ফরজ নামাজের পর আমল, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আমল
ফরজ নামাজের পর আমল প্রথম পর্ব
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু আলা রসূলিল্লা । সম্মানিত পাঠক মুসলিম হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি নামাজ আদায় করে থাকি কারো পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত আদায় করা হয় কারো বা সাপ্তাহিক শুধু জুমার নামাজ টাই পড়া হয় । তবে প্রত্যেক নামাজের পর নির্ধারিত অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে যা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা।
তাই আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব কোরআন ও হাদিসের আলোকে দলিল প্রমাণ সহ ফরজ নামাজের পর আমলসমূহ কি, উপকারিতা কি ? কখন আদায় করতে হয়? কিভাবে পড়তে হয়? কতবার পড়তে হয় ?
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নামাজ শেষে কি কি আমল করতেন।
- এবং সাহাবায়ে কেরামকে কি কি আমল করতে বলেছেন।
- কোন কোন আমলটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল।
- কোন কোন আমলটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়েননি।
- কোন আমলটি করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে তিনি তাকি দিয়েছেন।
তো প্রথমে জেনে নেওয়া যাক জিকির কাকে বলে।
জিকিরের প্রাথমিক ধারণা
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কৃত সকল কাজই যিকর হিসেবে বিবেচিত। সলাত, কুরআন তিলাওয়াত যেমন যিকর তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত বিভিন্ন বাক্যও যিকর বা দূ’আ হিসেবে বিবেচিত। ফলে দু’আ ও যিকরের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেছেন, তোমরা আমাকেই স্মরণ (যিকর) কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো।
[সূরা বাকারা, ২:১৫২]
যিকর ও দু’আ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই আমাদের সকল ইবাদতের লক্ষ্য। তাই প্রতিটি ইবাদত করার পূর্বে সেই ইবাদত কী, কেন করবো, কিভাবে করবো সে বিষয়গুলো জানা জরুরি। নিম্নে যিকর ও দু’আ কী সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলো:
(১) যিকর শব্দের অর্থ স্মরণ করা বা স্মরণ করানো।
(২) দু’আ বলতে আমরা আল্লাহ সাথে কথাবার্তা, প্রার্থনা ও মুনাজাতকে বুঝি। [সহীহ ইবনে খুযাইমাঃ৪৭৪]
(৩) যেকোন প্রকারে মনে, মুখে, অন্তরে, কর্মের মাধ্যমে, চিন্তার মাধ্যমে, আদেশ পালন করে বা নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহর নাম, গুণাবলী, বিধি-বিধান, তাঁর পুরস্কার, শাস্তি ইত্যাদি স্মরণ করা বা করানোকে ইসলামের পরিভাষায় যিকর বা আল্লাহর যিকর বলা হয়। [ড খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ), রাহে বেলায়েত, অনুচ্ছেদ-১.৪, পৃ.৪৫)।
(৪) মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন, “তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করিব। [সূরা বাকারা,২:১৫২]
ফরজ নামাজের পর আমল ১
الحمد لله। পাঠ করা
(সূত্র সহীহ মুসলিম ২১৩৭/১)
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি
ভাবানুবাদ বাংলাঃ সকল প্রশংসা আল্লার জন্য।
উপকারিতাঃ
১। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বাক্য এটি; [সহীহ মুসলিম: ২১৩৭]
২। রাসূল (সা:)এর কাছে পৃথিবীর বুকে সূর্যের নিচে যা কিছু আছে সবকিছু থেকে বেশি প্রিয়। [সুনানে তিরমিযী:৩৫৯৭]
প্রাসঙ্গিক সময় ও পদ্ধতি
যেকোন সময় পড়া যায়।
ফরজ নামাজের পর আমল ২
أستغفر الله পাঠ করা
(সূত্র সহীহ মুসলিম ৫৯১)
উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লহ
ভাবানুবাদ বাংলাঃ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই ।
প্রাসঙ্গিক সময় ও পদ্ধতি
১। ফরজ সলাতের সালাম ফিরানোর পরে তিনবার এই কথাগুলো বলা। [সুনানে তিরমিযী:৩২৫৯৷
২। দিনে সত্তর বা একশত বার বা তার চেয়ে বেশি পড়া। [সহীহ মুসলিম:৫৯১]
ফরজ নামাজের পর আমল ৩
اللهم أنت السّلام ومنك السّلام تباركت ذا الجلال والإكرام
(সূত্র সহীহ মুসলিম ৫৯১)
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মা আঙতাস সালামু ওয় মিঙকাস সালামু, তাবা-রকতা যাল জালা-লি ওয়াল ইকরম।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী।
উপকারিতাঃ রাসূল (সা.) সালাত শেষে তিনবার ইসতিগবার বলারপর আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম বলতেন। [সহীহ মুসলিম:৫৯১]
ফরজ নামাজের পর আমল ৪
اللهم أصلح لي ديني الذي جعلته في عضمة وأصلح لي دنياي التي جعلت فيها معاشي اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك وأعوذ بعفوك من نقمتك وأعوذ بك منك لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجدّ
(সূত্র সুনানে নাসাঈ ১৩৪৬)
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা, আস্বলি‘হ লী দীনিয়াল লাযী জা‘আল্ তাহু “ইস্বমাতা আমরী। ওয়া আস্বলি’হ লী দুন্ ইয়া-ইয়াল লাতী জা‘আলতা ফীহা মা‘আলতা ফীহা মা‘আ-শী। আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আউযু বি রিদা-কা মিন সাখাত্বিকা, ওয়াবি ‘আউযুবিকা মিন নিক্বমাতিকা,ওয়া আঊযু বিকা মিনকা। আল্লা-হুম্মা, লা-মা-নি-আ লিমা- আ‘তাইতা, ওয়ালা-মু‘অত্বিয়া লিমা আমা‘তা, ওয়া লা-ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ, আপনি আমার দ্বীনকে সংশোধিত- কল্যাণময় করুন, যাকে আপনি আমার রক্ষাকবজ বানিয়েছেন এবং পার্থিব জীবনকে সংশোধিত করুন, যাতে আমার জীবন ও জীবিকা রেখেছেন। হে আল্লাহ, আমি আপনার অসন্তষ্ঠি থেকে আপনার সন্তষ্টির নিকট, আপনার শাস্তি থেকে আপানার ক্ষমার নিকট এবং আপনার থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেন তা ঠেকানোর কেউ নেই। এবং আপনি যা প্রদান না করেন তা প্রদান করার ক্ষমতা ও কারো নেই। এবং কোনো পারিশ্রমকারীর পরিশ্রম আপনার ইচ্ছার বাইরে তার কোনো উপকারে লাগে না ।
ফরজ নামাজের পর আমল ৫
الله لا إله إلا هو الحي القيوم لا تأخذه سنة ولا نوم له ما في السموات وما في الأرض * من ذا الذي يشفع عنده إلا بإذنه يعلم ما بين أيديهم وما خلفهم ولا يحيطون بشيء من علية إلا بما شاء وسع كرسيه السموات والأرض ولا يتوده حفظهما وهو
العلي العظيم ۲۵۵۰
(সূত্র আল বাকারা ২৫৫)
উচ্চারণঃ আল্ল-হু লাইলা-হা ইল্লা হুওয়া আল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা-তা খুযুহূ ছিনাতুওঁ ওয়ালা-নাওম। লাহু মা ফিছ ছামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মাও যাল্লাযী ইয়াশফাউ “ইনদাহু ইল্লা বিইযনিহ। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদীহিম, ওয়ামা খলফাহুম ওয়ালা ইউহীতুনা বিশাইইম মিন ইলমিহী ইল্লা-বিমা-শাআ। ওয়াছি আ কুরছিইয়ুহুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজু হুমা। ওয়া হুওয়াল আলিইয়ূল আজীম।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁহাকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সমস্ত তাঁহারই। কে সে, যে তাঁহার অনুমতি ব্যতীত তাঁহার নিকট সুপারিশ করিবে? তাহাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যাহা কিছু আছে তাহা তিনি অবগত। যাহা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁহার জ্ঞানের কিছুই তাহারা আয়ত্ত করিতে পারে না। তাঁহার ‘কুরসী’ আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত; ইহাদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁহাকে ক্লান্ত করে না; আর তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ।
উপকারিতাঃ
১। যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করবে সে বিকাল পর্যন্ত আর যে বিকালে তিলাওয়াত করবে সে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজতে থাকবে; [সুনানে তিরমিযী: ২৮৭৯]
২। রাসূল (সা.) এর নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয় আয়াত হলো এই আয়াতুল কুরসী; [সহীহ মুসলিম: ৮১০]
৩। কুরআনের সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসী; [সুনানে আবু দাউদ:৪০০৩]
৪। রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী পড়লে রাতের পুরো সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য হেফাযতকারী থাকবে এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত শয়তান তার নিকটেও আসতে পারবে না। [সহীহ বুখারী : ২৩১১)
৫। যেখানে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হয় সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না; [সুনানে তিরমিযী: ২৮৮]
৬। যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সলাতের পর আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করবে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে একমাত্র বাধা হচ্ছে মৃত্যু: [নাসাঈ আসসুনানুল কুবরা: ৯৯২৮]
প্রাসঙ্গিক সময় ও পদ্ধতি
১। রাতে ঘুমানোর আগে। [সহীহ বুখারী: ২৩১১]
২। সকাল-বিকাল। [সুনানে তিরমিযী: ২৮৭৯]
৩। প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর। [নাসাঈ আস-সুনানুল কুবরা : ৯৯২৮]
ফরজ নামাজের পর আমল ৬
رب قني عذابك يوم تبعث أو تجمع
عبادك .
(সূত্র সহীহ মুসলিম ৭০৯/১)
উচ্চারণঃ রব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আসু আও তাজমাউ ইবা-দাকা।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে রব! আমাকে তোমার সে দিনের আযাব থেকে বাঁচাও, যে দিন তুমি তোমার বান্দাদের পুনরায় জীবিত করবে কিংবা একত্রিত করবে।
ফরজ নামাজের পর আমল ৭
اللهم إني أعوذ بك من الكفر والفقر
وعذاب القبر
(সূত্র সুনানে নাসাঈ ১৩৪৭)
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মা, ইন্নী আউযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, ওয়া আযাবিল কবরি।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কুফরি থেকে ও দারিদ্র্য থেকে এবং কববের আযাব থেকে।
ফরজ নামাজের পর আমল ৮
اللهم أعني على ذكرك وشكرك وحسن
عبادتك
(সূত্র সুনানে আবু দাউদ ১৫২২)
উচ্চারণঃ আল্ল-হুম্মা, আ‘ইননী ‘আলা-যিক রিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি “ইবা-দাতিক।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন
উপকারিতাঃ রাসূল (সা.) বলেন,হে মুআয! আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালবাসি। তারপর তিনি আমার হাত ধরে আমাকে ওসয়িত করলেন যে,তুমি নামায পরার পর এই দু’আ কোন সময় ত্যাগ
করবে না। [সুনানে আবু দাউদ:১৫২২]
ফরজ নামাজের পর আমল ৯
اللهم إني أعوذ بك من البخل، وأعوذ بك من الجبن، وأعوذ بك أن أرد إلى أرذل العمر، وأعوذ بك من فتنة الدنيا، وأعوذ بك من عذاب القبر
(সূত্র সহীহ বুখারী ৬৩৭০)
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা, ইন্নী আ’ঊযু বিকা মিলাল বুখলি ওয়া আ’উযু বিকা মিনাল জুবনি ওয় আউযু বিকা আন উরাদ্দা ইলা –আরযালিল উমুরি ওয়া আ’উযু বিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া-ওয়া আ’ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা থেকে, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা থেকে, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা থেকে, আপনি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অপমানকর অতি বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছান থেকে, (যে বয়স মানুষ কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে), আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিতনা থেকে, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি করবের আযান থেকে।
ফরজ নামাজের পর আমল ১০
اللهم اغفر لي ما قدمت وما أخرت ، وما أسررت وما أعلنت ، وما أشرفت ، وما أنت أعلم به مني أنت المقدم وأنت المؤخر لا إله إلا أنت
(সূত্র সুনানে আবু দাউদ ১৫০৯)
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মাগ ফিরলী মাদ্দামতু, ওয়ামা-আখখরতু, ওয়ামা-আসররতু, ওয়ামা আলাঙতু, ওয়ামা-আসরফতু, ওয়ামা-আঙতা আলামু বিহী মিন্নী। আঙতাল মুক্বাদ্দিমু, ওয়া আঙতাল মুআখখিরু, লাইলা-হা ইল্লা-আঙতা।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য ক্ষমা করুন আমি আগে যা করেছি এবং পরে যা করেছি, গোপনে যা করেছি এবং প্রকাশ্যে যা করেছি এবং বাড়াবাড়ি করে যা করেছি এবং যা আপনি আমার চেয়েও বেশি জানেন। আপনিই অগ্রবতী করেন, আপনিই পিছিয়ে দেন। আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই।
ফরজ নামাজের পর দোয়া দ্বিতীয় পর্ব
ফরজ নামাজের পর দোয়া সংক্রান্ত প্রথম আর্টিকেলটি যারা পড়েছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং দোয়া করি তারা সকলেই যেন এবং আমি সহ এই আমল গুলো করতে পারি । আজকে ফরজ নামাজের পর দোয়া সংক্রান্ত দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আলোচনা। এই পর্বেও গত পর্বের মত অনেকগুলো আমল দলিল প্রমাণসহ অনুবাদ এবং উচ্চারণ সহ বর্ণনা করা হবে। আশা করি যারা শেষ পর্যন্ত পড়বেন সকলে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
যারা প্রথম আর্টিকেলটি পড়েননি তাদের জানার সুবিধার্থে বলে রাখি আজকে আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা রাখছি তা হলো
আমরা জানার চেষ্টা করব কোরআন ও হাদিসের আলোকে দলিল প্রমাণ সহ ফরজ নামাজের পর আমলসমূহ কি, উপকারিতা কি ? কখন আদায় করতে হয়? কিভাবে পড়তে হয়? কতবার পড়তে হয় ?
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নামাজ শেষে কি কি আমল করতেন।এবং সাহাবায়ে কেরামকে কি কি আমল করতে বলেছেন।
- কোন কোন আমলটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল।
- কোন কোন আমলটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়েননি।
- কোন আমলটি করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে তিনি তাকি দিয়েছেন।
তো প্রথমে জেনে নেওয়া যাক জিকির কাকে বলে।
জিকিরের প্রাথমিক ধারণা
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কৃত সকল কাজই যিকর হিসেবে বিবেচিত। সলাত, কুরআন তিলাওয়াত যেমন যিকর তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত বিভিন্ন বাক্যও যিকর বা দূ’আ হিসেবে বিবেচিত। ফলে দু’আ ও যিকরের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেছেন, তোমরা আমাকেই স্মরণ (যিকর) কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো।
[সূরা বাকারা, ২:১৫২]
যিকর ও দু’আ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই আমাদের সকল ইবাদতের লক্ষ্য। তাই প্রতিটি ইবাদত করার পূর্বে সেই ইবাদত কী, কেন করবো, কিভাবে করবো সে বিষয়গুলো জানা জরুরি। নিম্নে যিকর ও দু’আ কী সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলো:
(১) যিকর শব্দের অর্থ স্মরণ করা বা স্মরণ করানো।
(২) দু’আ বলতে আমরা আল্লাহ সাথে কথাবার্তা, প্রার্থনা ও মুনাজাতকে বুঝি। [সহীহ ইবনে খুযাইমাঃ৪৭৪]
(৩) যেকোন প্রকারে মনে, মুখে, অন্তরে, কর্মের মাধ্যমে, চিন্তার মাধ্যমে, আদেশ পালন করে বা নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহর নাম, গুণাবলী, বিধি-বিধান, তাঁর পুরস্কার, শাস্তি ইত্যাদি স্মরণ করা বা করানোকে ইসলামের পরিভাষায় যিকর বা আল্লাহর যিকর বলা হয়। [ড খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ), রাহে বেলায়েত, অনুচ্ছেদ-১.৪, পৃ.৪৫)।
(৪) মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন, “তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করিব। [সূরা বাকারা,২:১৫২]
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১১
اللهم بك أحاول وبك أصول وبك أقاتل
(সূত্র সহীহ ইবনে হিব্বান : 2029)
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বিকা উ’হা-বিলু, ওয়ারিকা উসা, বিলু ওয়াবিকা উক্বা-তিলু ।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার সাহায্যেই চেষ্টা করি, এবং আপনার সাহায্যে বীরত্ব প্রদর্শন করি ও বিজয়ী হই, আপনার সাহায্যেই যুদ্ধ করি ।
ফরজ নামাজের পর দোয়ার প্রাসঙ্গিক সময় ও পদ্ধতি
খাইবার ও হুনাইন যুদ্ধের দিনগুলোতে সলাতের পর রসূল (সা.) এই দু’আ পড়তেন। [সহীহ ইবনে হিব্বান : 2029]
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১২
১০০ বার
رب الغفر لي وتب على إنك أنت الثواب
الرحيم
(সূত্র সুনানে ইবনে মাজাহ )৩৮১৪
উচ্চারণঃ রব্বিগফির লী, ওয়াতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আঙ তাততাওয়া-বুর রহীম।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমা করুন আমাকে, তাওবা কবুল করুন আমার; নিশ্চয় আপনি তাওবা কবুলকারী করুণাময়।
উপকারিতাঃ কোন পাপি বান্দা পাপ থেকে ফিরে আসালে বা তাওবা করলে আল্লাহ তালা অনেক বেশি আনন্দিত হন। [সহীহ বুখারী:৬৩০৮]
প্রাসঙ্গিক সময় ও পদ্ধতি
১। ফরজ সলাতের সালাম ফিরানোর পরে তিনবার এই কথাগুলো বলা। [সহীহ মুসলিম:৫৯১]
২। দিনে সত্তর বা একশত বার বা তার চেয়ে বেশি পড়া। [সুনানে তিরমিযী:৩২৫৯]
৩। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দু’আ পাঠ করেছেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ:৩৮১৪]
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১৩
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد يحيي ويميت وهو على كل شيء
قدير
(সূত্র সুনানে তিরমিজি ৩৪৬৮)
উচ্চারণঃ লাইলাহা ইল্লাল্লহ-হু, ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলক, ওয়া লাহুল ‘হামদ, ইউ‘হয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়িঙ কদীর।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনিই জীবন দান কনের এবং মৃত্যু দান করেন। তাঁর হাতেই সকল কল্যাণ এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
উপকারিতাঃ রসূল (সা) বলেছেন “য়ে ব্যক্তি ফজরের পরেই তাঁর পাগুটানোর আগেই যিক্রটি একশত বার পাঠ করবে সে ব্যক্তি ঐ দিনের শ্রেষ্ঠ আমলকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। [সুনানে তিরমিযী:৩৪৬৮]
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১৪
لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك . وله الحمد، وهو على كل شيء قدير، اللهم لا مانع لما أعطيت، ولا معطي لما منعت. ولا ينفع ذا الجد منك الجد
(সূত্র সহীহ বুখারী ৮৪৪)
উচ্চারণঃ ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুআ ‘আলা কুল্লি শাইয়িঙ কদীর লিমা-মানাতা, ওয়ালা-ইয়াঙ ফাউ যাল জাদ্দি মিঙ কালজাদ্দ।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ এক আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ্! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার নিকট (সৎকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।
প্রাসঙ্গিক সময় ও পদ্ধতি
রসূল (সা.) প্রত্যেক সালাতের পরে এ যিকিরগুলো বলতেন। [আবু দাউদ: ১৫০৫]
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১৫
اللهم إني أسألك الجنة وأعوذ بك من النار
(সূত্র সুনানে আবু দাউদ ৭৯২)
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউযুবিকা মিনান্নার।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাই আর আমি তোমার নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১৬
اللهم اغفر لي خطاياي وذنوبي كلها. اللهم أنعمني وأحيني وارزقني، واخدني لصالح الأعمال والأخلاق، إنّه لا يهدي لصالحها إلا أنت، ولا يضرف عن سيئها إلا أنت.
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মাগ ফিরলী যুনূবী ওয়া খাতইয়া-ইয়া কুল্লাহ, আল্লা-হুম্মা, আহইনী, ওয়ারযুকনী, ওয়াহদিনী লিস্বা-লিহিল আমা-লি ইয়াসরিফু সাইয়িয়াহা ইল্লা-আঙতা।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ, আপনি আমার সকল ভুল ও গুনাহ ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করুন, আমাকে পূর্ণ করুন এবং আমাকে উত্তম কর্ম ও আচরণের তাওফীক প্রদান করুন; আপনি ছাড়া আর কেউ উত্তম কর্ম ও ব্যবহারের পথে নিতে পারে না খারাপ কর্ম ও আচরণ থেকে রক্ষা করতে
ফরজ নামাজের পর দোয়ার প্রাসঙ্গিক সময় ও পদ্ধতি
ফরজ ও নফল সব নামাযের পর রসূল (সা.) ঘুরবার বা উঠার সময় এই দু’আ পড়তেন। [তাবারানী আল-মুজামুল কুবরা:৭৮৯৩]
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১৭
سبحان الله، والحمد لله، والله أكبر
(সহীহ মুসলিম ৫৯৫/১)
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লহু আকবার।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ আল্লাহ কতই না পবিত্র মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
উপকারিতাঃ রাসূল (সা) বলেছেন “য়ে ব্যক্তি ফজরের পরেই তাঁর পাগুটানোর আগেই যিকটি একশত বার পাঠ করবে সে ব্যক্তি ঈ দিনের শ্রেষ্ঠ আমলকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। [সুনানে তিরমিযী: ৩৪৬৮]
ফরজ নামাজের পরের দোয়া ১৮
اللهم إني أسألك بأن لك الحمد لا إله إلا أنت المنان بديع السموات والأرض يا ذا الجلال والإكرام يا حي يا قيوم
(সূত্র সুনানে আবু দাউদ ১৪৯৫)
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি আন্না লাকাল হামদা লা ইলাহা ইল্লা আঙতা ওয়াহদাকা লাকা, আল-মান্নানু. ইয়া বাদী‘আস্সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরম, ইয়া হাইয়্যূ ইয়া কইয়্যূমু।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, যেহেতু তোমারই জন্য সকল প্রশংসা, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তুমি একক, তোমার কোন শরীক নেই। তুমি আনূগ্রহশীল। হে আসমান ও জমীনকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী স্রষ্টা! হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক! হি চিরঞ্জিব! হে চিরস্থায়ী!
ফরজ নামাজের পর দোয়া ১৯
اللهم إني أسألك من الخير كله عاجله و آجله ما علمت منه وما لم أعلم الله إني أسألك من خير ما سألك عبدك ونبيك وأعوذ بك من شر ما عاد به عبدك ونبيك اللهم إني أسألك الجنة وما قرب إليها من قول أو عمل وأعوذ بك من النار وما قرب إليها من قول أو عمل وأسألك أن تجعل كل قضاء قضيته لي خيرا
(সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৮৪৬)
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিনাল খইরি কুল্লিহী আজিলিহী। ওয়া আজিলিহি মা আলিমু মিনহু ওয়ামা লাম আলাম ওয়া আঊযবিকা মিঙ শাররি কুল্লিহী আজিলিহী ওয়া আজিলিহী মা আলিমতু মিনহু ওয়া মা লাম আলাম । ওয়া আসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা মিনহু আবদুকা ওয়া নাবিয়্যকা মুহাম্মাদুন সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া আউযুবিকা মিঙ শাররি মাস্তা আযাকা মিনহু আবদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া মা কররবা ইলাইহা মিঙ কাওলিন আও আমালিন। ওয়া আঊযুবিকা মিনান্নারি ওয়ামা কররবা ইলাইহা মিন কওলিন আও আমালিন ওয়া আসআলুকা আন তাজ’আলা কুল্লা কাদয়িন কদয়ইতাহু লী খইর।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে যাবতীয় কল্যাণ ভিক্ষা করছি, যা তাড়াতাড়ি আসে, যা দেরিতে আসে, যা জানা আছে, যা জানা নেই। আর আমি যাবতীয় মন্দ হতে তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি। – যা তাড়াতাড়ি আগমনকারী আর যা দেরিতে আগমনকারী আর যা আমি জানি আর যা আমি অবগত নই। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে ঐ মঙ্গলই চাচ্ছি যা চেয়েছেন তোমার (নেক) বান্দা ও তোমার নাবী, আর তোমার কাছে ঐ মন্দ বস্তু থেকে পানাহ চাচ্ছি যা হতে তোমার বান্দা ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানাহ চেয়েছেন। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাচ্ছি এবং ঐসব কথা ও কাজ চাচ্ছি যেগুলো আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেবে। আর আমি জাহান্নাম হতে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং ঐসব কথা ও কাজ হতেও পানাহ চাচ্ছি যেগুলো আমাকে জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দেবে। আর আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমার জন্য যেসব ফায়সালা করে রেখেছ তা আমার জন্য কল্যাণকর করে দাও”
ফরজ নামাজের পর দোয়া ২০
اللهم إني أسألك الهدى والتقى والعفاف والغنى
(সূত্র সুনানে ইবনে মাজাহ। ৩৮৩২)
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াকা ওয়াল আফাফা ওয়ালগিনা।
ভাবানুবাদ বাংলাঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হেদায়াত, তাক্বওয়া, চরিত্রের নির্মলতা ও আত্মনির্ভরশীলতা প্রার্থনা করি’।
ফরজ নামাজের পর দোয়া শেষ কথা
আল্লাহ তালা আমাদের সকলকে উক্ত আমলগুলো নিয়মিতভাবে আদায় করার মত তৌফিক দান করুন আমীন।
ফরজ নামাজের পর আমল তৃতীয় পর্ব
আসসালামু আলাইকুম ফরজ নামাজের পর আমল ও ফরজ নামাজের পর দোয়া এই দুইটি শিরোনামে দুইটি আর্টিকেল যারা পরেছেন ও যারা পড়েননি সকলকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন আজকে আমরা আলোচনা করব।
আমলগুলো সকলের ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য যারা আমরা নিয়মিত সালাত আদায় করি আর যারা করি না সকলেই আমলগুলো করতে পারবো যখনই নামাজ আদায় করব নামাজের পর সে আমলগুলো আমরা করব ইনশাআল্লাহ।
ফরজ নামাজের পর আমল ২১
اللهم إني أعوذ بك من شر سنين ومن شر بصري ومن شر لساني ومن شر قلبي ومن
شر منين
(সূত্র সুনানে আবু দাউদ ১৫৫১)
উচ্চারণ:
আল্লহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিঙ শাররি সাঈ ওয়া মিঙ শাররি বাসরী ওয়া মিঙ শাররি লিসানী ওয়া মিঙ শাররি কলবী ওয়া মিঙ শাররি মানিয়্যি।
ভাবানুবাদ বাংলা
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানের অশ্লীল শ্রবণ, চোখের কুদৃষ্টি, জিহ্বার কুবাক্য, অন্তরের কপটতা ও কামনার অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই।
ফরজ নামাজের পর আমল ২২
اللهم إني أعوذ بك من الهدم وأعوذ بك من التردي وأعوذ بك من الغرق والحرق والهرم وأعوذ بك أن يتخبطني الشيطان عند الموت وأعوذ بك أن أموت في سبيلك مديرا وأعوذ بك أن أموت لديها
(সূত্র সুনানে আবু দাউদ ১৫৫২)
উচ্চারণ
আল্লহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল হাদামি ওয়া আউযুবিকা মিনাত তারদিদি ওয়া আউযুবিকা মিনাল গারকি ওয়াল হারকি ওয়াল হারমি ওয়া আউযুবিকা আই ইয়াতখববাত্বানিয়াশ শাইত্বানু ইন্দাল মাউতি, ওয়া আউযুবিকা মিন আন আমুতা ফী সাবীলিকা মুদবিরও ওয়া আউযুবিকা আন আমৃতা লাদীগ
ভাবানুবাদ বাংলা
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ হতে, আমি আপনার নিকট হতে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ হতে এবং অতি বার্ধক্য হতে। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শয়তানের প্রভাব হতে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা হতে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মৃত্যুবরণ হতে।
ফরজ নামাজের পর আমল ২৩
اللهم اغفر لي ذنبي ووسع لي في داري وبارك لي في رزقي
(সূত্র মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা:২৯৩৯১)
উচ্চারণ
আল্লহুম্মাগ ফিরলী যামবী ওয়া ওয়াসসি লী ফী দারী ওয়া বারিক লী ফী রিযকী।
ভাবানুবাদ বাংলা
হে আল্লাহ, আপনি আমার পাপ ক্ষমা করুন আমার বাড়িকে প্রশস্ত করে দিন এবং আমার রিযিকে বরকত দান করুন।
ফরজ নামাজের পর আমল ২৪
رب جبريل وميكائيل وإسرافيل أعذني من حر النار وعذاب القبر
(সূত্র সুনানে নাসাঈ ১৩৪৫)
উচ্চারণ
রব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরফীলা, আইনী মিন হাররিন নারি ওয়া আযাবিল কবরি।
ভাবানুবাদ বাংলা
হে আল্লাহ, জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভু, আমাকে জানান্নামের আগুনের উত্তাপ ও কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
ফরজ নামাজের পর আমল ২৫
اللهم إني أسألك من الخير كله ، ما علمت منه ، وما لم أعلم ، وأعوذ بك من الشر كله ، ما علمت منه ، وماله أعلم
(সূত্র মুজামুল কুবীর আত তবারী:২০৫৮)
উচ্চারণ
আল্লহুম্মা, ইন্নী আসআলুকা মিনাল খইরি কুল্লিহী, মা আলিমতা মিনহু ওয়া মালাম আলাম। ওয়া আউযু বিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহী, মা আলিমতু মিনহু ওয়া মালাম আলাম ।
ভাবানুবাদ বাংলা
হে আল্লাহ, আমার জানা ও অজানা সকল প্রকার কল্যাণ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। এবং আমার জানা ও অজানা সকল অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
ফরজ নামাজের পর আমল ২৬
اللهم إني أسألك فعل الخيرات وترك المنكرات وحب المساكين وأن تغفر لي وترحمني وإذا أردت فتنة قوم فتوفني غير مفتون أسألك حبك وحب من يحبك
وحب عمل يقرب إلى حبك
(সূত্র সুনানে তিরমিজি ৩২৩৫)
উচ্চারণ
আল্লহুম্মা, ইন্নী আসআলুকা ফি‘লাল খইরতি, ওয়া তার কাল মুঙকারতি, ওয় হুব্বাল মাসাকীনি, ওয়া আঙ তাগফিরলী, ওয়া তারহামানী, ওয়া ইযা আরাদতা ফিতনাতা কওমি ফাতওয়াফফানী “গইর মাফতুন । আস আলুকা হুব্বাকা, ওয়া হুব্বা মাই ইউহিব্বুকা, ওয়া হুব্বা আমালিই ইউকর রিবুনী ইলা হুব্বিকা ।
ভাবানুবাদ বাংলা
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ভাল ও কল্যাণকর কাজ সম্পাদনের, মন্দ কাজসমূহ বর্জনের, দরিদ্রজনদের ভালবাসার তাওফীক চাই, তুমি আমায় ক্ষমা কর ও দয়া কর। তুমি যখন কোন গোত্রকে বিপদে ফেলার ইচ্ছা কর তখন তুমি আমাকে বিপদমুক্ত রেখে তোমার কাছে তুলে নিও। আমি প্রার্থনা করি তোমার ভালবাসা, যে তোমায় ভালবাসে তার ভালবাসা এবং এমন কাজের ভালবাসা যা তোমার ভালবাসার নিকটবর্তী করে দেয়।
ফরজ নামাজের পর আমল ২৭
প্রত্যেক সলাতের পর একবার, সূরা ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস।
(সূত্র সুনানে আবু দাউদ ১৫২৩)
১১২: আল-ইখলাস,:আয়াত: ১,
قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌۚ
বলো, তিনি আল্লাহ, একক।
আল-ইখলাস,:আয়াত: ২,
اَللّٰهُ الصَّمَدُۚ
আল্লাহ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল।
আল-ইখলাস,:আয়াত: ৩,
لَمْ یَلِدْ١ۙ۬ وَ لَمْ یُوْلَدْۙ
তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারোর সন্তান নন।
আল-ইখলাস,:আয়াত: ৪,
وَ لَمْ یَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ۠
এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
১১৩: আল-ফালাক্ব,:আয়াত: ১,
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِۙ
বলো, আশ্রয় চাচ্ছি আমি প্রভাতের রবের,
আল-ফালাক্ব,:আয়াত: ২,
مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَۙ
এমন প্রত্যেকটি জিনিসের অনিষ্টকারিতা থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন।
আল-ফালাক্ব,:আয়াত: ৩,
وَ مِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَۙ
এবং রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে, যখন তা ছেয়ে যায়।
: আল-ফালাক্ব,:আয়াত: ৪,
وَ مِنْ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الْعُقَدِۙ
আর গিরায় ফুঁৎকারদানকারীদের (বা কারিনীদের) অনিষ্টকারিতা থেকে।
আল-ফালাক্ব,:আয়াত: ৫,
وَ مِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ۠
এবং হিংসুকের অনিষ্টকারিতা থেকে, যখন সে হিংসা করে।
১১৪: আন-নাস,:আয়াত: ১,
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِۙ
বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের রব,
আন-নাস,:আয়াত: ২,
مَلِكِ النَّاسِۙ
মানুষের বাদশাহ,
আন-নাস,:আয়াত: ৩,
اِلٰهِ النَّاسِۙ
মানুষের প্রকৃত মাবুদের কাছে,
আন-নাস,:আয়াত: ৪,
مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ١ۙ۬ الْخَنَّاسِ۪ۙ
এমন প্ররোচনা দানকারীর অনিষ্ট থেকে
আন-নাস,:আয়াত: ৫,
الَّذِیْ یُوَسْوِسُ فِیْ صُدُوْرِ النَّاسِۙ
যে বারবার ফিরে আসে, যে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে,
আন-নাস,:আয়াত: ৬,
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ۠
সে জিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে।
ফরজ নামাজের পর আমল ২৮
اللهم إني أعوذ بك من البخل، وأعوذ بك من الجبن. وأعوذ بك أن أرد إلى أرذل العمر، وأعوذ بك من فتنة الدنيا، وأعوذ بك من عذاب القبر
(সূত্র সহীহ বুখারী ৬৩৭০)
উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিলাল বুখলি ওয়া আ’উযু বিকা মিনাল জুবনি ওয় আ’উযু বিকা আন উরাদ্দা ইলা –আরযালিল উমুরি ওয়া আ’উযু বিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া-ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি।
ভাবানুবাদ বাংলা
হে আল্লাহ্, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা থেকে, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা থেকে, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা থেকে, আপনি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অপমানকর অতি বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছান থেকে, (যে বয়স মানুষ কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে), আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিতনা থেকে, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি করবের আযান থেকে।
ফরজ নামাজের পর আমল শেষ কথা
আল্লাহ তাআলার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া যে তিনি আমাদেরকে ফরজ নামাজের পর আমল সংক্রান্ত তিনটি আর্টিকেল লেখার মতো তৌফিক দান করেছেন যারা এই তিনটি আর্টিকেল পড়েছেন সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করছি আমরা সকলেই যেন এই আমলগুলো নিয়মিত প্রত্যেক নামাজের পর আদায় করতে পারি আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান কর।