Beauty Tips

শীতে ত্বকের যত্ন নেয়ার সবচেয়ে কার্যকর কিছু টিপস

1 min read

শীতকালে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কমে যায়। প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ। প্রকৃতির এই  রুক্ষতার প্রভাব আমাদের ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই শীতে ত্বকের যত্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সময় ত্বক হয়ে পড়ে বেশি স্পর্শকাতর, খসখসে ও প্রাণহীন। শীতের দাপটে প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্যও হারিয়ে ফেলে আমাদের ত্বক। তখন প্রয়োজন হয় ত্বকের বিশেষ যত্নের। শীতের দাপটে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক জৌলুস হারিয়ে ফেলে ত্বক। এই সময়ে প্রয়োজন হয় ত্বকের বিশেষ যত্ন। তাই শীতে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি  নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

শীতে ত্বকের যত্ন:জল

সাধারণত শীতকালে আমরা প্রত্যেকেই কম পরিমাণে জল পান করি। শরীরে জলের ঘাটতির কারণেও ত্বক শুকনো ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। লক্ষ্য রাখবেন, শীতে যাতে শরীরে যথেষ্ট জলের অভাব না হয়। জলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য অল্প গরম জল পান অভ্যাস করলে সুফল দেয়।

সানস্ক্রিন ব্যবহার

শীত আসছে বলে ভাববেন না যে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজনীতা কমে গেছে। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকবেন। অতিরিক্ত গরম পানি মুখের ত্বকের ফলিকলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোঁটা জোজোবা বা বাদাম তেল দিয়ে নিলে তা ত্বককে আর্দ্র এবং মসৃণ করতে সহায়তা করে।

ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার

শীতের শুরুতেই ত্বকে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, যাতে তেলের পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে রাতে যে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা হয়, তা-ও যেন ওই রকম হয়। কারণ, এসব ক্রিম ত্বক আর্দ্র রাখতে বেশি সহায়ক।

মধু

শীতে ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে মধু অপরিহার্য। মধু সব সময় সবভাবেই ব্যবহার করা য়ায়। তবে শীতকালে এর ব্যবহার আরও বেড়ে যায়। অন্য যেকোনো প্যাকের সঙ্গে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায় মধু। মধু নিমিষেই ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। ত্বকের যেকোনো সমস্যায় মধু ওষুধের মতো করে৷

মধু খুব ভালো একটি Humectant হিসেবে কাজ করে

Humectant হলো এমন একটি  উপাদান যা ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে বিভিন্ন প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়। এটি  ত্বকের কোষ গুলোকে সজিব রাখে। ত্বক যখন প্রয়োজনীয় পানি হারায় তখন তা শুষ্ক ও নির্জিব হয়ে পড়ে। শীতে ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহার করলে তা প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের ত্বকের সজিবতাকে সিল করে দেয় যাতে, ত্বক তার সজীবতা না হারায় ।

নারিকেল তেল আর মধু

এই দুটি উপাদানই আর্দ্রতায় ভরপুর এবং শীতে ত্বকের যত্নে জৌলুস ফেরাতে পটু। ১ টেবিলচামচ নারিকেল তেল আর ১ টেবিলচামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মুখে, গলায়, হাতে সমানভাবে লাগান। ২০-৩০ মিনিট বসতে দিন। তারপর পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটিতে নারিকেল তেলের বদলে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করা যায়।

পাকা কলা আর মধু

শীতে ত্বকের যত্ন আর চোখে পড়ার মতো কোমল ত্বক চাইলে এই মাস্কটি ব্যবহার করুন। একটি পাকা কলা চটকে নিন, তাতে মেশান দুই টেবিল চামচ মধু। ভালো করে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন।

কাঁচা দুধ আর মধু

কাঁচা দুধে ভিটামিন বি, আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম আর অ্যান্টি অক্সিডান্ট রয়েছে। ত্বকে কোনোরকম জ্বালা বা প্রদাহ থাকলেও এই প্যাকটি ব্যবহার করে আরাম পাবেন। দুই টেবিল চামচ কাঁচা দুধের সঙ্গে দুই চাচামচ মধু মিশিয়ে সারা মুখ, গলা, কনুই আর হাঁটুতে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। কাঁচা দুধ জোগাড় করা অসুবিধে হলে গুঁড়া দুধ পানিতে গুলে ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যালোভেরা আর মধু

শীতে ত্বকের যত্ন করতে এলোভেরা আর মধু খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে এক চাচামচ মধু মেশান। সারা মুখে, বিশেষ করে শুকনোভাব যেখানে বেশি সেই অংশে লাগান। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।

চকলেট আর মধু

দুটি বা চারটি ডার্ক চকলেটের টুকরো কাপে নিয়ে গরম করে গলিয়ে নিন। একটু ঠান্ডা হলে তাতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন। মুখে আর গলায় লাগিয়ে হালকা হাতে মাসাজ করুন। ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

গাজর ও মধু

শীতে ত্বকের যত্নে গাজর ও মধুর রয়েছে জাদুকরী ক্ষমতা। গাজর ও মধুর মিশ্রণ ত্বকের মৃত কোষকে সরিয়ে সজীব কোষগুলোকে জাগিয়ে তোলে। এছাড়া কুচকানো ত্বকের যত্নেও কার্যকর এ মিশ্রণ।গাজরের বিটা-ক্যারোটিন এ কাজে সাহায্য করে।একটি আস্ত গাজর নিয়ে তার সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। তারপর এটিকে ভাল করে চটকে মিশ্রণ তৈরি করুন।মুখে ১৫মিনিট মিশ্রণটি রেখে ধুয়ে ফেলুন।

দই ও মধু

শীতে ত্বকের যত্ন নিতে দই ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করুন ফেসপ্যাক। হাত-পা ও মুখের ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে কোমল হবে ত্বক। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ কার্যকর। এ ছাড়া ত্বকের ব্রণ দূর করতেও এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। দই বা দুধে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিডের প্রভাবে ঝলমলিয়ে উঠবে আপনার ত্বক। শীতে ত্বকের যত্নে মধু এর সাথে দই এর এই প্যাক আপনাকে সজিব করতে পারে নিমিষেই।

জলপাই তেল

শীতে ত্বকের যত্ন  নিতে জলপাইয়ের তেল বা অলিভ অয়েল খুবই উপকারী। অলিভ অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে পা থেকে গলা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া এর সঙ্গে মধু ও চিনি মিশিয়ে ঘন ক্রিমের মতো প্যাক তৈরি করে স্ক্রাবের কাজ করা যায়। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের মৃত কোষ উঠে যায়। এ ছাড়া কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট ফাটা বন্ধ হয়ে যায়।

পাকা কলা

শীতে ত্বকের যত্ন,ত্বক মসৃণ ও উজ্বল করতে পাকা কলার জুড়ি মেলা ভার। বেসন, দুধ ও কলা‍ ব্লেন্ড করে মুখে, গলায়, হাতে ও পায়ে লাগাতে পারেন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান৷ এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা, হয়ে উঠবে নরম ও কোমল৷

নারিকেল তেল

মুখ ও শরীরের ত্বকের পাশাপাশি গোড়ালি, হাঁটু, কনুইয়েরও বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন, বিশেষ করে শীতকালে৷ না হলে এ জায়গাগুলো রুক্ষ ও কালো হয়ে যায়৷ এর যত্নে ব্যবহার করতে পারেন নারিকেল তেল। এ জন্য প্রথমে ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর তেল আলতো করে ওই জায়গাগুলোতে লাগিয়ে নিন। রাতের বেলা এ কাজ করাই ভালো।

হাতের যত্ন নিন

মুখের ত্বকের যত্ন নিয়ে মানুষ যতটা সচেতন, অনেক সময় হাতের যত্নের বিষয়ে ততটা দেখা যায় না। যদিও হাতের ত্বক শীতকালে অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যাঁদের বারবার হাত ধুতে হয়, তাঁরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। এ সময় হাতে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। বারবার যাঁদের হাত ধুতে হয় কিংবা স্যানিটাইজ করতে হয়, তাঁদের দিনে কয়েকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার।

পায়ের যত্ন নিন

শীত মৌসুমে পায়ে মোজা পরে থাকার বিকল্প নেই। এতে পায়ের ত্বক ঝকঝকে, মসৃণ থাকে। এ ছাড়া শীতের সময় পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা গ্লিসারিন দিয়ে পায়ের ত্বকে ম্যাসাজ করতে পারেন। সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করে পায়ের ত্বকের মৃত কোষ তুলে নিন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সামান্য যত্ন শীত মৌসুমে আপনার পায়ে ত্বক সুন্দর রাখবে।

ভেজা ত্বকের পরিচর্যা করুন

গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

ঠোঁটের পরিচর্যা

কখনোই জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট কখনোই ফেটে যাবে না।

বাইরে যাওয়ার আগে ও পরে

শীতের রোদ গায়ে লাগে বেশ চিনচিন করেই। হিমহিম আবহাওয়ায় রোদ আরাম দিলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না। বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০-সম্পন্ন সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। বেশি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, প্রয়োজনে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন। বিকেলে সারা মুখে মধু লাগিয়ে পরে ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়।

রাতে ঘুমানোর আগে

রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত পরিমাণের চেয়ে একটু বেশি ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ত্বকের আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল অথবা তরল প্যারাফিন মাখতে পারেন। এ ছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে যাঁদের বয়স কম, তাঁরা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। বয়স ত্রিশের কোঠা ছাড়ালে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা ভালো।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x