ক্রিকেটে কোন খাত থেকে বিসিবির আয় কত?
কোন খাতে এত টাকা বিসিবির ?
বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ক্রিকেট অন্যতম। বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট খেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন আরো বাড়ছে। এশিয়ার দেশ গুলোতে বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে ক্রিকেট খেলার জনপ্রিয়তা আরো বেশি। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ক্রিকেটের অর্থনৈতিক ভূমিকাও অনেক।একটি দেশের ক্রিকেটকে নিয়ন্ত্রন করে সেই দেশের ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের নাম ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। শুরুর দিকে এই সংস্থাটি পরিচিত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড নামে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কন্ট্রোল শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এবং নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। যা সংক্ষেপে বিসিবি। এখানে আপনারা জানবেন বিসিবির আয় সর্ম্পকে নানা তথ্য।
ধনীর তালিকায় বিসিবি
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রিড়াঙ্গনের মধ্যে সবচেয়ে ধনী। এই বোর্ডটি নিজেদের রাজকীয় ভাবেই প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যেখানে নিজেদের অর্থেই চলতে সক্ষম। সেখানে দেশের অন্যান্য ফেডারেশন গুলোকে অর্থের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় জাতীয় ক্রিড়া পরিষদের দিকে। জাতীয় ক্রিড়া পরিষদের বার্ষিক অনুদান না নিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অন্য ফেডারেশন গুলোকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’ র জাতীয় ক্রিড়া পরিষদের কাছে থেকে কোনো অনুদানের প্রয়োজন হয় না।
অনেকেই সদস্য হতে চায় এই রাজকীয় বোর্ডর। কারণ এই বোর্ডের মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’ র টাকার পরিমাণ এবং আয়ের উৎস দিন দিন বাড়ছে। যেখানে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের টালমাটাল অবস্থা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র অবস্থান চতুর্থ।
আয়োজক হিসেবে আয়
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ২০১৪ সালে আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করে সফল হয় । ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২২৯ কোটি ৫ লাখ ৪৮৫২ টাকা আয় করে। যা ওই সময় রেকর্ড ছিল। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ ক্রিকেট এককভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ। এবং সফলও হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড যৌথ ভাবে আয়োজন করে আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপ।
এই আসরে আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ ভলো কিছু করতে না পারে না। ভারত এবং শ্রীলংকা ফাইনাল খেলে এবং ভারত দ্বিতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়। এই আসর গুলো আয়োজনোর মাধ্যমেও অনেক টাকা আয় করে বিসিবি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)’র টেস্ট ফান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সূত্র – বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অথচ বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের অবস্থা টালমাটাল।
একটি দেশের ক্রিকেট বোর্ড যতো বেশি ধনী সেই দেশের ক্রিকেট ততো বেশি উন্নত। অথচ এক দিনের আর্ন্তজাতিক ম্যাচ গুলোতে বাংলাদেশ যতোটা সফল, টেস্ট এবং টি২০ তে ততোটা সফল না। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’ র জন্য হতাশাজনক। কারণ মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট স্ট্যাটাস বাতিলে গুন্জন শোনা যায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’ র আয়ের দ্বিতীয় বড় উৎস হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ারলীগ (বিপিএল)। দেশের এই ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’ র আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। এই খাতে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিসিবি’ র আয় ৪৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বিভিন্ন স্পন্সর থাকে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’ র আয়ের আরেকটি উৎস এই স্পন্সর। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা ব্যংকে জমাকৃত অর্থের ফিক্সড ডিপোজিটের সুদ থেকে আয়ের কথা ভাবছেন। টেলিভিশন সম্প্রচার সত্ত্ব বিক্রি করেও অনেক টাকা আয় করে থাকে বিসিবি।
ফ্রাঞ্চাইজি ও স্পন্সর
বাংলাদেশ প্রিমিয়ারলীগ (সংক্ষেপে- বিপিএল) প্রথম আয়োজন করা হয় ২০১২ সালে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ারলীগ (বিপিএল) থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয় করে বিসিবি ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ থেকে তেমন আয় করতে পারে না বোর্ড। এই খাত থেকে আয়ের সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মুলত বেশি আয় করে থাকে বিদেশী টুর্ণামেন্ট গুলো থেকেই। এই বিপুল আয়ের মধ্যেও দেশের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট গুলো থেকে বিসিবি মাত্র ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা আয়ের কথা ভাবছে। তারা এই আয়ের কথা ভাবছে দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিসিএল), এবং জাতীয় ক্রিকেট লীগ (এনসিএল) যা দেশের ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণীর আসর।
ঢাকার যে ক্লাব গুলো আছে তারা আগেই তাদের জৌলুস হারিয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে দেশের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক অর্থ-বছর গুলোতে। এর মাঝে গত এক বছর থেকে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারন করাই সব দেশেই ক্রিকেট বন্ধ ছিল। শুধু ক্রিকেট নয়, সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ ছিল বিশ্বব্যাপী। ওলিম্পিকের (টকিও ওলিম্পিক) মতো মেগা আসর গুলোও স্থগিত করা হয়েছে। খেলাধুলা বন্ধ থাকায় বিসিবি’ র আয়েও কিছুটা ভাটা পরেছিল। তবে এখন প্রায় সব দেশেই খেলাধুলা আবার আগের মতোই চালু হয়েছে। বাংলাদেশও লম্বা বিরতির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর সাথে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে খেলায় ফিরেছে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বিসিবি
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঘরোয়া কাঠামো অন্য দেশ গুলোর মতো শক্তিশালী হলে।এবং এই খেলা গুলো টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই খাত থেকে অনেক আয় করতে পারতো। এই জায়গায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অন্য দেশ গুলো থেকে পিছিয়ে। যদি এই পিছিয়ে পরা বিষয় গুলোতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটু নজর দেই তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আরো বেশি সম্বৃদ্ধশালী হতে পারতো। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ গুলো থেকে যে টাকা আয় করে থাকে তা মূলত স্পন্সরশীপ থেকে আসে। এছাড়া ইন্টারন্যশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ক্রিকেট এর মাধ্যমে যে টাকা আয় করে তারা সেই টাকা সদস্য দেশ গুলোর মাঝে ভাগ করে দেয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যেহেতু ইন্টারন্যশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)’র সদস্য তাই এই খাত থেকে টাকা পেয়ে থাকে।
আইসিসি থেকে বিসিবির আয়
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক আসর আয়োজন করে থাকে তাদের আয় বৃদ্ধির লক্ষে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ তার মধ্যে অন্যতম। আইসিসি ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক আসরের টেলিভিশনসত্ত্ব ও স্পন্সরশীপ বিক্রি করে আয় করে । তা প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । শুধুমাত্র ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকেই আয় করে ২৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং ওই সময় ৬.৬৯৫ ডলার আয় করে বিভিন্ন বিনিয়োগ এর মাধ্যমে।
দ্বি-পাক্ষীয় ম্যাচ যেমন- টেস্ট, ওডিআই এবং টুয়েন্টি টুয়েন্টি (টি২০) খেলাগুলোর মালিকানা থাকে আইসিসি’ র সদস্য দেশ গুলোর। এবং খেলা গুলো পরিচালনা কিরে তারাই। তাই এই খেলা গুলো থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কোনো রকম আয় করে না। এইজন্য আইসিসি নতুন নতুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে শুধুমাত্র বিশ্বকাপের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) অনেক প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজন করলেও। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চরম ভাবে ব্যর্থ হয়। যা পরবর্তিতে চরম ব্যর্থ ও টার্কি অব ক্রিকেট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
তবে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফরম্যাট পরিবর্তন করে আয়োজন করায় সেই আসরটি সফল হয়। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরমেট বিশ্ব টি২০ চালু করে। ক্রিকেট বিশ্বে এই ফরমেটের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এবং এই ফরমেটের ক্রিকেটেই সবচেয়ে বেশি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। যার ফলে ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট বোর্ড উভয়ই লাভবান হয়ে থাকে।
নেতিবাচক প্রভাব
কালের পরিক্রমায় ক্রিকেটের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানকালের ক্রিকেট প্রতিযোগীতা মূলক এবং অর্থনৈতিক। যার ফলে ক্রিকেট আজ অনেক বেশি জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সমালোচিত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ ম্যাচ ফিক্সিং। ইতোমধ্যে অনেক দেশের ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফিক্সিং এর অপরাধে ক্রিকেট থেকে সারা জীবন এর জন্য নিষিদ্ধও হয়েছেন।