ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন?

ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন?

ইতিহাস এবং ভুগোল দুটো বিষয়েরই পাঠ অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ। ইতিহাস পাঠ জরুরী এই কারনে যে-

১. সমাজ এবং সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। আজকে আমরা যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আছি তা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। পরিবর্তন গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে বর্তমান আমাদের হাতছাড়া হয়ে অন্যের দখলে চলে যাবে।

২. নিত্যদিন আমাদের উপর সমাজ এবং রাস্ট্র নতুন নতুন নিয়ম কানুন,আইন এমনকি জীবন যাপনের কৌশল চাপিয়ে দিচ্ছে। কেন, কি কারনে, কোন ধারাবাহিকতায় আমরা এই conflicts গুলোর মুখোমুখি হচ্ছি এবং সেগুলো বোঝা, ধারণ এবং বর্জনের জন্য ইতিহাস পাঠ সহায়ক।

৩. ইতিহাস লোভ, ত্যাগ, সংগ্রাম, ক্ষয় এবং জয়- এর সবকিছুই ধারণ করে- সব গল্পই বলার চেষ্টা করে; হতে পারে সেটা নিরপেক্ষ বা biased. এর মধ্যে থেকেই আমরা নিজ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা নিতে পারি।

৪. মানুষ এবং মানবগোষ্ঠী নিজের অজান্তেই কিছু ভয়াবহ শক্তিশালী চলক বা variable দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয়, যেমন ধর্ম, ভাষা, জাতীয়তাবোধ ইত্যাদি। এগুলোর যে কোন একটি বা একাধিকের সমষ্টি যে কোন সময় সময়ের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে- বয়ে নিয়ে আসতে পারে মুক্তি অথবা চরম বিপর্যয়। হাজার বছরের ইতিহাস গাঁথা সেই গল্পই লিখে গেছে। এটি অনুপ্রেরণা বা সাবধানতা দু ভাবেই কাজ করতে পারে।

৫. আমাদের প্রতিদিনের গল্পই আগামী কালের ইতিহাস। এ গল্পে ব্যাক্তিক, গোষ্ঠীয়, সামাজিক এবং রাস্ট্রীয় পর্যায়ে হয় আমরা অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করছি বা অন্যের দারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। এ এক নিরন্তর অস্তিত্তের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে যার ইতিহাস জ্ঞান যতো বেশী তার টিকে থাকবার সম্ভাবনাও ততো বেশী।

৬. আপনি যে রাস্ট্রের নাগরিকই হন না কেন- আজকে আপনি যে ভুগোলে আছেন শত বা হাজার বছর আগে হয়তো তার অস্তিত্তই ছিল না। আমার জানা দরকার আমি কোথায় আছি, কেন আছি, কিভাবে আছি।

৭. আপনার যাকে খুশী আপনি ঘৃণা করুন অথবা অনুসরণ করুন। ইতিহাস পাঠ না করলে জানা অসম্ভব আপনি কাকে ঘৃণা করবেন আর কাকে অনুসরণ করবেন।

৮. পরিশেষে বলা যায়, আমি ইতিহাস না পড়লেও অন্য কেউ আমার ইতিহাস পড়বে। আমি চাইনা সে আমার গল্প লিখুক তার দৃষ্টিকোণ থেকে।

কোথায়,কেন, কিভাবে বা কখন ঘটনা ঘটলো,সেটার প্রভাব কি বা পরিণতি কি ইত্যাদি বিষয় জানতে হলে আপনাকে ইতিহাস পড়তে হবে।ইতিহাস পড়তে হবে অতীত সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে, অতীত সমস্যা সমাধান করে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিতে।এক কথায়,অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করার জন্যই আপনাকে ইতিহাস পড়তে হবে।

ইতিহাস মানুষের কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা করে,সত্য অনুসন্ধান করে, কোন অলৌকিক বিষয় নিয়ে কাজ করে না।স্যার হুমায়ুন আজাদের একটি কথা আছে, “ইতিহাস হল বিজয়ীদের হাতে লেখা বিজিতের নামে এক রাশ কুৎসা”।আসলেই ব্যাপারটি সত্যি।তবে সবসময় ইতিহাসে বিজয়ীদের স্তুতি করা হয়েছে তা নয় অনেক সময় পরাজিত বীরোচিত কাহিনীকেও ইতিহাসের পাতায় স্থান দেয়া হয়েছে।ইতিহাস হল ভালো- মন্দ,সত্য-মিথ্যা,ব্যর্থতা -সফলতা,জয়- পরাজয় ইত্যাদি বিষয়ের উপর রচিত অনেকগুলো গল্পের প্ল্যাটফর্ম। যেই প্ল্যাটফর্ম থেকে মানুষ অতীতের শিক্ষা নিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনা করার উৎসাহ সঞ্চয় করে।যেই ব্যক্তি বা জাতি ইতিহাস থেকে যথাযথ শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা বারবার বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে

ইতিহাসকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে যেমন ধরুন মানব সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাস, ধর্মীয় ইতিহাস, বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতার বা উৎপত্তির ইতিহাস,আধুনিক বিজ্ঞানের অদ্ভুত সব আবিষ্কারের ইতিহাস, বিভিন্ন পরাক্রমশালী যোদ্ধাদের রাজ্য জয়ের ইতিহাস,বিভিন্ন দেশ/ জাতি/ অঞ্চল/গোত্র/সংস্কৃতির ইতিহাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ইতিহাসের গল্পগুলোকে পুজি করেই আজকের মানব সভ্যতা এতঠুকু এগিয়েছে।অর্থাৎ, ইতিহাস সব সময় মানুষকে আগামীর নিরাপদ পৃথিবী বিনির্মানে প্রেরণা যুগিয়েছে।যেমন ধরুনঃ সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা,৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়েই বাঙালিরা ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিল বলেই এসেছে সেই বহুল আকাংকিত সেই স্বাধীনতা।ইতিহাস লোভ, ত্যাগ, সংগ্রাম, ক্ষয় এবং জয়- এর সবকিছুই ধারণ করে- সব গল্পই বলার চেস্টা করে; হতে পারে সেটা নিরপেক্ষ বা biased।এর মধ্যে থেকেই আমরা নিজ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পরকে ধারণা নিতে পারি।

ইতিহাস পাঠে আপনি নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন, সত্যিকার ঘটনা জানতে পারবেন,দিন দিন জানার আগ্রহ বেড়ে যাবে,আপ্নার মনের মধ্যে বিভিন্ন ঘটনার পক্ষে – বিপক্ষে যুক্তির রেখাপাত হবে, তবেই তো আপনি সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারবেন এবং অপরকেও জানাতে পারবেন।ইতিহাস পাঠ না করলে জানা অসম্ভব আপনার কাকে ঘৃণা করা উচিৎ আর কাকে পছন্দ।

আমাদের প্রতিদিনের গল্পই আগামী কালের ইতিহাস। এ গল্পে ব্যাক্তিক, গোষ্ঠীয়, সামাজিক এবং রাস্ট্রীয় পর্যায়ে হয় আমরা অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করছি বা অন্যের দারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। এ এক নিরন্তর অস্তিত্তের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে যার ইতিহাস জ্ঞান যতো বেশী তার টিকে থাকবার সম্ভাবনাও ততো বেশী।আজকের পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে করোনা ইস্যু।গোটা পৃথিবী এই ভাইরাসের আক্রমনে স্তিমিত হয়ে আছে।আবার এই সমস্ত মহামারীগুলো যে ভবিষ্যতে আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।সুতারাং এই মহামারী থেকে এই শিক্ষা নেয়া উচিৎ যে আগামীতে এরকম সমস্যা উদ্ভব হলে সেটাকে কিভাবে সামাল দিতে হয়।অন্যথায় বার বার জানমালের অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।যদি এরকম করে সফলতা পাওয়া যায়।তবে সেটাই হবে ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত সুশিক্ষা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *