কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা খাওয়ার উপকারিতা । যতগুলো ফল বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজলভ্য তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে কলা |এটি যেমন সহজে পাওয়া যায় এবং এর দাম ও মোটামুটি নাগালের মধ্যে|  পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ থাকে এছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে| ভিটামিন খনিজ পদার্থ ইত্যাদি| যে সকল উপাদান মানুষের দৈহিক গঠনের জন্য খুবই উপকারী| চলুন জেনে নেয়া যাক কলা খাওয়ার উপকারিতা।

  1. সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয়। তবে খালি পেটে কলা খাওয়া ঠিক নয়। সকালের নাস্তায় ডিম, টোস্ট কিংবা কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে অনেকেই কলা খান। এতে যেমন পেট ভরা থাকে তেমন পুষ্টিও পাওয়া যায়। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তারা অবশ্যই সকালের নাস্তায় কলা খাবেন। হজমের সমস্যা থাকলেও কলা খেতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কলা সবসময় হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে খেতে হবে। পিনাট বাটার, ইয়োগার্ট কিংবা পরিজের সঙ্গে কলা খেতে পারেন।
  2.  অনেকেই মনে করেন, কলা খেলে ওজন বাড়ে। আর তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যতালিকা থেকে অনেকেই কলা বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু কলা খুবই পুষ্টিকর একটি ফল।
  3. আগের রাতে বেশি তেল মসলাদার খাবার খাওয়া হলে পরের দিনও তারএকটা প্রভাব থেকে যায়। কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া কলা, মধু দিয়ে তৈরি স্মুদি স্নায়ুর উত্তেজনা কমায়। এ কারণে সুস্থ থাকতে কলার স্মুদি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
  4. কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম দেহের চাহিদা পূরণ করে তাই প্রতিদিন অন্তত একটি করে কলা খাওয়া উচিত
  5. কলা দেহের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  6. গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন অন্তত একটি করে কলা খায়, তাদের স্মৃতিশক্তিতে অনেকটা পরিবর্তন লক্ষণ করা যায়। তাদের স্মৃতিশক্তি আগের চেয়ে সার্প হয়। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বাদাম এর মতোই করা বেশ উপকারি। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে আমাদের প্রতিনিয়ত কলা খেতে হবে।
  7. রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ থাকায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ফলাফলসরূপ, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় রক্তস্বল্পতা বৃদ্ধি পায়।
  8. কলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং সামান্য পরিমাণে লবণ থাকায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করা বেশ কার্যকারী। যেসব ব্লাডপ্রেসার রোগী দীর্ঘদিন যাবত উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, তারা কলা থেকে ভালো উপকার পেতে পারে।
  9. কলাতে আছে এনিমিয়া রোগের প্রতিকার। কলা খেলে রক্তস্বল্পতার পাশাপাশি এনিমিয়া রোগ থেকেও প্রতিকার পাওয়া
  10.  একটি মিষ্টি ফল ।কলা মিষ্টি বলে ভাববেন না এটি খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।  মিষ্টি হলেও সুগার বাড়ায় না। এমজিআর ভ্যালু বেশ ভাল তার জন্য এটা ডায়াবেটিস রোগীদের কোন ধরনের অসুবিধা  করে না ।
  11. এনার্জি বাড়াতে কলার জুড়ি নেই। তাই খুব বেশি ওজন কমে গেলে বা শরীর দূর্বল হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।দেহের শক্তি বা এনার্জি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে  কলার। তাই শরীরের শক্তির ঘাটতি দেখা দিলেই বা দুর্বলতা হওয়ার সাথে সাথেই ফল খাওয়া যায়। এতে শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি পাওয়া যায়। তাই সাধারণত  খেলোয়াড়দের কে দেখা যায় নিয়মিত কলা খেতে।
  12. এর মধ্যে ছয় ধরনের ভিটামিন রয়েছে, যা রক্তে শর্করা গঠনে কাজ করে।
  13.  এই ফলে পটাশিয়াম এর পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। আর এই দুটি হাড়  শক্ত করে।
  14.  কলায় প্রচুর পরিমাণে পেকটিন নামক একটি ফাইবার রয়েছে। যা কোষ্টকাঠিন্যের মতো সমস্যার দূরে রাখতে সাহায্য করে।
  15. পেট পরিস্কার রাখার পাশাপাশি হজমেও সাহায্য করে কলা। একটি কলায় থাকে ৩ গ্রাম ফাইবার। যা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।  । কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এই  ফাইবার সহায়তা করে।
  16. সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য কলা খাওয়া খুবই উপকারী। কেননা এটি সকালেবেলার  দুর্বলতা কাটাতে কাজ করে এবং রক্তের শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখে।গর্ভকালীন সময়ে নারীদের পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হয়। এ সময়ে নারীরা অনেক অসুখের সম্মখীন হতে হয় এবং নানা রকম দূর্বলতায় ভুগতে হয়। সেজন্য সকালের দূর্বলতা কাটাতে নারীরা এই ক্ষেত্রে কলা খেতে পারে। কলাতে আছে শর্করা। যা দূর্বলতা কাটাতে সহায়তা করে।
  17. বাচ্চাদের প্রথম সলিড খাওয়ানোর সময় অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান, যে কী ফল দেওয়া যাবে।   ছোট বাচ্চাদের নতুন নতুন শক্ত খাবার খাওয়ানোর সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নতুন হিসেবে কলা খাওয়ানো যেতে পারে।এক্ষেত্রেও কলা কাজে আসতে পারে । তবে, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
  18.  এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এবং যেসব রোগীর রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া রোগ রয়েছে তাদের জন্য এটি বেশ উপাদেয়।
  19. কলা পাকস্থলির এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাকস্থলির আলসার রোধে কাজ করে।
  20.  হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি   পেট পরিষ্কার করে। কলায় থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এই কাজে সহায়তা করে।
  21. কলার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং সামান্য পরিমাণ লবণ যা হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে; এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
  22. ভি়টামিন-মিনারেলের মতো বহুগুণ সমৃদ্ধ কলায় রয়েছে ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও।  এগুলো দেহের জন্য অনেক উপকারী।
  23. কলার মধ্যে রয়েছে এমাইনো এসিড, যেটি মানসিক চাপ রোধক হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম- যা বিষণ্ণতা রোধে কাজ করে।
  24. আমাদের পাকস্থলিতে খাদ্য হজমে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নির্গত হয়। বিভিন্ন কারণে এই এসিড পাকস্থলিতে ক্ষয় এবং তা আলচারে পরিণত হয়। কলা খেলে এসব ক্ষয় বা আলচার হতে মক্তি পাওয়া যায়। কলা ক্ষার জাতীয় পদার্থ হওয়ায় এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে পাকস্থলির অতিরিক্ত অম্লতা ভাব দূর করে। এতে করে পাকস্থলির আলচার নিরাময় হয।

কলা খাওয়ার সঠিক সময় হলো । কলা খাওয়ার উপকারিতা-

কলা খাওয়ার উপকারিতা পেতে কখন খাবেন বা কখন খাবেন না ? সাধারণভাবে একজন ব্যক্তি যেকোনো সময় তার উপযুক্ত সময় অনুযায়ী কলা খেতে পারে। এমনিতে কলা খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া বা ঠিক করা নেই। ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছার উপর অনেকটা ডিপেন্ড করে। তবে যদি বৈজ্ঞানিক বা গবেষকদের ভাষায় বলতে হয়, তাহলে কলা খাওয়ারও কিছু উপযুক্ত সময় আছে। আর এই উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে উপকারিতার উপর নির্ভর করে। এমনিতে স্বাভাবিকভাবে কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে ২ টি ।

  • সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
  • রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা

 

এই দুই সময়ে কলা খেয়ে ভালোভাবে উপকৃত হতে পারবো।

সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা

কম সময়ে এবং সহজলভ্য ভাবে ক্যালরির চাহিদা মেটাতে করার বিকল্প অন্য ফল নেই। অর্গানিকভাবে চাষকৃত কলা দেহ ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বেশ কার্যকারী। তবে সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা  অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। সকালবেলাতে যেহেতু সবাই কাজ করতে ঘর থেকে বের হয়, তখন সারাদিনের ক্যালরির ঘাটতি পূরণ করতে কলা খাওয়া উচিত। কলা খেয়ে বের হলে সারাদিন ক্যালরির ঘাটতি হয় না। সকালে কলা খেলে শরীরে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায় না। প্রতিদিন সকালে কলা খেলে হৃদরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সারাদিনের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালে কলা খাওয়ার বিকল্প নেই।সারাদিনের অতিরিক্ত কাজে দেহে যাতে পানি শূণ্যতা ক্রাশ করতে না পারে, সেজন্য সকালে কলা খেতে হবে। সকালে কলা খাওয়ার বহুমুখী উপকারিতার জন্য প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিন সকালে অন্তত একটি করে কলা খাওয়া। এছাড়াও চুলের যত্নেও কলার বেশ ভূমিকা রয়েছে।

কলা খাওয়ার উপকারিতার জন্য শারীরিক চাহিদা পূরণকে লক্ষ্য করেও অনেকে সকালে কলা খায়। তবে সামগ্রিকভাবে বললে সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। কলা যেহেতেু আমাদের শরীরের এনার্জি হিসেবে কাজ করে, সেহেতু কলার উপকারিতা দিকটি অবহেলার কোনো রকম কারণ নেই।

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা

 

রাতে বেশি খাবার খাওয়াই নিষিদ্ধ। তবে কলার ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। কলা হলো একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। যেসব ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন অথবা এখন সর্দি বা ঠান্ডিতে ভুগছেন, তাদের জন্য বর্তামানে রাতে কলা না খাওয়াই উত্তম। রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক কিন্তু অপকারিতাও আছে। রাতে কলা খাওয়ার আরেকটি অপকারিতা হলো- রাতে কলা খেলে হজমে কিছুটা বিঘ্নতা ঘটতে পারে।

কিন্তু রাতে কলা খেলে আবার অনেকভাবে উপকৃতও হতে পারি। যেমন- সারাদিনের পরিশ্রম শেষে যখন সন্ধ্যায় বা রাতে কলা খাই, তখন কিছুক্ষণের মধ্যেই সারাদিনের ক্ষয় হওয়া শক্তি ফিরে পাই। শরীরের আয়রণের ঘাটতি দূর করতে কলা সাহায্য করে। রাতে যাদের উচ্চ রক্তচাপের ফলে মাথা ব্যাথা তৈরি হয়, তাদের জন্য কলা নিয়ামত সরূপ। সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং তা বেশ কার্যকারী।

এতোক্ষণ অনেক কিছু জানলাম কলা ফল সম্পর্কে। এবার চলুন জানা যাক কলার সার্বিক উপকারিতা সম্পর্কে। তবে আলোচনার আগে কয়েকটা বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া যাক। অবস্থা ভেদে কলা অনেক উপকারি। যেমন কাঁচা কলা-পাঁকা কলা, সকালে কলা খাওয়া-রাতে, খালি পেটে-ভরা পেটে ইত্যাদি। এখন আমাদের আলোচনা এবং বুঝার সুবিধার্থে প্রাথমিক অবস্থায় কলার সামগ্রিক উপকারিতার দিকটি নজরে দেওয়া যাক।

 সুতরাং চলুন জানা যাক কলার উপকারিতা সিরিয়াল চার্ট-

  • কলা হারানো শক্তি ফিরিয়ে আনে
  • বিষণ্ণতা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  • উচ্চ রক্তাচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
  • রক্তস্বল্পতা দূর করে
  • সন্তানসম্ভব্য নারীদের জন্য উপকারি
  • কোষ্ঠকাঠিন্যতা ‍দূর করে
  • পাকস্থলির আলচার নিরাময় করে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *