Islamic

সূরা ইয়াসিনের ফজিলত সমূহ

1 min read

সূরা ইয়াসিনের ফজিলত সমূহ

সুরা ইয়াসিন মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনের ৩৬ তম সূরা এর আয়াত সংখ্যা ৮৩ এবং  এর রুকুর সংখ্যা ৫ । সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এক হাদিসে মুহাম্মাদ (সঃ) বলেন, এই সূরাকে কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়। তাই আজ আমরা সূরা ইয়াসিনের ফজিলত নিয়ে আলোচনা করব।

নাযিলের সময়-কাল

বর্ণনাভংগী দেখে অনুভব করা যায়, এ সূরার নাযিল হবার সময়টি হবে নবী করীমের (সা) নবুওয়াত লাভ করার পর মক্কায় অবস্থানের মধ্যবর্তী যুগের শেষের দিনগুলো। অথবা এটি হবে তাঁর মক্কায় অবস্থানের একেবারে শেষ দিনগুলোর একটি সূরা।

সূরা ইয়াসিনের নামকরণ

সূরা ইয়াসিনের ফজিলত সম্পর্কে জানার আগে আমরা সূরা ইয়াসিনের নামকরণ সম্পর্কে  জানব। এই সূরাটি  ইয়াসিন নামে প্রসিদ্ধ  । এক হাদীসে এ সূরাকে “আয়ীমা” বলা হয়েছে এবং অপর এক হাদীসে পাওয়া যে, তওরাতে এ সূরাকে “মুয়িম্মাহ” বলে উল্লেখিত রয়েছে। এই সূরার পাঠকের নাম “শরীফ” বলে বর্ণিত আছে।

আর বলা হয়েছে যে, কেয়ামতের দিন এর সুপারিশ “রবীয়া” গোত্র তুলনায় অধিকসংখ্যাক লোকের জন্য কবুল হবে। এছাড়া বিভিন্ন রেওয়ায়েতে এর নাম “মুদাফিয়াও”,”কাযিয়া” বলে উল্লেখ রয়েছে। সূরার প্রথম আয়াত থেকে নামকরণ করা হয়েছে।

বিষয়বস্তু ও আলোচ্য বিষয়

কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের ওপর ঈমান না আনা এবং জুলুম বিদ্রূপের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করার পরিণামের ভয় দেখানোই এ আলোচনার লক্ষ। এর মধ্যে ভয় দেখানোর দিকটি প্রবল ও সুস্পষ্ট । কিন্তু বার বার ভয় দেখানোর সাথে যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিষয়বস্তু বুঝাবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

তিনটি বিষয়ের ওপর যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছেঃ

  • তাওহীদের ওপর বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী ও সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে।
  • আখেরাতের ওপর বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী, সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তি ও মানুষের নিজের অস্তিত্বের সাহায্যে।

মুহাম্মাদী নবুওয়াতের সত্যতার ওপর একথার ভিত্তিতে যে, তিনি নিজের রিসালাতের ক্ষেত্রে এ সমস্ত কষ্ট সহ্য করেছিলেন নিস্বার্থভাবে এবং এ বিষয়ের ভিত্তিতে যে, তিনি লোকদেরকে যেসব কথার প্রতি আহবান জানাচ্ছিলেন সেগুলো পুরোপুরি যুক্তিসংগত ছিল এবং সেগুলো গ্রহণ করার মধ্যেই ছিল লোকদের নিজেদের কল্যাণ।

এ যুক্তি প্রদর্শনের শক্তির ওপর ভীতি প্রদর্শন এবং তিরস্কার ও সতর্ক করার বিষয়বস্তু অত্যন্ত জোরে শোরে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে হৃদয়ের তালা খুলে যায় এবং যাদের মধ্যে সত্যকে গ্রহণ করার সমান্যতম যোগ্যতাও আছে তারা যেন কুফরীর ওপর বহাল থাকতে না পারে।

সুরা ইয়াসিন হল কুরআনের হৃদপিণ্ড । সূরা ইয়াসিনের ফজিলত

ইমাম গযযালী এর মতে, সুরা  ইয়াসিনে কেয়ামত ও হাশরের ব্যাপারে দীর্ঘ বর্ণনা থাকার কারণে একে কুরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়েছে। বলা হয়, “হৃৎপিণ্ড” এর অর্থ অনেক পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনার ভিত্তিতে করা হয়েছে।সবকিছুর একটা হৃৎপিণ্ড আছে, এখান থেকে হৃদপিন্ডের ধারনাটি আসে এবং সূরা ইয়াসীন কোরআনের হৃৎপিণ্ড।সুরা ইয়াসিন হল কোরাআনের অপরিহার্য বিষয়বস্তুর প্রদর্শন করে, যেমন আল্লাহর সার্বভৌমত্ব; আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতার উদাহরণস্বরূপ হিসেবে তার সৃষ্টি, জান্নাত; বহু-ঈশ্বরবাদী এবং অবিশ্বাসীদের জন্য পুনরুত্থানের পরে তার চরম শাস্তি, এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীদের সংগ্রাম; এবং অন্যদের মধ্যে মুমিনরা যে সঠিক পথের উপর ছিল তা পুনরায় নিশ্চিত করা। সূরা ইয়াসীন তার প্রাণবস্ত এবং ছন্দযুক্ত আয়াতের সাথে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী পদ্ধতিতে কুরআনের বার্তা প্রদর্শন করে।

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি  বস্তুর একটি হৃদয় আছে এবং কোরআনের হৃদয় হলো সূরা ইয়াসিন |কেননা যে ব্যক্তি একবার সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে পুরো কুরআন 10 বার পাঠ করার পুরস্কার দান করবেন | [তিরমিজি]

তিরমিজি শরীফের উল্লেখ আছে যে, যে ব্যক্তি একবার সূরা ইয়াসিন পাঠ  করবে সে দশবার কোরআন খতম করার ফজিলত পাবে | হাদীসে আরো বর্ণিত আছে যে  কোন ব্যক্তি যদি রাতে সূরা ইয়াসিন পাঠ  করে  তাহলে সে একজন নির্দোষ হয়ে জেগে ওঠে এবং পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায় | যে ব্যক্তি বেশি বেশি সূরা ইয়াসীন পড়বে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তার জন্য সুপারিশ করবে এই সূরাটি |হযরত মুহাম্মদ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি  সুরা ইয়াসিন নিয়মিত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে |

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, কুরআনের প্রাণ হলো সূরা ইয়াসিন | যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করে তার জন্য ক্ষমা রয়েছে  |

ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও তাবারানী প্রমুখগণ মা’কাল ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অর্থাৎ এ ইয়া-সীন সূরাটি কুরআনের হৃদয়। এটি ঠিক তেমনই একটি উপমা যেমন সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন বলা হয়েছে। ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন গণ্য করার কারণ হচ্ছে এই যে, তার মধ্যে কুরআন মজীদের সমস্ত শিক্ষার সংক্ষিপ্তসার এসে গেছে। অন্যদিকে ইয়াসীনকে কুরআনের স্পন্দিত হৃদয় বলা হয়েছে এ জন্য যে, কুরআনের দাওয়াতকে সে অত্যন্ত জোরেশোরে পেশ করে, যার ফলে জড়তা কেটে যায় এবং প্রাণপ্রবাহ গতিশীল হয়।

সুরা ইয়াসিন এর গুরুত্ব,

  • গোনাহ মাফের মাধ্যম সুরা ইয়াসিন
  • মৃত্যুর যন্ত্রণা মুক্ত থাকার মাধ্যম সুরা ইয়াসিন
  • অভাবমুক্ত থাকার আমল সুরা ইয়াসিন |

সূরা ইয়াসিনের ফজিলত সমূহ । কুরআন ও হাদিস থেকে সূরা ইয়াসিনের ফজিলত

হযরত রাসূলে পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি গোরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, ঐদিন গোরস্থানের মৃত ব্যক্তিদের আজাব হালকা করে দেওয়া হবে, আর পাঠকারীকে ওই গোরস্থানে মৃতের সংখ্যা অনুযায়ী প্রদান করা হবে ।

আল্লামা বায়যাবী (রহঃ) সূরা ইয়াসিনের ফজিলত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ হতে একটি লম্বা হাদীস বর্ণনা করেছেন, উহাতে একথাও আছে যে, মৃত্যুশয্যায় শায়িত যেকোনো মুসলমান নর-নারীর পাশে বসে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা হলে, উহার প্রত্যেকটি অক্ষরের বরকতে ১০জন করে ফেরেশতা তথায় নাজিল হন আর তারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ওই মুমূর্ষু ব্যক্তির গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে থাকেন। মৃত্যুবরণের পর ওই সমস্ত ফেরেশতা তার গোসল ও জানাযার নামাযে শরিক হন।

জোনদাব বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে রাত্রিতে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, তার পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (তাফসীরে বায়যাবী)

হযরত মালেক রাঃ হতে বর্ণিত, হযরত রাসূল করীম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে [মহান আল্লাহর রেজামন্দি ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য] তৎপরিবর্তে তার অতীতের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তোমরা ইয়াসিন ছুরা মুমূর্ষু ও কবরবাসীর নিকট পাঠ করতে পারো । [বায়হাকী ও মিশকাত]

অন্য হাদীসে আছে, আতা বিন আবি রিবাহ হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন দিনের প্রথমভাগে পাঠ করবে। মহান আল্লাহ তাঁর সমস্ত মাকসুদ পুরা করে দিবেন। [দারেমি, মিশকাত পৃঃ১৮৯]

আল্লামা কুরতুবী রহঃ হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, মহানবী সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি শুক্রবার রাতে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, সকালবেলা সে বেগুনাহ হয়ে বিছানা থেকে উঠবে। অন্য হাদীসে রাসূল সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে তাকে গোটা দিনের শান্তি দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, তাকে গোটা রাতের শান্তি প্রদান করা হবে। (তাফসীরে ছাবী -৪/৩১৭ পৃ.)

আমরা প্রত্যেকেই প্রতিদিন বেশি বেশি সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করব এবং সবাইকে  এর ফজিলত সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব |

 

সূরা ইয়াসিনের ফজিলত সমূহ, সূরা ইয়াসিন বাংলা উচ্চারণ, সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত, সূরা ইয়াসিন বাংলা লেখা ছবি,

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x