চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
চুলের খুশকির সমস্যায় নারী-পুরুষে ভেদ নেই। এটি কিশোর-কিশোরী ,তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী সবারই হতে দেখা যায়। খুশকি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক কষ্টকর। তবে নানা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই আপনি এই সমস্যা দূর করতে পারেন। চলুন তাহলে চুলের খুশকি দূর করার কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
চুলের খুশকি কেন হয়?
বিভিন্ন কারণেই চুলের খুশকি হতে পারে। তবে এর একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে সেবোরেইক ডার্মাটাইটিস বা ত্বকের তৈলাক্ত ও চুলকানি। ম্যালাসেজিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাক আছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার খুলিতে এই ছত্রাক থাকে। এটি নতুন ত্বক কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। কিন্তু ত্বকে ময়লা জমে তেল চিটচিটে অবস্থায় এই ছত্রাক বিপদে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় জন্মানো অতিরিক্ত ত্বক কোষ গুলো মরে যায় এবং ঝরে পড়ে। আমাদের মাথা থেকে ঝরে পড়া সাদা হলদে খুশকি আসলে আমাদের ত্বকের মৃত কোষ।
তাছাড়া শুষ্ক ত্বক খুশকির একটি অন্যতম কারণ। শুষ্ক ত্বকে ছোট ছোট মৃত কোষ খুশকি তৈরিতে সাহায্য করে।এটি হলে আপনি সহজেই বুঝবেন ,কারন মাথা ছাড়াও শরীরের অন্যান্য শুষ্ক ত্বকেও এ নমুনা দেখা যাবে।খুশকি হলে দ্রুত এর প্রতিকার করা উচিত। কারণ এ সমস্যা থেকে চুলপড়া সহ নানা সমস্যা হতে পারে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
পেঁয়াজের রস
খুশকি দূর করার একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে পেঁয়াজের রস। এজন্য প্রথমে পেঁয়াজ মিহি করে কেটে তারপর বাটুন।এরপর পাতলা কাপড় দিয়ে রস ছেঁকে নিন।
পরে এ রস চুলের গোড়ায় ভালো করে ঘষে ঘষে লাগান। ২০ – ২৫ মিনিট রেখে চুল ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুবার মাথায় রস লাগান। এতে করে মাথার চুলকানিও কমে যাবে।
বেকিং সোডা
এটি ব্যবহার করার জন্য প্রথমে আপনার চুল ভালভাবে ভিজিয়ে নিন। পরে হাতের তালুতে বেকিং সোডা নিয়ে ভালভাবে মাথার ত্বকে ঘষুন। শ্যাম্পু করার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে।
এটি খুশকির ছত্রাক দূর করতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারের ফলে প্রথমে কিছুদিন হয়তো আপনার চুল শুষ্ক থাকবে।পরে আস্তে আস্তে মাথার ত্বক থেকে তেল নিঃসরণ হবে, যা চুলকে নরম ও খুশকিমুক্ত করবে।
আপেল সিরাপের ভিনেগার
মাথার খুশকি দূর করতে আপেল সিরাপের ভিনেগার খুবই উপকারী। এটি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এ ভিনেগার মাথার তালুর পিএইচ চেঞ্জ করে ফেলে ফলে খুশকির ছত্রাক ফিরে আসতে পারে না।
2 টেবিল চামচ ভিনেগার এর সাথে 2 টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে মাথার তালুতে ভালো করে ঘষুন। যে কোন কাপড় দিয়ে 15 মিনিট মাথা ভালো করে ঢেকে রাখুন । এরপর মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দুবার করতে পারেন। তাহলে দেখবেন খুশকি একেবারে দূর হয়ে গেছে।
মাউথওয়াশ
প্রথমে শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। পরে মাউথওয়াশ দিয়ে চুলে ভালো করে ঘষুন। অল্প কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । মাউথওয়াশ খুশকির ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেল
খুশকি দূর করার বেশ কার্যকরী একটা উপাদান হচ্ছে নারিকেল তেল। চুল শ্যাম্পু করার আগে ৪-৫ মিনিট চুলে তেল দিয়ে ভালো করে ঘষুন। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
লেবুর রস
প্রাথমে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে মাথার তালু ভালো করে ঘষুন। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর 1 টেবিল-চামচ লেবুর রসের সাথে এক কাপ পানি মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন চুল পরিস্কার করলে খুশকি আর ফিরে আসবে না। লেবুর রসে থাকা এসিড মাথার ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য রক্ষা করে একই সাথে খুশকির ছত্রাক দূর করে।
লবণ
চুলে শ্যাম্পু করার আগে লবণ দিয়ে মাথার তালু ভালো করে ঘষুন। এটি প্রাকৃতিক স্ক্রাবারের কাজ করে। মাথা শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ফেলুন। লবণ মাথার ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ফেলে।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা চুলের খুশকি দূর করে চুলকে নরম করে তোলে। চুলে শ্যাম্পু করার আগে মাথায় ভালভাবে অ্যালোভেরার রস দিয়ে ঘষে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে চুলকানি দূর হওয়ার সাথে সাথে, খুশকিও দূর হবে।
রসুন
রসুনের পেস্ট চুলে মেখে ভালো করে ঘষুন। আপনি যদি রসুনের গন্ধ দূর করতে চান তাহলে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে খুশকি দূর হওয়ার সাথে সাথে চুলের গোড়াও শক্ত হবে।
অলিভ ওয়েল
চুলে সারারাত অলিভ ওয়েল তেল মেখে রাখুন। পরেরদিন সকালে হালকা ঘষে শ্যাম্পু করে ফেলুন।এটি দ্রুত খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
আপনি যদি উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেন তাহলে খুব সহজেই খুশকি দূর করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, নিয়মিত চুল আঁচড়াবেন। এতে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। তাছাড়া পুষ্টিকর খাবার খাবেন, এতে ত্বক ও চুল ভালো থাকবে আর নিয়মিত চুল পরিস্কার করবেন। তবে অতিরিক্ত খুশকি হলে ডাক্তার দেখান। আর আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।