যুক্তফ্রন্ট কি? যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি কি কি?

আজ আমরা যুক্তফ্রন্ট কি এবং যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

যুক্তফ্রন্ট কি?

নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগকে চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য বা পরাজিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও কৃষক প্রজাপার্টির নেতা শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক একটি চুক্তি সম্পাদন করে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে একটি নির্বাচনি জোটে একতাবদ্ধ হন। এটি একটি নির্বাচনি জোট।

সদরঘাটের ৫৬, সিমসন রোডে যুক্তফ্রন্টের প্রধান অফিস স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে নেজামে – ই- ইসলাম, খেলাফতে রব্বানী পার্টি, গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টের সাথে যুক্ত হয়।

পড়ুন- ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ও ছয় দফাগুলো কি কি?

মহান একুশে ফেব্রুয়ারির স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্যই যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি কর্মসূচি ২১ টি দফায় বিন্যস্ত করা হয়। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা। ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। আর ২১ দফা কর্মসূচির মূখ্য রচয়িতা ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ । নিম্নে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি কি কি?

যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ –

  1. বাংলাকে পাকিস্থানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
  2. বিনা খেসারতে জমিদারি প্রথা ও খাজনা আদায়কারী মধ্যস্বত্ব উচ্ছেদ করে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বন্টনের ব্যবস্থা করা হবে। উচ্চহারের খাজনা ন্যায়সঙ্গতভাবে হ্রাস এবং সার্টিফিকেটে জারি করে খাজনা আদায়ের প্রথা রহিত করা হবে।
  3. পাট ব্যবসা জাতীয়করণ ও পাটের ন্যায্যমূল্য প্রদান করা হবে। মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার পাট কেলেঙ্কারির তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।
  4. সমবায় কৃষি পদ্ধতির প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে কুটির শিল্পের উন্নতি সাধন করা হবে।
  5. পূর্ব বাংলাকে লবণের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে মুসলিম লীগ শাসনামলে লবণ কেলেঙ্কারির তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।
  6. অবিলম্বে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন করা হবে।
  7. সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ভিক্ষ রোধ করা হবে।
  8. পূর্ব বাংলাকে শিল্পায়িত করা ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে
  9. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
  10. সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবধান দূর করা হবে এবং বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা হবে।
  11. বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সকল কালাকানুন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে।
  12. প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচ ও কর্মচারীদের বেতনের সামঞ্জস্য বিধান করা হবে এবং মন্ত্রীদের ১০০০ টাকার বেশি বেতন দেয়া হবে না।
  13. ঘুষ ,দুর্নীতি বন্ধ ও সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ করা এবং ১৯৪০ সাল থেকে অর্জিত অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
  14. সকল নিরাপত্তা বন্দিকে মুক্তি দান ,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে ‌।
  15. শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হবে।
  16. বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার করা হবে।
  17. বাংলা ভাষার জন্য শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
  18. একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হবে।
  19. লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ববাংলাকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রধান , পূর্ব বাংলায় নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন, অস্ত্র কারখানা নির্মাণ এবং আনসার বাহিনীকে মিলিশিয়া হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
  20. যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার দ্বারা আইন সভার আয়ু বর্ধিত করা হবে না।সাধারণ নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
  21. আইনসভার শূন্য আসন তিন মাসের মধ্যে পূরণ করা হবে এবং পরপর তিনটি উপ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *