পানি বিদ্যুৎ কাকে বলে? পানিবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের কয়েকটি প্রকল্পের নাম।
নদীর পানির স্রোতের গতিকে কাজে লাগিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাকে পানিবিদ্যুৎ বলে।
পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সাধারণত নদীর এমন একটি অংশকে বেছে নেওয়া হয়, যেখানে বাঁধ দিয়ে এক পাশ থেকে আরেক পাশে পানি প্রবাহ করা যায়। আর এ প্রবাহের চাপের মধ্য দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর জন্য পাহাড়ি এলাকার নদীই বেশি উপযুক্ত।
এ ধরনের বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য শক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। পানিবিদ্যুতে খুব কম শক্তি ব্যয় হয়। তেল, গ্যাস, কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের চেয়ে পানিবিদ্যুৎ খুব কম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে।
বিশ্বে শীর্ষ পানিবিদ্যুৎ উৎপানকারী দেশগুলোর মধ্যে আছে— চীন, কানাডা, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া। আবার এমনো কিছু দেশ আছে যাদের বিদ্যুতের প্রধান উৎস পানিবিদ্যুৎ।
নিচে বাংলাদেশের পানি বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের কয়েকটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হল।
(১) কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হল কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে ৪৬ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট নিয়ে কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে ৫০ মেগাওয়াট করে আরো তিনটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তিন নম্বর ইউনিটটি ১৯৮২, এবং ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট চালু হয় ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে।
এর মধ্যে প্রথম তিনটি বসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিতে। পরের দুটি স্থাপন করে জাপানের টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার সার্ভিসেস কোম্পানি (টেপ্সকো)। এ দুটি স্থাপনের সময়ই আরো দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য আনুষঙ্গিক সুবিধা রেখে দেয়া হয়। জাপানী এই প্রতিষ্ঠানটিই ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সেখানে আরো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তারা জানায়, বর্তমান অবকাঠামো এবং এই পানি দিয়েই কাপ্তাই হ্রদে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো দুটি ইউনিট বসানো সম্ভব। তাতে কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরো কমে আসবে। বর্তমানে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় বিশ পয়সা।
(২) সাঙ্গু পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প : বান্দরবান জেলায় সাঙ্গু নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে এ পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এখানে বছরে প্রায় ৮০ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
(৩) ব্রহ্মপুত্র পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প : ময়মনসিংহ শহরের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এখানে বছরে প্রায় ৮০ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।