তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আলোচনা।  সাধারণত তেলাকুচ পাতার গাছ আমাদের বাসার চারপাশে হয়ে থাকে ।  স্থানীয়ভাবে একে  কুচিলা, তেলা, তেলাকুচ, তেলাহচি,ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকে। কিছু কিছু জায়গায় তেলাকুচ পাতার এক ধরনের সবজি হিসেবেও কাজ করে । এ তেলাকুচ পাতার গাছটি ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা লতা মূল ও ফল ব্যবহৃত হয় ।  এই তেলাকুচ পাতার গাছটি সাধারণত লতানো উদ্ভিদ এর মত । তেলাকুচ পাতার রং হয় সবুজ রঙের তেলাকুচ পাতার ধরনটা হলো নরম ও কান্ড বিশিষ্ট তেলা কচু পাতা একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।  তেলাকুচ পাতা পঞ্চভুজ আকারে হয়ে থাকে এবং এর পাতার ও লতার রং সবুজ হয়। তেলাকুচ পাতায় প্রচুর পরিমাণে বিটা  ক্যারোটিন আছে ।  

তেলাকুচ পাতার সাধারণত বন-জঙ্গলে রাস্তার পাশে কিংবা বাড়ির আশেপাশে জন্মায় ।  তেলাকুচ পাতার এক ধরনের ফল হয় ফলটা  দেখতে অনেকটা টকটকে লাল ফলের মতো এবং দেখতে খুবই আকর্ষণীয় । কিন্তুএই তেলাকুচ পাতাটা  আমাদের কাছে খুবই অবহেলিত এই গাছটার কেউ যত্ন করে না এই গাছটা খুব বেশি মানুষ লাগাইও না ।  কিন্তু জানলে খুবই অবাক হবেন এই অবহেলিত  গাছটির যে কত উপকারিতা তা বলে শেষ করা যাবেনা ।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব তেলা কচু পাতার উপকারিতা ।

ডায়াবেটিস নিরাময়ে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

এখন অধিকাংশ মানুষেরই ডায়াবেটিস নামক এই রোগটি হয়ে থাকে ।  ডায়াবেটিস মানুষকে একদম অকেজো করে তুলে ।  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি কেননা  ডায়াবেটিস যদি বেড়ে যায় তাহলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে আবার যদি কমে যায় তাহলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে ।

তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে তেলাকুচ পাতা খুবই কার্যকরী।  তেলাকুচার কান্ড সহ পাতা  রস তৈরি করে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে আধাকাপ পরিমাণ পান করুন । আবার আপনি চাইলে তালা কচু পাতা রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিসের উপকার  হয়ে থাকে।

জন্ডিস

তেলাকুচা পাতার উপকারিতার মধ্যে জন্ডিস নিরাময় অন্যতম । আমাদের মধ্যে অনেকে জন্ডিস হলে খুব ভয় পেয়ে যান ।  কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নাই ভয় না পেয়ে তেলাকুচ পাতার উপর ভরসা রাখুন খুব উপকারী ।  জন্ডিস সারাতে তেলাকুচার মূলের রস তৈরি করে নিন এবার প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ এর রস পান করুন এতে উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ  ।

কাশি

অনেক সময় আমাদের বেশি ঠান্ডার কারণে ও কাশি হয় আবার গরম বেশি লাগার কারণে কাশি হয়ে থাকে ।  তেলাকুচা পাতার উপকারিতা মধ্যে কাশি উপশমে তেলাকুচ খুবই উপকারী । যদি আপনার কাশিটা শ্লেষ্মা কাশি হয় তবে শ্লেষ্মা তরল  করতে এটি বেশ কাজ করে ।  কাশি উপশমের জন্য 3 থেকে 4 চা চামচ তেলাকুচ পাতার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে নিন এর সঙ্গে আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে তিন থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকালে পান করুন ।

স্তনে দুধ স্বল্পতা

যখন কোনো নারী সন্তান প্রসব করে তখন অনেক সময় দেখা যায় স্তনের দুধ আসে না । আবার অনেক সময় দেখা যায় আমাদের শরীরের রংটা ফ্যাকাশে হয়ে যায় এই অবস্থা দেখা দিলে একটি তেলাকুচ ফলের রস হালকা গরম করে মধু মিশিয়ে নিন এবার এই রস পরিমাণমতো সকালবেলা এবং কি বিকালবেলা সাতদিন সেবন করুন এতে দেখা যাবে আপনার স্তনের দুধের সফলতা দূর হয়ে যাবে এবং আপনার শরীরের রং এটাও ঠিক হয়ে যাবে।

আমাশয়

আপনি যদি দেখেন আপনারা রেগুলার আমাশয় হয় তখন আপনি তেলাকুচার মূল ও পাতার রস 3 থেকে 4 চা চামচ প্রতিদিন সকালবেলা ও বিকালবেলা সেবন করুন ।  এইনিয়মটি আপনি তিন থেকে সাত দিন করেন ।

অরুচিতে

আমাদের অনেক সময় দেখা যায় জ্বর হলে বা সর্দি কাশি হলে মুখের সাদ নষ্ট হয়ে যায় এবং আমরা কোনো কিছু খেলে তা আমাদের কাছে ভালো লাগে না এই অবস্থায় আমরা তেলাকুচপাতা একটু সিদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিয়ে এরমধ্যে একটু ঘি দিয়ে  শাকের মতো করে রান্না করে খেতে বসে প্রথমেই শাক খেলে খাওয়াতে রুচি আসবে ।

পাকস্থলীর সমস্যা প্রতিরোধে

তেলাকুচা পাতার উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়  পাকস্থলীর সমস্যা প্রতিরোধে।  আমরা যে দৈনিন্দিন খাবারগুলা গ্রহণ করি সে খাবারগুলোর অনেক সময় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে না।  আবার সেই খাবারগুলো হজমে সমস্যা করতে পারে।

অনেক সময় আমরা খাবারের টাইমটেবল মেনে চলি না।  এরকম নানাবিধ কারণে আমাদের পেটের মধ্যে হজমের সমস্যা হতে পারে।  এই হজমের সমস্যা ছাড়া আরো বিভিন্ন রকমের পাকস্থলীর সমস্যা রয়েছে।  এখন আমাদের পেটে ব্যথা করে এবং নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে।   পাকস্থলীর সমস্যা প্রতিরোধে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা রয়েছে।  নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়।

পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা তেলাকুচা পাতা খেতে পারেন।  কারণ তেলা কচু পাতায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাইমিন।  তেলাকুচা পাতা পরিপাকতন্ত্র আরো কার্যকরী করে তোলে।  যারা পরিপাকজনিত নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা তেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।  নিয়মিত তেলা কচু পাতা খেলে আপনি এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

স্থূলতা কমাতে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

আপনার শরীর যথেষ্ট স্থূলকায়, উঠতে-বসতে এবং চলাফেরা করতে যথেষ্ট কষ্ট হয়।  এছাড়া দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছেন।  মানুষের চোখের আপনি অপছন্দের পাত্র হতে যাচ্ছেন।  আপনি তেলাকুচা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন।  দেখবেন দিন দিন আপনার স্থূলতা কমতে থাকবে।  তেলাকুচা পাতা শরীরের অতিরিক্ত মেদ চর্বি কমাতে সহায়তা করে।  তাই নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খান এবং সুস্থ থাকুন।

স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

মস্তিষ্কের স্মৃতিকে ধরে রাখে স্নায়তন্ত্র।  এছাড়া আমরা যে কার্যাবলী সম্পাদন করি সব গুলোই আমাদের মস্তিষ্কের হিসাব-নিকাশ থেকে হয়।  তাই মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে।  কিন্তু আপনার মস্তিষ্কে স্নায়তন্ত্র ক্ষমতা যদি দুর্বল হয় তবে আপনি হিসাব-নিকাশে পিছে পড়ে যাবেন।  তাই মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন এবং সবার থেকে ছাড়িয়ে যান আপনার সক্ষমতা কে প্রমাণ করেন।  এজন্য আপনাকে খেতে হবে তেলাকুচা পাতা।  কারণ তেলাকুচা পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।  এছাড়া আপনার স্নায়তন্ত্র কে ভালো রাখতেও ভূমিকা রাখবে এই তেলাকুচা পাতা।

জ্বর প্রতিরোধ

জ্বর প্রতিরোধে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা  যথেষ্ট।  যারা জ্বরের সাথে হাঁপানিতে ভুগছেন তারা তেলাকুচা পাতা খেয়ে উপকার অনুভব করতে পারেন।

ব্রংকাইটিস  প্রতিরোধে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

যারা ব্রংকাইটিস এবং এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা তেলাকুচা পাতা খেতে পারেন।  কারণ তেলাকুচা পাতা ব্রংকাইটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

ব্রণ বা  ফোড়া প্রতিরোধে

ফোড়া আমাদের বিভিন্ন সময়ে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।  যদি আমরা সবাই মনে করে থাকি পুরা অপরিচ্ছন্নতার জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও  এটি হতে পারে।  এছাড়া ব্রুণ আমাদের জীবনের বিভিন্ন সময় হয়ে থাকলেও বয়সন্ধিকালে বেশি পরিমাণে থাকে।  যারা এ ধরনের  সমস্যায় ভুগছেন তারা তেলাকুচা পাতার উপকারিতা থেকে লাভবান হতে পারেন।  কারণ তেলাকুচা পাতা খেলে ব্রণ এবং ফোড়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।  এদের প্রতিরোধে তেলাকুচা পাতা একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

কিভাবে খেতে হয় তাহলে  তেলাকুচা পাতা

শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকারের জন্য আমরা আসলে তেলাকুচা পাতা খেয়ে থাকি।  কিন্তু কিভাবে খেতে হয় সেটি হয়তো আমরা অনেকেই জানি না।  আসলে ব্যাপারটা খুবই সহজ।  অনেকেই তেলাকুচা পাতা কে তরকারি হিসেবে ব্যবহার করে খেতে পারেন।  আবার যারা এটিকে তরকারি হিসেবে খেতে পারেন না তারা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে পারেন।  এতে আপনার সংরক্ষণ করার পদ্ধতিটাও অনেক সহজ হবে।

আজকের  আর্টিকেলে আলোচনা করেছে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।  কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়।  যেহেতু এটি একটি বনজ বৃক্ষ তাই এটি সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণার অভাব রয়েছে।  তাই আপনাকে একটি পরিমিত খাবার জন্য পরামর্শ রইল।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *