Islamic

যে ব্যক্তি হজ্জ কিংবা উমরা পালনে ইচ্ছুক সে মীকাতে কি কি করবে?

1 min read

প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি হজ্জ কিংবা উমরা পালনে ইচ্ছুক সে মীকাতে কি কি করবে?

উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ।

মীকাতে পৌঁছার পর গোসল করা ও সুগন্ধি লাগানো সুন্নত। যেহেতু বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরামকালে সেলাইকৃত (অর্থাৎ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আদলে তৈরী-অনুবাদক) কাপড় থেকে মুক্ত হয়েছেন এবং গোসল করেছেন। এবং যেহেতু সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইহরামের কারণে আমি তাঁকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম এবং তাঁর হালাল হওয়ার কারণে বায়তুল্লাহ্‌ তাওয়াফ করার আগেও সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।” আয়েশা (রাঃ) যখন হায়েযগ্রস্ত হয়ে ইহরাম করলেন তখনও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে গোসল করে হজ্জের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) যখন যুলহুলাইফাতে সন্তান প্রসব করলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকেও গোসল করার এবং কাপড়ের পট্টি বেঁধে ইহরাম করার নির্দেশ দিলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, কোন নারী যদি মীকাতে পৌঁছেন এবং তিনি হায়েযগ্রস্ত কিংবা নিফাসগ্রস্ত থাকেন তিনি গোসল করবেন এবং সবার সাথে ইহরাম করবেন। অন্য হাজী যা যা করে তিনিও তা তা করবেন; শুধু বায়তুল্লাহ্‌ তাওয়াফ ছাড়া যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রাঃ) ও আসমা (রাঃ)কে সে নির্দেশ দিয়েছেন।

যে ব্যক্তি ইহরাম করতে ইচ্ছুক তার উচিত নিজের গোঁফ, নখ, নাভির নীচের পশম, বগলের পশম ইত্যাদির যত্ম নেয়া। প্রয়োজন হলে এগুলো কেটে নেওয়া। যাতে করে, ইহরাম করার পর ইহরাম অবস্থায় এগুলো কাটার প্রয়োজন না হয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় এগুলোর যত্ন নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “স্বভাবগত বিষয় পাঁচটি: খতনা করা, নাভির নীচের পশম কাটা, গোঁফ কাটা, নখ কাটা ও বগলের পশম উফড়ে ফেলা।” সহিহ মুসলিমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন: “আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা ও নাভির নীচের পশম সেভ করার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে: আমরা যেন চল্লিশ দিনের বেশি সময় দেরি না করি।” এ হাদিসটি ইমাম নাসাঈ এ ভাষায় সংকলন করেছেন যে,, “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন”। ইমাম আহমাদ, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযি হাদিসটি ইমাম নাসাঈর ভাষায় সংকলন করেছেন। আর পক্ষান্তরে, ইহরামকালে মাথার কোন চুল কর্তন করা শরিয়তসম্মত নয়; পুরুষদের জন্যেও নয়, নারীদের জন্যেও নয়।

দাঁড়ি সেভ করা কিংবা দাঁড়ির কিছু অংশ কাটা সবসময় হারাম। বরং দাঁড়ি ছেড়ে দিতে হবে। যেহেতু সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর। দাঁড়ি ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছাটাই কর”। ইমাম মুসলিম তাঁর ‘সহিহ’ গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা গোঁফ ছাটাই কর, দাঁড়ি ছেড়ে দাও এবং অগ্নিপূজারীদের বিপরীত কর।”

এ যামানায় অনেক লোকের মধ্যে এ সুন্নতের খিলাফ করার, দাঁড়ির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার, কাফের ও নারীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করার মহা মুসিবত বিদ্যমান। বিশেষতঃ যারা ইলম অর্জন ও বিতরণের সাথে সম্পৃক্ত তাদের মধ্যেও। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, আমাদেরকে ও সর্বস্তরের মুসলমানকে সুন্নাহ্‌ অনুসরণ করার ও আকঁড়ে ধরার এবং সুন্নাহ্‌র দিকে দাওয়াত দেয়ার হেদায়েত নসীব করেন। যদিও অনেক মানুষ সুন্নাহ্‌র প্রতি বীতশ্রদ্ধ। হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেমা’লা ওয়াকিল। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম (আল্লাহ্‌ই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক। সুউচ্চ সুমহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই)।

এরপর পুরুষ হলে একটি লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করবে। মুস্তাহাব হচ্ছে- এ দুইটি চাদর সাদা ও পরিস্কার হওয়া। মুস্তাহব হচ্ছে- দুইটি স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে ইহরাম করা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন একটি লুঙ্গি, একটি চাদর ও এক জোড়া স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে ইহরাম করে।”[মুসনাদে আহমাদ]

আর মহিলা হলে যে কাপড় ইচ্ছা সে কাপড় পরে ইহরাম করতে পারেন; কালো কাপড় হোক, সবুজ কাপড় হোক কিংবা অন্য কোন রঙের কাপড় হোক। তবে, পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ থেকে সাবধান থাকতে হবে। ইহরাম অবস্থায় নারীর জন্য নিকাব ও হাত-মোজা পরা নাজায়েয। তবে তিনি অন্য কিছু দিয়ে মুখ ও হাতের কব্জিদ্বয় ঢেকে রাখবেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরামকারী নারীকে নিকাব ও দুইহাতে মোজা পরতে নিষেধ করেছেন। কোন কোন সাধারণ মুসলমান যে মনে করে থাকেন, নারীদেরকে সবুজ কিংবা কালো রঙের পোশাকে ইহরাম করতে হবে— এর কোন ভিত্তি নেই।

এরপর গোসল, পরিচ্ছন্নতা ও ইহরামের কাপড় পরিধান শেষে মনে মনে হজ্জ কিংবা উমরা যেটা পালন করতে ইচ্ছুক সেটার নিয়ত করবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সকল আমল নিয়্যত অনুযায়ী মূল্যায়িত হয়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই পায়।”

তিনি যা নিয়ত করেছেন সেটা উচ্চারণ করা শরিয়তসম্মত। যদি তিনি উমরা করার নিয়ত করেন তাহলে বলবেন: ‘লাব্বাইকা উমরাতান’ কিংবা ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান’। আর যদি তিনি হজ্জ করার নিয়ত করেন তাহলে বলবেন: ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’ কিংবা ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান’। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা করেছেন। যদি হজ্জ ও উমরা উভয়টার নিয়ত করতে চান তাহলে উভয়টাকে একত্রিত করে তালবিয়া বলবেন: ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান’। এক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে- গাড়ী কিংবা পশুর পিঠে আরোহণ করার পর নিয়ত উচ্চারণ করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারীতে আরোহণের পর তালবিয়া পড়েছেন, আর সওয়ারী তাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। আলেমগণের মতামতের মধ্যে এটি সবচেয়ে শুদ্ধ। ইহরাম ছাড়া অন্য কোন আমলের ক্ষেত্রে নিয়ত উচ্চারণ করা শরিয়তসিদ্ধ নয়; কেননা ইহরামের নিয়ত উচ্চারণ করাটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।

পক্ষান্তরে, নামায ও তাওয়াফ ইত্যাদি আমলের কোনটির ক্ষেত্রে নিয়ত উচ্চারণ করা অনুচিত। তাই কেউ এভাবে বলবে না যে, نَوَيْتُ أنْ أُصَلِّيَ كَذَا وكَذَا (আমি অমুক অমুক নামাযের নিয়ত করেছি)। এ রকমও বলবে না যে, نَوَيْتُ أَنْ أَطُوْفَ كَذَا (আমি অমুক তাওয়াফ করার নিয়ত করেছি)। বরং এ ধরণের উচ্চারণ করাটা নব্য বিদাত। আর এটি স্বজোরে বলা আরও বেশি নিন্দনীয় ও কঠিন গুনাহ। যদি নিয়ত উচ্চারণ করাটা শরিয়তসিদ্ধ হত তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা বর্ণনা করতেন এবং তাঁর কথা কিংবা কাজের মাধ্যমে উম্মতের জন্য বিষয়টি সুস্পষ্ট করে যেতেন এবং সলফে সালেহীনগণ তা পালনে অগ্রণী থাকতেন।

যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন কিছু পাওয়া যায়নি, সাহাবায়ে কেরাম থেকেও এমন কিছু বর্ণিত হয়নি- এতে করে জানা গেল যে, এটি বিদাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সবচেয়ে মন্দ বিষয় হচ্ছে নব্য বিষয়গুলো। আর প্রত্যেকটি বিদাত হচ্ছে ভ্রষ্টতা”।[সহিহ মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে এমন কিছু চালু করে যা এতে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত”।[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যার ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত।”[সমাপ্ত]

মাননীয় শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায


সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x