আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যাদের পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা সমস্যাটি নিয়ে ভুগছেন। কিন্তু রোগটি যেহেতু অনেকটা গোপন বিষয় তাই কাউকে কিছু বলতে পারছেন না আবার এতে কি ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করবেন রোগ থেকে ভালো হওয়ার জন্য সেই বিষয়েও কোনো পরামর্শ পাচ্ছেন না। সমস্যা সমাধান এর জন্য আপনি গুগলের কাছে চলে এসেছেন এবং গুগোল এই বিষয়ে সার্চ করছেন। তাই আপনার মনের প্রশ্নগুলোর সহজ উত্তর দেওয়ার জন্য এবং আপনার পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা সমস্যাটি দূর করার জন্য যে পরামর্শগুলো আপনার দরকার সেই পরামর্শগুলো দেওয়ার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছে।
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা সমস্যাটি অনেকেরই হয়ে থাকে। পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা সমস্যাটি বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার এই সমস্যাটি সমাধান করতে চান তবে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে আপনি কি জন্য এই সমস্যায় ভুগছেন তারপর সেই সমস্যা সমাধান কল্পে আপনাকে রোগের চিকিৎসা দিতে হবে। আমাদের প্রথমেই জেনে নিতে হবে পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা আসলে কি জন্য হয়। যে যে কারণে পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা হয় সেই কারণগুলো প্রথমেই শিরোনাম আকারে তুলে ধরলাম।
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা কারণ গুলো
- কৃমির জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- কোত দিয়ে পায়খানা করার জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- পাইলস এর জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- এনাল ফিশার এর জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- রেকটাল পলিপ এর জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- রেকটাম ক্যান্সার এর জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- পায়খানার রাস্তার আশেপাশে ফোড়া
- এনাল ফিস্টুলা এর জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
- পেরিএনাল হিমাটোমা এর জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
পাইলস সমস্যার জন্য পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা
পাইলস একটি গুরুতর শারীরিক সমস্যা এবং এই সমস্যার জন্য মলত্যাগের সময় প্রচন্ড কষ্ট হয় এবং তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। মলত্যাগের সময় যদি পায়ুপথের দেয়ালে প্রচন্ড চাপ পড়ে এবং টিস্যুগুলোতে অতিরিক্ত চাপের ফলে প্রদাহ হয় তবে ফুলে যায় এবং একসময় তা পরিণত হয়েছে সমস্যায় পরিণত হয়।
পাইলসের সমস্যা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- অভ্যন্তরীণ পাইলস
- বাইরের পাইলস
অভ্যন্তরীণ পাইলস
পায়ুপথের ভিতরে রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ এবং টিস্যুতে প্রদাহের ফলে সাধারণত অভ্যন্তরীণ পাইলস হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য পায়খানার সাথে রক্ত যায় এবং আঙ্গুলের মত এক ধরনের মাংসপিন্ডের বাইরে বেরিয়ে আসে। সেগুলো আবার আঙুল দিয়ে চাপ দিলেই ভিতরে ঢুকে যায়। এই মাংসপিণ্ড গুলোতে পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা তৈরি করার জন্য একটি গুরুতর ভূমিকা রাখে তাই এই চিকিৎসাটি আমাদের খুব দ্রুত করা উচিত। কিন্তু আপনি যেখানে সেখানে পাইলস এর ডাক্তার এর অনেক অ্যাড দেখতে পারবেন কিন্তু সেই অ্যাডগুলোতে যে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিয়ে থাকে সব সময় সবাই ভাল ট্রিট্মেন্ট দিয়ে থাকে না। তাই আপনার উচিত হবে একজন ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া। না হলে আপনার এই পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা সমস্যাটি দূর হবে না।
বাইরের পাইলস
অনেক সময় পায়খানা করার সময় দেখা গেছে ভিতর থেকে কিছু মাংসপিণ্ড বাইরে বেরিয়ে আসছে এবং আকারে অনেক গুলো জড়ো হয়ে রয়েছে এবং এগুলোতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছেন। এটা হচ্ছে বাইরের পাইলস।
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা এর অন্যতম কারণ পাইলস কেন হয়
যদি আপনি খাবার গ্রহণ করার সময় প্রচুর পরিমাণে পানি না খান তবে আপনার পাইলস হতে পারে। পায়েলস হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত এবং ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা ফাস্টফুড জাংক ফুড খুব পছন্দ করি এবং রাত জেগে কাজ করে তাদের সাধারণত দুই ধরনের সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়াও ঘনঘন ডায়রিয়া কোষ্ঠবদ্ধতা মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি কারণেও এই প্রাইজ হতে পারে। তাই পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা সমস্যাটি যদি পাইলস এর কারনে হয়ে থাকে এবং আপনি যদি সেটি দূর করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এই ব্যপারগুলো থেকে নিজেকে সাবধানে রাখতে হবে।
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা এর আরেকটি কারণ এনাল ফিসার
এনাল ফিসার হচ্ছে এমন একটি রোগ যেই সমস্যার কারণে পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি এত তীব্র আকার ধারণ করেছে অনেকেই মলত্যাগ করতে ভয় পান। যদিও আমরা সাধারণত এটিকে এনাল ফিসার বলে থাকি তবে অনেকে এটিকে বাংলাদেশ নামে চিনে থাকেন। পায়ুপথের এই রোগটি সাধারণত কিছু সচেতনতা মাধ্যমেই ভালো করা যায়, কিন্তু আমরা এই রোগ কে নিয়ে খুব বেশি ভাবি না এবং যথা সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করি না তাই সমস্যাটা ধীরে ধীরে প্রচন্ড আকার ধারণ করে এবং এক পর্যায়ে অপারেশন করা ছাড়া আর এই রোগ টি ভালো হয়না।
সাধারণত মলত্যাগের সময় অথবা বিভিন্ন কারণে পায়ুপথের মলাশয় বার রেকটাম বিভিন্ন কারণে ফেটে যায় অথবা ছিড়ে যায়। যদি এরকম ছিঁড়ে যাবে কেটে যায় তাহলে একে এনাল ফিসার বলি। যদিও অনেক দিন যাবত এই রোগটির চিকিৎসা করা না হয় তবে ধীরে ধীরে রোগটি তীব্র আকার ধারণ করে এবং এতে ক্রনিক এনাল ফিসার বলে।
এনাল ফিসার সাধারণত হয় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে। অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় বিশেষ করে তিন মাস বা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার পরেও এনাল ফিসার দেখা দিতে পারে তবে সে ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা রয়েছে। কখনো কখনো ডায়রিয়ার কারনেও এনালফিশার হয়ে থাকে।
পায়ুপথ বা রেক্টামে ক্যান্সার
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে পায়ুপথ বা রেকটাম ক্যান্সার। এই রোগটি সাধারণত 40 বছর বয়সের পরে হয়ে থাকে তবে আগেও হতে পারে। পায়ুপথ বা রেকটাম ক্যান্সার হলে সাধারণত রক্তক্ষরণ কি ঘটে ।যদি এমন রোগ হয় তবে সাধারনত পায়খানা করার পর মনে হয় আরো পায়খানা রয়ে গেছে এবং আরো পায়খানা করার ইচ্ছা জাগে। এই রোগের সঠিক চিকিৎসা না হলে পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা হতে পারে এবং মলদ্বার ফেটে এই জ্বালা আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে ।
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা নিবারণের উপায়
বরফ
যাদের পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা করে তারা এই ব্যথা নিবারন করার জন্য একটি ঘরোয়া উপায়ে পছন্দ করতে পারেন আরসিটি খুবই সহজ এবং তা হচ্ছে বরফ এর সেক দেওয়া। কয়েক টুকরা বড় একটি কাপড়ের টুকরা পিছিয়ে সেটি ব্যথার স্থানে 10 থেকে 12 মিনিট ধরে রাখুন এবং কিছুক্ষণ পর দেখবেন ভালো একটি কাজ হয়েছে।
অলিভ অয়েল
প্রতিদিন অল্প পরিমাণ সাধারণত এক চামচ অথবা আরেকটু কম অলিভ অয়েল খান এটি দেহের বিভিন্ন জায়গার যে ব্যথা রয়েছে তা কমাতে সাহায্য করে এবং অশ্ব রোগ নিরাময়ে খুব ভালো কাজ করে।
বেশি করে পানি খান
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা নিবারণের জন্য যে কয়েকটি পদ্ধতির কথা আমরা বলতে পারি তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে বেশি করে পানি পান করা। এই পানি হজমে সহায়তা করে। তাই আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারে যেই রোগ গুলো সাধারণত পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা এর অন্যতম কারণ।
আমাদের প্রতিদিন পরিমিত পানি পান করা উচিত। শীতের দিন সাধারণত হালকা একটু ঠাণ্ডা থাকলে অথবা আমরা যদি বাহিরে খাবার খাই তাহলে সাধারণত পানি কম গ্রহণ করি আর এখান থেকে আসলে আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি টা শুরু হয় এবং পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা হওয়ার যে রোগ গুলো তৈরি হয় এখান থেকেই তার যাত্রা শুরু। তাই পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা নিবারণের জন্য বেশি করে পানি পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।