার, উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার( দুধ, কমলার রস, টক দই), ইত্যাদি খেতে শুরু করুন। তাছাড়া নানারকম প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন শিমের বিচি, বাদাম,  পোল্ট্রি  এবং মাংস খাওয়া প্রয়োজন।

ক্যাফেইন কমান

এখনো সেভাবে কোনো গবেষণা হয়নি যে গর্ভাবস্থায় বা গর্ভধারণের আগে দিনের ঠিক কী পরিমাণ ক্যাফেইন দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন দিনে সময়ে খুব বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করায় ভালো। কারণ, কিছু কিছু গবেষণা বলেছে বেশি মাত্রায় গ্রহণে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দিনে 200 মিলিগ্রাম এর মত  পান করা যায়। তবে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না যেন ।

ওজন ঠিকঠাক

গর্ভধারণের পূর্বে আপনার ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ঠিকঠাক রাখুন।  কম বা বেশি দুটোই সুস্থ গর্ভধারণের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদের  জন্য গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান উভয় ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। আর যাদের ওজন কম তাদের ক্ষেত্রে কম ওজনের সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা থাকে। গর্ভধারণএরপূর্বে নিরাপদ ওজন বজায় রাখতে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

মাছ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হোন

মাছ খেতে খুব পছন্দ করেন যদি, তাহলে এ ব্যাপারে একটু নজর দিন। পাশে থাকা ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড আপনার শিশুর চোখ আর মস্তিষ্কের গঠন এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রোটিন, ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ছাড়াও মাছের ক্ষতিকর মার্কারি  থাকতে পারে।  অনেক গবেষকরা  গর্ভবতী নারীদের মাছ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বললেও তারা মাককারি আছে এমন এড়িয়ে চলতে বলেন। তাই মাছ খাওয়ার আগে একটু বিবেচনা করে কিনতে চেষ্টা করুন। পুষ্টিবিদদের সাথে যোগাযোগ করে খাওয়াই ভালো হবে এ সময়।

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা

গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন পরিবারের একজন নতুন সদস্য পৃথিবীতে আনার আগে অবশ্যই নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করুন। আপনার সন্তান একটি সুন্দর আলোকিত জীবন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা পয়সা আছে কিনা তা হিসেব করে দেখা দরকার। শুধু তাই নয় চিকিৎসক ,হাসপাতাল, ক্লিনিক ,নিজেরও জন্মের পর শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার, ঔষধপত্র ,ধাত্রী এসবের খরচ মাথায় রাখুন ।সব মিলিয়ে একটি সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখানোর আগে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঠিকঠাক রাখা খুবই জরুরি।

পরিবেশগত ঝুঁকি

আপনার  আসে পাশে সব পরিবেশগত ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারবেন তা নয়। তবে নিজের সাধ্যের মধ্যে সব চেষ্টাই করা দরকার। আপনার বাসা বা চাকরির জায়গায় যদি উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের ঝুঁকি থাকে তাহলে গর্ভধারণের আগেই জায়গা পরিবর্তন করুন বা সততা বজায় রাখুন। প্রয়োজনে মুখে মাক্স পড়ুন। ঘরের মোটা পদ্মা দিয়ে ধুলোবালি আটকান।  পানি অবশ্যই ফুঁটিয়ে  বা জীবাণুমুক্ত করে খান।

অবশেষে সময় এসেছে গর্ভনিরোধক বাদ দেওয়ার

উপরের সব যদি ঠিক থাকে তাহলে  এখনই সময় আপনার গর্ভনিরোধক কে বিদায় জানানোর। কোনো কোনো মহিলার শরীর কনট্রাসেফটিবাদ দেওয়ার সাথে সাথেই ডিম্বাণু উৎপাদন শুরু করলেও অনেকের মাস খানেক সময় লাগতে পারে। কোন কোন স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসক  বা গর্ভ নিরোধক   আগে কয়েকটা পিরিয়ড হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। সন্তানকে  গর্ভে ধারণ ও তাকে পৃথিবীতে আনা একজন নারীর জীবনের অন্যতম সুন্দর অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা আর  পরিকল্পনাকে সুরক্ষিত রাখতে  আগে  থেকে পরিকল্প করে রাখ। গর্ভধারণের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন উপরে তার সমালোচনা  করেছি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *