দাইয়ুস কি? দাইয়ুসের পরিণতি, দায়িত্বশীলতা।
দাইয়ুস বা দাইউস (আরবি: دَيُّوث) হল আরবি-ধাতুমুল হতে আগত একটি পরিভাষা, যার দ্বারা এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যে তার আত্মীয় স্বজন বা দাম্পত্য সঙ্গীর আশালীন আচরণের ব্যাপারে উদাসীন বা সহনশীল। আরও স্পষ্টভাবে বললে এর দ্বারা এমন পুরুষকে বোঝায়, যার মধ্যে তার পরিবারের নারী সদস্যদের প্রতি পিতৃসম ও তার স্ত্রীর প্রতি পৌরুষেয় নিরাপত্তা প্রদানের যে অহংবোধ (গাইরাহ) তার ঘাটতি থাকে।
দাইয়ুস হচ্ছে, যে নিজ পরিবারে যিনা-ব্যভিচার ও অশ্লীলতার কাজকে প্রশ্রয় দেয়।
যে পুরুষ ঘরের নারীদের সম্ভ্রম রক্ষায় আত্মসম্মানী নয়, সে মানবিকতাহীন, অপুরুষত্ব, অসুস্থ মস্তিষ্ক এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারী। তার তুলনা অনেকটা শূকরের মতো, যে নিজ সম্ভ্রম রক্ষা করে না। তাই ওই সব লোককে সতর্ক থাকা উচিত, যারা নিজ পরিবারে এবং তার দায়িত্বে থাকা লোকদের মাঝে অশ্লীলতা বা অশ্লীলতার উপকরণ প্রশ্রয় দেয়।
দাইউস হলো সে ব্যক্তি যে কিনা তার পরিবার পরিজনকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করেন না এবং পরিবার পরিজন সঠিক ভাবে না চললেও ভালো মনে করেন বা প্রতিবাদ করেন না।
যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেপর্দা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকেও দাইউস বলা হয়।
ঐ ব্যক্তিকে “দাইয়ুস” বলে – যে তার স্ত্রী’কে ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অশ্লীল কাজ ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয় বা সুযোগ করে দেয় এবং সকল শরীয়াহ বিরোধী কাজকে মেনে নেয়।
“দাইয়ুস” জাহান্নামী এবং কবিরা গুনাহকারী”।
“আপন স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয়া” কবিরা গুনাহ।
রাসুল(সাঃ) বলেছেন,
তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন-
১) যে মদ তৈরী করে।
২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং
৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি(দাইয়ুস) যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচার করতে সুযোগ দেয়।
আহমাদঃ ৫৮৩৯।
দাইয়ুসদের পরিণতি
যার স্ত্রীর নিকট পর-পুরুষ প্রবেশ করে, অথচ সে কিছুই মনে করে না বরং চুপ থাকে, সে ব্যক্তিকে দাইয়ূস বলা হয়।
ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেছেন,
‘দাইয়ূছ’ সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’।
যাহাবী, কিতাবুল কাবায়েরঃ ১/৫০ পৃঃ।
দাইয়ূস ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।
নাসাঈঃ ২৫৬২, আহমাদ, মিশকাতঃ ৩৬৫৫; সহীহুল জামেঃ ৩০৫২।
দায়িত্বশীলতা
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল। সুতরাং প্রত্যেকেই অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জবাবদিহী করবে।একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল। অতএব, সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামী ও সন্তানের দায়িত্বশীল। কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে।তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল।
অতএব, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।”
বুখারীঃ ৮৯৩।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তিন(৩) প্রকার লোকদের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। অনবরত মদ পানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি এবং “দাইয়ুস” এমন ব্যক্তি যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়”।
আহমাদ, সাহীউল জামে: ৩০৪৭।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন তিনজন ব্যক্তি আছে, যাদের দিকে আল্লাহ আ’যযা ওয়া যাল কিয়ামাতের দিন তাকাবেন না। তারা হচ্ছে-
(১) যে পিতামাতার অবাধ্য,
(২) যে নারী বেশভূষায় পুরুষদের অনুকরণ করে (৩) দাইয়ুস ব্যক্তি।”
নাসায়ীঃ ২৫৬২।