সিডিএন – কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক কী এবং একজন ওয়েবমাস্টার কেনো এটি ব্যবহার করবেন?

আমরা সবাই জানি, একটি ওয়েবসাইট কোথাও না কোথাও কোনো ওয়েব সারভারে/হোস্টে স্টোর থাকে। আমরা যখন কোন সাইটে ভিজিট করি, তখন সেই সারভারের কাছে একটা রিকুয়েষ্ট যায়। সেই সারভার তখন ওই রিকুয়েষ্ট এর ডেটা আপনাকে রিটার্ন করে। তখন আপনি সেই ডেটাটা আপনার ফোনের ব্রাউজারে দেখতে পান। এইযে রিকুয়েষ্ট যাওয়া-আসা, এখানে ইন্টারনেট ও প্রয়োজন এবং যাওয়া-আসার জন্য একটা সময় ও প্রয়োজন। আর পুরো জিনিসটাই যেহেতু ইন্টারনেট এ হয়, সেজন্য এটি সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রনিক টেকনোলজি। আমরা জানি বিদ্যুৎ হোক বা আলো, সবকিছুর ই একটা নির্দিষ্ট গতি রয়েছে। কোন কিছুই ইনস্ট্যান্ট হয়না। তাই, আপনি আপনার ঘরে বসে ইন্টারনেট থেকে গুগল ডট কম লিখলে সেই রিকুয়েষ্ট টা গুগলের কাছে যেতেও একটা সময় লাগে। আবার গুগল আপনাকে রিটার্ন করবে, এখানেও সময় লাগে। এবার, আপনি তো বাংলাদেশে, গুগল এর সারভার তো আমেরিকায়। দূরত্ব যতো বেশি, সময় ও ততো বেশি লাগবে স্বাভাবিক। ধরুন বাংলাদেশ থেকে গুগলের ইউ-এস সারভারে রিকুয়েষ্ট যেতে আসতে সময় লাগে ২৫০ মিলি সেকেন্ড। এখন আপনার চোখে এটা কিছুই না। ১ সেকেন্ডের চার ভাগের ১ ভাগ মাত্র। কিন্তু, টেকনোলজির জগৎে ১ মিলিসেকেন্ড ও অনেক বড় ইস্যু।

সুতরাং, ডেটা আসতে যেতে সময় যদি লাগে ২৫০ মিলিসেকেন্ড, তাহলে ডেটা আদান প্রদানেও দেরী হবে এবং মাঝখানে কোন সমস্যা বা বাধা ঘটলে আরও দেরী হবে। ফলে আপনার ইন্টারনেট এর স্পিড ফাস্ট হলে স্লো ইন্টারনেট ই মনে হবে। কারণ, ডেটা যত দেরীতে আসবে যাবে, আপনি আপনার ব্রাউজারে দেখবেন লোডিং আর লোডিং।

তাহলে এবার কি করা যায়? এই ২৫০+ মিলিসেকেন্ড এর দুরত্বকে কিভাবে কমিয়ে আনা যায়, যাতে একজন ইউজার খুব দ্রুত ডেটা আদান প্রদান করতে পারে?

ঠিক এই উদ্দেশ্যেই যে টেকনোলজি কাজে লাগানো হয়, তাকে সিডিএন বলা হয়। কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক।

ধরুন গুগল যদি শুধুমাত্র একটি সারভার ইউজ করে এবং সেটি যদি আমেরিকায় থাকে, আপনার ইন্টারনেট যতই ফাস্ট হোক, আপনি লোডিং ইস্যু ই পাবেন। কিন্তু, গুগল যদি আমাদের দেশে যেখানে যেখানে ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট আছে, তথা আপনার ISP র লাইনটা আপনার বাসা থেকে আপনার ISP হয়ে একটা জেনারাল পয়েন্টে সবার ইন্টারনেট টা যুক্ত হয়। আবার সেই এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট আবার অন্য দেশের ইন্টারনেট এর বড় বড় এক্সচেঞ্জ এর সাথে যুক্ত। এই যেমন আমরা বলি BDIX, এটাও একটা এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট বাংলাদেশের।

গুগল যদি এক্সচেঞ্জ পয়েন্টেও তাদের একটা ডেলিভারি সারভার রেখে দেয়, তাহলে কি হবে? আপনি কিছু রিকুয়েষ্ট করলে আপনার রিকুয়েষ্ট যখনি এক্সচেঞ্জ পয়েন্টে পৌছাবে, তখনি এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট আপনার রিকুয়েষ্ট টা গুগলের আমেরিকায় না পাঠিয়ে সেটা বাংলাদেশে রাখা গুগলের সারভারে পাঠিয়ে দিবে। এতে কী হলো? দুরত্ব কমলো। দুরত্ব কমলে ডেটা দ্রুত আসবে। দ্রুত আসবে = ফাস্ট ডেলিভারি।

ঠিক এই কারণে বড় বড় কোম্পানি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জায়গায় একেকটি সারভার রাখে যা সেখানকার ট্রাফিক রিকুয়েস্টগুলোকে সেখানেই থাকা লোকাল সারভার থেকে ডেটা প্রদান করে। আর ওই লোকাল সিডিএন টা আবার মেইন গুগলের আমেরিকার সারভারের সাথে কানেক্ট থাকে এবং তারা পরস্পরকে ডেটা আদান প্রদান করে তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্কে বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই।

সিডিএন এর কাজ শুধুমাত্র এটাই নয়। সিডিএন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় রিয়্যাল টাইম ডেটা ডেলিভারিতে এবং স্ট্যাটিক কন্টেন্ট ডেলিভারিতে। যেমন, আপনি ফেসবুক এর কোন ভিডিও বাংলাদেশ থেকে ওপেন করলে সেটা সরাসরি আপনার কাছে না এসে ফেসবুক তা আপনার সবচেয়ে কাছে যে সিডিএন টি আছে, সেটাতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর সেই সিডিএন আপনাকে একটু একটু করে ডেটা পাঠায় আস্তেধীরে। এতে ডেটা লস কম হয়, ভিডিও দেখার সময় বাফারিং হয়না। কারণ, আপনি ডেটা রিকুয়েষ্ট করেছেন আমেরিকায়। কিন্তু, ডেটাটা পাচ্ছেন বাংলাদেশের সারভার থেকেই।

এটা ছাড়াও সিডিএন যেকোনো ওয়েবসাইট এর স্ট্যাটিক কন্টেন্ট, যেমন সিএসএস, এইচটিএমএল পেজ, ইমেজ, এগুলো সব ই সবচেয়ে কাছের সারভার থেকে ডেলিভার করে।

যেমন, আপনারা এমএলডব্লিউবিডিতে ঢুকলে দেখবেন খুব দ্রুত সবকিছু লোড হয়। এর কারণ এমএলডব্লিউবিডি ক্লাউডফ্লেয়ার কোম্পানির সিডিএন ব্যবহার করে। আর ক্লাউডফ্লেয়ারের নিজস্ব সারভার রয়েছে বাংলাদেশে। এতে করে আপনারা খুব দ্রুত সাইট ভিজিট করতে পারেন।

শুধুমাত্র এটাই শেষ নয়। আপনি চাইলে ডেটা ক্যাশ করেও রাখতে পারেন। ধরেন আপনি ঢাকার গুগলের সারভারে ডেটা ক্যাশ হলো। ওদিকে আমেরিকার গুগলের সারভার কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলো বা ডাউন হয়ে গেলো। মজার বিষয় এই যে, আমেরিকার সারভার ডাউন হবার ফলে সেটা শুধুমাত্র আমেরিকার লোকজকের উপরেই ইফেক্ট পড়বে। কারণ, আপনার ডেটা লোড হচ্ছে ঢাকার সারভার থেকে। ঢাকার টা তো ঠিকাছে এবং ঢাকার সারভারে ডেটা ক্যাশ করা আছে। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি একদম নতুন কোন ডেটা রিকুয়েষ্ট করেন গুগলের থেকে, সেটা যদি ঢাকার সারভারে ক্যাশ না থাকে, তাহলে ওই ডেটা গুগলের ঢাকা র সারভার আমেরিকার সারভারের কাছে চাইবে। বাট, আমেরিকার টা তো নষ্ট। ফলে আপনি এরর পেজ পাবেন বা ডেটা পাবেন না।

এখানেও শেষ নয়। আপনি চাইলে সিডিএন থেকে সিকিউরিটিও এড করতে পারেন। এতে করে কেউ বাংলাদেশ থেকে কোন সাইটে ডিডস অ্যাটাক দিতে চাইলে সেটা বাংলাদেশের সিডিএন এই আটকে যাবে। মেইন সারভার পর্যন্ত ওই রিকুয়েষ্ট যাবেই না। এর ফলে আপনার মেইন সারভার ও সুরক্ষিত রইলো।

আবারো এখানেই সমাপ্তি নয়। সিডিএন লোড ব্যালেন্সার হিসেবেও কাজ করে। তথা, আপনার ধরুন আমেরিকা, ইন্ডিয়া, জার্মান এই তিন দেশে সারভার আছে। কোন কারণে আমেরিকার সারভার ডাউন বা আমেরিকার টায় খুব চাপ পড়ছে ট্রাফিকের। তখন সিডিএন আমেরিকার সারভার থেকে ডেটা না নিতে পেরে বা সেখানে বেশি চাপ হচ্ছে বলে সেই লোড সামলাতে ডেটা নিলো ইন্ডিয়া বা জার্মানের সারভার থেকে। এতে করে আপনার তিনটা সারভার একই সাথে ট্রাফিক লোড শেয়ার করে নিবে এবং সারভারের লোড ব্যালেন্সে থাকবে।

ইভেন সিডিএন কে প্রক্সি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। আপনি যদি আপনার সিডিএন ইউজ করেন, সেক্ষেত্রে আপনার মেইন সারভার পাবলিকের নাগালের বাইরে রইলো। পাবলিক শুধু সিডিএন এর ইনফো জানবে। আপনার মেইন সারভারের কোন ইনফো জানবেনা। এতে করে সারভারে স্প্যামিং হ্যাকিং এসবের ঝুকি কম হয়।

আরও আরও অনেক সুবিধা ই পাওয়া যায় সিডিএন ইউজ করলে। এই প্রযুক্তির যুগে এসব সম্পর্কে জানা প্রয়োজন এবং যদি কারো ওয়েবসাইট থাকে, তার উচিৎ এসব সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা।

আমি নিজে আমার লোড ব্যালান্সার উইথ প্রক্সি সারভার বানিয়েছিলাম NGiNX ওয়েব সারভার ইউজ করে এবং সেটি দিয়ে আমার অনেক সাইট আমি ম্যানেজ করতাম। এটি অত্যন্ত ইফেক্টিভ বলে আমি মনে করি। বাই দ্য ওয়ে, লোড ব্যালেন্সিং এবং প্রক্সি কিন্তু সিডিএন নয়। একচুয়ালি সিডিএন এ এসব জিনিস ইউজ করা যায় আবার চাইলে এগুলো আলাদা ও বানানো যায়। তবে সিডিএন বানানো কিন্তু সম্ভব নয়। সিডিএন সার্ভিস আপনাকে কিনতে হবে বা বিভিন্ন কোম্পানি লিমিটেড ফ্রী সার্ভিস দেয়। সিডিএন তখনি সম্ভব, যখন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আপনার সারভার নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং সেগুলোকে একসাথে যুক্ত করলে তখন সেটি সিডিএন হিসেবে কাজ করবে।

তথ্যসূত্র: এমএলএমএলডব্লিউবিডি – মেহেদী হাসান

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *