রসায়নে অনুসন্ধান বা গবেষণা প্রক্রিয়ার ধাপগুলো ব্যাখ্যা করো।

বিজ্ঞানের লক্ষ্য হলাে মানবজাতির কল্যাণসাধন করা। এ উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পদ্ধতিগতভাবে যে সুসংবদ্ধ জ্ঞান অর্জন হয় সেই জ্ঞানই হলাে বিজ্ঞান। আর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনাে কিছু জানার চেষ্টাই হচ্ছে গবেষণা। যিনি এই গবেষণা করেন তিনিই বিজ্ঞানী। সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনাে কিছু জানার নামই গবেষণা। গবেষণার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। রসায়ন গবেষণারও পদ্ধতি রয়েছে। এখন রসায়ন গবেষণার পদ্ধতি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো।

বিষয় নির্বাচন বা বিষয়বস্তু নির্ধারণ : 
গবেষণার জন্য প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে যে আমরা কী জানতে চাই  বা কোন ধরনের নতুন পদার্থ আবিষ্কার করতে চাই । ধরি, আমরা জানতে চাই, অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করলে তাপ উৎপাদিত হবে না শােষিত হবে? একে বলে বিষয় নির্বাচন বা বিষয়বস্তু নির্ধারণ।

বই বা পূর্বের গবেষণাপত্রের সাহায্যে বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু ধারণা নেওয়া :
আমাদের সবার আগে এই বিষয়ে কিছু বইপত্র পড়তে হবে অথবা এ ধরনের অন্য কোনাে পরীক্ষা আগে করা হয়েছে এমন ধরনের গবেষণাপত্র ইন্টারনেট থেকে বা অন্য কোনােভাবে সংগ্রহ করে তা থেকে ফলাফল সম্পর্কে আগেই একটি অনুমান করে নিতে হবে। ধরি আমরা কোনাে বই বা গবেষণাপত্র থেকে জানতে পেলে ক্যালসিয়াম অক্সাইড পানিতে দ্রবীভূত হলে তাপ সৃষ্টি হয়। আমরা এই গবেষণাপত্র থেকে আরাে জানতে পারবো ক্যালসিয়াম অক্সাইড পানিতে দ্রবীভূত করার জন্য কোন কোন যন্ত্রপাতি, কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ এবং কোন প্রণালি ব্যবহার করা হয়েছিল। এ থেকে আমাদের পরীক্ষাটি (অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করা) করার জন্য কী কী পাত্র, যন্ত্রপাতি বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে হবে এবং কোন প্রণালি অনুসরণ করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা পাবো। আমরা হয়তাে মনে করলাম অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভূত করলে তাপ উৎপন্ন হতে পারে। অর্থাৎ আমরা ফলাফল সম্পর্কে অনুমান করতে পারলাম।

প্রয়ােজনীয় বস্তু ও পরীক্ষা প্রণালি নির্ধারণ :
আবার, প্রয়ােজনীয় দ্রব্য এবং কোন প্রণালিতে আমরা  পরীক্ষাটি করবো সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। আমরা ধারণা পেয়েছি যে এ পরীক্ষাটি করতে বিকার, পানি, অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড, থার্মোমিটার, কাচের তৈরি রড, ব্যালেন্স (নিক্তি) ইত্যাদি জিনিস লাগবে। প্রথমে বিকারে পানি নিতে হবে। তারপর থার্মোমিটার দিয়ে পানির তাপমাত্রা নিতে হবে। তারপর কয়েকবার করে ওজন করে অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড বিকারের পানিতে যােগ করতে হবে এবং কাচের রড দিয়ে সেটুকুকে দ্রবীভূত করতে হবে। প্রতিবার থার্মোমিটারের সাহায্যে পানির তাপমাত্রা দেখে নিতে হবে। এটি হলাে প্রণালি যার সাহায্যে আমরা পরীক্ষাটি করবো । এবার শুরু হবে আমাদের পরীক্ষণ।

পরীক্ষণ :
আমরা বিকারে 250 মিলি পানি নিয়ে এর তাপমাত্রা থার্মোমিটারে দেখে নিবো । ধরি, এখন তাপমাত্রা 25°C। আমরা এটি খাতায় লিখে রাখবো। এবার ব্যালেন্সের সাহায্যে 5 গ্রাম অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড মেপে নিয়ে বিকারের পানিতে দিবো। কাচদণ্ড দিয়ে নেড়ে নেড়ে অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইডটুকু দ্রবীভূত করবো। দ্রবীভূত হবার সঙ্গে সঙ্গে থার্মোমিটার দিয়ে আবার তাপমাত্রা মাপবো । ধরি, এবার তাপমাত্রা 20°C হলাে। ব্যালেন্সের সাহায্যে আবার 5 গ্রাম অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড বিকারের দ্রবণে একইভাবে দ্রবীভূত করবো । এতে বিকারের দ্রবণে মােট অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড হলাে 10 গ্রাম। এই রকম পরীক্ষা আরও একবার করবো।তৃতীয়বারে বিকারে অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ হলাে 15 গ্রাম এবং ধরি দ্রবণের তাপমাত্রা হলাে 10°C।

তথ্য সংগ্রহ ও তথ্যের বিশ্লেষণ :

প্রতিটি ধাপে প্রাপ্ত তথ্য (Data) খাতায় লিখে রাখবো। এবার আমরা প্রাপ্ত তথ্যগুলাে সাজাবো এবং সেই তথ্য বিশ্লেষণ করবো। তথ্যগুলাে নিম্নরূপ :

তথ্যগুলাে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে দ্রবণে অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড যত বেশি পরিমাণে দ্রবীভূত হচ্ছে দ্রবণের তাপমাত্রা তত কমে যাচ্ছে।

ফলাফল ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা :
উপরের তথ্যগুলাে বিশ্লেষণ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি, যেহেতু পানিতে অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড দ্রবীভূত করলে দ্রবণের তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে, তাই অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড পানি থেকে তাপ শােষণ করে দ্রবীভূত হচ্ছে। অর্থাৎ ফলাফল (Result) এই যে, অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড পানিতে দ্রবীভূত করলে তাপ শােষিত হয়। উপরের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে আমরা  যে সকল ধাপ অনুসরণ করেছি সেগুলােকে ফ্লো চার্ট (Flow Chart) বা প্রবাহমান তালিকার মাধ্যমে নিম্নরূপে দেখানাে যায়।

রসায়নের যেকোনাে পরীক্ষা বা গবেষণার জন্য সব সময় উপরের ধাপগুলাে অনুসরণ করতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *