মিউচুয়াল ফান্ড কি? মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করব কিভাবে?

ভবিষ্যতের জন্য সকলেই কমবেশি সঞ্চয় করে রাখে। ছোটবেলা থেকে আমরা মাটির ব্যাংকে পয়সা জমাতাম একটু একটু করে। এটা নয় ছেলেমানুষি। কিন্তু এমন সময় আসে যখন আমাদেরও ভাবতে হয় কিভাবে আমরা অর্থ সঞ্চয় করতে পারি, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে পারি।

টাকা জমাতে চান!?

অনেকে বলে থাকেন চাকরি পাওয়ার প্রথম থেকেই সঞ্চয় নিয়ে ভেবে রাখা উচিত। অনেক সময় দেখা যায় ঝোঁকের বশে লোভের ফাঁদে পা দিয়ে ভুল পথে টাকা সঞ্চয় করি। এজন্য বিনিয়োগের এমন রাস্তা ভাবা উচিত যা সুরক্ষিত এবং অনেকটা লাভ দেয়।

তেমনি বিনিয়োগের একটা সঠিক উপায় হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা। চলুন তাহলে মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে জেনে নেই।

মিউচুয়াল ফান্ড কি?

অর্থ সঞ্চয়ের বিভিন্ন উপায় রয়েছে যেমন –

  • ফিক্সড ডিপোজিট (Fixed Deposit)
  • সেভিংস ব্যাংক একাউন্ট (Savings Bank Account)
  • রেকারিং ডিপোজিট (Recurring Deposit)

এসব উপায়ে আমরা টাকা সঞ্চয় করি। তবে আমরা যদি একটু ভিন্ন উপায়ে সঞ্চয় করতে চাই বা টাকা বাড়াতে চাই তাহলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত।

মিউচুয়াল ফান্ড এক ধরণের যৌথ বিনিয়োগ স্কিম। এটি এমন এক ধরণের ফান্ড যা আপনার অর্থের সাথে অন্য আরও বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের অর্থ যোগ করে একটি বড় ফান্ড তৈরি করে এবং সেই ফান্ড বিভিন্ন শেয়ার, বন্ড বা অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে।পোর্টফোলিও ম্যানেজার দ্বারা এটি ম্যানেজ করা হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডের সাথে শেয়ার বাজারের যোগ আছে। মনে করুন, আপনি একটি কোম্পানিকে কিছু অর্থ দিলেন। এটি “ইউনিট” কেনা নামে পরিচিত। ধরুন, আপনার মতো আরও অনেকেই টাকা দিল। তখন এ কোম্পানি টাকাটা খাটাবে। এখান থেকে যে অর্থ আসবে তা বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভাল করে দিবে। আপনি সে টাকাটাই পাবেন যেটার বর্তমান বাজার মূল্য আছে।

বড় বড় কোম্পানির দ্বারা যখন এসব ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র বিনিয়োগ শেয়ার বাজারে খাটিয়ে, কিছু অর্থ পাওয়া যায়। আর এ পদ্ধতিই হলো মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম।

আপনি শেয়ার বাজার, স্টক মার্কেট সম্পর্কে না জানলেও নির্দিষ্ট কোম্পানির সাহায্যে টাকা খাটিয়ে বিনিয়োগ পেয়ে যাবেন। খেয়াল রাখবেন সকল মিউচুয়াল ফান্ড SEBI (Securities and Exchange Board of India) এর কাছে নথিভুক্ত হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রচলন আছে।১৯৭২-৭৩ সালের দিকে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রচলন শুরু হয়। মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে অ্যাসেট মানেজমেন্ট কম্পানি (AMC). আরএমসি (AMC) কে SEBI এর কাছে নথিভূক্ত করাতে হয়। তবুও সবচেয়ে কম ১০০০ টাকা মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য জমা রাখতে হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডের প্রকারভেদ

মিউচুয়াল ফান্ড অনেক প্রকার হতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড এর প্রকারভেদ কে দুটি বিশেষ ভাগে ভাগ করে দেখা যেতে পারে।

  • Structure হিসেবে
  • Asset এর উপরে

Structure হিসেবে প্রকারভেদ

গঠন বা স্ট্রাকচার টাকা হিসেবে মিউচুয়াল ফান্ড তিন প্রকার।যথাঃ

  • Open Ended Mutual Fund
  • Close Ended Mutual Fund
  • Interval Mutual Fund

Open Ended Mutual Fund

Open Ended Mutual Fund এর স্কিমগুলোতে ইনভেস্টমেন্টরা যেকোনো সময় ফান্ড কিনতে বা বিক্রি করতে পারে। অর্থাৎ আপনি যখন খুশি বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং বিনিয়োগের টাকা তুলতে পারবেন।

এ ধরণের ফান্ডে টাকা বিনিয়োগ করা এবং তোলার নির্দিষ্ট কোন সময় থাকেনা। যে কোন সময় করা যায়। তাই ইনভেস্টমেন্টরা এধরনের ফান্ড অনেক পছন্দ করেন।

Close Ended Mutual Fund

Close Ended Mutual Fund যেকোনো সময় বিনিয়োগ করা যায় না। কেবল নিউ ফান্ড অফারের সময় এ ধরণের ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

এ ধরণের ফান্ডে একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। যেমন – ৩ বছর, ৫ বছর, ৭ বছর। এর আগে ইউনিট বিক্রি করে টাকা তুলতে পারবেন না।

Interval Mutual Fund

Open Ended Mutual Fund এবং Close Ended Mutual Fund এ দুজনের ফান্ড মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে Interval Mutual Fund. অর্থাৎ, এখানে দুজনের ফান্ডেরই সুবিধা পাওয়া যায়।

Asset এর উপরে প্রকারভেদ

Asset এর উপরে ভিত্তি করে মিউচুয়াল ফান্ডকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

  • Equity Mutual Fund
  • Debt Mutual Fund
  • Liquid Mutual Fund
  • Balanced Mutual Fund
  • Money Market Mutual Fund

Equity Mutual Fund

আপনি যদি বেশি সময়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করে অধিক লাভ করতে চান তবে এই ফান্ডটি আপনার জন্য। এ ধরনের ফান্ডগুলো স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে। তাই এধরনের মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা খুবই রিক্স। যদি একবার শেয়ার বাজারে ধস নামে অর্থাৎ যদি দাম পড়ে যায় তাহলে আপনার টাকা মায়ের যেতে পারে। তাই বেশি রিক্স না নিয়ে এখানে টাকা না রাখাই ভালো।

তবে এখান থেকে ভালো পরিমাণে টাকায় করতে চাইলে আপনাকে নিচে পাঁচ বছর সময় দিতে হবে।

Debt Mutual Fund

1 থেকে 5 বছরের জন্য বিনিয়োগ করার জন্য Debt Mutual Fund সেরা। এখানে এত রিক্স থাকে না।এ ফান্ডে ইনভেস্ট করে মূল টাকার উপর 7 থেকে 8 পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট পাওয়া যায়। টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিন্তে থাকা যায়।

Liquid Mutual Fund

মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে Liquid Mutual Fund সবচেয়ে সুরক্ষিত। কোনরকম রিক্স ছাড়া এখানে টাকা ইনভেস্ট করা যায়। এখানে রাখা ইউনিট আপনারা যেকোন সময় বিক্রি করে টাকা তুলতে পারবেন।

Balanced Mutual Fund

Balanced Mutual Fund এ Debt Mutual Fund এবং Equity Mutual Fund এ দু পদ্ধতিতেই টাকা বিনিয়োগ করা যায়। এ ফান্ডের বিনিয়োগ করা টাকা গুলো Debt এবং Equity দু’জায়গাতেই বিনিয়োগ করা হয়।

এধরনের ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা ইনভেস্ট করে ভালো ইনকাম করতে পারে। রিক্সের পরিমাণও কম।

Money Market Mutual Fund

স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করার জন্য Money Market Mutual Fund অন্যতম। একে Liquid Mutual Fund ও বলা হয়। এছাড়া ট্রেজারি, কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ হয়ে থাকে।

এখানে কারা ইনভেস্টমেন্টে করতে পারে?

ভারতের সকল বাসিন্দা, Non-residents Indians (NRI),Persons of Indian Origin (POI) মোটকথা, যারা জন্মসূত্রে ভারতীয় , কোপারেটিভ সোসাইটি ইত্যাদি লোক এখানে ইনভেস্ট করতে পারে। এছাড়া ট্রাস্টি বা ধর্মীয় সংস্থাও এখানে বিনিয়োগ করতে পারো।

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করব কিভাবে?

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অনেক সহজ। এখানে বিনিয়োগের জন্য প্রথমে আপনাকে ফর্ম পূরণ করতে হবে। বেশ কয়েকটি ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে।যেমন –

  • Common Mutual Fund Application Form
  • Mutual Fund ECS Mandate From
  • Risk Profile From ইত্যাদি।

এছাড়া আপনার যদি KYC থাকে সেটাও দিতে হবে। আর যদি KYC না থাকে তাহলে KYC Individual Form, এবং ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, যেকোনো ধরনের পরিচয়পত্র যেমন – প্যান কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড ইত্যাদি দিতে হবে। তাছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানের কাছে যাবেন সেই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়ম থাকে। তাই আপনি যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনবেন সে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার কৌশল দেখে নিন।

এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন মিউচুয়াল ফান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্লাটফর্ম , Brokerage Firm Agent এবং ব্যাংকগুলো থেকেও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

তাছাড়াও অনলাইন মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ করার জন্য ভারতে অনেক বিশ্বাসী অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট রয়েছে।যেমন – My Cams, Karvy, Paytm এগুলো ছাড়াও আরও অনেক মোবাইল অ্যাপস রয়েছে যেগুলোর সাহায্যে ঘরে বসেই বিনিয়োগ করা যায়।

অনলাইনে বিনিয়োগ করার জন্য প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানির একটি করে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ রয়েছে। তাই খুব সহজে বিনিয়োগ করা যায়।

বিনিয়োগের প্রকারভেদ

মিউচুয়াল ফান্ডে আপনারা দুটি উপায়ে বিনিয়োগ করতে পারবেন। যথাঃ

  • Systematic Investment Plan (SIP)
  • Onetime Lump Sum Investment

Systematic Investment Plan (SIP)

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য এটি এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রতিমাসে, সপ্তাহে বা প্রতিদিন বিনিয়োগ করতে পারে।

মনে করুন আপনি একটি ফান্ডে ২০০০ টাকা করে টাকা করে SIP শুরু করেছেন। তাহলে এখানে আগে থেকে বলে দেওয়া তারিখে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে বা দিনে নিয়মিতভাবে আপনার রেজিস্টার্ড ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ হতে থাকবে।

এভাবে আপনারা নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রেখে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন।

Onetime Lump Sum Investment

এ ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার টাকা একবারের জন্যও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে।

যেমন – আপনি কোন মিউচুয়াল ফান্ডে ১,০০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করলেন। এটি হলো Onetime Lump Sum Investment.

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *