স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে? স্থিতিস্থাপকতা সীমা কি?
পদার্থের একটি ভৌত ধর্ম হলো স্থিতিস্থাপকতা। পদার্থের ভাষায়, সাধারণত বল প্রয়োগ করার ফলে বিকৃত হয়ে যাওয়া কোন বস্তুর বল সরিয়ে নেওয়ার পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারার ধর্ম বা সক্ষমতাকে স্থিতিস্থাপকতা বলা হয়। ইংরেজিতে একে Elasticity বলা হয়। চলুন তাহলে স্থিতিস্থাপকতা সম্পর্কে (স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে? স্থিতিস্থাপকতা সীমা কি? ইত্যাদি ) বিস্তারিত জেনে নেই।
স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?
বাহ্যিক কোন বল প্রয়ােগ করে কোনাে বস্তুর আকার বা আয়তন বা উভয়েরই পরিবর্তনের চেষ্টা করলে যে ধর্মের ফলে, বস্তুটি এই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় এবং বাহ্যিক বল অপসারিত হলে বস্তু তার পূর্বের বা আগের আকার ও আয়তন ফিরে পায়, সেই ধর্মকে স্থিতিস্থাপকতা বলা হয়।
সহজভাবে বলা যায়, বস্তুর যে ধর্ম উহার উপর প্রযুক্ত বলের ক্রিয়ায় তার আকার বা আয়তন বা উভয়ের পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় এবং প্রযুক্ত বল অপসারণ করলে তার পূর্বের আকার বা আয়তন ফেরত পায়, তাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে।
কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করার পর ঐ বল অপসারণ করলে যদি বস্তুটি পূর্ণ ভাব পূর্বাবস্থা ফিরে পায়, তবে ঐ বস্তুকে পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তু বলে। তবে বাস্তবে কোন বস্তুই পূর্ণ স্থিতিস্থাপক নয়।
বিকৃতকারী বল অপসারণের পর যদি বস্তুর অবস্থার পুনঃপ্রাপ্তি না ঘটে তবে তাকে নমনীয় বস্তু বলে। এই বস্তুকে অস্থিতিস্থাপক বস্তুও বলা হয়।
স্থিতিস্থাপকতা কীসের উপর নির্ভর করে? স্থিতিস্থাপকতার ক্রম
আঘাত, খাদ, তাপমাত্রার উপর স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করে।
স্থিতিস্থাপকতার ক্রমঃ হীরক > ইস্পাত > রাবার > দস্তা
স্থিতিস্থাপকতা সীমা কী?
সর্বোচ্চ যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করলে বস্তু সর্বাংশে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে, তাকে স্থিতিস্থাপকতার সীমা বলে।
আবার বলা যায়, প্রযুক্ত বাহ্যিক বলের যে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত কোন বস্তু পূর্ণ স্থিতিস্থাপক থাকে, তাকে ঐ বস্তুর স্থিতিস্থাপক সীমা বলে।
স্থিতিস্থাপকতার সীমা অতিক্রমী বল প্রয়োগের ফলে বস্তু সর্বাংশে তার আদি অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না।
স্থিতিস্থাপক বস্তু কাকে বলে?
যে সকল বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা গুণ আছে তাদের স্থিতিস্থাপক বস্তু (Elastic) বলে।
সবচেয়ে স্থিতিস্থাপক বস্তু কি?
সবচেয়ে স্থিতিস্থাপক উপাদান বা বস্তু হলো ইস্পাত।
ইস্পাত রাবার অপেক্ষা স্থিতিস্থাপক -ব্যাখ্যা কর
আমরা জানি বল প্রয়োগে বস্তু বিকৃত হয়। পীড়নের ফলে যে বস্তুর বিকৃতি যত কম হয়, সে বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা তত বেশি। ইস্পাতের ক্ষেত্রে অধিক পীড়ন দেওয়া স্বত্বেও বিকৃতির মান খুব কম হয়। সুতরাং, পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত অর্থাৎ, স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের মান বেশি হবে।
পক্ষান্তরে রাবারের ক্ষেত্রে, অল্প পীড়ন দিলেই বিকৃতির মান অনেক বেশি হয়। সুতরাং, রাবারের ক্ষেত্রে পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত অর্থাৎ, স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের মান কম হবে।
এজন্য ইস্পাত রাবার অপেক্ষাও অধিক স্থিতিস্থাপক। স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের মান বেশি হলে পদার্থ অধিক স্থিতিস্থাপক হয়।
পানির ক্ষণস্থায়ী স্থিতিস্থাপকতা আছে– ব্যাখ্যা কর
হাতের আঙ্গুলগুলো প্রসারিত অবস্থায় পানির উপরিতলে জোরে আঘাত করলে হাতে ব্যথা পাওয়া যায়। অর্থাৎ হাতের ওপর পানি বল প্রয়োগ করে। এ বল প্রকৃতপক্ষে পানির স্থিতিস্থাপকতার দরুন সৃষ্টি হয়।
হাতের দ্বারা হঠাৎ আঘাতের মাধ্যমে পানির স্তরকে যখন নিচে নামানোর জন্য বল প্রয়োগ করা হয়, তখন উপরের স্তরটি নিচে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও নিচের স্তরগুলি স্থির তড়িৎ বিকর্ষণজনিত বাধা বল প্রয়োগ করে, যা শেষ পর্যন্ত হাতে অনুভূত হয়।
অবশ্য হাতের তালু দ্বারা প্রযুক্ত বল তুলনামূলকভাবে অনেক বড় মানের হওয়ায় হাত নিমিষেই পানির ভিতরে প্রবেশ করে। তাই বলা যায়, পানির ক্ষণস্থায়ী স্থিতিস্থাপকতা আছে।
তো আজ এ পর্যন্তই থাকলো। আশা করি স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে? স্থিতিস্থাপকতা সীমা কি? এবং স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই করবেন।