১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ও ছয় দফাগুলো কি কি?
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। এ প্রস্তাবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হলেও তা প্রতিষ্ঠিত হয় নি। বরং পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব বাংলার জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ -বঞ্চনা ও নির্যাতন বাড়তেই থাকে। তাছাড়া বৈষম্যও দিন দিন বাড়তে থাকে। সামরিক দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের এ অসহায় অবস্থা ও অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় জাতীয় সংহতি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার দাবি সংবলিত একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যা ইতিহাসে ৬ দফা কর্মসূচি নামে পরিচিত।
২১ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে “আমাদের বাঁচার দাবি- ৬ দফা কর্মসূচি” শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। পরে ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ লাহোরের এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এ কর্মসূচিকে তিনি “পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচার দাবি” বলে অভিহিত করেন। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে এটি রচিত হয়। এ ছয় দফা কর্মসূচি দ্রুত বাঙালি জনগণ কর্তৃক সমাদৃত হয়।
১৯৬৬ সালের ছয় দফাগুলো কি কি?
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো –
- পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হবে। প্রদেশগুলোর পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থাকবে।
- যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে কেবল দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়। অন্যান্য বিষয়গুলো প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে।
- দু অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা চালু থাকবে অথবা দু অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকবে। এক্ষেত্রে সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে এক অঞ্চলের মুদ্রা ও মূলধন অন্য অঞ্চলে পাচার হতে না পারে।
- সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ও কর ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকার পাবে।
- বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও সাহায্য সম্পর্কে প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলো আলাপ – আলোচনা ও চুক্তি করতে পারবে।
- প্রদেশগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আধা সামরিক বাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া।