বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 1920 সালের 17 ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান, সায়রা খাতুন। দুই ভাই, চার বোনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান।
বিভিন্ন জাতির শ্রেষ্ঠ পুরুষ থাকে। তেমনি বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ পুরুষ হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি শ্রেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির জাতির অবিসংবাদিত নেতা। পাকিস্তান সৃষ্টির অল্প কিছুকাল পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৈষম্য আর পরাধীনতার গ্লানি। 1948 সালে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে এদেশের জনগণের দ্বন্দ্ব আরো স্পষ্ট হয় ।
নিপীড়িত জাতির ভাগ্যাকাশে যখন দুর্যোগের কালো মেঘ, তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবময় আবির্ভাব। অসাধারণ দেশপ্রেম ও অদূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাই ভালোবেসে 1969 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি ভূষণ করে। স্বাধীনতার পর তাকে জাতির পিতার মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা এর জন্ম ও শিক্ষা
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 1920 সালের 17 ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান মাতা সাহেরা খাতুন। দুই বোনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা-মাতা তৃতীয় সন্তান। পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে টুঙ্গিপাড়ায় তার শৈশব কৈশোরের দিনগুলো কেটে যায়। গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক গোপালগঞ্জের মিশন হাই স্কুল এবং এই স্কুল থেকে 19 41 মেট্রিক পাশ করেন। এই সময় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে সংবর্ধনা সভা শেষে ফিরে যাচ্ছিলেন, পথ রোধ করে দাঁড়ালেন শেখ মুজিবুর রহমান।স্কুলের ছাত্রাবাস জরাজীর্ণ। ছাত্রাবাস মেরামতের জন্য অর্থ চাই।
শেরেবাংলা প্রথমে কিশোর মুজিবের সাহস স্পষ্ট বক্তব্য আর জনহিতৈষী মনোভাবের পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হন। তিনি প্রশ্ন করলেন কত টাকা চাই। দীপ্ত কণ্ঠে বললেন বারোশো টাকা। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এর সাথে টাকার ব্যবস্থা করলেন। বাল্যকাল থেকে শেখ মুজিবুর রহমান একটু অন্যরকম ছিলেন। একবার নিজের বাড়ির গোলাম গ্রামের গরিব চাষিদের মাঝে বিলিয়ে দেন। পিতা শেখ লুৎফর কারণ করলে, এবার চাষিদের জমির ধান সব নষ্ট হয়ে গেছে। অকালে পড়েছে কৃষক এবং তার পরিবার। আমাদের মতো ওদের পেটের ক্ষুধা আছে। ওরা আমাদের মত বাঁচতে চাই সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে চায়। বাবা ছেলের সাহস দেখে বেশ খুশি হলেন । এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান গরিবের বন্ধু আর নিপীড়িত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন।
কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে 1944 সালে আইএ এবং 1946 সালে বিএ পাস করেন তিনি। 1946 সালে ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শেখ মুজিব মুজিব হতে থাকে। 1947 এর দেশ আইন পড়া জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা এর রাজনৈতিক জীবন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় 1939 সালের মিশনারি স্কুল পড়ার সময়। স্কুলের সংস্কারের জন্য একটি দল গঠন করে নিজের নেতৃত্বে তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নিকট দাবী পেশ করেছিলেন। 1940 তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন এক বছরের জন্য নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে 1942 এন্ট্রান্স পাস কলকাতা ইসলাম আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন।
কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ পড়া থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। 1943 সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগদান করার সুযোগ সুবিধে বাঙালি মুসলিম নেতা হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আসেন। একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গড়ে তোলার আন্দোলন নিয়ে তিনি 1943 সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচন হন।
1947 সালে ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতা যুক্ত হন। এরপর ঢাকায় ফিরে এসে 19 48 সালের জানুয়ারি 4 তারিখে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রধান ছাত্রনেতায় পরিবহন।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর জীবনী
মূলত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক তৎপরতার বিকাশ ঘটে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন গণপরিষদে 1948 সালের ফেব্রুয়ারি 23 তারিখে অধিবেশনে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাষা বলার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
তখন বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। 1948 সালের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। এ বছর মাস রাষ্ট্রভাষা বাংলা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময় তিনি গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ করে পূর্ববঙ্গ পরিষদের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে, এমন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পূর্ব নাজিম উদ্দিন সরকার চুক্তিবদ্ধ হলে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা এর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা
বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
গোপালগঞ্জে আসনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল শক্তিশালী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান। যাকে তিনি 13 হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। 15 মে বঙ্গবন্ধু কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর 29 শে মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয় এবং 30 শে মে ঢাকায় ফেরার পথে বন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। দীর্ঘ সাত মাস পর 23 ডিসেম্বর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। পরবর্তীতে 1955 সালে 5 জুন আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হলে তিনি পল্টন ময়দান অনুষ্ঠিত সম্মেলনে 21 দফা দাবি পেশ করেন।
৬ দফা আন্দোলন
1968 সালে 25 জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব নির্বাচন করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু সম্প্রদায়িক প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায় এবং শোষণ বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার গ্রেফতার ও কারাদণ্ড হয়।
1966 সালে তিনি পেশ করেন বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ 6 দফা। এ সময় নিরাপত্তা আইনে তিনি বারবার গ্রেফতার হয়ে থাকেন। আজ গ্রেফতার আগামীকাল জামিনে মুক্তি হলে সন্ধ্যায় তিনি আবার গ্রেফতার হন। এরকম চলে পর্যায়ক্রমিক গ্রেফতার। তিনি কারারুদ্ধ জীবন-যাপন করতে থাকেন। তাকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা হয় আগরতলা মামলা।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ 1969 সালের জানুয়ারি 5 তারিখের দফা দাবি পেশ করে যার মধ্যে শেখ মুজিবুরের ছয়দফার সবগুলোই দফায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়। যা পরবর্তীতে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। গণআন্দোলনে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত।
মাসব্যাপী চলতে থাকে আন্দোলন, কারফিউ, 144 ধারা ভঙ্গ, পুলিশের গুলিবর্ষণ। পরবর্তী এই আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করলেন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব তাদের রাজনৈতিক গোল্ড গোল টেবিলের বই আগরতলা ষড়যন্ত্র প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধু কে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা এর উপাধি
1969 সালে 23 শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এক নাগরিক সংবর্ধনা তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি ভূষিত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের জাতির জনক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হিসেবে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও সম্প্রতি 2019 সালের 16 আগস্ট জাতীয় সংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস অনুষ্ঠানে তাকে বিশ্ববন্ধু ফ্রেন্ড অফ দা ওয়ার্ল্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় 2020 সালের গান্ধী শান্তি পুরস্কার এর জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু ধুর জন্মবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী প্রকল্পে এই পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু
জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলন ডাক দেয়। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন;
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
25 মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হত্যাকাণ্ডে সারাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এমনি অবস্থায় গ্রেফতারের আজ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তা ওয়ারলেস এর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে পাঠ করলে সারাদেশ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পূর্ববাংলার রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 27 শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার করে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারে।
বিশ্বের বলা যায় যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এক বিশেষ বিষয়। বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা আমাদের সকলের জানা উচিত তবে আমরা অনেক কিছু জানতে পারব।