Islamic QA

ঘরে সূরা বাক্বারা পড়ার পদ্ধতি কী? অডিও থেকে পড়া কি যথেষ্ট?

1 min read

প্রশ্ন:

ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা এবং এ সূরার পঠন শয়তানকে তাড়ানো: সূরাটি উচ্চস্বরে পড়া কি আবশ্যকীয়? ক্যাসেট-প্লেয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে কি এ উদ্দেশ্য হাছিল হতে পারে? সূরাটি ভাগ ভাগ করে পড়লে কি যথেষ্ট হবে?

 

উত্তর:আলহামদু লিল্লাহ।.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ সূরা বাক্বারার মহান ফযিলতের কথা জানিয়েছেন এবং এই সূরার মহান কিছু আয়াত যেমন- আয়াতুল কুরসি ও শেষ দুই আয়াত-এর ফযিলতের কথাও জানিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সূরার ফযিলত সম্পর্কে যা কিছু উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে যে ঘরে এ সূরাটি পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায় এবং যাদু থেকে সুরক্ষা ও যাদুর চিকিৎসায় এটি উপকারী।

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:  لا تجعلوا بيوتكم مقابر إن الشيطان ينفِر من البيت الذي تقرأ فيه سورة البقرة

رواه مسلم  780

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা বাক্বারা পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।”[সহিহ মুসলিম (৭৮০)]

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:

জমহুর আলেম শব্দটিকে ينفِر এভাবে পড়েছেন। আর সহিহ মুসলিমের কোন কোন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন: يفرُّ। উভয়টি সহিহ।[শারহু মুসলিম (৬/৬৯)]

আবু উমামা আল-বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “তোমরা সূরা বাক্বারা পড়। কেননা এর পাঠে বরকত রয়েছে এবং তা বর্জন করা আফসোসের কারন। আর বাতিলপন্থীরা এতে সক্ষম হয় না।“[সহিহ মুসলিম (৮০৪)]

বাতিলপন্থীরা হচ্ছে: যাদুকরগণ।

এটি উচ্চস্বরে পড়া শর্ত নয়। বরং ঘরে পড়া বা তেলাওয়াত করাই যথেষ্ট; এমনকি সেটা নিম্নস্বরে হলেও। অনুরূপভাবে একবারে পড়া শর্ত নয়। বরং ধাপে ধাপে পড়া যেতে পারে। অনুরূপভাবে তেলাওয়াতকারী একজন হওয়া শর্ত নয়। বরং ঘরবাসী নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়া জায়েয। যদিও এক ব্যক্তির একবারে পড়াটা উত্তম।

রেডিও বা ক্যাসেট থেকে বেরিয়ে আসা ধ্বনিকে পড়া হিসেবে গণ্য করা জায়েয নয়। বরং অবশ্যই ঘরবাসীদের নিজেদেরকে পড়তে হবে।

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত একটি হাদিস আছে যে, কোন ব্যক্তি যদি সূরা “বাক্বারা” পড়ে তার ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না। কিন্তু সূরাটি যদি ক্যাসেটে রেকর্ড করে রাখা হয় তাহলে কি একই বিষয় হাছিল হবে?

জবাবে তিনি বলেন:

না, না। ক্যাসেটের শব্দ কিছুই না। এটি কোন উপকার দিবে না। কেননা ক্যাসেট বাজিয়ে এ কথা বলা যায় না যে, “সে কুরআন পড়েছে”। বলা যায়: “সে পূর্বে তেলাওয়াতকৃত ক্বারীর কণ্ঠস্বর শুনেছে”। তাই আমরা যদি কোন এক মুয়াজ্জিনের আযান রেকর্ড করে রাখি এবং যখন ওয়াক্ত হয় তখন সেটাকে মাইক্রোফোনে চালু করে এটাকে আযান হিসেবে গ্রহণ করি— এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হবে না। অনুরূপভাবে আমরা যদি একটি হৃদয়াগ্রহী খোতবা রেকর্ড করে রাখি। এরপর যখন জুমার দিন আসবে তখন আমরা মাইক্রোফোনের সামনে ক্যাসেট-প্লেয়ারে এ রেকর্ডটি চালু করি। ক্যাসেট প্লেয়ার বলল: “আস্‌সালামু আলাইকুম”। এরপর মুয়াজ্জিন আযান দিল। তারপর ক্যাসেট-প্লেয়ার খোতবা দিল। এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হবে না। কেন? কেননা এটি পূর্ববর্তী একটি কণ্ঠস্বরের রেকর্ড। যেমনিভাবে আপনি যদি কোন একটি কাগজে লিখেন কিংবা ঘরে একটি মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) রাখেন পড়ার বদলে সেটা কি যথেষ্ট হবে? না; যথেষ্ট হবে না।[আসয়িলাতুল বাব আল-মাফতুহ (প্রশ্ন নং-৯৮৬)]

কিন্তু ঘরের লোকদের মধ্যে সূরা বাক্বারা পড়তে পারার মত কেউ যদি না থাকে এবং ঐ ঘরে এসে পড়ে দিবে এমন কেউ যদি না থাকে; সেক্ষেত্রে তারা যদি ক্যাসেট-প্লেয়ার ব্যবহার করে ইনশাআল্লাহ্‌ অগ্রগণ্য মত হচ্ছে— এতে করে তারা এ ফযিলত তথা ‘ঘর থেকে শয়তানের পলায়ন করা’র ফযিলত হাছিল করবে। বিশেষতঃ ঘরবাসীর মধ্যে কেউ যদি ক্যাসেট-প্লেয়ারের এ পড়াটা শুনে।

শাইখ বিন বায (রহঃ) কে এ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যা ইমাম মুসলিম তাঁর সহিহ গ্রন্থে সংকলন করেছেন: “তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা বাক্বারা পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে”। আমার প্রশ্ন হচ্ছে: যদি কেউ একটা ক্যাসেট-প্লেয়ারে সূরা বাক্বারার রেকর্ডকৃত ক্যাসেট বাজায় এবং সম্পূর্ণ সূরাটি পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত ক্যাসেট চালু রাখে? নাকি অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে পড়তে হবে কিংবা তার পক্ষ থেকে অন্য কাউকে সূরাটি পড়তে হবে?

জবাবে তিনি বলেন:

যে অভিমতটি অগ্রগণ্য (আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ) গোটা সূরাটি রেডিওতে কিংবা ঘরের মালিকের নিজে পড়ার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘শয়তান পালিয়ে যাওয়া’র যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সেটা হাছিল হবে। কিন্তু শয়তান পালিয়ে গেলেও পড়া শেষ হলে আবার না-ফেরা অনিবার্য নয়। যেমনটি শয়তান আযান ও ইকামত শুনে পালিয়ে যায়; এরপর সে ফিরে এসে ব্যক্তি ও তার অন্তরের মাঝে আড়াল তৈরী করে এবং বলে: এটা এটা স্মরণ কর। যেমনটি এ মর্মে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাই মুমিন ব্যক্তির জন্য শরিয়তের বিধান হল তিনি সর্বদা আল্লাহ্‌র কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইবেন, শয়তানের ষড়যন্ত্র, কুমন্ত্রণা ও যে পাপের দিকে শয়তান ডাকে— এসব ব্যাপারে সাবধান থাকবেন।

আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা।[সমাপ্ত]

[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (২৪/৪১৩)]

 

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

5/5 - (12 votes)
Mithu Khan

x