৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা: ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর (PDF)
৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় : হিন্দুধর্ম একটি সুপ্রাচীন ধর্ম। এ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কোনো একজন মাত্র ব্যক্তিকে চিহিত করা যায় না। বহু সাধকের সাধনায় এ ধর্ম বিকশিত হয়ে চলছে। ঈশ্বরের স্বরূপ, তাঁর প্রতি বিশ্বাস, কর্মবাদ, জন্মান্তর, অবতারতন্তর, দেব- দেবীর পুজা, মোক্ষলাত, নারীর প্রতি মর্ধাদাবোধ এগুলো হিন্দুধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এসকল বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়েই হিন্দুধর্মের স্বরূপ উপলব্ধি ও ব্যাখ্যা করা যায়।
৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৩য় অধ্যায়
১. অধীরবাবু কর্মকে ধর্ম জ্ঞান করেন। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সকলের জন্য তিনি আর্থিক, পারিবারিক বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। তবে তিনি মা, বোন এবং স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে শ্রদ্ধাশীল। এ কাজের জন্য তিনি তাদের কাছে কিংবা সৃষ্টিকর্তার নিকট কোনো কিছু প্রত্যাশা করেন না। তার ধারণা মানুষের জন্ম একবারই হয়। পাপ-পুণ্য সবই এ পৃথিবীতে ঘটে।
ক. ‘মোক্ষ’ কথাটির মানে কী?
খ. ‘জন্মান্তরের পেছনে রয়েছে কর্মবাদ’ – কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. অধীরবাবুর আচরণে হিন্দুধর্মের যে বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মা, বোন ও স্ত্রীর প্রতি অধীরবাবুর আচরণ যথার্থ’ – কথাটি তোমার পঠিত ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ের আলোকে মূল্যায়ন কর।
২. সুজয় ঈশ্বরে গভীরভাবে বিশ্বাস ও ভক্তি করেন। তিনি জানেন জীবের মাঝেই ঈশ্বর বিরাজমান। তাই তিনি কোনো জীবকে কষ্ট দেন না। সকল কর্ম ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে জগতের কল্যাণের কথাও চিন্তা করেন। কারণ তিনি উপলব্ধি করেছেন, ধর্মাচরণের মূল লক্ষ্য ‘আত্মমোক্ষায় জগদ্ধিতায় চ।’
ক. হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের রূপ সাকার না নিরাকার?
খ. অবতার কাকে বলে?
গ. জীবের মাঝে ঈশ্বর বিরাজমান- সুজয় কীভাবে তার এ বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাবে?
ঘ. ‘আত্মমোক্ষায় জগদ্ধিতায় চ’- উক্তিটির মর্মার্থ বিশ্লেষণ কর।
৩. শরজিৎ কর্মফলে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন, জীবনের জন্য কর্ম, অন্য কিছুর জন্য নয়। তার বাবার বন্ধু পণ্ডিত সাধন বাবু বলেন, যে কোনো কর্মের রয়েছে ফল- সেটা ভালে হোক বা মন্দ হোক। আর এ কর্মের জন্যই মানুষ বারবার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরও বলেন, কর্মের সাথে কর্মফল সম্পর্কযুক্ত।
ক. হিন্দুধর্মের প্রধান ভিত্তি কয়টি?
খ. কর্মবাদ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত মানুষের বার বার জন্মগ্রহণের পেছনে কোন ধরনের কারণ রয়েছে বলে সাধন বাবু মনে করেন?
ঘ. ‘কর্মের সাথে কর্মফল সম্পর্কযুক্ত’ – এ উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
অতিরিক্ত অনুশীলনীমূলক প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ তোমার প্রাত্যহিক জীবনের কয়েকটি শুভকর্মের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : আমার প্রাত্যহিক জীবনে আমি সকালে প্রাতঃকৃত্য সম্পন্ন করে যোগাসন করি এরপর লেখাপড়া করি। তারপর ঘরে মায়ের সাথে সকলের জন্য খাবার তৈরি করি। সকালের আহার শেষ করে বিদ্যালয়ে যাই। লেখাপড়া শেষে বাড়ি ফিরে আহার করি। বিকালে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করি কিংবা বাগানের পরিচর্যা করি। সায়াহ্নকৃত্য করে বাড়ির কাজ করি। এরপর রাতে নৈশকৃত্য শেষে ঘুমাতে যাই।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ জন্মান্তরবাদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : জন্মান্তরবাদ হলো হিন্দুধর্মের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্যের একটি। প্রত্যেককে পুনঃপুন জন্মগ্রহণ করতে হয়। একে বলা হয় জন্মান্তর। এ জন্মান্তরের পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে কর্মবাদ। জীব তার কর্মফল ভোগের জন্য বারবার জন্মগ্রহণ করে। একেই বলে জন্মান্তরবাদ।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ ভরত মুনিকে হরিণরূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল কেন?
উত্তর : হিন্দুশাস্ত্র মতে, মানুষ যেরূপ চিন্তা করতে করতে মৃত্যুবরণ করে সেরূপে জন্ম লাভ করে। ভরত মুনি একটি শিশু হরিণকে লালনপালন করতেন। তিনি হরিণটির চিন্তা করতে করতে মৃত্যুবরণ করেন। তাই ভরত মুনিকে হরিণরূপে জন্ম নিতে হয়েছিল।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ কীভাবে নারীর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা যায় ?
উত্তর : হিন্দুধর্মে নারীকে ঈশ্বরের শক্তি হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়। তাই নারীদের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করাও ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীদের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের উপায়গুলো হলো:
১. নারীকে পরমা প্রকৃতি দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার অংশ মনে করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন; ২. নারীদের সহযোগিতা করা; ৩. সবসময় নারীদেরকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেয়া; ৪. নারীদের অধিকার রক্ষা করা; ৫. নারীদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ ‘ব্রহ্ম, অবতার, দেব-দেবী এবং জীব-সব মিলিয়ে এক ঈশ্বর’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ঈশ্বর এক, অদ্বিতীয়। তিনিই এ জগতের সৃষ্টিকর্তা। সকল জীব তারই উপাসনা ও আরাধনা করে। ঈশ্বরের রূপ দুটি। একটি সাকার এবং আরেকটি নিরাকার। সাকার রূপগুলো হলো: অবতার, দেবদেবী ও জীবের মধ্যে পরমাত্মার জীবাত্মা রূপে অবস্থান এবং তার নিরাকার রূপ হলো : ব্রহ্ম, ঈশ্বর, ভগবান প্রভৃতি।
আমরা তার সাকার রূপগুলো দেখতে পাই। এগুলো মূলত তার শক্তিরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আমরা তার নিরাকার রূপ দেখতে পাই না। অনুভবে তার এ রূপকে স্তুতি জানাই। কিন্তু সাকার ও নিরাকার সকল রূপের উৎস এক ঈশ্বর। তিনিই আমাদের কাছে কখনো ব্রহ্ম, কখনো অবতার, কখনো দেবদেবী। কিন্তু এরা সব মিলিয়ে এক ঈশ্বর।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ ‘কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ পরস্পর সম্পর্কিত’ – বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : হিন্দুধর্মের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলো কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ। সকল জীবই কর্ম করে। কর্মের পেছনে কোনো না কোনো কারণ যেমন থাকে তেমনি ফলও থাকে। এ ফল অবশ্যই কর্মকর্তাকে ভোগ করতে হয়। তা ভালো হোক আর মন্দ হোক। এটিই হলো কর্মবাদ। কর্মফল ভোগ করতে অনেক সময় জীবকে পুনঃপুন জন্ম নিতে হয়। এভাবে একজন্ম শেষে মৃত্যুবরণ করে অন্য জন্মগ্রহণ করাকে জন্মান্তরবাদ বলে।
এ কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কর্মবাদ থেকেই জন্মান্তরবাদের উদ্ভব। কর্মের ফল নষ্ট হয় একমাত্র ভোগের দ্বারাই। কর্মকর্তাকে এ ফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়। ফল ভোগের জন্যই জন্মান্তরবাদের উৎপত্তি। জন্মান্তরবাদের মাধ্যমে জীব তার কর্মের ফল ভোগ করে।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ ‘আত্মমোক্ষায় জগদ্ধিতায় চ’- সংস্কৃত বাক্যটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘আত্মমোক্ষায় জগদ্ধিতায় চ’-এ সংস্কৃত বাক্যটির অর্থ হলো- নিজের মোক্ষলাভ ও জগতের কল্যাণ করাই হলো ধর্মাচরণ। প্রকৃত পক্ষে মোক্ষলাভের উপায় হলো জীব ও জগতের কল্যাণ করা। হিন্দুধর্মে মোক্ষলাভ করতে হলে জীবের ও জগতের মঙ্গলের জন্যও কাজ করতে হয়। শুধু নিজের সুখের জন্য মোক্ষলাভের প্রতি আসক্ত হলে এবং জীব ও জগতের কথা চিন্তা না করলে তা স্বার্থপরতার পরিচয় দেয়। এটি প্রকৃত ধর্মাচরণ নয়। মোক্ষলাভ করতে চাইলে জগতের কল্যাণ না করলে ধর্মাচরণ সম্পূর্ণ হয় না। ধর্মাচরণ সম্পূর্ণ করতে পারলে ঈশ্বর কৃপা করেন এবং জীব মোক্ষলাভ করে।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ ‘মাতৃরূপই একজন নারীর সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থান’-দৃষ্টান্ত সহকারে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাতৃরূপই একজন নারীর সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থান বলা হয়েছে। কেননা একজন আদর্শ মায়ের হাতে আদর্শ সন্তান গড়ে উঠতে পারে। সন্তানের কাছে মায়ের মতো বন্ধু আর নেই। রোগে, শোকে, আনন্দে, উৎসবে মা-ই হচ্ছেন সন্তানের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, উৎসাহদাতা ও আনন্দের উৎস। হিন্দুধর্মের অন্যতম ধর্মশাস্ত্র মনুসিংহিতায় বলা হয়েছে “যে সংসারে নারীরা আনন্দে উৎসবে সুখে জীবনযাপন করে সে সংসার ঈশ্বরের কৃপায় শান্তি সমৃদ্ধিতে ভরে উঠে।”
মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে “যে পরিবারে নারীর প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করা হয়, সে পরিবারের দেবতারা আনন্দে বাস করেন।” মায়ের রূপ স্নেহময়ী ও সেবার এ রূপে ঈশ্বর তার সৃষ্টি জীবকে সন্তানরূপে স্নেহ করেন, কৃপা করেন। এ রূপের তুলনা নেই। এমন মাতৃরূপী নারীর প্রতি সন্তানের কর্তব্য হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, তার সেবাশুশ্রুষা করা। সুতরাং বলা যায়, মাতৃরূপই একজন নারীর সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থান।