মাথা হচ্ছে শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু মাথা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে আমাদের সাড়া দেহ এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।যদিও মাথা ব্যথা খুব সাধারন একটা অবস্থা। কিন্তু বিভিন্ন কারণেই আমাদের সময়ে সময়ে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো হালকা ব্যথা হয় আবার কখনো কখনো ব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে। এই ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম এবং রুটিনে প্রভাব ফেলে। যদি এই মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী এবং তীব্র হয় তবে তা অবশ্যই চিন্তার কারণ। যেহেতু মাথাব্যথার সমস্যাটি ঘন ঘন দেখা দেওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে এবং অল্প হলেও কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন তাই মাথাব্যথা থেকে দূরে থাকার প্রক্রিয়াটি জানা খুবই প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেলে আমরা মাথা ব্যাথার ঔষধ এর নাম নিয়ে আলোচনা করব।
মাথা ব্যথার কারণ
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মাথা ব্যাথার বিভিন্ন কারন এর কথা বলেছেন। যেমন এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারন গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে টেনশন। মাইগ্রেনের কারণেও মাথাব্যথা হয়। আবার আরেকটি কারণ হচ্ছে ক্লাস্টার।
তবে মাথাব্যথার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
- মস্তিষ্কের টিউমার এর কারণে মাথাব্যথা
- অতিরিক্ত ওষুধের ব্যবহারের ফলে মাথাব্যথা
- আঘাতজনিত কারণে এবং আঘাত-পরবর্তী মাথাব্যথা
- সাইনাসের সমস্যা জনিত মাথা ব্যথা
- মেনিনজাইটিস জনিত মাথা ব্যথা
যাইহোক মাথাব্যথা যে কারণেই হোক আপনার উচিত হবে দেরি না করে অতি শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা পত্র গ্রহণ করা। ডাক্তারকে অবশ্যই আপনাকে জানাতে হবে আপনার মাথার কোন অংশে ব্যথা, মাথাব্যথার ধরন কি রকম, এবং আগে মাথা ব্যাথার কোন ওষুধ খেয়েছেন কিনা। এই সমস্ত ব্যাপার ডাক্তার কে জানানোর পর ডাক্তারের পরামর্শ আপনাকে দিবে অবশ্যই সে পরামর্শটি মেনে চলতে হবে।
মাথা ব্যাথার ট্যাবলেট কেন খাব
নিম্নলিখিত চার ধরনের অবস্থান ক্ষেত্রে মাথার ব্যথা উপশম করার জন্য ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।
- প্রাথমিক মাথাব্যথা
- সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা
- ঠান্ডা লেগে জ্বর ও মাথা ব্যাথা
- সাধারণ মাথাব্যথা
মাথা ব্যাথার ঔষধ এর ধরন
বিভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথার চিকিৎসা রয়েছে
1.ব্যথা উপশমকারী ঔষধ
এই ঔষধ গুলি মাথা ব্যথা এবং মাথা ব্যাথার সাথে অন্যান্য উপসর্গ গুলি উপশম করতে যথেষ্ট সহায়তা করে
2.অ্যাবোরটিভ থেরাপি
এই ঔষধ গুলি মাথাব্যথার ক্ষেত্রে মাথাব্যথার পিছনে যে ধরনের প্রক্রিয়া হয় তা বন্ধ করতে সহায়তা করে
3.প্রতিরোধমূলক থেরাপি
এগুলো মাথাব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
মাথা ব্যাথার ঔষধ এর নাম
বাজারে মাথাব্যথার অনেকগুলো ঔষধ পাওয়া যায়। তবে ব্যক্তিবিশেষ এবং মাথার ব্যথার ধরন অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। নিচে কয়েকটি মাথা ব্যাথার ঔষধের নাম উল্লেখ করা হলো।
Paracetamol and caffeine
- Napa extra
- Ace Plus
- reset Plus
- Cafedon
- Cadedol
- Caffo
- Clofamol extra
- Fap plus
- Feverex
Tolfenamic acid
- Loragin
- Anilic
- Migesic
- Migratol
- Migrex
- Tolfen
- Tolfor
- Tolmic
- Tufnil
- Namitol
Naproxen
- anafle x
- Diproxen
- Napro
- Naporo -a
- Naprosyn
- Naprox
- Napryn
- Naspro
- nuprafen
মাথা ব্যাথার ঔষধ গ্রহন করার সময় সতর্কতাঃ
মাথা ব্যাথার ঔষধ গ্রহন করার সময় আপনাকে সতর্ক হতে হবে। কারণ যে কোন চিকিৎসায় যদি অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে সেটা ভয়ানক খেতেই ডেকে আনতে পারে।
- মাথা ব্যথার সময় আপনাকে অ্যালকোহল গ্রহণ করা থাকে বিরত থাকতে হবে কারণ এটি চলার ক্ষেত্রে আপনার মাথা ঘোরা এবং তন্দ্রার কারণ হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো অ্যালকোহল এর সাথে পেটের সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- কেতপ্রফেন এবং ন্যাপ্রোক্সেন ঔষধ গ্রহন করার পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে বদহজম দূর করার জন্য কোন ধরনের ঔষধ যেমন এন্টাসিড গ্রহণ করবেন না।
- অ্যাসিটামিনোফেন লিভারের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি এই ঔষধ গ্রহন করেন তবু ডাক্তারঃ আপনার লিভার এর কার্যকারিতা কিডনির কার্যকারিতা এবং রক্তের উপাদান গুলির মাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
- গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথার ওষুধ গ্রহণ সবসময় নিরাপদ নাও হতে পারে। যদিও মানুষের ক্ষেত্রে গবেষণায় এখনো পাওয়া যায়নি তবে ডাক্তাররা সতর্ক থাকতে বলেছেন।
- মাথা ব্যাথার ঔষধ গ্রহন করার সময় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যায়। কারণ মাথা ব্যাথার ঔষধ গুলো খুবই অল্প পরিমাণ বুকের দুধের সাথে মিশতে পারে যা শিশুর ক্ষতিসাধন করার ক্ষমতা রাখে।
- কিডনি রোগীদের মাথাব্যথার ওষুধ গ্রহণ করার সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। কারণ মাথা ব্যাথার ঔষধের সাথে অন্য ঔষধ এর সমন্বয় ঘটানোর প্রয়োজন হতে পারে।
- যারা লিভার রোগে আক্রান্ত তাদের মাথাব্যথা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া উচিত। মাথা ব্যাথার ঔষধ লিভারের ক্ষতিসাধন করতে পারে। সমন্বয় করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
মাথা ব্যাথার ঔষধ গ্রহণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
মাথা ব্যথার ওষুধ গ্রহণের নিম্নলিখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে
- বমি বমি ভাব
- বদহজম
- ডায়রিয়া
- মাথা ঘোরা
- ঘাত
- এলার্জি প্রতিক্রিয়া
- শ্বাসনালী সংকুচিত হওয়া
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরণ
- রক্ত কণিকার পরিবর্তন
- তন্দ্রাচ্ছন্ন
- যকৃতের ক্ষতি
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
- ক্ষুধামান্দ্য হওয়া
- শুষ্ক মুখ
মাথা ব্যাথার ঔষধের সাথে নিম্নলিখিত ঔষধ গুলো খাওয়া উচিত নয়
- Busulfan
- Phenytoin
- Sirolimus
- Ramipril
- Warfarin
- Oxyphenbutazone
- Metamizole
- Amlodipine
মাথা ব্যাথার ঔষধ এর বিকল্প
ঘরে যদি মাথা-ব্যাথার-ঔষধ না থাকে আপনি কিছু ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট সাথে সাথে নিতে পারেন।
- একটি কাপড়ের ভিতর ঠান্ডা পানি নিয়ে অথবা বরফ নিয়ে সেটি আপনার মাথায় লাগান দেখবেন মাথা ব্যথার ওষুধের পরিবর্তে এস টা কাজে দিয়েছে।
- ঘরে আলো কমিয়ে দিন। কম্পিউটার মোবাইল ফোনের ঠান্ডা পানি নিয়ে অথবা বরফ নিয়ে সেটি আপনার মাথায় লাগান দেখবেন মাথা ব্যথার ওষুধের পরিবর্তে এটি কিছুটা কাজে দিয়েছে ঘরের আলো কমিয়ে দিন আলো কমিয়ে দিন কম্পিউটার স্ক্রিন মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিন দেখবেন আপনার মাথা ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কমে গেছে ।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
- ঘুমের ব্যবস্থা করুন। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা এমন বিছানা ব্যবহার করুন যেটা আপনার ঘুমের সহায়ক হতে পারে।
- চা এবং কফি পান করলেও মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথার প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পায়। অর্থাৎ ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পান পান করুন দেখবেন মাথাব্যথা অনেকটাই উপশম হয়েছে।
মাথা ব্যথার ঔষধ কি নিরাপদ
মাথা ব্যাথার ঔষধ নিরাপদ কিনা সে সম্পর্কে ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিয়েছেন হ্যাঁ। মাথা মাথা-ব্যাথার-ঔষধ আপনার নিরাপদ।
মাথা ব্যাথার ঔষধ কখন বন্ধ করবেন
স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাথা-ব্যাথার-ঔষধ গ্রহণ করার পর যদি দেখেন আপনার মাথা ব্যথা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে তবে আপনি মাথা ব্যাথার ঔষধ গ্রহন করা বন্ধ করে দিতে পারেন। কিন্তু যদি আপনার মাথা ব্যথার চিকিৎসা টি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা পেলেও ঔষধ বন্ধ করা যাবে না। আপনার ঔষধ গ্রহণ চালিয়ে যেতে হবে। তবে একান্ত বন্ধ করার প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাথা-ব্যাথার-ঔষধ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
সতর্কতাঃ
আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জানলাম মাথা ব্যাথার ঔষধের নাম সম্পর্কে। মাথা ব্যথার ওষুধের নাম গুলো বলেছি সেগুলো সার্বজনীন। তাই আপনার উচিত হবে না ইন্টারনেট থেকে একটি আর্টিকেল পড়ে মাথা ব্যাথার ঔষধ গ্রহন করা। আবার অনেক ফার্মেসিতে গেলেও তার মাথা ব্যাথার ঔষধ দিয়ে থাকে। কিন্তু তারা সব সময় যথেষ্ট পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনা। তাই শুধু ফার্মাসিস্টদের পরামর্শে মাথা-ব্যাথার-ঔষধ গ্রহণ করা উচিত হবে না। আপনার অল্প মাথা ব্যথা থাকে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তুলতে পারেন। আর যদি দেখেন মাথাব্যথার অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করুন এবং সে অনুযায়ী মাথা-ব্যাথার-ঔষধ খান।