ছাত্রদের জন্য ৭ টি জব যা থেকে আয় করতে পারেন
বর্তমানে ছাত্রদের জন্য অনলাইনে প্রচুর কাজ রয়েছে। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর যে সময়টুকু পায় সে সময় নষ্ট না করে অনলাইন জব করে কাজে লাগাতে পারেন। এ কাজগুলো করার জন্য আপনাকে ঘরের বাইরে যেতে হবে না, ঘরে বসেই আয় করতে পারবেন। অনেক কোম্পানি আছে যারা তাদের কাজের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের খুঁজে বেড়ায় কারণ প্রফেশনালদের চেয়ে এদের দিয়ে কাজ করালে অনেক খরচ বেঁচে যায়।
ছাত্রাবস্থায় চাকরি করে আপনার নিজের খরচ আপনি নিজেই চালাতে পারবেন। এমনকি আপনার পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা করতে পারবেন। এগুলো এমন জব যা আপনার পড়াশোনার কোন ক্ষতি করবে না। কারণ এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই আপনার যখন খুশি তখনি এ কাজ করতে পারবেন।
আজ আমি তেমনই 7 টি জব নিয়ে আলোচনা করব আপনি পড়াশোনা ফাঁকে ফাঁকে করতে পারবেন। আমাদের পাশের দেশ ভারতের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন জব করে নিজের খরচ নিজেরাই বহন করে। আপনিও বেছে নিতে পারেন তেমন কোন জব। সারা বিশ্বে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে যেসব অনলাইন জব করে থাকে তেমনি 7 টি জব হলো-
- আর্টিকেল রাইটিং – ব্লগ পোস্ট, প্রোডাক্ট রিভিউ
- আপওয়ার্ক
- সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
- ডাটা এন্ট্রি
- রিজিউম রাইটার
- ইউটিউব এক্সপার্ট
- মাইক্রো ফ্রিল্যান্সিং ফাইভার
ছাত্রাবস্থায় চাকরি
ছাত্রাবস্থায় ইনকাম করার জন্য সত্যিই অনেক সুযোগ রয়েছে। এজন্য আপনাকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করার জন্য নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। নিচে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তেমনি কিছু অনলাইন কাজের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে-
আর্টিকেল রাইটিং – ব্লগ পোস্ট, প্রোডাক্ট রিভিউ
আপনার যদি যেকোনো নির্দিষ্ট কোন টপিকের উপর লেখালেখির যোগ্যতা থাকে তবে আপনি অনেক কোম্পানি এবং অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য রাইটিং এর জব নিতে পারেন। ছাত্রাবস্থায়ই এটি সবচেয়ে সহজ কাজ এবং ইনকাম করার সঠিক রাস্তা । আপনাকে এখানে আপনার ক্লায়েন্টের ব্লগ, ওয়েবসাইট বা মার্কেটিংয়ের জন্য আর্টিকেল লিখতে হবে।
লেখা শেষ হওয়ার পরেই আপনি আপনার পেমেন্ট পেয়ে যাবেন। পেমেন্ট হতে পারে প্রতিতে আর্টিকেল বা প্রতি শব্দ বা প্রতি প্রজেক্টের উপর ভিত্তি করে বা আর্টিকেলের ওয়ার্ড সংখ্যা হিসেবে বা ঘন্টা হিসেবে। এগুলো ছাড়াও অনেক নিউজ পেপার এবং ম্যাগাজিনে লিখে আপনি ইনকাম করতে পারেন।
আবার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে আর্টিকেল লিখে মাসে 50 হাজারেরও বেশি টাকা ইনকাম করা যায়। আপনি চাইলে সেগুলোতেও কাজ করতে পারেন কিন্তু এদের রিকোয়্যারমেন্ট সম্পন্ন করা একটু জটিল। বিশেষ করে অধিকাংশই পেমেন্ট অপশন পে-পাল যা আমাদের দেশে তেমন অ্যাভেইলেবল নয়।
যদি আপনার কোন বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন দেশের বাইরে থাকে বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশে তবে আপনি খুব সহজে আপনার বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের পে-পাল একাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি এ ওয়েবসাইটগুলোতে লিখে পেমেন্ট নেবেন আপনার বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনের পে-পালে। তাদের আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিতে বলবেন। ব্যাস তাহলেই হয়ে গেল।
তবে আপনার যদি কেউ না থাকে এবং আপনি যদি এসব জটিলতায় জড়াতে না চান তাহলে আপনি আউটসোর্সিং ওয়েবসাইট এ কাজ করতে পারেন। যেসব আউটসোর্সিং ওয়েবসাইট এ আর্টিকেল রাইটিং এর জব পাবেন তার কয়েকটি নিম্নে দেয়া হল –
- Link-Able
- Cracked.com
- Metro Parent
- Uxbooth
- Strong Whispers ইত্যাদি।
আপওয়ার্ক
আপওয়ার্ক একটি আমেরিকান ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য উদ্যোগ এবং ব্যক্তিরা সংযোগ স্থাপন করে।আপওয়ার্কে প্রতিদিন হাজার হাজার আর্টিকেল রাইটার কিংবা ব্লগ পোস্ট রাইটার কিংবা প্রোডাক্ট রিভিউ রাইটার চেয়ে এড পোস্ট করা হয়। অনেক পারসোনাল ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটের মালিক এবং ই-কমার্স কিংবা প্রোডাক্ট সেলিং কোম্পানীগুলোর জন্য প্রায় সময় আর্টিকেল রাইটারের প্রয়োজন হয়।
আপওয়ার্কে প্রতিদিনই জব পোস্টগুলো আপডেট করা হয়। আপনার যোগ্যতা থাকলে আপনি যেকোন পোস্টেই জব করতে পারেন। আপনি যদি আপওয়ার্কে কাজ করতে চান তবে আপনাকে প্রথমে এখানে একটি ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খুলে নিতে হবে। আপওয়ার্কে একাউন্ট খুলে সুন্দর করে প্রোফাইল সাজাবেন। আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলা এখন অনেক জটিল। তাই যারা আপওয়ার্কে কাজ করছে তাদের কাছ থেকে জেনে নিন।
এছাড়া অন্য যেসকল সাইটে আর্টকেল রাইটিং এর জব পাবেন, সেগুলো হল- Craiglist, Peopleperhour, Freelancer ইত্যাদি।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দারুন একটা সুযোগ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা। এতে ইনকাম করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা সম্পর্কে জানা অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। ডিজিটাল যুগে প্রতিটি কোম্পানিরই এখন সোশ্যাল সাইটে একাউন্ট থাকে পেইজ থাকে। কোম্পানিগুলো তাদের সামাজিক মিডিয়া একাউন্টগুলো চালানোর জন্য তরুণ বা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিতে পছন্দ করে। কারণ তারা এসব সম্পর্কে বেশি জানে। প্রতি ঘন্টায় বা পার্ট-টাইম হিসেবেও এসব কাজ করা যায়। আপনার কাজ হতে পারে এসব কোম্পানির সোশ্যাল একাউন্ট দেখাশোনা করা, পেইজ দেখাশোনা করা, কোম্পানির হয়ে পোস্ট করা, ছবি আপলোড করা, প্রমোশনের জন্য নতুন নতুন প্ল্যান করা ইত্যাদি।
২০১৭ সালে ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বিজনেস হয়েছে অনলাইনে যা বিজনেস ইনসাইডার (Business Insider), পে-পাল(PayPal) ও পাইওনিয়ারের (Pioneer) এক যৌথ জরিপ থেকে জানা যায়।যা ৩.৮ ট্রিলিয়নে পৌঁছায় 2018 সালে। দেখতেই পারছেন গ্লোবাল বিজনেসের প্রায় সবটাই এখন চলে যাচ্ছে অনলাইনে। বিশেষ করে যেসব কোম্পানিগুলো প্রোডাক্ট সেলিং করে তাদের জন্য অনলাইনের বিকল্প নেই।
তাই বুঝতে পারছেন সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি এসব কোম্পানির জন্য কতটা জরুরি। এসব কোম্পানীর জন্য প্রয়োজন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট বা অ্যানালিস্ট প্রয়োজন। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে প্রতি ঘন্টায় সর্বনিম্ন 1260 টাকা থেকে সর্বোচ্চ 3360 টাকা ইনকাম করতে পারেন। আপনার কাজ হচ্ছে কোম্পানির ফেসবুক পেইজ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, পিন্টারেস্ট, বিভিন্ন পোস্ট, ইউটিউব সহ যাবতীয় সোশ্যাল অ্যাকাউন্টগুলো দেখাশোনা করা এবং অ্যাকাউন্ট বা পেইজে নিয়মিত পোস্ট করে ফলোয়ার অ্যাক্টিভ রাখা এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ইত্যাদি।
পড়াশুনার পাশাপাশি এই সহজ কাজগুলো করতে পারবেন না কী ? নিশ্চয়ই পাবেন কারণ ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় । যে সব সাইটে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার চাকরি পাবেন তার কয়েকটা নিচে দেয়া হলঃ
- আপওয়ার্ক
- ইন্ডিড
- মনস্টার
- ক্যারিয়ার বিল্ডার
- নকরি ইত্যাদি।
ডাটা এন্ট্রি
ছাত্রাবস্থায় ডাটা এন্ট্রির চেয়ে সহজ কোন কাজ নেই।কারণ এই কাজগুলো দিনরাত যে কোন সময় করা যায় অর্থাৎ আপনার যখন ইচ্ছা তখনই করতে পারবেন। এর জন্য নির্ধারিত কোন সময় নেই। এ কাজের জন্য তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয়না শুধু ডাটা এন্ট্রি এবং ডেটা সংরক্ষণের প্রাথমিক জ্ঞান থাকলেই হয়।
বর্তমানে অনলাইনে প্রচুর ডাটা এন্ট্রির কাজ পাওয়া যায়। বিভিন্ন কোম্পানি ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উপর বেশি প্রাধান্য দেয়। পড়াশোনা করার পাশাপাশি ডাটা এন্ট্রির কাজ করে ঘন্টায় 9 থেকে 16 আয় করা যায়।
ডাটা এন্ট্রি কি?
এককথায় ডাটাএন্ট্রি হচ্ছে, কম্পিউটার বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে নির্দিষ্ট কিছু ডাটা এন্ট্রি করা। সেটা হতে পারে টেক্সট, ছবি যোগ করা, রিপোর্ট তৈরি করা , কোন তালিকা তৈরি করা সফটওয়্যার কিংবা কোন ওয়েবসাইটে ডাটা এন্ট্রি দেওয়া ইত্যাদি। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বা এক্সপার্টরা এসব কাজ করে থাকে যারা ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে দক্ষ।
কিছু কিছু সফটওয়্যার কোম্পানী, মোবাইল কোম্পানি, কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কয়েকদিন পর পরই ডাটা আপডেট দিতে হয়। যেমন – মাঝে মাঝে ডাটার ফরমেট পরিবর্তন, এক স্থান থেকে ডাটা নিয়ে অন্য স্থানে সঞ্চয় করতে হয়, তথ্য যাচাই করতে হয়, সরাসরি ডাটা সংগ্রহ করা ইত্যাদি। তখন তারা একাজগুলো করানোর জন্য কিছু লোক হায়ার করে থাকেন। চাইলে আপনিও হতে পারেন তাদের একজন। এটা কে ছোট করে দেখার কিছু নেই কারণ ডাটা এন্ট্রির কাজ করে মাসে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।
কিছু কিছু সাইট রয়েছে যেখানে ডাটা এন্ট্রির কাজের পোস্ট করা হয়। যে সব সাইটে ডাটা এন্ট্রির কাজ পাবেন তার কয়েকটি হলো –
- আপওয়ার্ক
- পিপল পার আওয়ার
- গুরু ইত্যাদি।
ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ ডাটা এন্ট্রি করে আয় করবেন কীভাবে?
রিজিউম রাইটার
মানুষের রিজিউম লিখে পড়াশোনার পাশাপাশি ইনকাম করতে পারেন। আপনি ভাবছেন একাজ কেউ কাউকে দিয়ে করায় নাকি!! এটা তো সবাই নিজে করে নেয়!! অনলাইন মার্কেটে প্রচুর রিজিউম রাইটারের কাজ রয়েছে। যেমন – আপওয়ার্কে রিজিউম রাইটিং জব, ইন্ডিডে রিজিউম রাইটিং জব। এ কাজ করে প্রতি ঘন্টায় 15 থেকে 25 ডলার ইনকাম করা যায়।
শুধু রিজিউম রাইটিং নিয়েই গড়ে উঠেছে কিছু ওয়েবসাইট। তার কয়েকটি হল –
ইউটিউব এক্সপার্ট
আপনি যদি ইউটিউব এক্সপার্ট হন, ভিডিও মার্কেটিংয়ের দক্ষতা থাকে বা সুন্দর সুন্দর ভিডিও মেকিং আইডিয়া থাকে বা ভিডিও এডিটর হন তাহলে আপনার জন্য অনলাইনে অনেক অনেক জব রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানী তাদের ইউটিউব চ্যানেল ম্যানেজ জন্য লোক নিয়ে থাকে। আপনিও তাদের একজন হয়ে ঘরে বসে ইনকাম করতে পারেন। তাছাড়া ভিডিও ইন্টারনেটের বৃহত্তম (এবং সবচেয়ে লাভজনক) সামগ্রীর অন্যতম আকার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। দক্ষ ভিডিও এডিটরের উচ্চ চাহিদা রয়েছে। ভিডিও এডিটর হয়েও আপনি ইনকাম করতে পারেন। যেখানে আপনি ইউটিউব জব পাবেন তারপর কয়েকটি হলো-
মাইক্রো ফ্রিল্যান্সিং ফাইভার
ফাইভার হ’ল ডিজিটাল সার্ভিসের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বাজার, যেখানে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন, বিভিন্ন ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, লেখা ও অনুবাদ, ভিডিও ও অ্যানিমেশন, সঙ্গীত ও অডিও, প্রোগ্রামিং এবং প্রযুক্তি, বিজ্ঞাপন, ব্যবসা, মজা এবং জীবনধারা থেকে শুরু করে যে কোন কিছু সরবরাহ করতে পারেন। এটি আপনার ক্রিয়েটিভিটি এবং এ কাজ প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। Fiverr.com এ সার্চ করে আপনি এ কাজ করতে পারেন।
বর্তমানে পৃথিবী জুড়েই ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রাবস্থায় পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন জব করে তাদের নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে আমাদের দেশে সেক্ষেত্রে উল্টো। আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা অনেক পিছিয়ে আছে। পড়াশোনার বাইরে তারা যে সময় পায় তারা সেটাকে কাজে না লাগিয়ে অবহেলায়, ঘুরে-ফিরে, আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দেয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপরের কাজগুলো ছাড়াও আরো অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে যেমন – ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি। তাই সময় নষ্ট না করে আজও শুরু করে দিন।