Modal Ad Example
পড়াশোনা

ইতিহাস কাকে বলে? ইতিহাসের জনক কে? ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা

1 min read

ইতিহাস হলো অতীতের কাহিনী, ঘটনা, ফলাফল, গবেষণা ইত্যাদি। এটি পাঠ করার আগে আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। অর্থাৎ, ইতিহাস কাকে বলে?, ইতিহাসের জনক কে? ও পাঠের প্রয়োজনীয়তা, এর প্রকৃতি কেমন ইত্যাদি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা এসব নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

ইতিহাস কি? History শব্দের উৎপত্তি

এক কথায় বলা যায় যে, আজ যা অতীত আগামীদিনের জন্য সেটাই ইতিহাস। ইতিহাস শব্দটি “ইতিহ” শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় – ইতিহ + আস = ইতিহাস। এর অর্থ হলো এরূপ ঘটেছিল। ইতিহ শব্দের অর্থ হলো ঐতিহ্য সাধারণত ঐতিহ্য হলো অতীতের ঘটনা, অভ্যাস, শিক্ষা, ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প ইত্যাদি, যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। ইতিহাস ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে আরেকপ্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়।

ইতিহাস শব্দের ইংরেজি হলো History. এই History শব্দটি গ্রিক শব্দ Historia থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ হলো কোন কিছুর অনুসন্ধান বা গবেষণা। সাধারণত অতীতে যা কিছু ঘটেছে, আমরা তাকেই ইতিহাস বলে থাকি।

ইতিহাস কাকে বলে?

ইতিহাস কি বা কাকে বলে তা এক কথায় বলা খুব কঠিন। বিভিন্ন পণ্ডিতগণ একে বিভিন্নভাবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের আলোকে বলা যায় যে, “অতীত উপাদানসমূহ বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে মানব সমাজের সমুদয় ঘটনার বিবরণকে ইতিহাস বলে।”

আবার বলা যায়, ইতিহাস হলো মানব সমাজের জীবন বৃত্তান্তের দলিল, যেসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে তার স্মারক। যেমন-ধ্যান-ধারণা, কর্মকান্ড নির্ধারণ করেছে এবং যেসকল বস্তুগত অবস্থা সে সকল সমাজের উন্নতির সহায়ক অথবা প্রতিবদ্ধক হিসেবে কাজ করছে তার সংকলন।

বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে ইতিহাসের সঙ্গা

গ্রিক ঐতিহাসিক থুসিডাইডিস বলেছেন, ‘”অতীতের কাহিনী ও ঘটনা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করাকেই ইতিহাস বলে।”

ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস এর মতে, “ইতিহাস হলো অতীতের ঘটনাবলি অনুসন্ধান করে তা লেখা।”

ভারতীয় ইতিহাসবিদ ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, “ইতিহাস হলো মানব সমাজের অতীত কার্যাবলীর বিবরণী।”

G. J. Renier-এর মতে, “ History is the story of the experience of men living in civilized societies.” অর্থাৎ সভ্য সমাজে বসবাসকারী মানুষদের অভিজ্ঞতার কাহিনীই হলো ইতিহাস।

ঐতিহাসিক ই. জে. র‍্যাপসন (Edward James Rapson) বলেন, ‘ঘটনার ধারাবাহিক বিবরণ বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপন করাই হচ্ছে ইতিহাস’।

L. B. Namier-এর মতে, “The subject matter of history is human affairs. men in action, concrete events and their grounding in the thoughts and feeling of men.”

ঐতিহাসিক ক্রিস্টোফার হিল বলেন, “প্রাচীন দলিলপত্র পরীক্ষা করে রচিত মানব সমাজের অতীত কাহিনিই হলো ইতিহাস।”

Arnold J. Toynbee বলেছেন, “মানব সমাজের ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস।”

Edward Hallett Carr বলেছেন, “অতীতের সাথে বর্তমানের যোগসূত্র তৈরি করার বিদ্যাই হচ্ছে ইতিহাস।”

ড. জনসন বলেছেন, “ঘটে যাওয়া ঘটনা হলো ইতিহাস।”

এগুলো ছাড়াও আরও অনেক ঐতিহাসিক ও পন্ডিতগণ ইতিহাসকে বিভিন্নভাবে সঙ্গায়িত করেছেন।

ইতিহাসের জনক কে?

বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস কে ইতিহাসের জনক বলা হয়। তিনি গ্রিকের ইতিহাসবিদ ছিলেন। তিনি ৪৮৪ খ্রিস্টপূর্ব আধুনিক তুর্কিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হলো লেক্সেস আর মাতার নাম হলো ডারউউটাম। খ্রিস্টপূর্ব ৪২৫ অব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

হেরোডোটাস কে ইতিহাসের জনক বলা হয় কেন?

হেরোডোটাস হলো প্রথম ব্যক্তি যিনি ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর উপর একটি বিশেষ পদ্ধতির অনুসন্ধান করেন। এ পদ্ধতিতে তিনি ঐতিহাসিক ধাতুসমুহ সংগ্রহ করেন এবং ইতিহাস লিখনধারা অনুযায়ী সাজান। এ কারনে তাকে “The Father of History” বা ইতিহাসের জনক বলা হয়। রোমান ওরেটর, সিসোরা হেরোডোটাসকে সর্বপ্রথম এ সম্মান প্রদান করেন।

হেরোডোটাসের লিখা ইতিহাসগুলোর বেশিরভাগ বিষয় ছিল ক্রোসাস, সাইরাস, কেমবাইসেস, এসমারডিস, মহান দারিয়াস। তার বইগুলোতে অনেক অসত্য এবং কাল্পনিক ঘটনা উল্লেখ থাকায় তাকে অনেক সমালোচিতও হতে হয়েছে। পঞ্চম শতাব্দির শেষের দিকের অনেক ইতিহাসবিদ, তাকে বিনোদনের জন্য কাহিনী তৈরি করার অভিযোগ করেছে।

আধুনিক ইতিহাসের জনক কে?

আধুনিক ইতিহাসের জনক হচ্ছে লিওপোল্ড ফন র্যাংক। যাকে আধুনিক ইতিহাসের জনক এবং আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক বলা হয়।

ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য

  • সত্যনিষ্ঠ তথ্যের সাহায্যে অতীতের ঘটনা জানা যায়।
  • মানবসমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির ধারাবাহিক তথ্যনির্ভর বিবরণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
  • ইতিহাস গতিশীল এবং বহমান।
  • অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনার সঠিক বিবরণ পরবর্তী বংশধরদের কাছে তুলে ধরা হয়। ইত্যাদি।

ইতিহাস কত প্রকার ও কি কি?

পঠন-পাঠন, আলোচনা ও গবেষণাকর্মের সুবিধার্থে ইতিহাসকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো –

  • ভৌগোলিক অবস্থানগত ইতিহাস
  • বিষয়বস্তুগত ইতিহাস

ভৌগোলিক অবস্থানগত ইতিহাসঃ যে বিষয়টি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে, তা কোন প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে , তাছাড়া তা স্থানীয়, জাতীয় নাকি আন্তর্জাতিক ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যে ইতিহাস রচিত তাকে ভৌগোলিক অবস্থানগত ইতিহাস বলে। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বোঝার সুবিধার্থে ইতিহাসকে আরও তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাস
  • জাতীয় ইতিহাস ও
  • আন্তর্জাতিক ইতিহাস

বিষয়বস্তুগত ইতিহাসঃ কোনো বিশেষ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে যে ইতিহাস রচিত হয়, তাকে বিষয়বস্তুগত ইতিহাস বলে। ইতিহাসের বিষয়বস্তুর পরিধি ব্যাপক। সাধারণভাবে একে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-

  • রাজনৈতিক ইতিহাস
  • সামাজিক ইতিহাস
  • অর্থনৈতিক ইতিহাস
  • সাংস্কৃতিক ইতিহাস
  • কূটনৈতিক ইতিহাস ও সাম্প্রতিক ইতিহাস

ইতিহাসের উদ্দেশ্য কি?

ইতিহাসের উদ্দেশ্য কি তা সহজে বলা কঠিন। এ নিয়ে একেকজনের কাছে একেক উত্তর পাওয়া যাবে। ভিন্ন ভিন্ন সমাজে ইতিহাসের উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন মনে হবে। কারো কাছে মনে হবে ইতিহাস শুধু অনুসন্ধানের বিষয় নয়, এটি বেঁচে থাকার লড়াইয়ের হাতিয়ারও বটে। তাই তাদের কাছে ইতিহাসের উদ্দেশ্য হল শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী চেতনাকে তীক্ষ্ণ ও সমৃদ্ধ করা।

আবার অনেকের কাছে ইতিহাসের উদ্দেশ্য হল বর্তমানের স্বপ্ন, আশা-আকাঙক্ষা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করা। অনেকের মতে আবার ইতিহাসের উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো মানুষ কীভাবে মানুষ হলো, এবং কীভাবে মানুষ ভবিষ্যতে আরাে বড়াে হয়ে উঠবে এবং কীভাবে সমাজের সাথে এবং সারা পৃথিবীর সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলবে। ইত্যাদি।

ইতিহাসের উপাদান কী কী?

উপরের আর্টিকেলটুকু থেকে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করতে হয়। এর নানারকম অন্তর্ভুক্ত বিষয়ও রয়েছে। অতীত সম্পর্কে এম্নিতেই জানা যায় না। অতীতের মানুষের রেখে যাওয়া লেখনী ও নানা দ্রব্য সামগ্রী, বই,দলিল, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা ইত্যাদির ভিতরেই লুকিয়ে থাকে ইতিহাস। তাই এসব বস্তুকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়।

এসব উপাদানের উপর ভিত্তি করেই ইতিহাস লিখিত হয়। তখনকার মানুষের লিখে যাওয়া জিনিসই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তবে সবসময় লিখিত উপাদান নাও হতে পারে। কারণ মানুষ প্রথম থেকেই লিখা শিখে নি। শিখেছে অনেক পরে। আবার লিখতে জানলেও অনেক এলাকার মানুষ ইতিহাস সচেতন ছিল না। তাই শুধু লিখিত উপাদান নয়, ইতিহাস রচনায় অন্যসব উপাদানের উপরও নির্ভর করতে হয়।

এসব বিচার বিশ্লেষণ করে ইতিহাসের উপাদানসমূহকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। এগুলো হলো –

  • লিখিত উপাদান
  • অলিখিত উপাদান

লিখিত উপাদান: লিখিত উপাদানগুলোর মাঝে রয়েছে – সমকালিক সাহিত্য, ধর্মগ্রন্থ, পর্যটকদের বিবরণী, সরকারি দলিলপত্র, রাজ রাজার জীবনী ইত্যাদি।

অলিখিত উপাদান: অলিখিত উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে – ধর্মীয় ও সাধারণ স্থাপত্য অর্থাৎ ইমারতসমূহ, বিভিন্ন ভাস্কর্য বা মূর্তি, মুদ্রা, তাম্রলিপি, শিলালিপি, মানুষের ব্যবহার্য তৈজস পত্র, চিত্রকলা ইত্যাদি।

এভাবে লিখিত ও অলিখিত উপাদানগুলোকে বিশ্লেষণ করেই ইতিহাস রচনা করা হয়ে থাকে।

ইতিহাসের বিষয়বস্তু

ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় ব্যাপক। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়। উপরে দেওয়া ইতিহাসের সঙ্গা থেকে বলা যায় যে, অতীতের সবকিছুই ইতিহাস নয়। এতে পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাসমূহই স্থান পায়। এরই প্রেক্ষিতে মানুষের জীবনযাত্রা, সমাজ, পরিবেশ, সভ্যতা ইত্যাদি বিষয় ইতিহাসের বিষয়বস্তু হিসেবে পরিচিত।

ইতিহাস যেমন ঘটে যাওয়া ঘটনা বিশ্লেষণ করে, তেমনি এটি ঘটার কারণসমূহ নিয়েও আলোচনা করে। এ থেকেই জানা যায় যে, মানুষ জন্মগতভাবেই সংগ্রামী। বিরুদ্ধ পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে তাকে টিকে থাকতে হয়েছে। এভাবেই মানুষ উন্নত সভ্যতা সৃষ্টিকারী হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে। মানুষের সংগ্রাম, জয়, পরাজয় সবকিছুই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়।

তাছাড়া সামাজিক সাংস্কৃতিক অবস্থা, ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচিত হয়। মূলত সবকিছু মিলিয়েই রচিত হয় মানুষের ইতিহাস।

ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা

ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে অতীতের ঘটনাবলী জানা যায়। নিম্নে এটি পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

০১. মানব সমাজের ক্রমবিকাশ জানা যায়

ইতিহাস পাঠ করার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, আদিম মানুষ কীভাবে মানব অসহায় অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে সভ্য ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। মানুষ কীভাবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিল।

তাছাড়া ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে মানব সমাজের সূচনা থেকে তার সবধরণের কাজ, চিন্তা, চেতনা, জীবনযাত্রার অগ্রগতি ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করতে পারি। বিভিন্ন এলাকার মানুষের সভ্যতা কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, কীভাবে তার বিকাশ লদভ ঘটছে সবকিছুই ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।

এটি শুধু মানুষের অতীতের কর্মকাণ্ডই উল্লেখ করে না, মানুষের অতীত কর্মকান্ডের পেছনের কারণও খুঁজে বেড়ায়। মানুষের অতীত কীর্তির পেছনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করে। এভাবে, ইতিহাস পাঠের মধ্যে দিয়ে অতীতকালে মানুষের চিন্তাভাবনা কি ছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করা যায়।

০২. ইতিহাস সচেতনতা বৃদ্ধি করে

ইতিহাসের জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে৷ বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর উত্থানপতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলো মানুষের জানা থাকলে মানুষ ভালো ও মন্দের পার্থক্য খুব সহজেই বুঝতে পারে। ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে।

০৩. জাতীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়

যেকোন জাতির চেতনা জাগিয়ে তুলতে ইতিহাস পাঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন জাতির ঐতিহ্য ও গৌরবের ইতিহাস ঐ জাতিকে উৎসাহিত করে। ঐতিহ্য ও গৌরবের ইতিহাস থেকে একটি জাতির সঠিক পরিচয় জানা যায়। এ ধরনের ইতিহাস পাঠের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলা সহজ হয়।

এতে করে দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তোলা সহজ হয়ে উঠে। যেকোনো জাতির ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যকে ইতিহাস সংরক্ষণ করে। একারণে ইতিহাসজ্ঞান সমাজ ও জাতির অগ্রগতির লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। ইতিহাস পাঠ মানুষের জাতীয় চেতনাবোধকে জাগিয়ে তোলে। ইতিহাসের পাতায় পাতায় সে তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান পায়।

০৪. ইতিহাস জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে

অতীতের সত্যনিষ্ঠ ঘটনাবলি মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয়ে থাকে নিজ দেশ, জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবময় ঐতিহ্যের তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। একই সাথে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করার মাধ্যমে মানুষকে আত্মমর্যাদাবান করে তোলে।

০৫. বর্তমানকে বুঝা ও ভবিষ্যৎ গঠনে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমানকে বুঝার জন্য এবং ভবিষ্যৎকে গঠন করার জন্য ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য অতীতের প্রতি মানুষের এত কৌতূহল।

ইংরেজ ঐতিহাসিক স্যার জন সিলি উল্লেখ করেছেন যে, “কোনো দেশের ইতিহাস পাঠে সে দেশের অতীতকেই শুধু জানা যায় না, তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।” তাই তিনি মনে করেন যে, ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করার জন্যই ইতিহাস পড়া বেশি প্রয়োজনীয়।

ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে জানা যায় যে আদিম মানুষ তাদের ভবিষ্যতের জন্য কি পরিকল্পনা করেছিল, তাদের পরিকল্পনার সাথে বর্তমানের পরিকল্পনা তুলনা করা যায়। তারা কীভাবে তাদের দায়িত্ব -কর্তব্য পালন করেছে এসবও জানা যায়। এই জ্ঞান বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়। এভাবেই ইতিহাস অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

০৬. মানুষের মনের দিগন্তকে প্রসারিত করে

ইতিহাস পাঠ করলে মানুষের মন উদার হয় ও মনের দিগন্ত প্রসারিত হয়। মানুষ বিভিন্ন সমাজে বাস করে। একেক সমাজের রীতিনীতি, আইনকানুন, আচার-আচরণ, খাদ্য, পোশাক- পরিচ্ছদও ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতার মাঝেও তাদের মাঝে ঐক্যের বন্ধন রয়েছে। ইতিহাস পাঠ করার মাধ্যমে মানুষ এসব জানতে পারে। এভাবে মানুষের ভিতর আন্তজার্তিক মৈত্রী প্রতিষ্ঠার পথ প্রসারিত হয়।

সুতরাং বলা যায়, মানুষের ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমষ্টি ও জাতিগত জীবনের সর্বত্র ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম।এটি পাঠ করলে বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ে এবং জ্ঞানার্জনের প্রতি আগ্রহ জন্মে।

তো আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি ইতিহাস কাকে বলে? ইতিহাসের জনক কে? ও পাঠের প্রয়োজনীয়তা, উপাদান, প্রকারভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “ইতিহাস কাকে বলে? ইতিহাসের জনক কে? ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা” আর্টিকেল পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (56 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x