রাষ্ট্রীয় জ্ঞান

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম

1 min read

সূচনা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এর পতাকা উত্তোলনের নিয়ম সম্পর্কে যারা অনুসন্ধান করছিলেন তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। এই পোস্টে আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাই যারা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পতাকা উত্তোলনের নিয়ম জানতে চাচ্ছেন পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন তাহলে জানতে পারবেন। আমরা জানি 14 ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয় আর এইদিকে কেন্দ্র করে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের অসংখ্য মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয় ফলে এই দিন জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে মূলত সকল সরকারি আধা-সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়। এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে

পাক হানাদার বাহিনীরা যখন বুঝতে পারে যে তারা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে তখন একটা ষড়যন্ত্র করে বসে আর তা হচ্ছে বিজয়ের দুইদিন আগে অর্থাৎ 14 ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে সকল মানুষদেরকে হত্যা করা। এই ষড়যন্ত্র কে কাজে লাগিয়ে তারা 14 ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই মেধাবী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, গবেষক ইত্যাদি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল বাংলাদেশ থেকে মেধাবী মানুষদেরকে মেরে ফেলতে যাতে করে বাংলাদেশে কোন মেধাবী মানুষ না থাকে ফলে দেশ মেধাশূন্য হলে তাদের ষড়যন্ত্র এর একটা ভাগ সফল হবে।

আজ ১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

১৪ ই ডিসেম্বর এর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদেরকে মনে রাখার জন্য প্রতিবছর জাতীয়ভাবে জাতীয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের বিজয়ের দুইদিন আগে বাংলাদেশের সকল মানুষদেরকে হত্যা করে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। তাদের এই ষড়যন্ত্রে তারা সফল হয়েছে বললে ভুল হবে না। তাদের এই ষড়যন্ত্রকে সফল করার জন্য বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গার মুনাফিক সহযোগিতা করেছিল যেমন রাজাকার-আলবদর ইত্যাদি। যে সকল বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিবাহিনীর কে সহযোগিতা করেছিল তাদেরকে নির্মল করায় পাকিস্তানিদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।

এর আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেই পরাজয়ের প্রতিশোধের একটা অংশ হিসেবে এই কাজটা করছে তারা সামান্যতম দ্বিধাবোধ করেনি। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষগুলোর উপর নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করার জন্যই তারা মূলত এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এই শহীদদেরকে বাংলার মাটি বাংলার সন্তানেরা যেন সারা জীবন মনে রাখতে পারে সে উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর 14 ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কয়েকটি কষ্টের দিন রয়েছে তাদের মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা এই বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নীতিমালা রয়েছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোতে সব ধরনের সরকারি ভবন অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবস ছাড়াও বাংলাদেশের শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবস এ সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য দেশেও পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান রয়েছে। জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পূর্বে জাতীয় পতাকাকে পুরোপুরি উত্তোলন করতে হয় এরপর এটাকে অর্ধনমিত করে বেঁধে রাখতে হয়। 

অর্থাৎ জাতীয় শোক দিবস, শহীদ দিবস এর মতো বুদ্ধিজীবী দিবসেও কর্মদিবসের শুরুতে পতাকা পরিপূর্ণ উত্তোলন করে সঙ্গে সঙ্গে এটাকে অর্ধনমিত করে রাখতে হবে। আর এটাই হচ্ছে বুদ্ধিজীবী দিবসে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম।

প্রতিবছরই 14 ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে অসংখ্য মানুষের ঢল পড়ে। বুদ্ধিজীবীদের হলো বাংলাদেশের অহংকার বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতীয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস মনে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কতগুলো জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়। জাতীয় দিবস গুলোর মধ্যে বুদ্ধিজীবী দিবস অন্যতম। তাই এদিন এই শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া আলোচনা সভা করা, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, মিলাদ-মাহফিল ইত্যাদি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার জন্য তাদের আত্মার মাগফেরাত এর জন্য 14 ই ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই দিবসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে সভা-সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচার প্রাপ্তির জন্য সারাদেশে বিভিন্ন গণআন্দোলন পরিচালিত হয়।

14 ই ডিসেম্বর এর বক্তব্য

এবার আমরা জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবসের বক্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করব। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই হিসেবে 14 ই ডিসেম্বর বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। নিচে 14 ই ডিসেম্বর এর নমুনা বক্তব্য দেওয়া হল

 

আসসালামু আলাইকুম

মঞ্চে উপস্থিত শ্রদ্ধেয় সভাপতি, উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, আমার সামনে উপস্থিত দর্শক বৃন্দ অথবা মেহমান বৃন্দকে প্রতি আমার সালাম।

আমরা আজকের এই আলোচনা সভায় কেন উপস্থিত হয়েছে তারা সকলেই অবগত আছি। আমরা সবাই জানি এই দিনটি প্রতিবছর আমাদেরকে কি মনে করিয়ে দেয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা অথবা পাকিস্তানি গভর্নর বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার জন্য যে নীল নকশা এঁকে ছিল এটি হচ্ছে সেই দিন। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমরা জাতির অহংকার বাংলাদেশের স্বর্ণ সন্তানদের মনে করছি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যাদের আত্মত্যাগের কোন মূল্য আমরা দিতে পারব না। আজকের এই বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা জাতির বুদ্ধিজীবীদের কে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সেই সাথে যারা এধরনের নিশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

বাংলার মুক্তিবাহিনীরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য দীর্ঘ নয় মাস বিরতিহীন যুদ্ধ চালিয়ে গেল। একের পর এক ষড়যন্ত্র করেও পাকিস্তানীরা এই যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারল না। মুক্তিবাহিনী দের বিরতিহীন যুদ্ধের এক সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের একটা সময় তারা বুঝতে পারে যে বাঙালিরা দমে যাওয়ার মতো নয়। তাদেরকে পরাজিত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পাকিস্তানিরা দীর্ঘ নয় মাস পরে যখন এটা বুঝতে পারল তখন একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা আকল। আর সেই নীলনকশায় আমাদের দেশের মেধাবী বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সুশীল ব্যক্তি, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, প্রফেসর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ লোকদেরকে হত্যা করা হয়।

আমরা এই বাংলার মেধাবী সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞ। হয়তো তারা বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশ আরো অনেক দূর অগ্রসর হতো। তবুও আমরা বাঙালিরা থেমে থাকার মতো জাতি নই। দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আমরা ঠিকই একদিন এই বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব। আমি আমার বক্তব্যকে আরো বেশী দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছি না। আমার বক্তব্যের কোন ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। এই বলে আমি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি।

শেষ কথা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম

আজকের পোষ্টে আমরা জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবসে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছে পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী দিবসের বক্তব্য সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। আমাদের উচিত জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবসে বুদ্ধিজীবীদেরকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x