ওমরাহ পালনের নিয়মাবলী

দুইটি শর্তপূরণ হওয়া ছাড়া কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না:

১. আল্লাহর জন্য মুখলিস (একনিষ্ঠ) হওয়া। অর্থাৎ সে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালকে উদ্দেশ্য করা; প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারপ্রিয়তার উদ্দেশ্যেনা করা অথবা অন্য কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে না করা।

২. কথা ও কাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা আদর্শ জানা ছাড়া তাঁকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি উমরা, হজ্ব বা অন্যকোন ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তার কর্তব্য হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ শিখে নেয়া; যাতে তার আমল রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক হয়। নিম্নে আমরা সুন্নাহরআলোকেউমরা আদায়ের পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরব।উমরার কাজ চারটি:

এক:ইহরাম

ইহরাম মানে হচ্ছে- নুসুকে তথা হজ্ব বা উমরাতে প্রবেশের নিয়ত।

কেউ যদি ইহরাম করতে চায় তখন সুন্নত হচ্ছে- সে ব্যক্তি কাপড়-চোপড় ছেড়ে ফরজ গোসলের মত গোসল করবে, মাথা বা দাঁড়িতে মিসক বা অন্য যে সুগন্ধি তার কাছে থাকে সেটা লাগাবে। সুগন্ধির আলামত যদি ইহরাম করার পরেও থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইহরাম করতে চাইতেন তখন নিজের কাছে সবচেয়ে ভাল যে সুগন্ধিটা আছে সেটা ব্যবহার করতেন। ইহরাম করার পরে আমি তাঁর মাথা ও দাঁড়িতে সে সুগন্ধির ঝিলিকদেখতে পেতাম।[সহিহ বুখারি (২৭১) ও সহিহ মুসলিম (১১৯০)] নর-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। এমনকি হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীদের ক্ষেত্রেও। কেননা আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) নিফাসগ্রস্ত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ইহরামের জন্য গোসল করার ও রক্ত প্রবাহের স্থান একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে ইহরাম করার নির্দেশ দিয়েছেন।[সহিহ মুসলিম (১২০৯)]

গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহারের পর ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। এরপর ফরজ নামাযের ওয়াক্ত হলে ফরজ নামায আদায় করবে। ফরজ নামাযের ওয়াক্ত না হলে ওজুর সুন্নত হিসেবে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। নামাযের পর কিবলামুখি হয়ে ইহরাম বাঁধবে। ইচ্ছা করলে বাহনে (গাড়ীতে) উঠে যাত্রার প্রাক্কালে ইহরাম করতে পারেন। তবে মীকাত থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার আগে ইহরাম করতে হবে। এরপর বলবেন:

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِعُمْرَةٍ

লাব্বাইকাল্লাহুম্মা বি উমরাতিন (অর্থ- হে আল্লাহ! উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন সেভাবে তালবিয়া পড়বে। সেই তালবিয়া হচ্ছে-

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لا شَرِيكَ لَكَ

লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকালা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।

(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আপনি নিরঙ্কুশ। আমি আপনার দরবারে হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা, যাবতীয় নেয়ামত আপনার-ই জন্য এবং রাজত্ব আপনার-ই জন্য। আপনি নিরঙ্কুশ।)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামআরও একটি তালবিয়া পড়তেন সেটা হচ্ছে-

لَبَّيْكَ إِلَهَ الْحَقِّ

লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্ব (অর্থ- ওগো সত্য উপাস্য! আপনার দরবারে হাজির)।

ইবনে উমর (রাঃ) আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন:

لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ

লাব্বাইকা ওয়া সাদাইক। ওয়াল খাইরু বি ইয়াদাইক। ওয়ার রাগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমাল। (অর্থ- আমি আপনার দরবারে হাজির, আমি আপনার সৌজন্যে উপস্থিত। কল্যাণ আপনার-ই হাতে। আকাঙ্ক্ষা ও আমল আপনার প্রতি নিবেদিত)। পুরুষেরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: জিব্রাইল (আঃ) এসে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন আমাদের সাহাবীদেরকে ও আমার সঙ্গিদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়ার আদেশ দিই।[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৫৯৯) আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] আরেকটি দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “উত্তম হজ্ব হচ্ছে আল-আজ্জ ও আল-সাজ্জ।”[সহিহুল জামে গ্রন্থে (১১১২) আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন] আল-আজ্জ (العَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়া। আর আল-সাজ্জ (الثَجّ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- হাদির রক্ত প্রবাহিত করা।

আর নারী এতটুকু জোরে তালবিয়াপড়বে যাতে পাশের লোক শুনতে পায়। তবে পাশে যদি কোন বেগানা পুরুষ থাকে তাহলে মনে মনে তালবিয়াপড়বে।

যে ব্যক্তি ইহরাম করতে যাচ্ছেন তিনি যদি কোন প্রতিবন্ধকতাযেমন রোগ, শত্রু বা গ্রেফতার ইত্যাদি কারণে নুসুকতথা হজ্ব বা উমরা শেষ করতে না পারার আশংকা করেন তাহলে ইহরাম বাঁধার সময় শর্ত করে নেয়া বাঞ্ছনীয়। ইহরামকালে তিনি বলবেন:

إِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحِلِّيْ حَيْثُ حَبَسْتَنِيْ

ইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইসু হাবাসতানি (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা- যেমন রোগ, বিলম্ব ইত্যাদি আমার হজ্ব পালনে- বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আমি যেখানেপ্রতিবন্ধকতার শিকার হই সেখানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাব)। কেননা দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় ইহরাম বাঁধাকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন: “তুমি যে শর্ত করেছ সেটা তোমার রবের নিকটগ্রহণযোগ্য।”[সহিহ বুখারি (৫০৮৯) ও সহিহ মুসলিম (১২০৭)] যদি ইহরামকারী শর্ত করে থাকে এবং নুসুক সম্পন্ন করণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তাহলে সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। এতে করে তার উপর অন্য কোন দায়িত্ব আসবে না। আর যদি নুসুক সম্পন্ন করণে কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শর্ত করেননি এবং সাধারণভাবে সবাইকে শর্ত করার নির্দেশ দেননি।দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ হওয়ার কারণে শুধু তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইহরামকারীর উচিত অধিক তালবিয়া পাঠ করা। বিশেষতঃ সময় ও অবস্থার পরিবর্তনগুলোতে। যেমন উঁচুতে উঠার সময়। নীচুতে নামার সময়। রাত বা দিনের আগমনকালে। তালবিয়া পাঠের পর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

 

উমরার ক্ষেত্রে ইহরামের শুরু থেকে তওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়া বিধান রয়েছে।তওয়াফ শুরু করলে তালবিয়া পড়া ছেড়ে দিবে।

মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল: মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলে সম্ভব হলে মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করে নিবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা প্রবেশের সময় গোসল করেছিলেন।[সহিহ মুসলিম (১২৫৯)]

দুই: তওয়াফ

মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিবে এবং বলবে:

بِسْمِ اللهِ والصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ الَّلهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وافْتَحْ لِى أَبْوَابَ رَحْمَتِكَأَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

(অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিন। আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর মহান চেহারারমাধ্যমে, তাঁর অনাদি রাজত্বেরমাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)

এরপর তওয়াফ শুরু করার জন্য হাজারে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবে। ডান হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে ও চুমু খাবে। যদি হাজারে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারে হাত দিয়ে স্পর্শ করবে ও হাতে চুমু খাবে (স্পর্শ করার মানে হচ্ছে- হাত দিয়ে ছোঁয়া)। যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারে তাহলে হাজারে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবে এবং তাকবির বলবে; কিন্তু হাতে চুমু খাবে না। হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার ফজিলত অনেক। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আল্লাহ তাআলা হাজার আসওয়াদকে পুনরুত্থিত করবেন। তার দুইটি চোখ থাকবে যে চোখ দিয়ে পাথরটি দেখতে পাবে।তার একটি জিহ্বা থাকবে যে জিহ্বা দিয়ে পাথরটি কথা বলতে পারবে। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে পাথরটিকে স্পর্শ করেছে পাথরটি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।[আলবানী আল-তারগীব ও আল-তারহীব (১১৪৪) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

তবে উত্তম হচ্ছে- ভিড়না করা। মানুষকে কষ্ট না দেয়া এবং নিজেও কষ্ট না পাওয়া। যেহেতু হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি উমরকে লক্ষ্য করে বলেছেন- “হে উমর! তুমি শক্তিশালী মানুষ। হাজারে আসওয়াদের নিকট ভিড় করে দুর্বল মানুষকে কষ্ট দিও না। যদি ফাঁকা পাও তবে স্পর্শ করবে; নচেৎ হাজারে আসওয়াদমুখি হয়ে তাকবীর বলবে।[মুসনাদে আহমাদ (১৯১), আলবানী তাঁর ‘মানাসিকুল হাজ্জ ও উমরা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘কাওয়ি’ (শক্তিশালী) মন্তব্য করেছেন] এরপর ডানদিক ধরে চলতে থাকবে। বায়তুল্লাহকে বামদিকে রাখবে। যখন রুকনে ইয়ামেনীতে (হাজারে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবে তখন সে কর্নারটি চুমু ও তাকবীর ছাড়া শুধু স্পর্শ করবে। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তওয়াফ চালিয়ে যাবে; ভিড় করবে না। রুকনে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে এলেবলবেন:

(رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)

(অর্থ- হে আমাদের রব! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।)[সুনানে আবু দাউদ, আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

যখনই হাজারে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখনই হাজারে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবীর বলবে। তওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি যিকির, দুআ ও কুরআন তেলাওয়াত করবে। বায়তুল্লাহতে তওয়াফের বিধান দেয়া হয়েছে আল্লাহর যিকিরকে সমুন্নত করার জন্য। তওয়াফের মধ্যে পুরুষকে দুইটি জিনিশ করতে হয়।

 

১. তওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতেবা করা। ইজতেবা মানে- ডান কাঁধ খালি রেখে চাদরের মাঝের অংশ বগলের নীচ দিয়ে এনে চাদরের পার্শ্ব বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়া। তওয়াফ শেষ করার পর চাদর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিবে। কারণ ইজতেবা শুধু তওয়াফের মধ্যে করতে হয়।

২. তওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। রমল মানে হচ্ছে- ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। আর বাকী চার চক্করে রমল নেই বিধায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবে। সাত চক্কর তওয়াফ শেষ করার পর ডান কাঁধ ঢেকে নিয়ে মাকামে ইব্রাহিমে আসবে এবং পড়বে-

( وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِإِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى )

(অর্থ- আরতোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে তথা ইব্রাহীমেরদাঁড়ানোরজায়গাকেনামাযেরজায়গাবানাও।) [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]অতঃপর মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়বে। নামায শেষ করার পর হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে। এক্ষেত্রে শুধু স্পর্শ করা সুন্নত। যদি স্পর্শ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে ফিরে আসবে; ইশারা করবে না।

তিন: সায়ী

এরপর মাসআ (সায়ীস্থল) তে আসবে। যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন পড়বে

(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)

(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮]এরপর বলবে: (نبدأ بما بدأ الله به)(অর্থ- আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি)

অতঃপর সাফা পাহাড়ে উঠবে যাতে করে কাবা শরিফ দেখতে পায়। কাবা নজরে আসলে কাবাকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দুআ করবে। দুআর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং যা ইচ্ছা দুআ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর মধ্যে ছিল-

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাযা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদা।

(অর্থ- “নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীত। তিনি নিরঙ্কুশ। রাজত্ব তাঁর-ই জন্য। প্রশংসা তাঁর-ই জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ছাড়া। তিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সর্ব দলকে পরাজিত করেছেন।)[সহিহ মুসলিম (১২১৮)] এই যিকিরটি তিনবার উচ্চারণ করবেন এবং এর মাঝে দুআ করবেন। একবার এই যিকিরটি বলবেনএরপর দোয়া করেন। দ্বিতীয়বার যিকিরটি বলবেন এবং এরপর দুআ করবেন। তৃতীয়বার যিকিরটি বলে মারওয়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবেন। তৃতীয়বারে আর দুআ করবেন না। যখন সবুজ কালার চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন তখন যত জোরে সম্ভব দৌঁড়াবেন। কিন্তু কাউকে কষ্ট দিবেন না। দলিল হচ্ছে- হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা-মারওয়ার মাঝখানে সায়ী (প্রদক্ষিণ) করেছেন এবং বলেছেন: “আবতাহ দৌঁড়িয়ে পার হতে হবে।” [সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪১৯), আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] আবতাহ হচ্ছে- বর্তমানে দুইটি সবুজ রঙে চিহ্নিত স্থান। দ্বিতীয় সবুজ রঙ চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতি হাঁটবে। এভাবে মারওয়াতে পৌঁছবে। মারওয়ার উপরে উঠে কিবলামুখি হয়ে হাত তুলে দুআ করবে। সাফা পাহাড়ের উপর যা যা পড়েছে ও বলেছে এখানে তা তা পড়বে ও বলবে। এরপর মারওয়া থেকে নেমে সাফার উদ্দেশ্যে হেঁটে যাবে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার স্থানে হেঁটে পার হবে; আর দৌঁড়াবার স্থানে দৌঁড়ে পার হবে। সাফাতে পৌঁছার পর পূর্বে যা যা করেছে তা তা করবে। মারওয়ার উপরেও আগের মত তা তা করবে। এভাবে সাত চক্কর শেষ করবে। সাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্কর। মারওয়া থেকে সাফাতে এলে এক চক্কর। তার সায়ীর মধ্যে যা খুশি যিকির, দুআ, কুরআন তেলাতেয়াত করতে পারবে।

জ্ঞাতব্যঃ

(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)

(অর্থ-“নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম”)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৮] এই আয়াতটি শুধু সায়ীর শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বে। সাফা-মারওয়াতে প্রতিবার আয়াতটি পড়বে না যেমনটি কিছু কিছু মানুষ করে থাকে।

চার: মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা:

সাত চক্কর সায়ী শেষ করার পর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা মাথার চুল ছোট করবে। মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশের চুল মুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলে মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। মাথা মুণ্ডন করা চুল ছোট করার চেয়ে উত্তম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দুআ করেছেন; আর চুল ছোটকারীদের জন্য একবার দুআ করেছেন।[সহিহ মুসলিম (১৩০৩)] পক্ষান্তরে নারীরা আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ মাথার চুল কাটবে।

এই আমলগুলোর মাধ্যমে উমরা সমাপ্ত হবে। অতএব, উমরার মধ্যে রয়েছে- ইহরাম, তওয়াফ, সায়ী, মাথা মুণ্ডণ বা মাথার চুল ছোট করা।

আমরা আল্লাহ তাআলার প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে নেক আমল করার তাওফিক দেন। তিনি যেন আমাদের আমলগুলো কবুল করে নেন। নিশ্চয় তিনি নিকটবর্তী ও প্রার্থনা কবুলকারী।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *