ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার বিস্ময়কর উপকারিতা

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা কি?

অ্যালোভেরা হলো এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ।  আমরা প্রায় সকলেই অ্যালোভেরা চিনি।  অ্যালোভেরার আরেক নাম হল ঘৃতকুমারী।  অ্যালোভেরা গাছ দেখতে অনেকটা আনারসের গাছের মত।  অ্যালোভেরা হলো লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ।  অ্যালোভেরার পাতা একটু মোটা হয়ে থাকে,  পাতার দুই ধারে করাতের মতো কাটা দেখা যায়।  অ্যালোভেরা পাতার ভেতরের অংশটা পিচ্ছিল বা জেলির মত।  অ্যালোভেরা গাছ উচ্চতায় 60 থেকে 100 সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে।  অ্যালোভেরার পাতা 10 থেকে 20 ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।  অ্যালোভেরা রয়েছে নানান ধরনের ভেষজ ঔষধি গুনাগুন।  অ্যালোভেরার পাতায় রয়েছে 20 রকমের খনিজ পদার্থের উপাদান।  আর এই উপাদানগুলো আমাদের মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী।  অ্যালোভেরার নামটি আবিষ্কার করেছিলেন কেরলিনিয়াস। প্রাচীন যুগে অ্যালোভেরা পাওয়া যেত আফ্রিকা এবং ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ।  অ্যালোভেরায়  রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, আয়ন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি 2, ভিটামিন ভিটামিন b6 ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের উপাদান। 

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে।  তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল অ্যালোভেরার উপকারিতা।

অ্যালোভেরার উপকারিতা

মানবদেহে অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম।  নিচে কিছু অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

হজমের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা

আমাদের মধ্যে অনেকেরই হজমজনিত সমস্যা রয়েছে।  আর এই সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম।  হজমজনিত সমস্যা হলে মানবদেহে নানান ধরনের রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। আর আপনি যদি আপনার এই হজমের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চান তাহলে প্রতিনিয়ত অ্যালোভেরার রস বা অ্যালোভেরার জুস সেবন করুন।  দেখবেন অ্যালোভেরার জুস কিংবা রস আপনার হজমের খুবই উপকারী হবে। অ্যালোভেরার রস কিংবা জুস বা অ্যালোভেরা যেমন হজমের সমস্যা দূর করে তেমনি মানবদেহের রেচনতন্ত্র কে নানান ধরনের ক্ষতিকর  ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার উপকারিতা

এলোভেরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।  যা আমাদের শরীরের, মানসিক চাপ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। এলোভেরাতে রয়েছে ভিটামিন বি 12।  যা কিনা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে  সাহায্য করে।

ওজন কমাতে অ্যালোভেরা

ওজন কমাতে অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম।  মানব শরীরের ওজন কমাতে অ্যালোভেরা বা অ্যালোভেরার জুস খুবই কার্যকরী।  এলোভেরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ anti-inflammatory উপাদান যা আমাদের শরীরের বাড়তি চর্বি ও মেদ কমাতে সাহায্য করে।  আর এই অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে।  অনেক সময়ে ওজন কমানোর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকি যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধন করে। এই সকল ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি ওজন কমাতে চান এবং এর পার্শপ্রতিক্রিয়া এড়াতে চান তাহলে অ্যালোভেরার জুস সেবন করুন।

অ্যালোভেরার উপকারিতা হার্ট ও দাঁতের যত্নের ক্ষেত্রে

অ্যালোভেরা রয়েছে প্রচুর পরিমানের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান।  যা মানবদেহের কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।  আর এই কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে দেহ থেকে দূষিত রক্ত বের হয়ে যায়।  এই দূষিত রক্ত বের হয়ে যাওয়ার ফলে হৃদযন্ত্র বা হার্ড সুস্থ থাকে।  অনেক সময় দেখা যায় আমাদের দাঁতের মাড়িতে বা দাঁতের আশেপাশে ইনফেকশন হয়েছে।  সেই ইনফেকশন সারাতে অ্যালোভেরা আপনার সাহায্য করতে পারে।  কেননা অ্যালোভেরার জুস যে কোন প্রকার ইনফেকশন থেকে নিরাময় দিতে  সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরার উপকারিতা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার জুস কিংবা অ্যালোভেরার রস এর উপকারিতা অপরিসীম।  বিভিন্ন  পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকদের মতে অ্যালোভেরার রস রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সক্ষম।  আর রক্তে যদি আপনার গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায় তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকবে।  তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরার উপকারিতা।

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা

ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে  অ্যালোভেরার জেল বহু বছর ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে।  আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে যেমন রোদে পোড়া দাগ, রেস, চুলকানি ইত্যাদি। আরে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে অ্যালোভেরা জেলের  উপকারিতা অপরিসীম। অ্যালোভেরার জেল সরাসরি আপনার ত্বকের উপর লাগালে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।  আপনি যদি নিয়মিত অ্যালোভেরার ত্বকে লাগালে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়বে না।  আপনি যদি আপনার ত্বককে সুন্দর, মসৃণ, এবং উজ্জ্বল করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন।

ফেসওয়াশ হিসেবে অ্যালোভেরা

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফেসওয়াশ রয়েছে।  এসকল বিষয় গুলো অনেক সময়  নকল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  আর এই নকল প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।  আপনি যদি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চান তাহলে অন্যান্য ফেসওয়াশ বা ফেইস ক্রিম ব্যবহার না করে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন। কেরালা অ্যালোভেরা জেল মুখের ময়লা দূর করতে খুবই কার্যকরী।  প্রথমে আপনি মুখে হালকা করে লাগিয়ে নিন এরপর 15 থেকে 20 মিনিট ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে আপনি প্রতিদিন একবার করে হলেও করুন দেখবেন উপকার মিলবে।

পিম্পল দূর করতে অ্যালোভেরার উপকারিতা

আমাদের মধ্যে অনেক ভাই বোনের পিম্পলের সমস্যা রয়েছে।  আর এই সমস্যার সমাধানে অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম।  আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এবং পিম্পল দূর করতে অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন।  অনেক সময় দেখা যায় ঘামের কারণে ত্বকের উপর অতিরিক্ত পরিমাণে তেল চিটে ভাব সৃষ্টি হয়।  আর এর ফলে অনেকের মুখে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়।  আর আপনি যদি আপনার এই সমস্যা দূর করতে চান তাহলে অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করুন।  এটি কয়েকদিন একাধারে ব্যবহার করুন দেখবেন আপনার সমস্যাটা অনেকটাই কমে গেছে।

অ্যালোভেরার উপকারিতা চুলের ক্ষেত্রে

চুলের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম। বর্তমানে প্রায় সকল মেয়েদের বড় সমস্যা হলো চুল পড়া।  আর এই চুল পড়া থেকে মুক্তি দিতে অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম। তাছাড়া অ্যালোভেরার চুল ঘন এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে।  কেননা এলোভেরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদানযা কিনা খুশকি এবং চুল পড়ার মতো সমস্যা দূর করতে সক্ষম। অ্যালোভেরা আপনার চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। প্রথমে আপনি একটি অ্যালোভেরা  নিয়ে সেটির থেকে জেল সংগ্রহ করে নিন। এবার অ্যালোভেরা জেল এর সঙ্গে পরিমাণমতো লেবুর রস আমলার রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। চুল ভালো করে ধরে আসার পর এই মিশ্রণটি ভালোভাবে মাথায় লাগিয়ে নিন।  এই মিশ্রণটি ব্যবহার করার ফলে আপনার চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে  অ্যালোভেরা

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম। আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছে যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন। আর কোষ্ঠকাঠিন্যের এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে অ্যালোভেরার রসের উপকারিতা অতুলনীয়।  তাই আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের আক্রান্ত হন তাহলে এই সমস্যা দূর করার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করুন। একটি পান করার ফলে দেখবেন অনেকটাই উপকার মিলবে।

অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম

এতক্ষণ আমরা  অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি।  অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব।  ছোট থেকে বড় সকল মানুষ এই অ্যালোভেরা খেতে পারেন। আপনি অবশ্যই অ্যালোভেরা জুস বানিয়ে খাবেন কেননা অ্যালোভেরা জুস বানিয়ে খাওয়ার উপকারিতা বেশি।  প্রতিদিন সকাল বেলায় খালি পেটে যদি অ্যালোভেরা জুস খান তাহলে উপকার বেশি পাবেন।  তবে নিয়ম মেনে অ্যালোভেরা খাওয়া উচিত কেননা কোন জিনিস বেশি খাওয়া ঠিক না।

অ্যালোভেরার জেল বানানোর পদ্ধতি

অ্যালোভেরার জেল বানানোর জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি ভালো এবং তাজা অ্যালোভেরা খুঁজে আনতে হবে।  তারপর অ্যালোভেরার পাতা দু’পাশে কেটে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিন।  এবার 5 থেকে 6 মিনিট পর দেখবেন কাটা অংশ থেকে হলুদ রঙের কিছু রস বেরিয়ে আসছে।  আর অ্যালোভেরা থেকে বেরিয়ে আসা এই হলুদ পদার্থ শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।  তাই এই হলুদ পদার্থটি ভালো করে টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন বা কোন কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।  এবার অ্যালোভেরার ভিতরে রসালো অংশটি কে বের করে একটি বাটিতে রাখুন।  এবার এতে পরিমাণমতো গোলাপ জল ঢেলে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। আপনি যখন অ্যালোভেরার মধ্যে এই গোলাপ জল দিবেন তখন দেখবেন অ্যালোভেরার জেল টা থেকে বুদবুদ বের হয়ে আসছে।  এবার এই মিশ্রণটি আপনি 20 থেকে 30 মিনিট রেখে দিন।  এর ফলে জেলটা তৈরি হয়েছে সেটাই হলো অ্যালোভেরার জেল।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে।  আশা করি আপনারা সবাই বিস্তারিতভাবে বুঝতে পেরেছেন অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে।  অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে যে সকল তথ্য দেওয়া হয়েছে সকল তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *