বিজ্ঞানী চরক কী ও কী কী
বিজ্ঞানী চরক ছিলেন তৎকালীন ভারতবর্ষের কনিষ্ক রাজার চিকিৎসক।তার পুরো নাম আচার্য চরক। বিজ্ঞানী চরকের জীবনকাল অনুমান করা হয়েছে আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ থেকে খিষ্ট্রপূর্ব ২০০-এর মধ্যে।
সেসময়ে তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতির সর্বপ্রথম সংকলনগ্রন্থ রচনা করেন, যা চরক সংহিতা নামে সমধিক পরিচিত।
চরক সংহিতা গ্রন্থটি মূলত ১২০ অধ্যায়ের সমন্বয়ে গঠিত যেগুলোকে আবার ৮টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো :
১. সূত্র-স্থানম, ২. শারীর-স্থানম, ৩. ইন্দ্রীয়-স্থানম, ৪. কল্প-স্থানম, ৫. সিদ্ধি-স্থানম, ৬. বিমান-স্থানম, ৭. নিদান-স্থানম ও ৮. চিকিৎসা-স্থানম।
এই বইয়ের মূল ভাষা ছিল সংস্কৃত। পরবর্তীকালে তা আরবি, গ্রিক, ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ইবনে সিনা আরবিতে অনূদিত চরক সংহিতা দ্বারা বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এখানেই প্রথম ‘আয়ুর্বেদ’ শব্দটির প্রচলন শুরু হয়। ওষুধপত্রের বিস্তারিত আলোচনা ছিল এটির মূল বৈশিষ্ট্য। বিশেষত ‘internal medicine’-এর ক্ষেত্রে এই বইখানি ছিল শেষ কথা। খ্রিষ্টীয় উনবিংশ শতকে চরক সংহিতা ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়। এই একবিংশ শতকেও এটি সমান জনপ্রিয় এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক য়ামাশিতা এটির একটি ডিজিটাল সংস্করণও তৈরী করেছে।
এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে অনেকে ঔষধ তত্ত্বের জনক বলেন। তাঁর রেখে যাওয়া অমূল্য এসব তথ্য ও পদ্ধতি আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে সমাদৃত। চরক সংহিতায় তিনি ১ লক্ষ ঔষধি গাছের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি মন ও দেহের ওপর খাদ্যের প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।আধ্যাত্মিকতা ও শারীরিকতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশ করে সুস্থতার পথ নির্দেশ করেছেন। বিজ্ঞানী চরকের একটি উক্তি হলো –
“চিকিৎসককে শুধু বিদ্বান এবং জ্ঞানী হলেই চলবে না রোগীর বাড়িতে গিয়ে আপনজনের মতো আচরণ করতে হবে। যে চিকিৎসক লোভের বসে চিকিৎসাকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করেন, তিনি স্বর্ণের বদলে ছাইভস্ম পাওয়ার প্রত্যাশা করেন।”
সত্য বলতে গেলে বিজ্ঞানী চরকের মতো এমন মানুষগুলির কারণেই আজ ভারতবর্ষ আয়ুর্বেদের জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত।