শব্দ গঠন বলতে শব্দ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বোঝায়। বিশ্বের সব ভাষাতেই মোলিক শব্দের সংখ্যা বেশি নয়। ফলে ভাষাসমূহ নানা উপায়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করছে। আমাদের বাংলা ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। যে সব পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ তৈরি করা হয়, তাকে শব্দ গঠন বলে।
এক কথায় বলা যায়, অর্থ-বৈচিত্র্য আনার জন্য নানাভাবে তার রূপ রূপান্তর করা হয়। এভাবে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য শব্দ তৈরি করার প্রক্রিয়াকে এক কথায় শব্দ গঠন বলে। যেমন – আ + হার = আহার।
বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠনের উপায়
বাংলা ভাষায় বিভিন্ন উপায়ে নতুন শব্দ গঠন করা যায়। এগুলো হলো –
শব্দের আগে উপসর্গযোগে শব্দ গঠনঃ শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন – পরি + হার = পরিহার, রাম + ছাগল = রামছাগল (বড় অর্থে), আ + হার = আহার ইত্যাদি।
বিভক্তিযোগেঃ শব্দের পরে বিভক্তি যুক্ত হলে তা পদে পরিণত হয়। তাছাড়া বচন পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বিভক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে করে নতুন অর্থ প্রকাশ পায়। যেমন – বালক + এরা = বালকেরা, বৃক্ষ + এ = বৃক্ষে ইত্যাদি।
প্রত্যয়যোগেঃ শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন – মিঠা + আই = মিঠাই, পড় + অন্ত = পড়ন্ত ইত্যাদি।
সমাসযোগেঃ সমাসের মাধ্যমেও নতুন শব্দ তৈরি হয়। যেমন – নীল যে আকাশ = নীলআকাশ, বইকে পড়া = বইপড়া, পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ ইত্যাদি।
সন্ধির সাহায্যেঃ সন্ধির সাহায্যে নতুন শব্দ তৈরি হয়। যেমন – রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, নে + অন =, নয়ন ইত্যাদি।
দ্বিরুক্তির মাধ্যমেঃ যেমন – আমার জ্বর জ্বর লাগছে।, দিন দিন, হন হন, ছল ছল ইত্যাদি।
বাগধারার মাধ্যমেঃ যেমন – মুখে আনা ( উচ্চারণ করা), মুখ করা (ঝগড়া করা) ইত্যাদি।
পদ পরিবর্তনের সাহায্যেঃ পদ পরিবর্তনের মাধ্যমেও নতুন শব্দ তৈরি হয়। যেমন – লোক > লৌকিক, কবি > কাব্য ইত্যাদি।