দৈনন্দিন কাজের চাপে পড়ে আমাদেরকে প্রতিনিয়তই বাহিরে বের হইতে হয় । কিন্তু প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার বা ত্বকের সুরক্ষা বিধান করা সম্ভব হয় না। তাই আমাদের কিন্তু প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার বা ত্বকের সুরক্ষা বিধান করা সম্ভব হয় না। তাই প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ত্বকের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়। যেহেতু প্রতিদিন সম্ভব হয় না আমাদেরকে ত্বক বাঁচিয়ে বাহিরে চলাফেরা করা তাই আমাদের খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। আজকে তাই এই আর্টিকেলের আলোচনা করব রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন সম্পর্কে।
প্রথমে জেনে নেয়া যাক হদ ত্বকের কি কি ক্ষতি করে
রোদ যেমন আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় তেমন তা আবার ত্বকের কিছু ক্ষতি সাধন করে। বেশি রোদে থাকার কারণে আমাদের ত্বকে কি ধরনের সমস্যা গুলো হতে পারে তা নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো-
- কড়া রোদে ঘাম হয় বেশ। আর এ থেকে ঘামাচি বা চুলকানি হতে পারে।
- অনেক সময় রোদের কারণে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণও হতে পারে।
- রোদ থেকে সুরক্ষার পদ্ধতি না নিলে ত্বকে একজিমা হতে পারে।
- সূর্যরশ্মি ত্বকে মেলানিনের (কালো রঞ্জক) মাত্রা বাড়িয়ে ত্বকের রং কালো করে দেয়।
রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন
রোদের কারণেই আমাদের দেহে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। কিন্তু বেশি রোদে থাকার জন্য আমাদের ত্বকের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন হয়। রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন নিতে নিচের পদ্ধতি গুলো মেনে চলা যেতে পারে।
লেবুর রস ও মধু
লেবুর রসে রয়েছে লেবুর রসে রয়েছে ব্লিচিং উপাদান যা রোদে পোড়া ত্বকের দাগ দূর করতে সহায়তা করে। লেবুর রসের সাথে মধু যোগ করে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন নিতে মিশ্রণটি মুখে মেখে 30 মিনিট পর ধুয়ে নিতে হবে ।এতে কিছুটা চিনি মিশিয়ে নিলে তকে মৃত কোষ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক অনেকটাই মসৃণ হবে।
দই আর টমেটোর প্যাক
টমেটো আর দই এর প্যাক রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন নিতে খুবই উপকারী। টমেটোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। দইয়ের মধ্যে থাকে ল্যাকটিক এসিড যা ত্বকের কোমলতা নিশ্চিত করে। দই আর টমেটোর মিশ্রণটি 20 মিনিটের বেশি মুখে রাখবেন না আর যদি মনে হয় আপনার অস্বস্তিবোধ হতে তাহলে সাথে সাথে ধুয়ে ফেলুন । এরপর বরফ ঠান্ডা জলে আবারো মুখটাকে ধুয়ে নিন।
শসার রস
রোদে পোড়া ত্বকের উজ্জ্বাল্য ফিরিয়ে আনতে শসার রস দারুণ কার্যকর। প্রথমে শসা পেস্ট করে নিন এবং রোদে পোড়া ত্বকে লাগান। ভালো ফলাফল পেতে শসার সাথে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে। তারপর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন।
বেসন আর কাঁচা হলুদের মিশ্রণ
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে বেসন ও কাঁচা হলুদের মিশ্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বক উজ্জল করতে হলো চমৎকার কাজ করে। বেসন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া ও 1 কাপ বেসন এর সঙ্গে পানি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। সাথে একটু দুধ যোগ করতে পারেন। প্যাকটি মুখে ও দেহে মেখে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। তারপর হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে স্ক্রাপ করতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে নিজের চোখেই দেখতে পারবেন রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে ঠিক কেমন কার্যকর।
আলুর রস
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে আলুর রস খুবই কার্যকর। এটি চোখের চারপাশে কালো দাগ কমানোর সাথে সাথে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে আলুর রস সরাসরি ত্বকে লাগানো যায়। তবে আপনি পাতলা করে কেটে চোখের উপরের অংশ এবং দাগের উপর ব্যবহার করতে পারেন।
মধু ও পাকা পেঁপে
পেঁপের এনজাইম প্রাকৃতিক বিচ হিসেবে কাজ করে এবং মধু ত্বকে আর্দ্রতা যোগায়। তাই পাকা পেঁপের সাথে মধু যোগ করে একটি প্যাক তৈরি করে তা রোদে পোড়া ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এতে দেখবেন আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
আমলকি গুড়া
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে আমলকির গুঁড়া ও ব্যবহার করা যায়। চার-পাঁচটা আমলকি রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। আমলকি আপনার রোগ কে পুনরায় উজ্জলতা ফিরিয়ে দিবে এবং দাগ দূর করবে।
দই ও মধু
দই ও মধু সহজলভ্য উপাদান। যা প্রায় প্রতিটি ঘরেই পাওয়া যায়। ব্রণ দূর করতে খুবই কার্যকর। দইয়ের মধ্যে এমন কিছু গুণাগুণ রয়েছে যা ত্বকের মৃত কোষ কে সরাতে সাহায্য করে। আর মধু এর মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা সূর্যের তাপে পোড়া সমস্যায় উপশমে ভালো কাজে দেয়।
অ্যালোভেরা
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। এলোভেরা গাছটিকে ঔষধি গাছ বলা হয় । অ্যান্ট-ব্যাকটোরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি থাকে এতে।এলোভেরা গাছের পাতা কেটে এক ধরনের জেল পাবেন। রাতে এই জেল মুখে লাগিয়ে রাখবেন এবং পরের দিন সকালে উঠে মুখ পরিষ্কার করবেন। প্রতিদিন এই কাজটি করলে আপনি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন।
শসা ও দুধ
শসা ত্বকে শীতল করে এবং কোষগুলোকে সজীব করে তোলে। এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বককে শীতল করে । অন্যদিকে দুধ মুখে তৈলাক্ত রেখে উজ্জ্বল রাখে। প্যাকটি তৈরি করতে শস্য ও দুধ কে মিশিয়ে নিন। তারপর ত্বকে মেখে 20 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তারপর সাধারণ জলে ধুয়ে নিন। দেখবেন আপনার মুখ প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে পেয়েছে।
শসা, গোলাপ জল ও লেবুর রস
শসা ও লেবু দুটোই ব্লিচ করার জন্য ভালো। ভিটামিন সি ত্বক উজ্জ্বল করে। শসা গোলাপজল ও লেবুর রস নিয়ে প্যাকটি তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি ব্লেন্ডারের সাহস করে নিন। তারপর 1 টেবিল চামচ শশার রসের সাথে এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটি নরম তুলার সাহায্যে মিশ্রণটি আপনার সমস্ত মুখের ভালোভাবে লাগান। 10 মিনিট রেখে মিশ্রণটি তুলে ফেলুন। প্রতিবার রোদে বের হওয়ার আগে আপনি এই মিশ্রণটি লাগিয়ে নিতে পারেন।
এছাড়াও রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষতি এড়াতে যা করবেন
- রোদ কম থাকুক আর বেশি থাকুক দিনের বেলা ঘর থেকে বাহিরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা উচিত। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। তবে আপনি অবশ্যই খেয়াল করবেন ব্র্যান্ড কোনটি। এবং প্রশ্নের ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই দেখে নেবেন পণ্যটি যেন আসল হয়।
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ম্যাট ধরনের সানস্ক্রিন ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
- ত্বক সবসময় ঠান্ডা ও পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিদিন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। তবে শীতের দিনে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
- ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার জন্য দিনে অন্তত তিন চার লিটার অল্প অল্প করে একটু পরপর পান করতে হবে। এছাড়া যে কোনো ফলের রস পান করাও উপকারী।
- ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে আমরা যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহার করি সেগুলো অনেক সময় আপনার ত্বকের ক্ষতিসাধন করতে পারে। যেকোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে আপনি তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন সম্পর্কে। ঘরোয়া পদ্ধতি সহ সকল পরামর্শ ছিল সার্বজনীন। আপনার ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে উপকারী নাও হতে পারে। প্রাক সমস্ত তথ্যই ছিল ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত , তাই তথ্যের মান নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই আপনি আপনার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান থেকে ত্বকের যত্ন নিয়েন। আর ত্বকের যে কোন সমস্যার দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।