LSD কি? এল এস ডি দিয়ে কি করা হয়? এবং LSD সম্পর্কিত সকল তথ্য


What is LSD? এল এস ডি কি?

 

লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি) (ইংরেজি: Lysergic acid diethylamide), এছাড়াও অ্যাসিড পরিচিত, এক ধরনের সাইকেডেলিক ওষুধ যা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের জন্য পরিচিত। যার মধ্যে পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা, উপলব্ধি ও সেই সাথে সংবেদন অনুভূত হওয়া এবং অবাস্তব চিত্রসমূহ বাস্তব মনে হওয়া- প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ মাদক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য অনুযায়ী, ডি-লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড বা এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ যা রাই এবং বিভিন্ন ধরণের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরণের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়।

এটি স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি পদার্থ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে এটি পাউডার, তরল, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যায়।

সংস্থাটির মতে, এটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কার্যক্রম প্রভাবিত করে ব্যবহার, অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করে।

LSD এর কাজ কি? 

এটি প্রধানত প্রমোদমূলক ওষুধ হিসেবে এবং আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয়। এলএসডি সাধারণত জিভের নিচে রাখা হয়। এটি প্রায়ই বল্টার কাগজ, চিনির কিউব বা জিলাটিনে বিক্রি করা হয়। এটি ইনজেকশানের সাহায্যে নেয়া হতে পারে।

LSD দেখতে কেমন , এবং এটি কিভাবে কাজ করে? 

এলএসডি আসক্তিজনক নয়। যদিও, প্রতিকূল মনস্তত্ত্ব প্রতিক্রিয়া যেমন উদ্বেগ, প্যারানয়া এবং বিভ্রম ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এলএসডি এগ্রোলাইন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এলএসডি অক্সিজেন, অতিবেগুনী রশ্মি, এবং ক্লোরিন সংবেদনশীল, যদিও, আলো, আর্দ্রতা এবং স্বল্প তাপমাত্রা থেকে দূরবর্তী স্থানে এটি কয়েক বছর ধরে সংরক্ষিত থাকতে পারে। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি গন্ধহীন এবং পরিষ্কার বা সাদা রঙের হয়। ন্যূনতম ২০-৩০ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি এর প্রভাব উৎপাদনের জন্যে যথেষ্ট।

 

 

প্রতিকূল প্রভাব

সহিষ্ণুতা

এলএসডি আসক্তি উৎপাদন করে না। পরীক্ষামূলক প্রমাণে পাওয়া গেছে যে এলএসডি ব্যবহারের ফলে মানুষ বা পশুদের মধ্যে ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি ঘটে না।

ফার্মাকোলজি

ফার্মাকোডায়নামিক্স

অধিকাংশ সেরোটোনার্জিক সাইকেডেলেক উল্লেখযোগ্যভাবে ডোপামিনার্জিক নয়, এবং একারণে এলএসডি এই ব্যাপারে বিরলদৃষ্ট। এলএসডি কর্তৃক D2 গ্রহণকর্তার এগোনিজম মানুষের মধ্যে চিত্তপ্রভাবকারী প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

5-HT3 এবং 5-HT4 গ্রহণকর্তা ব্যতীত এলএসডি সর্বাধিক সেরোটনিন গ্রহণকর্তার উপশাখায় যুক্ত হয়। যদিও, এই গ্রহণকর্তার অধিকাংশ অত্যন্ত কম মাত্রায়ও প্রায় ১০-২০ nM মস্তিষ্কের একাগ্রতা দ্বারা পর্যাপ্ত প্রভাবিত হতে পারে।

ফার্মাকোকাইনেটিক

এলএসডি-এর প্রভাবগুলি সাধারণত সেবন মাত্রা, সহিষ্ণুতা, শরীরের ওজন এবং বয়সের উপর নির্ভর করে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা স্থায়ী হয়ে থাকে।

রসায়ন

সেবন মাত্রা বা ডোজ

সাদা ব্লোটারে এলএসডি (WoW)

এলএসডি-এর প্রতিটি ডোজ ৪০ ও ৫০০ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে হতে পারে- যা প্রায় এক দশমাংশ বালুকণা ভরের সমান। ২৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি একটি প্রান্তিক মানের প্রভাব উঃপাদন করতে পারে। এলএসডি ডোজ সাধারণত মাইক্রোগ্রামে (µg) বা এক গ্রামের এক মিলিয়ন ভাগে পরিমাপ করা হয়।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি এলএসডি-এর সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। যাদের কেউ কেউ চিকিৎসা বহির্ভুত ব্যবহারের জন্য আইনগতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপে এর ব্যবহার শিথীলকরণের পর এসব মন্তব্য প্রকাশ্যে হাজির করেন, যা ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে মানসিক চিকিৎসার সঙ্গেও সম্পর্কিত। এখনও দার্শনিক, শৈল্পিক, থেরাপিউটিক, আধ্যাত্মিক, বা বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত অবৈধ এলএসডি সম্পর্কে অন্যরা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

 

  • রিচার্ড ফাইনম্যান
  • জেরি গার্সিয়া
  • বিল গেটস
  • আলদোস হাক্সলে
  • স্টিভ জবস
  • ক্যারি মুলিস



বাংলাদেশ এ এর প্রভাব  এবং এল এস ডি সেবনে আক্রান্ত বাক্তির কিছু লক্ষন তুলে ধরা হল!! 
 
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, ইয়াবা আ হেরোইনের মতো মাদক দ্রব্যের তুলনায় এলএসডি-তে আসক্তিকর উপাদান (অ্যাডিক্টিভ প্রোপার্টি) কম থাকে। তবে তার মানে এই না যে, এতে আসক্তি তৈরি হয় না। একাধিকবার বা দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করতে থাকলে এলএসডির প্রতিও আসক্তি তৈরি হয়।তবে ব্যক্তিভেদে এই আসক্তির মাত্রা বা এলএসডির প্রতিক্রিয়া আলাদা হয়।

 

মিস সরকার মনে করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা মাদক হিসেবে এলএসডি গ্রহণ করেন তারা একক মাদক হিসেবে একে গ্রহণ করেন না। বরং অন্য মাদকের সাথে সাথে এলএসডিও গ্রহণ করে থাকেন। তাই অন্য মাদকদ্রব্যে আসক্তির কারণে যে ধরণের বৈশিষ্ট্য ব্যবহারকারীর মধ্যে দেখা যায় এলএসডির ক্ষেত্রেও বৈশিষ্ট্য অনেকটা একই রকম হয়।
আবার অনেকেই নিয়মিত গ্রহণ না করে বরং মাঝে মাঝে বা কৌতূহলবশত এলএসডি ব্যবহার করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে আলাদা করে কোন বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় না।
মিস সরকার বলেন, মানুষ মাদক গ্রহণ করতে থাকলে তার শরীরে এক ধরণের সহনশীলতা তৈরি হয়। অর্থাৎ আগে কোন মাদক যে পরিমাণ গ্রহণ করলে যতটা নেশা হতো পরবর্তীতে হয়তো সেই একই মাদকে আর সেই আগের মতো নেশা হচ্ছে না। তখন আসক্ত ব্যক্তি অন্য মাদক দ্রব্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এলএসডিও সে ধরণের মাদকদ্রব্য বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা এলএসডি ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে নানা ধরণের হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। তার হয়তো মনে হয় যে সে এমন কোন রঙ বা ঘটনা দেখছেন যা আসলে বাস্তবে নেই। এছাড়া নানা ধরণের শব্দও শুনতে পান বলে জানান মিস সরকার।
তবে কেউ যদি অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি এলএসডি’র আসক্তিতেও ভোগেন তাহলে তার মধ্যে নানা ধরণের বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
 
১. অস্বাভাবিক আচরণ
 
জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপরতন চৌধুরী বলেন, এলএসডি গ্রহণের পর এর কার্যকারিতা সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। তবে অনেক সময় এটি ২০ ঘণ্টা পর্যন্তও কার্যকর হতে পারে।
তিনি বলেন, এই সময়ে ব্যবহারকারীরা নানা ধরণের অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। অনেক সময় মানুষ আত্মঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। এ ধরণের বৈশিষ্ট্য যদি পরিবারের কারো মধ্যে দেখা যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা এলএসডি-তে আসক্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে খুব ছোট ঘটনায়ও সহিংস হয়ে উঠতে পারেন তারা।
২. ক্ষুধামন্দা
 
এলএসডিতে আসক্ত হলে তাদের মধ্যে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় বলে জানান মি. চৌধুরী।
৩. ঘুমের সমস্যা
 
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এর তথ্য অনুযায়ী, এলএসডিতে আসক্তদের মধ্যে ঘুম নিয়ে ব্যক্তিভেদে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়। অনেকের মধ্যে চরম মাত্রায় অনিদ্রা দেখা দেয়। তবে মি. চৌধুরী জানান, অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত ঘুমের বৈশিষ্ট্যও দেখা দেয়। কোন ধরণের কারণ ছাড়াই ঘুমাতে থাকেন অনেকে।
এলএসডি সেবনের পর অনেক ব্যবহারকারীর শ্রবণ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় হয়ে যায় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
ছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,
এলএসডি সেবনের পর অনেক ব্যবহারকারীর শ্রবণ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় হয়ে যায় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
ডা. মেখলা সরকার বলেন, যারা আসক্তিতে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রাতের বেলা তারা না ঘুমিয়ে জেগে থাকেন আবার দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকেন।
৪. শারীরিক পরিবর্তন
 
মি. চৌধুরী বলেন, এলএসডি-তে আসক্তদের যেসব শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তার মধ্যে রয়েছে, চোখের মণিতে পরিবর্তন বিশেষ করে বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
এছাড়া এলএসডি সেবনের পর অনেক ব্যবহারকারীর শ্রবণ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় হয়ে যায় বলেও জানান তিনি। এ কারণেই অনেক সময় যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে গান করেন তারা এই মাদক গ্রহণ করে থাকেন বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য মতে, এলএসডি গ্রহণের কারণে দেহে অতিরিক্ত ঘামও হয়ে থাকে।
৫. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
 
ডা. মেখলা সরকার বলেন, মাদকে আসক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ব্যবহারকারীর জীবনযাত্রায় নানা ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি হয়তো কারো সাথে মিশতে চাইছেন না বা বন্ধু বান্ধবের পরিমাণ কমে যেতে দেখা যায়।
অনেক সময় আবার এর বিপরীতও দেখা যায়। আগের বন্ধুদের সাথে না মিশলেও নতুন করে বন্ধুও তৈরি হতে পারে। আর্থিক চাহিদা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দেয়া, ক্লাসে ফাঁকি দেয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যেতে পারে বলেও মনে করেন মিস সরকার।
মাদকাসক্তি বিষয়ক গবেষক ও ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এম ইমদাদুল হক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে, সন্তানরা বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে পড়ছে বা তারা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই একাকী হয়ে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে এলএসডির মতো আসক্তি ধরাটা কঠিন। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে সন্তানের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে।
মি. হক মনে করেন, ঘুমের সমস্যা বা খাবারের অরুচি, নতুন বন্ধু তৈরি মানেই কেউ মাদকাসক্ত নয়। সন্তানদের প্রতি যাতে বাবা-মা অযাচিতভাবে সন্দেহের আওতায় নিয়ে না আসে সেদিকেও লক্ষ্য রাখাটা জরুরি। আর এ কারণেই বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের সচেতন থাকতে হবে।

 

 

 

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *