Health

গর্ভের পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

1 min read
গর্ভের পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

পানি বা এমনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

গর্ভকালীন অবস্থায় একজন মায়ের এই সময় অনেক জটিলতা মেয়ে জীবনযাপন পার করতে হয় দীর্ঘ নয় মাস যাবত গর্ভকালীন অবস্থায় অনেক ধরনের জটিলতা দেখা দেয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে গর্ভের পানি বা এমনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা এই সমস্যা সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করো।

মা ও শিশুর অনেক জটিলতার উপর বসবাস করতে হয় এই জটিলতা থেকে আপনি কিভাবে মুক্তি পাবেন সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।  এই সময় গর্ভের পানি বা এমনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা। গর্ভধারণের কোন সময় এটি হতে পারে। এই সমস্যা সাধারণত বেশি থেকে বেশি হয়ে থাকে।

চলুন জেনে নিই গর্ভের পানি বা এমনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা ।

গর্ভের পানি বা এমনিওটিক ফ্লুইড কীঃ

মানব শিশুর ভ্রুণ মাতৃগর্ভে পানির মতো একধরনের তরলে ভেসে থাকে। হালকা হলুদাভ রঙের ক্লিয়ার এই তরলকেই এমনিওটিক ফ্লুইড বলে। গর্ভধারণের ১২ দিনের মধ্যেই এমনিওটিক স্যাক বা ভ্রুণের ধারক থলিটি গঠনের সাথে সাথেই এমনিওটিক ফ্লুইড উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়।

শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে এই ফ্লুইড পান করে আবার এতেই মূত্র ত্যাগ করে। এভাবেই চক্রাকারে এই ফ্লুইড এর ব্যালেন্স ঠিক থাকে। এই ফ্লুইড ভ্রুণের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আল্ট্রাসাউন্ড করেও ফ্লুইডের পরিমাণ কম না বেশি সেটা বোঝা যায়।

এমনিওটিক ফ্লুইডের কাজঃ

  • এই ফ্লুইডে অ্যান্টিবডি থাকে যা ভ্রূণকে ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • এই ফ্লুইডে শ্বাস নেওয়া এবং ফ্লুইড গিলে ফেলার মাধ্যমে ভ্রুণের শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ফ্লুইডে ভ্রূণ ভেসে বেড়ানোর কারণে ভ্রুণের পেশী ও হাড়ের গঠন ত্বরান্বিত হয়।
  • এই ফ্লুইড অ্যাম্বিলিকাল কর্ড বা নাভিরজ্জুকে সংকুচিত হতে বাধা দেয়। এই নাভিরজ্জু দিয়ে প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে মায়ের দেহ থেকে খাবার এবং অক্সিজেন ভ্রূণের দেহে যায়।
  • এই ফ্লুইড ভ্রুণের বিকাশে সাহায্য করে।
  • এটি ভ্রূণকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।
  • গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের রেগুলার তাপমাত্রার বজায় রাখে

গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার লক্ষণঃ

সাধারণত ৩৪-৩৬ সপ্তাহের পর থেকে প্রসবের আগ পর্যন্ত এমনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে প্রসবের সময়ের আগেই যোনিপথে ফোঁটায় ফোঁটায় অথবা তার থেকে বেশি পরিমাণে পানির মত তরল নির্গত হয় গর্ভধারণের সময়ের তুলনায় পেটের আকার ছোট থাকলে বা বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে এ ফ্লুইড কম হতে পারে গর্ভধারণের সাথে মায়ের ওজন বৃদ্ধির হার কম হলে গর্ভস্থ শিশুর হার্ট রেট হঠাৎ কমে গেলে।

গর্ভবতী মায়ের গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণঃ

গর্ভের পানি বা এমনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলোঃ যদি লেবারের আগেই এমনিওটিক ফ্লুইড এর মেমব্রেন বা এমনিওটিক স্যাক এর মেমব্রেন ফেটে যায়, জন্মগত ত্রুটির কারণে গর্ভস্থ্ শিশুর কিডনি ও ইউরিনারি ট্র্যাক্ট এ সমস্যা থাকলে, প্রসবের নির্ধারিত তারিখের পরও দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেলে, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভারী কাজ করলে সময়ের আগেই পানি ভাঙা শুরু হতে পারে।

এছাড়া মায়ের উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি-এক্লাম্পসিয়া থাকলে, গর্ভাবস্থায় মা কোনো কারণে পানিশূন্যতায় ভুগলে, টুইন টু টুইন ট্রান্সফিউশন সিন্ড্রম হলেও এমনিওটিক ফ্লুইড কমে যায়। টুইন টু টুইন ট্রান্সফিউশন সিন্ড্রম একটি রেয়ার মেডিকেল কন্ডিশন যেখানে টুইন বাচ্চা দুইটির পরিবর্তে একটি গর্ভফুল এর মাধ্যমে অক্সিজেন এবং অন্যান্য পুষ্টি আদান প্রদান করে।

গর্ভের পানি কমে যাওয়ার জটিলতাঃ

স্টিলবার্থ বা শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নিতে পারে সময়ের আগেই পানি ভেঙ্গে গেলে ইনফেকশন হতে পারে শিশুর বিকাশজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে অ্যাম্বিলিকাল কর্ড সংকুচিত হয়ে বাচ্চার অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি আদান প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে সিজারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে

জরায়ু সংকুচিত হয়ে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় শিশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকৃত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সময়ের আগেই শিশু ভূমিষ্ঠ হতে পারে মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হতে পারে।

গর্ভের পানি কমে যাওয়ার চিকিৎসাঃ

  • সাধারণত গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়া রোধ করার কোনো উপায় নেই, তবে নিয়মিত চেকআপ এ থাকলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মত চললে যে কোনোরকম দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা যায়।
  • গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়া বা পানি ভাঙার চিকিৎসা গর্ভাবস্থার পর্যায়ের উপর নির্ভর করে। যদি ৩৭ সপ্তাহ সম্পূর্ণ হওয়ার পর পানি ভাঙা শুরু হয় তাহলে শিশুর নিরাপত্তার খাতিরে অনেক সময় চিকিৎসক ডেলিভারি করিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন।
  • ২৪ সপ্তাহের আগে পানি ভাঙা শুরু হলে সেটি শিশুর জন্য খুব ঝুঁকির হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ক্লোজ মনিটরিং এ থাকতে হয়।
  • ২৪ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে পানি ভেঙে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। স্টেরয়েড শিশুর ফুসফুস বিকাশে সাহায্য করে।
  • ৩৪ সপ্তাহের পর পানি ভাঙা শুরু হলে গর্ভাবস্থা বিবেচনা করে যদি সম্ভব হয় মাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্ট এ রেখে ৩৭ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করার চেষ্টা করা হয়। তারপর ডেলিভারি করা নিরাপদ কারণ ততদিনে শিশুর পৃথিবীতে টিকে থাকার মত বিকাশ হয়ে যায়।
  • বর্তমানে বাংলাদেশে জরুরী কারণে ২৮ সপ্তাহের পর ডেলিভারি করেও শিশুকে বাঁচানো সম্ভব যদি তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে ক্লোজ মনিটরিং এ রেখে চিকিৎসা দেওয়া যায়।
  • গর্ভের পানি কমে গেলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার তত্ত্বাবধানে থাকলে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই ভয় না পেয়ে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন। নিরাপদে পৃথিবীর আলো দেখুক শিশু।
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x