নাটক বলতে কি বুঝ? নাটকের আঙ্গিক ও গঠনকৌশল ব্যাখ্যা করো।
নাটক সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। নাটক শব্দটির মধ্যেই নাটক কী, তার ইঙ্গিত রয়েছে। নাটক, নাট্য, নট, নটী এই শব্দগুলোর মূল শব্দ হলো ‘নট্’। নট্ মানে হচ্ছে নড়াচড়া করা, অঙ্গচালনা করা। নাটকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Drama।
Drama শব্দটি এসেছে গ্রিক Dracin শব্দ থেকে। যার অর্থ হলো to do বা কোনো কিছু করা। নাটকের মধ্যেও আমরা মূলত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নড়াচড়া, কথাবার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে জীবনের বিশেষ কোনো দিক বা ঘটনার উপস্থাপন দেখতে পাই।
সাহিত্যের প্রাচীন রূপটিকে কাব্য বলা হতো। কাব্য ছিল দুই প্রকার। যথা- শ্রব্য কাব্য ও দৃশ্য কাব্য। তখন সাহিত্য প্রধানত পাঠ করে শোনা হতো। আর যে কাব্য অভিনয় করে দেখানো হতো, সেগুলো ছিল দৃশ্যকাব্য। এ জন্য সংস্কৃতে নাটককে বলা হয়েছে দৃশ্যকাব্য। কিন্তু নাটককে শুধু দেখার বিষয় বললে পুরোটা বলা হয় না, এতে শোনারও বিষয় থাকে। নাটক মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে দেখা এবং সংলাপ শোনার মাধ্যমে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়। এটি একটি মিশ্র শিল্পমাধ্যম। সংস্কৃতিতে একে বলা হয়েছে কাব্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ‘কাব্যেষু নাটকং রম্যম্।’ নাটক পাঠ করা যেতে পারে; মঞ্চে, টিভি-রেডিও বা অন্য গণমাধ্যমে অভিনীত হতে পারে। বর্তমান সময়ে এটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় মাধ্যম।
নাটকের আঙ্গিক ও গঠনকৌশল
সাহিত্যের অন্যান্য শাখা মূলত পাঠের জন্য হলেও নাটক প্রধানত অভিনয়ের জন্য। তাই এর বিশেষ কিছু গঠনবৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পার্থক্য থাকলেও নাটকে সাধারণত চারটি উপাদান থাকে। সেগুলো হলো– ১. কাহিনী, ২. চরিত্র, ৩. সংলাপ এবং ৪. পরিবেশ। নাটকের পাত্রপাত্রী বা চরিত্রগুলোর সংলাপ অথবা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একটি কাহিনী গড়ে ওঠে। কাহিনীটি হয়তো মানবজীবনের কোনো খণ্ডাংশকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
প্রতিটি নাটকে এক বা একাধিক চরিত্র থাকে। নাটকের কাহিনী বা ঘটনা মূলত নাটকের এই পাত্রপাত্রী বা চরিত্রকে নির্ভর করেই গড়ে ওঠে। চরিত্রগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভেতর দিয়ে নাটকের কাহিনী প্রকাশিত হয়। আবার চরিত্রগুলো মুখর হয় সংলাপের ভেতর দিয়ে। বলা যায়, সংলাপ নাটকের প্রাণ। সংলাপ কাহিনী ও চরিত্রগুলোকে ব্যক্ত করে পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। সংলাপের মাধ্যমেই তৈরি হয় নাট্য পরিস্থিতি। উপন্যাস বা গল্পে লেখক বর্ণনার মাধ্যমে বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি ও ব্যাখ্যা করতে পারেন। নাটকে সে সুযোগ থাকে না। এ ক্ষেত্রে প্রধান অবলম্বন সংলাপ। তাই নাটকের সার্থকতা অনেকাংশে নির্ভর করে সংলাপের ওপর।