জমির হিসাব বের করার নিয়ম

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে জমি অন্যতম।  আমরা যে সকল সম্পদ অর্জন করে থাকি সেগুলো সহজেই বিলীন হয়ে যেতে পারে কিন্তু যদি আপনি স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে আপনার পিতামাতার কাছ থেকে জমির পেয়ে থাকেন তাহলে সেগুলো সহজেই হারানোর সম্ভাবনা নেই।

আমাদের শেষ ঠিকানা আমাদের স্থাবর সম্পদ গুলো বহন করে।  আপনি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লস করতে পারেন কিন্তু আপনার জমি থেকে কখনোই লস হবে না।  আর জমির দাম প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে।  তাই জমি হচ্ছে আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি  সম্পদ।

কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা জমির হিসাব করতে পারেন না ফলশ্রুতিতে তারা জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন।  ধরুন আপনার একখণ্ড জমির উপর অন্য কেউ অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে তখন আপনি যদি আপনার জমির হিসাব সঠিকভাবে না জানেন তবে আপনি প্রতারিত হতে পারেন।

তাই প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য জমির হিসাব বের করার নিয়ম সম্পর্কে আপনার জানা দরকার।  অনেকেই ইন্টারনেটে জমির হিসাব বের করার নিয়ম লিখে সার্চ করে থাকে।  তাই আজকে আমরা আলোচনা করব জমি বের করার নিয়ম সম্পর্কে।  আপনি যদি আমাদের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে আপনি সহজেই জমির হিসাব বের করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।

জমির হিসাব বের করতে কি ধরনের স্কেল ব্যবহার করবেন

একসময় জমির হিসাব বের করতে শিকলের স্কেল ব্যবহার করা হতো।  শিকলের দৈর্ঘ্য ছিল 22 গজ 66    ফিট।  ছয়ষট্টি ফিট শিকল 100 ভাগে বিভক্ত হয়েছে।  প্রতিটি ভাগকে লিংক বলা হয়।

এক লিঙ্গের দৈর্ঘ্য হচ্ছে 7.92 ইঞ্চি।  1000 বর্গ লিংক কে 1 শতাংশ ধরে  জমির হিসাব বের করলে অনেক সহজ হয়ে যায়।  তবে এখনকার সময় আর এই ধরনের শিকল খুব একটা ব্যবহার করতে দেখা যায় না।

এখন ব্যবহার করা হয়  ফিতা বা টেপ।  এই ফিতায় ফুট এবং ইঞ্চির  দাগ  ছাড়াও মিটারে দাগাঙ্কিত থাকে।  জমির দৈর্ঘ্য ফুটে বের করে এবং প্রস্থ ফুটে বের করে সহজেই বর্গফুট নির্ণয় করা যায়।  তাই এখনকার সময় আর শিকল ব্যবহার না করে জমি পরিমাপের জন্য   ফিতা টেপ ব্যবহার করা হয়।

আয়তাকার জমির  হিসাব বের করার নিয়ম

আপনি যে  জমির হিসাব বের করতে চান সেই জমি  কে আগে আয়তাকার কিনা সেটা নির্ধারণ করুন।  আপনার জমিটি যদি আয়তাকার হয় তবে জমির হিসাব বের করার নিয়ম একেবারেই সহজ।  আপনাকে জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ বের করতে হবে।  আমরা জানি আয়তক্ষেত্রের সূত্র হচ্ছে

ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য * প্রস্থ

তাই ক্ষেত্রফল বের করতে আপনার জমির দৈর্ঘ্যের সাথে প্রস্থকে গুণ করুন।

ধরুন আপনার একটি জমির দৈর্ঘ্য হচ্ছে 56  ফুট  এবং জমির প্রস্থ হচ্ছে 43 ফুট।  এখন আপনি জমির দৈর্ঘ্যের সাথে  প্রস্থ  গুন করে 2408 সংখ্যাটি পেলেন।  এখন ধরে আপনার পরিমাণ  হচ্ছে 2408  বর্গফুট।

জমির হিসাব বের করার একক সমূহ

আমরা জমি কে সাধারণত বর্গফুট আকারে প্রকাশ করিনা আমরা জমির পরিমাণ কে প্রকাশ করি শতাংশ আকারে তাই আপনাকে জেনে নিতে হবে কত বর্গফুটে এক শতাংশ।  এছাড়াও জমি পরিমাপের আরো কিছু একক রয়েছে যেমন কাঠা, বিঘা, একর, হেক্টর।  জমির হিসাব বের করতে হলে আপনাকে এই একক গুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক জানতে হবে।

শতাংশ পরিমাপ জমির হিসাব বের করার নিয়ম

আপনি যদি আপনার জমির শতাংশ বের করতে চান তাহলে নিচের নিয়মটি মানতে হবে।

1  শতাংশ = 435.6 বর্গফুট।  অর্থাৎ একটি জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ গুন করে যদি 435.6 বর্গফুট পাওয়া যায় তবে জমির পরিমাণ হচ্ছে এক শতাংশ। আপনি  যে জমির পরিমাপ করতে চান প্রথমে বের করুন সেই জমি টোটাল কত বর্গফুট আছে।  পরে টোটাল বর্গফুট  কে যদি 435.6  দ্বারা ভাগ করেন তবে আপনি সেখানে কত শতাংশ জমি আছে তা নির্ণয় করতে পারবেন।

কাঠা হিসেবে জমির হিসাব বের করার নিয়ম

  • এক কাঠা =  1.65 শতাংশ।
  • 720  বর্গ   ফুট  জমিতে হয় এক কাঠা।
  • কাঠা হচ্ছে শতাংশ একক এর চেয়ে বড় একক।

 জমির হিসাব বের করার নিয়ম এর একক এগুলোর মধ্যে সম্পর্ক

  •  এক বিঘা =  33 শতাংশ
  •  এক বিঘা =   20  কাঠা
  •  এক একর =  100  শতাংশ
  •  এক হেক্টর =  247  শতাংশ

আয়তাকার নয় এমন জমির হিসাব বের করার নিয়ম

আয়তাকার নয় এমন জমির হিসাব বের করার নিয়ম একটু কঠিন।  কারণ আয়তাকার নয় এমন জমির হিসাব বিয়ে করতে গেলে আপনাকে জমির দুই পাশের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে হবে এবং  দৈর্ঘ্যের যোগফল কে 2 দিয়ে ভাগ করতে হবে।  দুই পাশের দৈর্ঘ্যকে যখন যোগ করে আপনি 2 দিয়ে ভাগ করবেন তখন গড় দৈর্ঘ্য বের হবে।  এ কিভাবে জমির দুই পাশের প্রস্ত বের করতে হবে।  দুই পাশের প্রস্ত বের করে তাদের যোগফল নির্ণয় করতে হবে এবং যোগফল কে 2 দ্বারা ভাগ করলে     গড়  প্রশ্ন পাওয়া যাবে।  গড় দৈর্ঘ্যকে গড় প্রস্থ   দিয়ে গুণ করলে জমির ক্ষেত্রফল পাওয়া যাবে।

তবে জমির   দুই পাশের দৈর্ঘ্য যদি খুব বেশি পার্থক্য হয় তবে তাদের গড় নির্ণয় করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা উচিত হবে না।  একইভাবে প্রস্থ যদি অসম হয় মানে প্রস্থের পার্থক্য যদি অনেক বেশি হয় তবে তাদের গড় বের করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করলে সে ক্ষেত্রফল নির্ণয় যথেষ্ট ত্রুটি থাকবে।  এরকম জমি বের করার আরও পদ্ধতি রয়েছে সে ভাবে বের করতে হবে।

বর্গাকার জমির হিসাব বের করার নিয়ম

বর্গাকার জমির হিসাব বের করার নিয়ম একেবারেই সহজ।  এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু জমির এক পাশের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে হবে।  যেহেতু বর্গের ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র হচ্ছে সেই বাহুর স্কয়ার  বা বর্গ বের করা।  যেমন  একটা জমির আকৃতি হয় বর্গাকার তবে তার এক বাহুর দৈর্ঘ্য নির্ণয় করলে তবে তার ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।  যেমন ধরা যাক একটি জমির এক বাহুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে 10 মিটার হলে এর ক্ষেত্রফল 100 বর্গমিটার।  কারণ 10  এর বর্গ হচ্ছে 100।  কিন্তু আমরা যেকোনো বিষয়ে এই কাজটি করলেও জমির ক্ষেত্রে এই কাজটি  করা উচিত হবে না।

কারণ আপনি পরিমাপ করা ছাড়া কিভাবে জানবেন আসলে জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সমান।  যদি আপনি অনুমান করে ধরে নে জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সমান এবং পড়ে যদি দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সমান না হয় তাহলে আপনার হিসেবে ত্রুটি থেকে যাবে।  তাই আপনার জমির আকৃতি যদি দরকার হয় আপনার সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হয় তারপরও আপনি জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ মেপে জমির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করবেন।  আর এই ক্ষেত্রে  পদ্ধতি একই আর সেটি হচ্ছে জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ গুন করে আয়তাকার জমির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করার পদ্ধতি।

জমির হিসাব বের করার নিয়ম নিয়ে সর্তকতা

যেহেতু জমি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ তাই আপনার হিসাব যদি একটু এদিক-সেদিক হয়ে যায় তবে বড় ধরনের হিসাবে গড়মিল হতে পারে।  এবং সেই গরমিল থেকে ঝগড়াঝাঁটি এমনকি মামলা মোকাদ্দমা হতে পারে।  তাই জমির হিসাব বের করতে হলে নিখুঁত পরিমাপ জানতে হবে।  আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি জমির হিসাব বের করার নিয়ম।

আপনি নিশ্চয়ই জমির হিসাব বের করার নিয়ম সম্পর্কে ভালো ধারণা অর্জন করেছেন।  কিন্তু জমির হিসাব বের করতে গেলে ব্যবহারিক  ভাবে শেখার গুরুত্ব অনেক বেশি।  আমার আর্টিকেল দেখে হয়তো অনেকে জমির হিসাব বের করতে পারবেন কিন্তু যদি আপনারা জমি জারা পরিমাপ করে তাদের সাথে সময় ব্যয় করেন তাহলে বুঝতে পারবেন সহজেই জমির হিসাব কিভাবে বের করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *