ভিটামিন ডি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা জেনে নিন
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হল ভিটামিন ডি সম্পর্কে। আমরা আজকে ভিটামিন ডি সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। ভিটামিন ডি কোন খাবারে পাওয়া যায়, ভিটামিন ডি এর অভাবে কি ধরনের সমস্যা হয়, ভিটামিন ডি এর উৎস গুলো, এসকল বিষয় আজকে আমরা বলব। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি হল চর্বিজাতীয় দ্রবণীয় একটি সেকোস্টরএইড গ্রুপ যা কিনা ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফেট এর আন্তিক শোষণ এবং মানব দেহের বিভিন্ন জৈবিক প্রভাব সৃষ্টির জন্য দায়ী। মানবদেহে সেকোস্টরএইড গ্রুপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগ হলো ভিটামিন ডি3 এবং ভিটামিন ডি2।
ভিটামিন ডি এর উৎস
ভিটামিন ডি এর সেরা উৎস হলো সূর্যালোক। কিন্তু স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য যুক্ত খাদ্যের অংশ হিসেবে ডিমের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন রয়েছে। এ ধরনের খাবার গুলি গ্রহণ করার ফলে আপনার ভিটামিন ডি জাতীয় প্রয়োজনীয়তা গুলো পূরণ করবে। এরূপ আরো অনেক জাতীয় খাবার আছে যে সকল খাবারের মধ্যে আপনি ভিটামিন ডি এর উপকারিতা পাবেন।
কিন্তু ভিটামিন-ডি কেবল মাত্র কয়েকটি খাবার এই পাওয়া যায়। নিচে সেই খাবারগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।
- তৈলাক্ত মাছ।
- ডিমের কুসুম।
- লাল মাছ।
- মাশরুম।
- যকৃত।
- চিজ।
- সামুদ্রিক মাছ।
- দুধ।
- পনির, মাখন, ছানা, দই।
- গরুর কলিজা।
- কমলার জুস।
- বাদাম।
- গম, বার্লি।
- ওটমিল।
- কড লিভার অয়েল।
- ছোট চিংড়ি।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দুটি ডিমের কুসুমের মধ্যে 8 দশমিক 2 এমসিজি ভিটামিন ডি থাকে। কেননা দুটি ডিমের কুসুমের মধ্যে যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সেই ভিটামিন ডি একদিনের জন্য পর্যাপ্ত। এবং আপনি যদি ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত পরিমাণ টি আপনার শরীরের মধ্যে দেখতে চান তাহলে দৈনিক দিনে ডিমের কুসুম সেবন করুন। আবার অনেক সময় দেখা যায় আমাদের মধ্যে অনেকের হাই প্রেসার থাকে। তাদের জন্য ডিমের কুসুমটা বর্জনীয়। তারা অন্য খাবারে ভিটামিন ডি এর উপকারিতা বা উৎস খুঁজে নিবেন। যারা কিনা হাই প্রেসারের রোগী কারা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ডিমের কুসুম খাওয়ার চিন্তাভাবনা করবেন। উপরে যে সকল খাবারের কথা বলা হয়েছে সেই খাবারগুলো থেকে আমরা ভিটামিন ডি সংগ্রহ করতে পারি। এই সকল খাবার খেলে আমাদের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। আর আপনার শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে তাহলে অবশ্যই এ সকল জিনিস একটু সাবধানে খাবেন। কেননা ভিটামিন ডি বেশি খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
ভিটামিন ডি বেশি খেলে যে ধরনের সমস্যা হয়।
প্রয়োজনের বেশি কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয়। কেননা আপনার যতটুকু প্রয়োজন আপনি ঠিক ততটুকু পরিমাণ খাবার গ্রহণ করুন। এবং প্রয়োজনের বাহিরে বেশি খেলে অবশ্যই এর খারাপ প্রভাব পড়বে। ভিটামিন বেশি খেলে যে ধরনের সমস্যা হয়।
- ক্ষুধা কমে যেতে পারে।
- হজমের সমস্যা হতে পারে।
- কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।
- ভিটামিন সি বেশি খেলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ভিটামিন বেশি খেলে মাথা ঘুরে।
- ভিটামিন বেশি খেলে শরীরে ক্লান্তি আসে।
শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা
যাদের বয়স কিনা পূর্ণবয়স্ক তাদের দৈনিক 600 ইউনিট ভিটামিন-ডি ও 1000 মাইক্রো গ্রাম ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে। আবার যাদের বয়স 70 এর বেশি তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় বারোশো মাইক্রোগ্রাম। কেননা বয়স অনুযায়ী ভিটামিন ডি এর ডিমান্ড বাড়ে কমে। আর এই ভিটামিন ডি এর ডিমান্ড 25 থেকে 100 মিলিগ্রাম পর্যন্ত কম বেশি হয়। আবার দেখা যায় গর্ভবতী ও স্তনদানকারী মায়ের লাগে ভিটামিন-ডি একটু বেশি। এবং সঠিক সময়ে সূর্যলোক ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে এর ঘাটতি মেটানো যায়।
শিশুদের জন্য ভিটামিন ডি
শিশুদের জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুদের এবং কিশোর-কিশোরীদের হাড় বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের হাড় বিকৃতি হয় এবং রিকেট রোগ হয়। শিশুদের দৈনিক 2000 আইইউ ভিটামিন ডি নিলে স্টারএইট প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। এবং যে সকল শিশুদের অ্যাজমার ধরনের রোগ রয়েছে তারা বেশি বেশি ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খাবেন।
মহিলাদের জন্য ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি মহিলাদের ঋতুস্রাব জনিত উপসর্গের উন্নতি ঘটায়। মহিলাদের অস্টিওপোরোসিস এর ঝুঁকির মাত্রা কমায়। কিন্তু মহিলাদের ঋতুস্রাব উন্নতিতে ভিটামিন-ডি বেশি কাজ করে। তাই সকল মহিলাদের ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
ভিটামিন ডি এর অভাবে কি কি হতে পারে
আপনার শরীরে যদি ভিটামিন ডি এর অভাব থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগের সূচনা হতে পারে। আর আপনি যদি শুরুতেই আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব বুঝতে পারেন। তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি এর ওষুধ কিংবা ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। আমরা নিচে এমন কিছু রোগের কথা আলোচনা করবো যা কিনা ভিটামিন ডি এর অভাবে হয়ে থাকে।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে ঘাড়, কোমর, পিঠে। ব্যথা কিংবা যন্ত্রনা হতে পারে।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে ক্ষত শুকাতে সময় লাগে।
- যাদের কিনা ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে তাদের অস্বাভাবিক মাত্রায় চুল ঝরতে থাকে।
- যাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে তারা অল্প কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
- অনেক সময় ভিটামিন ডি এর অভাবে হঠাৎ করে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- আপনার শরীরে যদি ভিটামিন ডি এর অভাব থাকে তাহলে আপনি মানসিক অবসাদের শিকার হতে পারেন। এবং আপনি বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তায় ভুগবে। অযথা অকারনে সবসময় দুশ্চিন্তা করবেন।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে মাংসপেশিতে টান ধরতে পারে। এবং এই টান ধরার ফলে আপনার শরীরে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে মানব শরীরের প্রতিটি গাঁটে ব্যথা অনুভূতি হয়। কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়। ভিটামিন ডি এর অভাবে অনেক সময় হাড় ভেঙে যায়। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে হাড়ের গঠন।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনি খুব ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে দাঁত ভেঙে যায়।
- ভিটামিন-ডি আপনার মেজাজ এর ওপর প্রভাব ফেলে।
ভিটামিন ডি ঘাটতির কারণ
আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি বিভিন্ন ধরনের কারণে হতে পারে। এই কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- দুষণ এমন এলাকায় বসবাস।
- বাড়ির ভিতরে বেশি সময় কাটানো।
- ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া।
- সূর্যের আলো প্রবেশ করে না এইরকম বাসায় বসবাস করা।
সানস্ক্রিন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বকে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। যার কারণে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হয়ে থাকে।
ভিটামিন ডি কেন গুরুত্বপূর্ণ
মানব শরীরের জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ভিটামিন ডি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ এর অবদান রাখে। আমাদের বয়সের সাথে সাথে আমাদের হাড় দাঁত এবং পেশীগুলোর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহিলাদের জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ভিটামিন-ডি মহিলাদের ঋতুস্রাব জনিত সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ডি এর অন্যতম একটি ভূমিকা হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন বি ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়। কারণ আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খান তাহলে ডিপ্রেশনে পড়বেন না। তাই প্রতিটি ব্যক্তির ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
আমাদের আজকের আর্টিকেল এর বিষয়টি ছিল ভিটামিন ডি সম্পর্কে। আশা করি আপনারা সকলেই বিস্তারিতভাবে বুঝতে পেরেছেন ভিটামিন ডি এর সম্পর্কে। আপনাকে আমাদের আজকের আর্টিকেল ভিটামিন ডি সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ।