হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়

হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা

হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা আজকে আলোচনা করব হাঁটু ব্যথা কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে । হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করুন।প্রাপ্ত বয়স্কদের হাঁটুর ব্যথা কোন সমস্যা। যাদের বয়স বেশি তাদের হাঁটুর ব্যথার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু গত ছোট বড় কোন ভেদাভেদ নেই সবারই হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।

বিভিন্ন সমস্যার কারণে পায়ের হাঁটুতে ব্যথা করে। যেমনঃ ক্রিকেট খেলতে গিয়ে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, দৌড়াদৌড়ি করলে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, বেশি জোরে হাঁটাহাঁটি করলে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে ইত্যাদি ।

এজন্য খুবই সর্তকতা অবলম্বন করে হাঁটাচলা করা দরকার যে কোন কাজ করতে গিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করুন হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যদি এক জায়গায় বসে থাকেন হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার ল্যাপটপ বিভিন্ন কাজ বসে থাকা করলে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসবের কারণে আপনার কোমরের ব্যথা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে জানা যায় যে হাঁটু ব্যথা হলে নিয়মিত ব্যথার ঔষধ খাওয়া ঠিক না। হাঁটুর ব্যথা দূর করার জন্য সাধারণ ব্যায়াম যথেষ্ট। আমরা সাধারণত ভেবে থাকিস যে যে কোনো ব্যথা দূর করার জন্য বাজে কোন অসুস্থ দূর করার জন্য একমাত্র ভালো কাজ হচ্ছে ঔষধ কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পরে আরো বিভিন্ন সমস্যা হয় এ জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজের শরীরের সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত ঔষধ না খেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চলুন দেখবেন আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হতে সাহায্য করবে। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

যে যে সমস্যার কারণে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যাথা হয় সেই বিষয়গুলো জেনে নিওঃ

হাঁটুর সাধারণ সমস্যাগুলির মধ্যে আরো রয়েছে হাঁটু মচকে যাওয়া বা স্ট্রেনড লিগামেন্ট, কার্টিলেজ টিয়ার, টেন্ডোনাইটিস এবং আর্থ্রাইটিস। ব্যথার ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে হাঁটুর ব্যথার চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপী এবং অস্ত্রোপচারের উভয় পদ্দ্বতিই বেছে নেয়া যেতে পারে।

হাঁটু ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি হলো বার্ধক্যজনিত হাঁটু ব্যথা, হাঁটুতে আঘাত বা হাঁটুতে বারবার চাপ পরে এমন কাজে নিয়োজিত থাকা।

হাঁটুর আঘাত বা সমস্যা নির্ণয়ের মধ্যে কিছু মেডিকেল পরীক্ষা সাধারণত এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান বা আর্থ্রোস্কোপির মতো ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি(গুলি) ব্যবহার করা হয়। হাঁটুতে ব্যথার কারণ যাই হোক, ঠান্ডা-গরম সেঁক দিলে আরাম পাবেন। তবে কখনোই সরাসরি বরফ দেওয়া ঠিক নয়। হয় কোনও আইস প্যাক ব্যবহার করুন কিংবা কোনও কাপড়ে বরফ বেঁধে নেবেন। ঠান্ডা সেঁক দেওয়ার পরে হাল্কা করে কোনও ব্যথার মলম লাগিয়ে রাখুন। আরাম হবে। হাঁটু ব্যথার হলে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে বেশ অনেক ক্ষণের জন্য ব্যথা কমবে। এতে শরীরও ঝরঝরে থাকবে।

হাঁটু নিম্নলিখিত অংশ দ্বারা গঠিতঃ

 টিবিয়াঃ

এটি শিন হাড় বা নীচের পায়ের বড় হাড়।

ফিমারঃ

এটি উরুর হাড় বা উপরের পায়ের হাড়।

 ৩ এটা হাঁটুর ক্যাপ। হাঁটুতে ২ ধরনের মাংশপেশি থাকে যার মধ্যে রয়েছে কোয়াড্রিসেপস পেশী (উরুর সামনের অংশে অবস্থিত), যা পা সোজা করে এবং হ্যামস্ট্রিং পেশী (উরুর পিছনে অবস্থিত), যা পা কে হাঁটুর বাকাতে সাহায্য করে। তিটি হাড়ের প্রান্ত কারটিলেজের একটি স্তর দিয়ে আবৃত থাকে যা শক শোষণ করে এবং হাঁটুকে রক্ষা করে। মূলত, হাঁটু হল ২ টি লম্বা পায়ের হাড় যা পেশী, লিগামেন্ট এবং টেন্ডন দ্বারা একত্রিত হয়।

 যে আঘাত বা ইনজুরির কারণে হাটুর জয়েন্টে ব্যথাঃ

হাঁটু বার্সাইটিস, মিনিস্কাস ইনজুরি,প্যাটেলার টেন্ডিনাইটিস,এ সি এল ইনজুরি ,হাড় ভেঙ্গে যাওয়া , যে বাতের সমস্যার কারণে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথাঃ অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ,গাউট (, সেপটিক আর্থ্রাইটিস,

যে ম্যাকানিক্যাল সমস্যার কারণে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথাঃ

ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড সিন্ড্রোম ,হাঁটুর ক্যাপ সরে যাওয়া , নিতম্ব বা পায়ে ব্যথা ,

হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার চিকিৎসাঃ 

আপনার হাঁটু ব্যাথার ধরন বুঝে ডাক্তার আপনাকে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে রেফার করতে পারে অথবা আপনি সরাসরি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ নিতে পারেন।

ঔষধ সেবনঃ আপনার হাঁটুতে ব্যথার কারণ যদি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গাউটের এর জন্য হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তার আপনাকে ঔষধ সেবনের জন্য পরামর্শ দিতে পারে।

অস্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়ামের অভাব এবং ওজন বাড়ার কারণে হাঁটুর ব্যথা ভারতের মতো দেশে একটি প্রধান সমস্যার আকার ধারণ করছে। দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সেই হাঁটুর সমস্যা শুরু হয়ে যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ হাঁটুর ব্যথায় আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ আর্থারাইটিসের মত রোগের সাথে লড়াই করছে।

এর মধ্যে ৮০% মানুষ সহজে হাঁটু ঘোরাতেই পারেন না। হাঁটুর সমস্যায় ভোগা ২৫% মানুষ সহজে তাদের দৈনন্দিন কাজও করতে পারেন না। এই সমস্যা ভারতে এই মুহূর্তে খুব গুরুতর। হাঁটুর ব্যথা মূলত ব্যক্তিগত জীবনধারার থেকে হয়। জীবনধারা এবং খাওয়াদাওয়া স্বাস্থ্যকর না হলে, এই সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে। হাঁটু পুরো শরীরের ওজন বহন করে। এমন রোগীদের সারিয়ে তোলার উপায় হল সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।

সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং সবজি খাওয়া; চর্বিযুক্ত খাবার, চিনি, ইত্যাদি না খাওয়া এবং মোটা হয়ে যাওয়া থেকে এড়িয়ে চলা। ওজন কমিয়ে ফেলতে পারলে কি আর্থারাইটিস বা হাঁটুর ব্যথা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে? হাঁটুর ব্যথায় ভোগা ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত ওজনের থেকে বেশি শারীরিক ওজন বা স্থূলতা হাঁটুর জোড়গুলোর পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে।

অতিরিক্ত ওজন থেকে জোড়গুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে; মাংসপেশি এবং আশেপাশের প্রসারিত কণ্ডরায় টান পড়ে আর কার্টিলেজ ছিঁড়ে যাওয়ায় দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। এছাড়াও, ধীরে ধীরে ব্যথা বৃদ্ধি পায় এবং এর জন্যে সেই ব্যক্তি সক্রিয় এবং স্বাধীন জীবনযাপন করতে অক্ষম হন। এটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে স্থূল মানুষের মধ্যে ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় (বিশেষ করে ওজন ভারবহন জোড়গুলোয়)।

অতএব, স্থূল ব্যক্তিদের তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বা কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বাতের কারণে কষ্ট পাওয়া স্থূল বা বেশি ওজনের ব্যক্তিদের ১ পাউন্ড (০.৪৫ কেজি) কমলে হাঁটুর ওপরে পড়া ভার ৪ গুণ কমে যায়। সুতরাং, ওজন কমে যাওয়া জোড়গুলোতে ব্যথা কমাতে এবং বাতের ব্যথা বেড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করতে সাহায্য করে। হাঁটুর ব্যথার বিভিন্ন কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত ওজন কোষ্ঠকাঠিন্য অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার খাওয়া অতিরিক্ত বাইরের খাবার খাওয়া ভাজা জিনিস খাওয়া কম পরিমাণে জল খাওয়া শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব চুন এবং হলুদ একসাথে মিশিয়ে মলম হিসাবে লাগানঃ হলুদ এবং চুন ব্যথা অপসারণে উপকারী এবং তা প্রমাণিত। হলুদ এবং চুন কিছুক্ষণের জন্য সর্ষের তেলে গরম করে হাঁটুতে লেপে রাখুন। কিছু সময় ব্যথা থেকে আরাম পাবেন। এই পদ্ধতিটি দিনে দুইবার করবেন। 

হলুদ দুধ: 

এক গ্লাস দুধের মধ্যে একটি চামচ দিয়ে হলুদ গুঁড়ো মেশান, সকাল বিকেল দু’বার পান করুন। এটি একটি প্রাকৃতিক ব্যথা কমানোর ওষুধ হিসাবে কাজ করে। হাঁটুর ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু সহজ উপায় (হাঁটুর ব্যথা কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি) সকালে ৪টি কাঁচা ঢ্যাঁড়শ জলের সাথে খান। সারা দিনে তিনটে আখরোট অবশ্যই খাবেন। এগুলো খেলেও সাইনোবিয়াল ফ্লুয়িড তৈরি হওয়া শুরু করে। অ্যাক্যুপ্রেশার রিংটাকে দিনে ৩বার ৩ মিনিটের জন্য অনামিকা আর মধ্যমায় পরে অ্যাক্যুপ্রেশার দিন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার হাঁটুন।

দিনে দশ মিনিট চোখ বন্ধ করে শুয়ে হাঁটুর ব্যথার খেয়াল রাখুন। নিয়মিত অনুলোম-বিলোম এবং কপাল্ভাতি প্রানায়ানাম করুন। অনুলোম-বিলোম ধীরে ধীরে এবং কম করে ১০০ বার করা অভ্যাস করুন। এতে শীঘ্রই লাভ হয়। গ্রাসকে কম করে ৩২ বার চিবোনো। এই সাধারণ পদ্ধতিতে কয়েক দিনের মধ্যেই হাঁটুতে সাইনোবিয়াল ফ্লুয়িড তৈরি হতে থাকে।

সারা দিনে অন্তত ১২ গ্লাস জল খেতে হবে। খেয়াল করবেন, কম পরিমাণে জল খাওয়া হাঁটুতে ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। খাবারের সাথে অঙ্কুরিত মেথি গ্রহণ করতে হবে। ২৫ গ্রাম অ্যালোভেরার তাজা দানার সাথে ১ থকে ২টি কালো মরিচ এবং একটু কালো লবণ আর জল পান করুন। এটি খালি পেটে খান। যদি হাঁটুতে সাইনোবিয়াল ফ্লুয়িড কমে যায়, তবে এই পদ্ধতি মেনে চললে আবার সাইনোবিয়াল ফ্লুয়িড তৈরি হবে।

আয়ুর্বেদ অনুযায়ী তৈরি প্রাকৃতিক ঔষধ:

অমৃত সত্ত, গোদন্ত ভস্ম, কোরাল পেস্ট, সোনালি মাক্ষীক ভস্ম, মহাভত বিধ্বংস রস, বৃহৎ বাতচিতমণি রস, একাঙ্গবির রস, মহাযোগরাজ গজ্ঞুল, চন্দ্রপ্রভাবতি, পুনর্নব মণ্ডূর। আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ ব্যবহার করুন। ওষুধ ব্যবহারের সাথে সাথে, আপনি কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সুবিধা পাবেন। ব্যথার সময় কখন কি খাবেন নাঃ আচার খাবেন না, চা পান করার সময়ে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান ও রাতে হালকা খাবার খান। রাত্রে ছোলা, ঢ্যাঁড়শ, ওল, আলু, কুমড়ো, মুলো, দই, রাজমা ইত্যাদি ভুলেও খাবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *