ওযুর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব সম্পর্কে বিস্তারিত

অজুর ফরজ কয়টি তা আমরা অনেকেই জানিনা অথচ অজু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল যা সঠিকভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন হয় এবং এই পবিত্রতা নামাজ আদায়ের জন্য পূর্ব  শর্ত এমনকি অযুকে নামাজের চাবি এবং নামাজকে জান্নাতের চাবি হিসেবে হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। 

তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি।

সাথে সাথে এর প্রাসঙ্গিক আরো অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করব যেমন

  • অজুর সুন্নত
  • অজুর ওয়াজিব
  • অজুর মুস্তাহাব
  • অজুর আদব সমূহ
  • ওযু সম্পাদনের পদ্ধতি
  • ওযু ভঙ্গের কারণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তাই অনুরোধ রইলো পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন তাহলে অজু সংক্রান্ত সকল মাসআলা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।

ওদুর ফরজ কয়টি

ওযুর ফরজ ১

সমস্ত মুখ ১বার ধৌত করা।

(আল-মায়িদাহ,:আয়াত: ৬,)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَ اَیْدِیَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَ امْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَ اَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَیْنِ١ؕ وَ اِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا١ؕ وَ اِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ اَیْدِیْكُمْ مِّنْهُ١ؕ مَا یُرِیْدُ اللّٰهُ لِیَجْعَلَ عَلَیْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّ لٰكِنْ یُّرِیْدُ لِیُطَهِّرَكُمْ وَ لِیُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَیْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ

হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দু’টি গোড়ালী পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো। যদি তোমরা ‘জানাবাত’ অবস্থায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও।  যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মসেহ করে নাও।  আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে।

ওযুর ফরজ ২

একবার কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়া।

ওযুর ফরজ ৩

মাথা চার ভাগের একভাগ মাছেহ করা।

ওযুর ফরজ ৪

দুই পা টাকনুসহ একবার ধৌত করা।

ওযুর ফরজ কয়টি তা জানার পর এখন আমরা জানবো

ওজুর ওয়াজিব কয়টি

(১) ঘন দাঁড়ি নিচের চামড়া ছাড়া আর পাতলা দাঁড়ি নিচের চামড়াসহ ধৌত করা।

সুনানে তিরমিজি : ৩১

—حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ عَامِرِ بْنِ شَقِيقٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُخَلِّلُ لِحْيَتَهُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

অনুবাদ:

উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ি খিলাল করতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৪৩০)।

ওযুর ফরজ কয়টি, ওযুর ওয়াজিব কয়টি তা জানার পর এখন আমরা জানবো

 ওযুর সুন্নাহ কয়টি

(১) নিয়ত করা (মনে করে ওদুর নিয়ত করতে হবে);

(২) বিসমিল্লাহ বলা।

সুনানে নাসাঈ : ৭৮

—أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ أَنْبَأَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، قَالَ حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ ثَابِتٍ، وَقَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ طَلَبَ بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَضُوءًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم هَلْ مَعَ أَحَدٍ مِنْكُمْ مَاءٌ ” . فَوَضَعَ يَدَهُ فِي الْمَاءِ وَيَقُولُ ” تَوَضَّئُوا بِسْمِ اللَّهِ ” . فَرَأَيْتُ الْمَاءَ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ حَتَّى تَوَضَّئُوا مِنْ عِنْدِ آخِرِهِمْ . قَالَ ثَابِتٌ قُلْتُ لأَنَسٍ كَمْ تُرَاهُمْ قَالَ نَحْوًا مِنْ سَبْعِينَ .”

অনুবাদ:

ইসহাক ইবন ইবরাহীম (র.) —- আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (কোন এক সফরে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবী পানি তালাশ করলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কারো নিকট পানি আছে কি? (একজন পানি এনে দিলে) তিনি পানিতে হাত রাখলেন এবং বললেনঃ বিসমিল্লাহ্‌ বলে উযূ কর। আমি তাঁর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে পানি বের হতে দেখলাম। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তিসহ সকলেই এই পানিতে উযূ করেন। সাবিত (র.) বলেনঃ আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি উপস্থিত লোকের সংখ্যা কত মনে করেন? তিনি বললেন, সত্তরজনের মত।

(৩) এক অঙ্গ শুকানোর পুর্বে আরেক অঙ্গ ধোয়া।

(৪) ওদুর তারতীব (ক্রমধারা) ঠিক রাখা।

(৫) ওদুর অঙ্গগুলো ডলে ডলে ধোয়া।

সুনানে আবু দাউদ : ৩৩২

—حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَوْنٍ، أَخْبَرَنَا خَالِدٌ الْوَاسِطِيُّ، عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، ح وَحَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، أَخْبَرَنَا خَالِدٌ، – يَعْنِي ابْنَ عَبْدِ اللَّهِ الْوَاسِطِيَّ – عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ بُجْدَانَ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ اجْتَمَعَتْ غُنَيْمَةٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا أَبَا ذَرٍّ ابْدُ فِيهَا ” . فَبَدَوْتُ إِلَى الرَّبَذَةِ فَكَانَتْ تُصِيبُنِي الْجَنَابَةُ فَأَمْكُثُ الْخَمْسَ وَالسِّتَّ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” أَبُو ذَرٍّ ” . فَسَكَتُّ فَقَالَ ” ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ أَبَا ذَرٍّ لأُمِّكَ الْوَيْلُ ” . فَدَعَا لِي بِجَارِيَةٍ سَوْدَاءَ فَجَاءَتْ بِعُسٍّ فِيهِ مَاءٌ فَسَتَرَتْنِي بِثَوْبٍ وَاسْتَتَرْتُ بِالرَّاحِلَةِ وَاغْتَسَلْتُ فَكَأَنِّي أَلْقَيْتُ عَنِّي جَبَلاً فَقَالَ ” الصَّعِيدُ الطَّيِّبُ وَضُوءُ الْمُسْلِمِ وَلَوْ إِلَى عَشْرِ سِنِينَ فَإِذَا وَجَدْتَ الْمَاءَ فَأَمِسَّهُ جِلْدَكَ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ ” . وَقَالَ مُسَدَّدٌ غُنَيْمَةٌ مِنَ الصَّدَقَةِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَحَدِيثُ عَمْرٍو أَتَمُّ .”

অনুবাদ:

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গণিমাতের সম্পদ (মেষপাল) জমা হলো। তিনি বলেলেনঃ হে আবূ যার! এগুলো মাঠে নিয়ে যাও। আমি বকরীগুলো নিয়ে রাবযাহ (মদীনার নিকটবর্তী একটি গ্রাম) -এর দিকে গেলাম। সেখানে আমি অপবিত্র হলাম। আমি পাঁচ-ছ’দিন এরূপ অবস্থায় (গোসল ছাড়া) কাটালাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ফিরে এসে (বিষয়টি জানালাম)। তিনি বললেনঃ আবূ যার! আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! তোমার মা তোমার জন্য কাঁদুক! তোমার মার দুঃখ হোক! এই বলে তিনি একটি ক্রীতদাসীকে ডেকে একটি বড় পাত্র ভর্তি পানি আনালেন। সে আমাকে একটি বড় কাপড় দিয়ে একদিক পর্দা করে দিল। আর অপরদিক আমি উট দিয়ে পর্দা করলাম। অতঃপর গোসল করলাম। এতে আমার মনে হলো, আমার উপর থেকে যেন একটি পাহাড় সম বোঝা সরে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পবিত্র মাটিই মুসলমানদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের বাহন (পানির সমতুল্য), যদিও দশ বছরের জন্য (পানি দুষ্প্রাপ্য) হয়। অতঃপর যখন পানি পেয়ে যাবে তখন পানি ব্যবহার করবে। কেননা পানি অধিকতর উত্তম। সহীহ। মুসাদ্দাদ বলেন, ঐগুলো ছিল যাকাতের বকরী।

(৬) এক মুদ পানি দিয়ে ওদু করা (১মুদ=৬০০গ্রাম):

সহীহ বুখারী : ২০১

—حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مِسْعَرٌ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ جَبْرٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا، يَقُولُ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَغْسِلُ ـ أَوْ كَانَ يَغْتَسِلُ ـ بِالصَّاعِ إِلَى خَمْسَةِ أَمْدَادٍ، وَيَتَوَضَّأُ بِالْمُدِّ.

অনুবাদ:

আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সা‘ (৪ মুদ) হতে পাঁচ মুদ পর্যন্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং উযু করতেন এক মুদ দিয়ে। (মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩২৫, আহমাদ ১৪০০২, ১৪০৯৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০১)

(৭) মিসওয়াক করা।

(সুনানে আবু দাউদ ৪৭)

(৮) কবজি পর্যন্ত দুই হাত ৩ বার ধৌত করা।

(সহীহ মুসলিম ২২৬/১)

(৯) দুই হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।

(সুনানে আবু দাউদ১৪২)

(১০) কুলি করা ৩ বার‌।

(১১) নাকে পানি হালকা টানা ৩ বার।

(১২) প্রতিবার নাকে পানি টানার পর তা ঝেড়ে ফেলা।

সুনানে আবু দাউদ : ২৩৬৬

—حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ لَقِيطِ بْنِ صَبِرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، لَقِيطِ بْنِ صَبِرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” بَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا ”

অনুবাদ:

লাক্বীত্ব ইবনু সাবরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি উত্তমরূপে নাকে পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করো- যদি তুমি সওম পালনের অবস্থায় না থাকো। সহীহ।

(১৩) সমস্ত মুখ ধৌত করা ৩ বার।

(১৪) কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়া ৩ বার।

(১৫) সমস্ত মাথা একবার মাছেহ করা।

(১৬) উভয় কান মাসাহ করা।

(১৭) দুই পা টাকনুসহ ৩ বার ধৌত করা।

(১৮) দুই পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকগুলো কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে খিলাল করা।

(১৯) ওদুর অঙ্গসমূহ ডান দিক থেকে শুরু করা।

(২০) ওদুর পর কালেমা শাহাদাত পাঠ করা।

ওযুর ফরজ কয়টি তা জানার পর এখন আমরা জানবো

ওযুর মুস্তাহাব কয়টি

ওদুর পর দুই রাকাত নামাজ পড়া

ওদুর কার্যক্রমসমূহের ক্রমধারা (তারতিব)

১। নিয়ত করা

২। মিসওয়াক করা

৩। হাত ধুয়া

৪। কুলি করা

৫। নাকে পানি টানা ও ঝাড়া

৬। মুখ মণ্ডল ধুয়া

৭। কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়া

৮। মাথা মাছেহ করা

৯। পা ধুয়া

ওদু সম্পাদনের পদ্ধতি

(১) কব্জি পর্যন্ত হাত ধৌত করার পদ্ধতি : ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিন বার ধৌত করা। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করা।

(২) মিসওয়াক করা:

কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা। মিসওয়াক ওজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে ঘষে নিলেও হবে।

(৩) কুলি করার পদ্ধতি:

ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করা। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা।

(৪) নাক পরিষ্কার করার পদ্ধতি:

ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে

(৫) মুখ ধুয়ার পদ্ধতি:

কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে।

(৬) দাড়ি ও গোঁফ ধুয়ার পদ্ধতি :

দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।

(৭) কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ার পদ্ধতি :

হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে।

(৮) মাথা মাসেহ করার পদ্ধতি :

বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত উভয় হাতের অবশিষ্ট আঙ্গুলের পেট মাথার সামনের অংশে রেখে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যাবে। অতঃপর তা আবার সামনের দিকে পূর্বের স্থানে টেনে নিয়ে আসবে।

(৯) পা ধুয়ার পদ্ধতি:

ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে

ওদু ভঙ্গের কারণসমূহ

(১) মল-মূত্র ত্যাগ করা।

(২) বায়ূ ত্যাগ করা।

(৩) মযী বা ‘অদী নির্গত হলে।

(৪) নিদ্রা গেলে।

(৫) বমি হলে।

(৬) নাক দিয়ে রক্ত বের হলে।

(৭) ইস্তিহাযার রক্ত আসলে।

ওদুর মাকরুহসমূহ

(১) প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করা;

(২) মুখমন্ডল ধৌত করার সময় সজোরে মুখে পানি নিক্ষেপ করা;

(৩) বিনাকারণে বাম হাত দিয়ে ওদু করা;

(৪) প্রতিবার নতুন পানি দিয়ে মাসাহ করা;

(৫) তিন বারের বেশি অঙ্গ ধৌত করা।

ওদুর আদব

(১) উচু স্থানে বসে ওদু করা।

(২) ওদুর স্থান পবিত্র হওয়া।

(৩) কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে দুই কান খিলাল করা;

(৪) চেহারার সম্মুখভাগ থেকে ধৌত শুরু করা;

(৫) সলাতের সময় হওয়ার আগে ওদু করা;

(৬) কোমল ভাবে পানি দিয়ে চেহারা ধৌত করা;

(৭) গুদু করার সময় তাড়াহুড়া না করা;

(৮) অঙ্গগুলোর নির্ধারিত সীমার বাহির পর্যন্ত ধৌত করা।

(৯) ওদুর সময় কথা না বলা;

(১০) ওদুর পাত্র তিনবার ধৌত করে নেওয়া।

ওদুর গুরুত্ব

সলাত হলো ঈমানদারের ঈমানের প্রমাণক আমল। এটি সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল। সলাত ব্যতীত কোন ব্যক্তি সত্যিকারের মুমীন হতে পারে না। আর শুদু সলাতের পূর্বশর্ত। শুদু ব্যতীত সলাত হবে না। তাই ওছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি যেমন সলাতসংশ্লিষ্ট ইবাদত তেমনি এর অসংখ্য গুরুত্বের কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র আমলও বটে। নিচে ওদুর কয়েকটি গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো:

(১) ওজুকারীকে আল্লাহ তা’আলা ভালোবাসেন;

(২) পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ, আর ওদুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জিত হয়;

(৩) ওদুকারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়;

(৪) ওদুকারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে;

(৫) ওদু এক সলাত হতে অন্য সলাতের মধ্যে সংঘঠিত গুনাহের কাফফারাহ স্বরূপ;

(৬) গুল্লুর মাধ্যমে গুনাহ দূর হয়;

(৭) ওজুর অংগ প্রত্যংগ গুলো কিয়ামতের দিন আলোকিত হবে এবং উম্মতে মুহাম্মাদীকে তা দেখে আহবান করা হবে।

(৮) ওদু মুমীনের মর্যাদা বৃদ্ধি করে;

(৯) ওদু করে দু’আ পড়ে রাতে ঘুমালে যদি ঐ রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে তার মৃত্যু ইসলামের ওপর হবে।

(১০) রাতে ঘুমের সময় শয়তান তিনটি গিরা যাতে মুমীন ঘুমিয়ে থাকে। সে ঘুম থেকে জাগলে প্রথম গিরা, ওদু করলে দ্বিতীয় গিরা এবং সলাত আদায় করলে তৃতীয় গিরা খুলে যায়।

(১১) ওদু হলো সলাতের চাবি।

অজু ফরজ কয়টি শেষ কথা

হুজুর ফরজ হচ্ছে মোট চারটি এই চারটি সম্পাদনের মাধ্যমে ওযু হয়ে যাবে তবে অন্যান্য সুন্নতগুলো আদায় করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যাবে এবং সেটাই উত্তম কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আমলগুলো করেছেন সেগুলো যদি আমরাও করি তাহলে দিগুন সওয়াব পাওয়া যাবে প্রথমত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার কারণে দ্বিতীয়ত একটি ইবাদত করার কারণে । আল্লাহতালা আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করে অজুর সুন্নাহ ও আদব সমূহ  বজায় রেখে  ওযু করার মত তৌফিক দান করুন আমিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *