গরু মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি!

 *****গরু মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি*******

গরু মোটাতাজাকরণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন-

১. স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মাণ

২. উপযুক্ত জাত ও ধরণ অনুসারে গরু নির্বাচন ও ক্রয়

৩. সুষম খাদ্য সরবরাহ

৪. রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মাণ

১. মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় গরুকে বেঁধে পালতে হবে।

২. আলো বাতাস যুক্ত উঁচু জায়গায় গরুর ঘর তৈরি করতে হবে। চারদিক খোলামেলা রাখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে।

৩. গোয়াল ঘরের পূর্বদিকে রোদ ঢোকার এবং দক্ষিণ দিকে বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা করতে হবে। গোয়াল ঘরের উত্তর দিকে বেড়া দিয়ে রাখতে হবে, যেন শীতকালে উত্তরের বাতাস না ঢোকে।

৪. প্রতিটি গরুর জন্য ৩-৪ বর্গমিটার (৭ ফুট X ৫ ফুট) জায়গা হিসেবে ঘর তৈরি করতে হবে।

৫. ঘরের মেঝে ইট বিছানো বা পাকা হতে পারে তবে মসৃণ করা যাবে না। কাঁচা মেঝেতেও গরু পালন করা যায়। ঘরের মেঝের একদিকে ঢালু করতে হবে যাতে গোবর চনা ড্রেন দিয়ে দূরে গর্তে ফেলা যায়।

৬. কাঠ বা বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘর তৈরি করতে হবে।

৭. ঘরের চালা টিন বা শন দিয়ে তৈরি করতে হবে। গরমের সময় চালা যেন বেশি উত্তপ্ত না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। টিনের চালা হলে চালার নিচে বাঁশের তৈরি চাটাই দিতে হবে।

৮. নিয়মিত ঘর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত পালন ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।

উপযুক্ত জাত ও ধরণ অনুসারে গরু নির্বাচন ও ক্রয়

গরু মোটাতাজাকরণের সবচেয়ে প্রধান কাজ হলো কম দামে ভালো গরু কেনা। গরু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে :

১. সাধারণত: দেড় থেকে দু’বছর বয়সের এঁড়ে বাছুর অথবা প্রজননের অনুপযুক্ত ষাঁড়, বকনা বা গাভী, নির্বাচন করতে হবে।

২. বিশুদ্ধ জাতের গরু অপেক্ষা শংকর জাতের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয় বলে শংকর জাতের গরু নির্বাচন করা ভালো।

৩. গরুর শিং দেখে সহজে বয়স চেনা যায়। এক বছর বয়স হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর গরুর শিং-এ একটি গোল দাগ বা রিং পড়ে। গরুর বয়স যে কয় বছর হয় শিং-এ সে কয়টি গোল দাগ পড়ে। এছাড়া গরুর দাঁত দেখেও বয়স আন্দাজ করা যায়। সাধারণত দুই বছর বয়সে দুটি স্থায়ী দাঁত উঠে। এরপর প্রতি নয় মাস পর একজোড়া করে স্থায়ী দাঁত উঠে।

৪. রোগা-পাতলা, গায়ের চামড়া ঢিলা, গলকম্বল বড় ও ঝুলানো এমন গরু নির্বাচন করতে হবে।

৫. মাথা ও পা খাটো, মোটা এবং সুগঠিত গিরা এমন গরু নির্বাচন করতে হবে।

৬. বাড়ন্ত আকার, পিঠ সোজা, গোলাকৃতি গলা, চওড়া ও ভরাট বুক, প্রশস্ত পাঁজড়, দৃড় উজ্জ্বল ও ভেজা চোখ বিশিষ্ট পাতলা অথচ সুস্থ রোগহীন গরু বাছাই করতে হবে।

৭. কালো ও গাঢ় লাল রঙের গরু বাছাই করতে হবে। এতে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাবে|

সুষম খাদ্য সরবরাহ

গরুর ওজন অনুযায়ী সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গাভীর জন্য পরিমাণমত সবুজ ঘাস, খড় ইত্যাদি আঁশযুক্ত খাবার দিতে হবে। তাছাড়া দানাদার খাবারও দেওয়া যায়। বাছুরকে শুধু দানাদার খাবার (গম ভাঙ্গা, খেসারির ডালের গুড়া ইত্যাদি) দেওয়া ভালো।

* দানাদার খাদ্য মিশ্রণ

নিচে মোটাতাজাকরণের গরুর জন্য একটি দানাদার খাদ্য মিশ্রণের তালিকা দেওয়া হলো

উপাদান শতকরা হার এককেজি দানার খাদ্য মিশ্রণের পরিমাণ

গমের ভুশি ২৫% ২৫০ গ্রাম

চালের কুড়া ২৫% ২৫০ গ্রাম

তিলের খৈল ২০% ২০০ গ্রাম

যে কোন কালাই বা ছোলা ২০% ২০০ গ্রাম

হাড়ের গুড়া/ঝিনুক গুড়া/ চুন ৫% ৫০ গ্রাম

লবণ ৫% ৫০ গ্রাম

মোট ১০০% ১০০০ গ্রাম =১ কেজি

তথ্য সূত্র: গরু মোটাতাজাকরণ, মে ২০০৩, স্মল এন্টারপ্রাইজ ইউনিট, আইটিডিজি-বাংলাদেশ, ঢাকা।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

লাভজনকভাবে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য প্রয়োজন গরুর সঠিক পরিচর্যা, পরিষ্কার-পরিছন্নতা, নিয়মিত টিকাদান ও চিকিৎসা। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে:

১. কেনার পর গরুকে ৭ দিন আলাদা রাখতে হবে।

২. স্বাভাবিক অবস্থায় আসার পর গরুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

৩. গরুর থাকার জায়গা সবসময় পরিষ্কার-পরিছন্ন এবং শুকনা রাখতে হবে।

৪. গরুকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য দিতে হবে।

৫. রোগ-ব্যাধি দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা দিতে হবে।

৬. রোগে আক্রান্ত গরুকে অবশ্যই আলাদা করে চিকিৎসা দিতে হবে।

প্রশিক্ষণ

গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে এ পদ্ধতির বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া গরু মোটাতাজাকরণ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অথবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে পশু পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

গরুর মাংস ও দুধ প্রাণীজ আমিষের অন্যতম উৎস। সারাবছরই গরুর মাংস ও দুধের চাহিদা থাকায় গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *