সারাবছরই যেকোনো সময় সর্দি হতে পারে। তবে সর্দির প্রবণতা কিছুটা বেশি দেখা যায় শীতের শুরুতে। তবে বিভিন্ন কারনে সর্দি হতে পারে। সর্দির সাথে সাথে কাশি দেখা দেয় এজন্য বুকে ব্যথা হতে পারে। সর্দি হলে সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাস অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া যার এলার্জি রয়েছে তারা সর্দিতে বেশি সমস্যায় পড়েন। এই রোগটাকে অনেকে সাধারন ভেবে খুব ছোট মনে করেন এবং খুব একটা মূল্যায়ন করতে চান না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সর্দি-জ্বর বাচ্চা ও বয়স্কদের বেশি হয়ে থাকে। কেননা এই সময়ে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই সর্দি জ্বর খুবই তাড়াতাড়ি তাদের উপর আক্রমণ করতে পারে।
আমাদের আজকের আর্টিকেল এর বিষয়টি হলো সর্দি থেকে মুক্তির উপায়। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল সর্দি থেকে মুক্তির উপায়।
সর্দি থেকে মুক্তির উপায়
যেহেতু এসে গেছে শীতের মৌসুম। এখন আমাদের মধ্যে অনেকেরই ঠান্ডা জ্বর সর্দি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই আপনারা অনেকেই ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে থাকেন সর্দি থেকে মুক্তির উপায়। আজকেরে আর্টিকেলটা তাদের জন্যই। আবার এই সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে কিছু উপায় আছে ঘরোয়া কিছু উপায় আছে আবার চিকিৎসাশাস্ত্রে ও কিছু উপায় রয়েছে। আমরা শুরুতেই শুরু করব সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় দিয়ে।
সর্দি থেকে মুক্তির কিছু ঘরোয়া উপায়
হলুদ
হলুদ এমন একটি উপাদান যা আমাদের রান্নাঘরে থাকবেই। কেননা হলুদ ছাড়া কোন কিছু রান্না করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই আমাদের প্রত্যেকের রান্নাঘরেই হলুদ রয়েছে। তাই হলুদকে আজকে সর্দি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে কাজে লাগাবো।
আমরা সকলে জানি হলুদে থাকে কারকুমিন নামের উপাদান। এই উপাদানটি কাজ হল বুক থেকে কফ দূর করা, শ্লেষ্মা দূর করা, বুকের ব্যথা দূর করা, শ্বাসকষ্ট দূরত্ব কমিয়ে দেওয়া। হলুদে আরো আছে anti-inflammatory নামক উপাদান। যা কিনা গলা ও বুকের খুসখুসে ভাব দূর করে। গলা ও বুক জ্বালা দূর করে এবং ব্যথা দূর করে। তাই আমরা সহজেই বলতে পারি যে হলুদ ব্যবহার করলে সর্দি থেকে মুক্তি পাবো। যখন আমাদের সর্দি হবে তখন আমরা এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে পান করবো। এর ফলে হলুদে থাকা উপাদানগুলো আমাদের সহজে সংক্রমণ রোধ করবে। এর ফলে সর্দি কাশির কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর ক্ষেত্রে মধু, দারুচিনি, লেবুর ব্যবহার
সর্দি হলে আমরা প্রথমেই খুঁজে ঘরোয়া কিছু উপায়। আর সর্দি এবং কাশির জন্য ঘরোয়া সমাধান গুলোর একটি হলো লেবু, দারুচিনি, আর মধুর মিশ্রণ। যখন আপনার সর্দি লাগবে কিংবা কাশি হবে তখন আপনি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে একটি সিরাপ বানাতে পারেন । যেমন আধা চামচ মধুতে কয়েক ফোঁটা লেবু এবং অল্প একটু চিনি মিশিয়ে বানিয়ে ফেলা যায় এক ধরনের সিরাপ। এই মিশ্রণটি খাওয়ার ফলে আপনি দেখবেন আপনার কাশি কিংবা সর্দি অনেকটা কমে গেছে। আবার আপনি চাইলে 1 টেবিল চামচ আদা কুচি করে সামান্য পরিমাণ পানির সঙ্গে মেশান। এবার একটি ঢাকনা দিয়ে পাত্রটি ঢেকে দিন। 5 থেকে 10 মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার ঠাণ্ডা হলে এতে সামান্য পরিমাণ মধু দিয়ে দিন এবং পান করুন। এভাবে আপনি দিনে তিনবার এই পানি পান করুন দেখবেন উপকার পাবেন। কেননা আদার রস বুকের কফ বা শ্লেষ্মা শরীর থেকে বের করে দিতে সক্ষম।
সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে নুন জল অন্যতম
সর্দি লাগার ফলে আমাদের বুকের মধ্যে কফ সর্দি ইত্যাদি আস্তে আস্তে জমে যায় বা বসে যায়। তখন আমাদের খুবই খারাপ লাগে বা অস্থিরতা কাজ করে। বুকে সর্দি কফ দূর করতে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে। কেননা নুন জল আমাদের শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। তাই আমরা হালকা একটু গরম পানির সাথে এক চা চামচ নুন মিশিয়ে দিনে তিনবার যদি গরগরা করি তাহলে সর্দি-কাশি থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সর্দির ক্ষেত্রে পেঁয়াজের ব্যবহার
পেঁয়াজ ছাড়া আমরা কোন ধরনের রান্না কে কল্পনা করতে পারিনা। সাধারণ একটা ডিম ভাজতে গেলেও পেঁয়াজের দরকার হয়। তাই এমন কোন রান্নাঘর নেই যেখানে পেঁয়াজ থাকেনা। সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে পিয়াজের রসের উপকারিতা। প্রথমে আপনারা পেঁয়াজের রস, লেবুর রস, মধু, এবং পানি সকল উপকরণ একই পরিমাণ নিয়ে একসাথে মিশিয়ে 5 থেকে 7 মিনিট ফুটিয়ে নিন। যখন পানিটা ফোটানো শেষ হবে তখন পানিটা একটু ঠান্ডা হওয়ার অপেক্ষা করবেন। যখন হালকা ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখন এটা পান করবেন। এইভাবে আপনি দিনে তিনবার পান করুন। দেখবেন আপনার সর্দি-জ্বর অনেকটা ভালো হয়ে গেছে।
তুলসী পাতা ও আদার মিশ্রণ
সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হল তুলসী পাতা ও আদার মিশ্রণ। প্রথমে আপনারা এক কাপ পানিতে কয়েকটা তুলসীপাতা ও 1 চা-চামচ আদা কুচি ভালো করে ফুটিয়ে নিন। যখন দেখবেন পানিটা ফোটাতে ফোটাতে পরিমাণে অর্ধেক হয়ে গেছে ঠিক তখন নামিয়ে নিবেন। এবার আপনি এই পানিটা দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন দেখবেন আপনি উপকার পাবেন।
সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর ক্ষেত্রে রসুন
কেননা রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা সর্দি-কাশির মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া রসুনের রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া, এন্টি ভাইরাস, এন্টিফাঙ্গাল উপাদান। এই উপাদানগুলো সর্দি কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি চাইলে 4 থেকে 5 কোয়া রসুন তেল কিংবা ঘিয়ে ভেজে গরম গরম থাকতে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার সর্দি কাশি অনেকটাই কমবে।
লেবু এবং মধুর মিশ্রন
আপনি লেবুর পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন আপনার সর্দি অনেকটাই কমে গেছে। কেননা মধুতে রয়েছে শ্বাসযন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার উপাদান। এছাড়া মধু বধু থেকে কফ বা শ্লেষ্মা দূর করে গলা পরিষ্কার করতে সক্ষম। আমরা সকলেই জানি লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। যা কিনা থান্ডার ভালো একটি ঔষধ হিসেবে কাজ করে। আপনি চাইলে লেবু চা খেতে পারেন, চাইলে আপনি কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন, আবার আপনার যদি গলা ব্যথা করে বা গলা বসে যায় সেক্ষেত্রে আপনি গরম পানিতে লেবুর রস এবং সামান্য পরিমাণ লবণ দিয়ে গরগর করুন দেখবেন অনেকটাই উপকার পাবেন। এভাবে আপনি সকালে একবার রাতে একবার করবেন।
সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর ক্ষেত্রে গোলমরিচের ব্যবহার
প্রথমে আপনি গরম পানিতে 1 চা চামচ পরিমাণ গোলমরিচের গুঁড়া এবং দুই চা-চামচ মধু মিশিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন। এবার গোলমরিচের দানাগুলো যখন নিচে জমা হয়ে যাবে ঠিক তখনই আপনি ধীরে ধীরে এই পানিটা পান করুন। দেখবেন অতি দ্রুত আপনি সর্দি থেকে মুক্তি পাবেন। আবার গোলমরিচের দানাগুলো খেয়ে ফেলবেন না যদি খেয়ে ফেলেন তাহলে এটা অবশ্যই আপনার পাকস্থলীতে প্রভাব ফেলতে পারে।
সর্দির ক্ষেত্রে লবঙ্গের ব্যবহার
প্রথমে আপনি কয়েকটা লবঙ্গ এবং পানি সাথে সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। এবার পানি গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে ফেলুন। এটি সর্দি সারাতে উপকারী। এছাড়া আপনি চাইলে লবঙ্গ এবং আদা একসাথে পানিতে দিয়ে 15 মিনিট সিদ্ধ করে। সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করুন দেখবেন উপকার মিলবে।
সর্দি সারাতে আদা চা
সর্দি থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হলো আদা চা। আপনি আদা কুচি করে গরম পানি বা গরম চায়ের মধ্যে দিয়ে পান করুন। দেখবেন এই চা টা পান করার ফলে আপনার খুব ভালো একটা অনুভূতি হবে। এবং এটা আপনার সর্দি কমাতে খুবই উপকারী।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল সর্দি থেকে মুক্তির উপায়। আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন কি করলে সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর আপনার যদি এই উপায়গুলো ব্যবহার করে উপকার না পান কিংবা ভালো না হন। সেই ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। আপনাকে সর্দি থেকে মুক্তির উপায় আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।