পৃষ্ঠটান কাকে বলে? পৃষ্ঠটান কি? পৃষ্ঠটানের একক ও মাত্রা সমীকরণ

পৃষ্ঠ টান
Surface tension

তরল মাত্রেরই একটি ধর্ম আছে — ভরল পৃষ্ঠ সর্বদাই সংকুচিত হয়ে সর্বনিম্ন ক্ষেত্রফলে আসতে চায়। তরলের মধ্যে যে বলের প্রভাবে এই বিশেষ ধর্ম প্রকাশ পায় সেই বলকেই পৃষ্ঠটান বলে। আমরা সকলেই লক্ষ করেছি যে মশা, মাকড়সা ইত্যাদি কীটপতঙ্গ পানির উপরে হেঁটে চলতে পারে। একটু পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যাবে যে, যেখানে এদের পা পড়ে তরলের সেই থানটুকু একটু নিচু বা অবনমিত (depressed) হয় — কিছুটা যেন রবারের পর্দাকে চাপ দিলে যেরূপ হয় সেরূপ। এ ছাড়া কোনো সিরিজের সূচের মাথা দিয়ে খুব আস্তে আস্তে তরল ওষুধ বা পানি নির্গত করলে দেখা যায় যে তরল বা পানি নিরবচ্ছিন্নভাবে বের না হয়ে ফোটায় ফোটায় বের হচ্ছে এবং ফোটাগুলো সম্পূর্ণ গোলাকার।

আমরা জানি একই আয়তনের সর্বনিম্ন ক্ষেত্রফল হলো গোলাকার আকৃতির। তরলের মুক্ত পৃষ্ঠে নিশ্চয়ই কো্নো বল ক্রিয়াশীল রয়েছে যা ফোঁটাগুলো গোলাকার রাখছে। কাজেই তরলের মুক্ত পৃষ্ঠে থিতিস্থাপক পর্দার টানের ন্যায় একটা টান ক্রিয়া করে। উক্ত টান তরল পৃষ্ঠের স্পর্শক অভিমুখ। তরল পৃষ্ঠ যেখানে এসে শেষ হয় সেখানেই পৃষ্ঠের সীমারেখায় পৃষ্ঠ টান ক্রিয়া করে।

নিচে বর্ণিত একটি পরীক্ষার সাহায্যে সহজেই পৃষ্ঠটান ক্রিয়া প্রদর্শন করা যায়।

ধাতব তারের একটি গোল আংটা সাবান পানিতে ডুবিয়ে তুলে আনলে আটার ভেতরে সাবান পানির একটি পাতলা সর (Thin film) আটকে থাকে। এবার একটি সুতা দিয়ে ছোট ফাস (loop) তৈরি করে পানিতে ভিজিয়ে আংটার সরের উপর বসালে দেখা যাবে ফাসটি এলোমেলোভাবে অবস্থান করছে। এবার একটি সুচ বা আলপিন দিয়ে ফাসের ভেতরের অংশ ছিদ্র করে দিলে দেখা যাবে ফঁাসটি এলোমেলো অবস্থা ত্যাগ করে বৃত্তাকার হয়েছে।

ব্যাখ্যা

উপরের ঘটনা দুটো ব্যাখ্যায় বলা যায়, যখন ফাঁসের ভেতরে সর ছিল তখন ফাঁসের প্রতিটি বিন্দুতে পৃষ্ঠের স্পর্শক বরাবর সমান ও বিপরীতমুখী বল ক্রিয়া কর। ফলে প্রতিটি বিন্দুতে বলদ্বয় পরস্পরকে প্রশমিত করে। তাই ফাসটি এলোমেলো থাকে। পরবর্তীতে ফাসটি ছিদ্র করায় ফাসের ভেতরের দিকের বল না থাকায় প্রতিটি বিন্দুতে শুধু সরের ৰাইরের দিকে বল ক্রিয়া করে, ফলে বাইরের দিকে টান অনুভূত হয় এবং বাইরের দিকের সর সংকুচিত হয়ে টান টান হয়ে যায়। উপরের পরীক্ষা থেকে স্পষ্ট যে তরল পদার্থের মুক্ত পৃষ্ঠে এক ধরনের টান ক্রিয়াশীল। এই টানই পৃষ্ঠটান।

অতএৰ পৃষ্ঠটানের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেওয়া যায়।

কোনো তরলের পৃষ্ঠে একটি সরলরেখা কল্পনা করলে উক্ত রেখার প্রতি একক দৈর্ঘ্য ঐ রেখার উভয় পার্শ্বে রেখার সাথে লম্বভাবে এবং পৃষ্ঠের স্পর্শক রূপে যে স্পর্শক বল (tangential force) ক্রিয়া করে তাকেই পৃষ্ঠটান বলে।

পৃষ্ঠটানের একক (Unit of surface tension)
পৃষ্ঠটান একটি প্রাকৃতিক রাশি। অতএব এর একক আছে।
এম কে এস ও এস আই বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক নিউটন/মিটার (N/m)

পৃষ্ঠটানের মাত্রা সমীকরণ (Dimension of surface tension)
পৃষ্ঠটান=বল/দৈর্ঘ্য
এর মাত্রা সমীকরণ,
[পৃষ্ঠটান]=[বল]/[দৈর্ঘ্য]= [MLT-2]/[L]=[MT-2]

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *