দলিল কি? দলিল কত প্রকার ও কী কী?

আমাদের দৈনিক জীবনের সাথে সকল বিষয়ের মত জমি হস্তান্তর হওয়ার বিষয় টাও খুব পরিচিত। প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো সময় আসে যখন জমি সংক্রান্ত ঝামেলায় জড়াতে হয়।অনেকেই অজ্ঞতা বশতো দলিল করতে যেয়ে ভুল করে বসেন। বা ঝামেলায় জড়িয়ে জান।তাই আজকে আমাদের আর্টিকেল টি সাজিয়েছি দলিল নিয়ে।আজকে আমরা জানবো দলিল কি এবং কত প্রকার। প্রতিটি প্রকার নিয়ে একটু করে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো।তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

দলিল কি?

দলিল হচ্ছে কোনো চুক্তি বা লেনদেনের লিখিত এবং সর্বগ্রহনীয় রূপ।জমির ক্ষেত্রে জমির মালিকানা প্রমাণের লিখিত সাক্ষ্যই দলিল । তবে এই দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে নতুবা আইনগ্রাহ্য হবে না।

জমির দলিল কত প্রকার ও কি কি?

বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুযায়ি জমির দলিল মোট ৯ধরনের হয়ে থাকে।

  1.  সাফ-কবলা দলিল
  2. দানপত্র দলিল
  3. হেবা দলিল
  4. হেবা বিল এওয়াজ দলিল
  5. এওয়াজ দলিল
  6. বন্টন নামা দলিল
  7. অসিয়তনামা দলিল
  8. উইল দলিল
  9. না-দাবি দলিল

 সাফকবালা দলিলঃ-

কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি অন্যের কাছে বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন  ও রেজিষ্ট্রী করে দেন তাকে সাফ-কবালা বা খরিদা কবলা বলা হয়।এই দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর বিক্রেতা বা দলিলদাতা  সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টী করে দিবেন।

এই দলিল রেজিষ্টী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের সকল স্বত্ত খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো।বিক্রেতা  ও তার ওয়ারিশানরা উক্ত জমির স্বত্ত হতে মুক্ত  হলেন।

দানপত্র দলিলঃ

যে কোন সম্প্রদায়ের বা গোষ্ঠীর যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন।এই দলিলে গ্রহীতাকে  শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদান  করতে হবে।

স্বত্ব সম্পর্কে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকা যাবে না,দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।

হেবা দলিলঃ

মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা দলিল,এই দলিল কোন কিছুর বিনিময়ে নয়,শুধুমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়।কিন্তু এই হেবা শর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়,রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে।স্বত্ব সম্বন্ধে বিক্রেতার কোন দাবী থাকলে সেই হেবা দলিল শুদ্ধ হবে না এবং যে কোন সময় বাতিল হবে।এমন ভাবে হেবা বা দান পত্রে বিক্রেতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।

হেবা বিল এওয়াজ দলিলঃ

এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল। এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় কিন্তুএই দলিল সামান্য কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে,যেমন-পবিত্র কোরআন,জায়নামাজ,তছবিহ,মোহরানার টাকা,এছাড়াও যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে,যেমন আংটি,ঘড়ি ইত্যাদি।

বিক্রেতার স্বার্থে কোন প্রকার স্বত্ব বিক্রেতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না।এই দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল ধরণের ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং বিক্রেতার বা দলিলদাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্ট্রী হতে হবে।

এওয়াজ দলিলঃ

যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সুবিধা মত একজনের ভূমি/জমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ মালিকানা একে অপরের সাথে বদলি করে নেয়া।এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্ট্রী হতে হবে।

 বন্টনমানা দলিলঃ

শরিকদের মধ্যে সম্পত্তি নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে।অর্থাৎ উউত্তরসূরিদের মধ্যে যেই বন্টন হয় তার যে দলিল সেটাই মুলত বন্টনমানা দলিল।একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের,উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে ক্রয়/খরিদ সূত্রে শরিক।

এই দলিল করার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে দলিল করতে হবে, কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা।এই দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে।যদি শরিকগণের কেউ ঘরোয়া ভাবে বন্টন করতে রাজী না হন বা বন্টন না মানেন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।

 অসিয়তনামা দলিলঃ

কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তার উত্তরাধিকারীগণ দাবী করে তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারী দের সবার হবে।

 উইল দলিলঃ

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজ সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন।যিনি উইল করলেন তিনি জীবত থাকা কালে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।

না-দাবী দলিলঃ

কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এই দলিলকে নাদাবী দলিল বলা হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *