গর্ভকালীন অবস্থান ৭ মাসের সতর্কতা

গর্ভকালীন অবস্থান ৭  মাসের সতর্কতা

গর্ভকালীন অবস্থান ৭ মাসের সতর্কতা আপনি যখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ঠিক তখনই আপনার গর্ভের সন্তানের চোখ খুলতে পারে। আলোর দিকে মাথা ঘুরাবে। এছাড়াও আপনার সন্তান গর্ভের ভেতর থেকে বাহিরে শব্দ শুনতে পারবে। জোরালো আওয়াজ শুনলে হয়তো পেটের মধ্যে লাফাতে আর পা ছোটাছুটি করবে। আর আপনি যদি এই সময় কোরআন তেলাওয়াত হাদিস গজল এবং গান শোনালে বা গর্ভের সন্তানের সাথে কথা বললে সন্তান অনেক শান্ত হয়ে যাবে। 

মনোযোগ সহকারে আপনার কথাগুলো শুনবে এবং আপনি যে কাজগুলো করবেন সে গর্ভ থেকে অনুভব করতে পারবে। এসব সবকিছুই হচ্ছে মহান আল্লাহতালার ক্ষমতা। এই সময় আপনার গর্ভের সন্তান মাথা ঘোরাতে ঘোরাতে নিচের দিকে চলে আসবে। প্রথমে সন্তানের মাথা উপরে সাইডে থাকে যখন আপনার প্রসবের সময় ঠিক ওই সময়ে মাথা ঘোরে নিচে চলে আসে মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম অনুযায়ী।

তখন সন্তান প্রসব হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে থাকে। সবই হচ্ছে আল্লাহ ক্ষমতা ও শক্তি । আপনার পেট যত বড় হবে ততো অস্বস্তি হবে ও ঘুমোতে অসুবিধে হবে। এই সময় আপনাকে উপুড় হয়ে শোয়া যাবেনা আপনাকে অবশ্যই একপাশে কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। এবং দুই পায়ের মাঝখানে একটা বালিশ রাখেন যার ওপরে পেটের ঘরটা রাখা যায়।

আপনার কোমরের ব্যথা শুরু হতে পারে কারণ কোমর আর তলপেটের মধ্যকার স্থিতিস্থাপক কোষগুলো হয়তো দিলে হচ্ছে। আপনার যখন এই রকম সমস্যা হবে তখন আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনার ডেলিভারি হওয়া জন্য তৈরি হচ্ছে। হাতে আর হাঁটুতে ভর দিয়ে হাটু গেড়ে বসলে উপকার হতে পারে।

আপনার যদি ব্যথা ওঠে দাই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য আপনার একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। দাই বা ডাক্তারের কাছে কিভাবে সহজ করে যাওয়া যায় তার পরিকল্পনা করতে হবে। এই সময় আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন তারা সাহায্য করবে কিনা।

আপনার ফ্যামিলির সবার সঙ্গে ফাইনালে ভালোভাবে কথা বলে তারপর সিদ্ধান্ত করুন। আপনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে অন্তঃসত্ত্বা আমাকে কোথায় নিয়ে গেলে নিরাপদ স্থান খুঁজে পাবে। এবং কোথায় নিয়ে গেলে ভালো হবে সে দিকটা বিবেচনা করে তারপর আপনি বাড়ি থেকে বের হন।

একজন মা হওয়া অনেক কষ্টকর একটি কাজ। তাই এই ব্যাপার গুলো অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্রসবের সময় যেন কোনো অবহেলা করা না হয়। সঠিক সময় সঠিক সঠিক ভাবে কাজ করুন। তারপরে দেখতে পারবেন সুন্দর ফুটফুটে একটি সন্তান। তাই আপনাকে বুঝে শুনে দাই ডাক্তার এর কাছে যেতে হলে অবশ্যই সব দিক বিবেচনা করে তারপর যেতে হবে।

ডেলিভারি হওয়ার কয়েক দিন আগে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলে দিবে আপনার গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে কিনা। তাই শেষের কয়েক মাস অবশ্যই আপনাকে প্রতিনিয়ত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে এবং দেখা করতে হবে। উনারা আপনাকে দেখে বলে দেবে কি কি করতে হবে এবং ব্যথা উঠলে কখন হাসপাতালে যেতে হবে।

 গর্ভকালীন অবস্থায় পা ফুলে যাওয়া কি স্বাভাবিকঃ

গর্ভকালীন অবস্থায় শেষের তিন মাসে এমন কিছু সমস্যা দেখা যায় যেমন পা ফুলে যায় এবং পায়ে পানি চলে আসে। আপনাকে জানতে হবে এই সমস্যাগুলো কি কারনে হয়ে থাকে।  উষ্ণ আবহাওয়ার ফলে এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে এবং অতি তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। আপনি যখন গর্ভবতী হন তখন আপনার শরীরে বাড়তি তরল তৈরি করে। কখনো কখনো দেখা যায় অতিরিক্ত তরল জমা করে রাখ দিন এড়িয়ে চলার সাথে সাথে আপনার পা পায়ের পাতা এই তরল জমা হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বেশি বেশি শুয়ে থাকলে পা ফুলে যায়। সকালের দিকে এই সমস্যা একটু কম থাকে।

আপনি হয়তো দেখবেন ক্রমশ এই ফোলা ভাব বাড়তে থাকে। এমন সমস্যা হলে আপনাকে অবশ্যই দিনের বেলায় দুপুরে খাওয়ার পর এক ঘন্টা শুয়ে থেকে পা উপরের দিকে তুলে রেখে বিশ্রাম করার চেষ্টা করতে হবে। আপনি যদি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন বা বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করেন ও বেশি শুয়ে বসে থাকেন তাহলে পা ফুলে যাবে নিশ্চিত।

তাই আপনাকে নির্দিষ্ট সময় মেইনটেইন করে চলতে হবে কতটুকু আপনার শরীরের জন্য কার্যকারী এইটুক ভেবে আপনাকে দীর্ঘ নয় মাস চলতে হবে। সব সময় সব কাজ দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করবেন না কিছু কিছু কাজ বসে থাকা করার চেষ্টা করবেন এবং এর ফাঁকে রেস্টের দরকার রয়েছে সেটাও করে নেবেন।

গর্ভকালীন শেষের দিকে আপনার শরীরের হাত ফুলে যেতে পারে এর জন্য ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই।

বিপদের সংকেতঃ

এই সময় আপনার যদি হাত পা ফুলে যায় এবং চোখে ঝাপসা দেখা মাথা ঘোরানো এরকম বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই আপনি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এসবের কারণে অনেক বড় রোগ হতে পারে যেমন ফিটের রোগ হতে পারে।

গর্ভকালীন অবস্থায় আমার কেন বিশ্রাম করার দরকারঃ

গর্ভের শিশু কে বড় করে গড়ে তোলার জন্য আপনাকে অনেক ক্লান্ত হতে হয় এজন্যই আপনাকে সঠিক সময়ে বিশ্রামের প্রয়োজন। যতবার পারেন আপনি বিশ্রাম করে নিন এবং আপনার ফ্যামিলি দের কে বুঝিয়ে বলুন যে আপনার শিশুকে বড় করে তোলার জন্য আপনার শরীর খুব পরিশ্রম করছে। একজন মানুষ তার দেহের ভিতর আরেকজন মানুষের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এসব নিয়ে একটা মায়ের সত্যি কষ্ট করার মত একটি কাজ।

তাই ফ্যামিলির সকলকে এই বিষয়টা তার জন্য খুব সুযোগ-সুবিধা বের করে দিতে হবে। কারণ গর্ভকালীন মা যদি সঠিকভাবে নিয়ম মত রেস্ট বিশ্রাম না করতে পারে এতে করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে তাই ফ্যামিলি দেরকে সকলকেই এই বিষয়টা মেনে নিতে হবে এবং আপনার জরুরি জরুরী কোন কাজ অনেক ধীরে ধীরে বা সময় নিয়ে কাজটা করে নেবেন।

প্রয়োজন হলে আপনি আপনার পরিবারের কাছে সাহায্য নিতে পারেন। এই কাজগুলো করা আপনার জন্য খুবই জরুরী কারণ কখনো একা একাই কাজ করার চেষ্টা করবেন না সাথে দুই-একজন নেওয়ার চেষ্টা করবেন। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ সেরে নিলে কাজ সহজ হয়ে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।

তাই অন্ততপক্ষে আপনারা এই সময়ে একটু সুযোগ দিতে পারেন। গর্ভকালীন অবস্থায় আপনি সারাদিনে আরো ছোট ছোট বিরতি মেনে চলতে পারেন। আপনি চাইলে এই সময় কাজ কমিয়ে দিতে পারেন। দরকার নেই আপনার এত কাজের কারণ একজন মা কতটা পরিমাণে কষ্ট করেন এবং কত ধৈর্য সহকারে একটি সন্তান প্রসব করেন তা সকল ফ্যামিলি কে বুঝতে হবে।

এরপর আসবে অনেক আনন্দ। আপনার শরীরে আপনার সন্তান দিনে দিনে বড় হতে যাচ্ছে তাই আপনাকে সঠিক খাবার ভালো খাবারগুলো যাচাই-বাছাই করে খেতে হবে। যেকোনো খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই খেতে হবে। আপনার পেট বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে আপনার খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

এই সময় আপনি চাইলে প্রত্যেক লঙ্কায় একটু বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সারাদিনের মধ্যে একটু পর পর অল্প অল্প করে খাবার খেতে হবে যদিও কাজের সময় আমরা খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে যাই। এ সময় আপনি অবশ্যই কাজের সাথে আপনার খাবার গুলো নিয়ে নিন।

গর্ভকালীন অবস্থায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্য আপনাকে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আপনার শিশু ক্রমশ বেড়ে ওঠার ফলে সে আপনার মূত্রথলিতে, যেখানে আপনার প্রস্রাব জমা হয়, চাপ দিতে শুরু করবে৷ ফলে আপনার বার বার প্রস্রাব পাবে, হয়ত তাতে আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে৷

শুতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে থেকে কোনো তরল না খাওয়ার চেষ্টা করুন৷ এতে সুবিধা হতে পারে৷ তবে সারা দিনে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার, সুরক্ষিত জল খাবেন৷ আপনি যদি বেশি পরিমাণে পানি খান তাহলে আপনার সন্তান ঠিক থাকবে শুকনো তে পরবেনা। তাই গর্ভকালীন অবস্থায় বেশি বেশি করে পানি খেতে হবে এবং একটু পরপর কিছু না কিছু মুখে রেখে দিতেই হবে। এর কারণ হলো আপনাকে অবশ্যই পেট ভরে রাখতে হবে পেট কখনো খালি রাখা যাবে না।

সব দিকে খেয়াল রেখে আপনাকে সকল বিষয়ে কাজ করতে হবে। এ সময় আপনাকে সর্ব শরীর পরিষ্কার এবং হাসিখুশি আনন্দে থাকতে হবে। আপনার পায়ে খিঁচ ধরতে পারে। আপনার পায়ের মাংসপেশীগুলি শিশুর ক্রমশ বেড়ে ওঠা ওজন বহন করছে৷ ফলে আপনার পায়ে ব্যথা হতে পারে বা ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে৷

খিঁচের ফলে যদি আপনার ঘুম ভেঙে যায় তাহলে মাংসপেশী টান টান করার চেষ্টা করুন৷ পা সোজা করে গোড়ালি ও পায়ের আঙ্গুলগুলি বাঁকান৷ আপনার খিঁচ ধরা মাংসপেশীগুলি মালিশও করতে পারেন৷ চেষ্টা করবেন যাতে অকেনক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে না থাকতে হয় বা পা দুটো ভাঁজ করে বসতে না হয়৷

আপনাকে অবশ্যই হাটু দুটির মাঝখানের বালিশ বা যেকোনো মোটা জাতীয় জিনিস দিয়ে রাখতে হবে এবং অবশ্যই আপনাকে উপুড় হয়ে শোয়া যাবেনা বাম কাত এবং ডান কাত হয়ে ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর আগে আপনাকে অবশ্য অজু করে তারপর কিছু দোয়া দরুদ পড়া কমাতে হবে।

সংকোচন এর অভ্যাস কিঃ

সংকোচন এর অভ্যাস শরীরের প্রসবের প্রস্তুতি পর্ব বলা হয় । আপনার গর্ভাবস্থারপ্রায় দুই মাস সময় থেকে আপনার জরায়ু ধীরে ধীরে এর অভ্যাস করছে। আপনার জরায়ু যত বড় হতে থাকে, ততই এই সংকোচন এর সময় এই শক্ত টানা টানা অনুভব করেন না। প্রতিবারের টানটান ভাব সাধারণত 30 সেকেন্ড থাকে। যদি আপনার টানটান ভাব অনুভব করে তাহলে আবরণহীন পেটের ওপর হাত রাখুন। আপনার জরায়ু কত শক্ত হয়েছে তা বুঝতে পারবেন। কারণ এটি হলো মাংসপেশি, আর মাংসপেশিতে টান পড়লে তা শক্ত হয়ে ওঠে সংকোচনের এই অভ্যাস বন্ধ হয়ে গেলে এটা আবার নরম হয়ে যায়।

এগুলো কতক্ষণ ধরে রাখবেঃ সংকোচনের এই অভ্যাস কিছুক্ষন মাত্র চলে তারপর সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তাই ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে দেখুন এটা বন্ধ হয়েছে কিনা। আপনি উঠে চলাফেরা করতে শুরু করলে সংকোচনের অভ্যাস বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ঘরের কাজকর্ম করে দেখুন বন্ধ হচ্ছে কিনা।

 এগুলো কি আরো জোরালো হয়ে উঠছেঃ সত্তিকারের সংকোচন আর বেশিক্ষণ ধরে রাখতে জড়ানো হয়ে ওঠে যদি আপনার এই সংকোচন এইরকম থাকে না হয়ে ওঠে। তাহলে খুব সম্ভব এগুলো সংকোচনের অভ্যাস।

 এগুলো কি আরও ঘন ঘন হচ্ছে কিনা জেনে নিনঃ প্রসব বেদনা সংকোচন এর মধ্যকার কম হয়ে যায় তাই এগুলো হয়তো প্রতি 20 মিনিট হবে তারপর প্রতি 15 মিনিট তারপর প্রতি 10 মিনিট তারপর 5 মিনিট শুরু হয়ে যায় সংকোচনের অভ্যাসের এই সময়ের সাধারণত একই রকম হয়ে থাকে।

আমাদের এই পোস্টে আজকে আলোচনা ছিল গর্ভকালীন মায়েদের সাত মাসের সর্তকতা অবলম্বন আপনি যদি এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেন তাহলে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকবেন এবং খুব সহজভাবে প্রসব করবেন। তাই অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করে নিন। আজকের আলোচনায় এ পর্যন্তই আগামী কোন পোস্ট নিয়ে আবার আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন।

গর্ভকালীন অবস্থান ৭ মাসের সতর্কতা, গর্ভাবস্থায় সহবাস করার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় প্রথম ৪ মাসের সতর্কতা

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *