ঈদুল ফিতর নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা সঠিকভাবে জানতে চাইলে এই পোষ্ট টি আপনার জন্য। কিভাবে ঈদুল ফিতর নামাজ পড়তে হয় তা নিচে গুছিয়ে প্যারা করে দেওয়া আছে। প্রথম রাকাতে কি করবেন দ্বিতীয় রাকাতে কি করবেন সব কিছু। সাথে কিভাবে নামাজের নিয়ত করবেন সেগুলো গুছিয়ে পেরা আকারে দেওয়া আছে।
ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়তঃ
ঈদুল ফিতর (রোজার ঈদ):
ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ত আরবিতেঃ-
বাংলা উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহে তায়ালা রাকায়াতাই সালাতে ঈদিল ফিতর মাআ সিত্তাতে তাকবীরাতি অয়াজিবুল্লাহে তায়ালা ইক্তাদাইতু বি-হাযাল্ ইমামে মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শরিফাতে আল্লাহু আকবর।
ঈদুল ফিতর নামাযের নিয়তের বাংলা অনুবাদঃ‘আমি অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি।’
বিঃদ্রঃ ঈদের নামাজের নিয়ত আরবি বা বাংলা দুই ভাবেই করা যায়। যারা আরবি পারবেন না তারা বাংলায় করলেও নিয়ত হয়ে যাবে।
ঈদুল ফিতর নামাজ পড়ার নিয়মঃ
ঈদুল ফিতর নামাজ বছরে পড়তে হয় বৎসরে মাত্র একবার, ফলে অনেকেই এর নিয়মকানুন একটু গুলিয়ে ফেলেন। ফলে নামাযের মধ্যেই এদিক সেদিক তাকা তাকি করেন অনেকেই। যার ফলে নামায ভেঙ্গে যাবে। অনেকেই কখন হাত বাঁধবেন, কখন হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবেন এটা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন, এমনকি অনেকে একবার ডানপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন আরেকবার বামপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন। অথচ বিষয়টা খুবই সহজ।
নামাযের শুরুতে আমরা যে তাকবির দেই (আল্লাহু আকবার বলি) তাকে তাকবিরে তাহরিমা বা প্রথম তাকবির বলা হয়। যে কোন নামাযে এই তাকবির দেওয়া ফরয। ঈদের নামযে এই তাকবির এবং অন্যান্য সাধারণ তাকবিরের সাথে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির দিতে হয়।
সহজ ভাবে বলি – প্রথমে ঈদের নামাজের নিয়ত করে তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলে তাহরিমা বাঁধতে (বুকের নীচে) হবে ইমামের সাথে সাথে। এরপর নীরবে সুবহানাকা ও তাসমিয়া পাঠ করতে হবে।
এরপর ইমাম তিনবার উচ্চঃস্বরে তাকবীর বলবে। প্রত্যেকবার তাকবীর বলবার সাথে সাথে কানের লতি পর্যন্ত হাত তুলতে হবে। প্রথম দুইবার হাত নীচে ছেড়ে দিতে হবে আর তৃতীয়বার হাত বুকের নীচে বাঁধতে হবে। অতঃপর ইমাম উচ্চঃস্বরে সুরা ফাতিহা ও অন্য কোন সুরা বা আয়াত পাঠ করবেন। মুক্তাদিগন উহা শ্রবন করিবে। ইমামের পিছনে রুকু সেজদা করে দ্বিতীয় রাকাতে একই ভাবে সুরা ফাতিহা ও অন্য কোন সুরা বা আয়াত পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতের শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে ইমাম তিনবার তাকবীর পাঠ করবেন। তিনবারই হাত ছাড়িয়া দিতে হইবে, বুকে বাঁধা যাবে না। এই তিন তাকবীর বলার সময় প্রত্যেক বার কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠাইয়া তাকবীর বলার পর দুই হাত দুই পাশে ঝুলাইয়া রাখিবে এবং হাত ঝুলন্ত থাকা অবস্থায়ই তাকবীর বলে রুকুতে যেতে হবে। এর পার সাধারন নামাজের মতোই ইমাম নামাজ শেষ করবেন।
আসুন একটু বিস্তারিতভাবে ঈদের নামাজের নিয়ম দেখি:
ঈদের নামাজের ১ম রাকাতঃ
- তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির)।
- হাত বাঁধা (কারণ এর পর ছানা পড়তে হবে)।
- ছানা পড়া।
- ১ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
- হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
- ২য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
- হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
- ৩য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
- হাত বেঁধে ফেলা (কারণ এর পর সূরা পড়া হবে)।
- সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
- তাকবির দেওয়া।
- রুকু করা।
- রুকু থেকে দাঁড়ানো।
- সিজদায় যাওয়া।
- ২টি সিজদা করা।
- তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য)।
ঈদের নামাজের ২য় রাকাতঃ
- হাত বেঁধে দাঁড়ানো।
- সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
- ৪র্থ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
- হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
- ৫ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
- হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
- ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
- হাত না বাঁধা (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না, রুকুতে যেতে হচ্ছে)।
- রুকু করা।
- রুকু থেকে দাঁড়ানো।
- সিজদায় যাওয়া।
- ২টি সিজদা করা।
- শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো।
নামাজ শেষে ইমাম খুতবা পাঠ করবেন ও সবশেষে মুনাজাত করবেন। জুম্মার নামাজের আগে খুতবা পাঠ করা হয়। কিন্তু ঈদের নামাজের শেষে খুতবা পাঠ করা হয়।
খুতবাঃ খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, চলাফেলা করা, নামাজ পড়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে কিংবা যে কোনো কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় একাকী তা আদায় বা কাজা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে চার বা তার অধিক লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তাদের জন্য ঈদের নামাজ পড়ে নেয়া ওয়াজিব।। নামাজ এর পর অবশ্যই খুতবা শুনবেন, খুতবা শোনা ওয়াজিব । আল্লাহ পাক আমাদের কে সঠিক নিয়মে নামায পড়ার তাওফিক দিন।-আমীন
ঈদুল ফিতর ঈদের পরিচিতিঃ সর্বাধিক মহিমান্বিত ও সাওয়াবে ভর্তি মাস পবিত্র রামাদ্বানের পরেই চন্দ্র বর্ষের দশম মাসের সূচনা দিনের মধ্য দিয়েই মাহে সাওয়ালের আগমন। সাওয়ালের বাঁকা চাঁদ বয়ে আনে মুমিন মুসলমানের আনন্দ উৎসবের এক গুচ্ছ স্লোগান
ঈদ ঈদ ঈদ!
হে! মোবারক ঈদ!
তুমি আসবে বলে
চোখে নেই নিদ।
অর্থাৎ দীর্ঘ একমাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পর সাওয়ালের প্রথম দিনে ইসলামী শরীয়তের প্রণেতা মুসলমানদের জন্য যে উৎসব নির্ধারণ করেছেন তা-ই হচ্ছে ‘ঈদুল ফিতর’। আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় বলা যায়- ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।’’ অপরদিকে চন্দ্র বছরের প্রান্তিক মাস হল জিলহজ্জ। এ মাসের দশম তারিখে পশু জবেহ্ করার মাধ্যমে যে উৎসব পালন করা হয় তা হচ্ছে ঈদুল আদ্বহা বা কুরবানীর ঈদ। উভয় ঈদের ঘোষণা আল্লাহর হাবীব রহমতে আলম (সাঃ) দ্বিতীয় হিজরী সনে জারী করেন।
ঈদুল ফিতরের তাৎপর্যঃ নানা দিক দিয়ে ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য অপরিসীম। এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র বাণী-প্রণিধানযোগ্য। তিনি এরশাদ করেন, ‘‘যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যারা রোজা পালন করেছে; তাদের সম্পর্কে ফিরিশতাদের নিকট গৌরব করে বলেন- ‘‘ হে আমার ফিরিশতাগণ, তোমরা বলতো! যে শ্রমিক তার কাজ পুরোপুরি সম্পাদন করে তার প্রাপ্য কি হওয়া উচিত? উত্তরে ফিরিশতাগণ বললেন, হে মাবুদ! পুরোপুরি পারিশ্রমিকই তার প্রাপ্য। ফিরিশতাগণ, আমার বান্দা-বান্দীগণ তাদের প্রতি নির্দেশিত ফরজ আদায় করেছে, এমনকি দোয়া করতে করতে ঈদের (ওয়াজিব) নামাজের জন্য বের হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আমার মহিমা, গরিমা, উচ্চ মর্যাদা ও উচ্চাসনের শপথ, আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেব। এরপর নিজ বান্দাগণকে লক্ষ্য করে আল্লাহ পাক ঘোষণা দেন; তোমরা ফিরে যাও, ‘‘আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের সাধারণ পাপরাশিকে পুণ্যে পরিণত করে দিলাম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন তারা ক্ষমা প্রাপ্ত অবস্থায় (বাড়িতে) প্রত্যাবর্তন করে।’’ (আততারগীব ওয়াত তারহীব) ঈদুল ফিতর-এর ফযীলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে হযরত সাঈদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের দিনে আল্লাহর ফিরিশতাগণ রাস্তায় নেমে আসেন এবং গলিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন- মুসলমানগণ! তোমরা আল্লাহর দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তিনি তোমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইবাদত কবুল করে অসংখ্য পুণ্য দান করে থাকেন। রোজা রাখার আদেশ করা হয়েছিল তোমাদেরকে, তা তোমরা পালন করেছো যথাযথভাবে। রাতেও জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেছো। অতএব যাও, তাঁর নিকট থেকে গ্রহণ কর তোমাদের ইবাদতের প্রতিদান। (তাবারানী) হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাকের বাণী- ‘‘ রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’’ ঈদের দিনে আল্লাহ তায়ালার এ ঘোষণা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ঈদ শুধু আনন্দই নয়, ইবাদতও বটে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘‘ যে ব্যক্তি ঈদের রাতে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের নিয়তে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে, তার অন্তর কিয়ামতের বিভীষিকা হতে মুক্ত থাকবে।’’ মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত আছে, ‘‘ যে ব্যক্তি পাঁচটি রজনী জাগ্রত থেকে ইবাদত করে তার জন্য বেহেশত্ ওয়াজিব হয়ে যায়। রজনীগুলো এই- জিলহজ্ব মাসের অষ্টম, নবম ও দশম তারিখের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত এবং শাবান মাসের পনের তারিখের রাত অর্থাৎ শবে বারাআত।’’ এতেই অনুধাবন করা যায় ঈদুল ফিতরের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
ঈদুল ফিতরের শিক্ষাঃ ইসলামে কোন অনুষ্ঠানই অযথা বা অনর্থক পালনীয় নয়। এর মধ্যে নিহিত আছে সুদূরপ্রসারী শিক্ষা। এ হিসেবে ঈদুল ফিতরে যেমন আছে আনন্দ ও ইবাদত, তেমনি আছে সুসংঘবদ্ধতার মহান শিক্ষা। বিশিষ্ট লেখক মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান’র ভাষ্য এখানে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘‘ঈদ রুচিশীল ও মননশীল সংস্কৃতির শিক্ষা দেয়। ঈদ উৎসব সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখায়। চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা ও শেষ করার মধ্য দিয়ে যেমন সময়ানুবির্ততা শেখায় তেমনি ইফতার, সেহরি ঈদগাহের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়েও সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা পাওয়া যায়। এভাবে মুসলমানদের জীবনে ঈদুল ফিতর এক উজ্জ্বল ও সুন্দর শৃঙ্খলাবোধের সম্মিলন ঘটায়। মূলত রামাদ্বান এক মাসের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। এ কোর্সের প্রশিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ এবং শিক্ষার্থী হল মুসলিম উম্মাহ। এর সিলেবাস রামাদ্বানের নিয়ম-কানুন এবং নম্বরপত্র হচ্ছে তাকওয়া অর্জন, আর এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল হচ্ছে বাস্তব জীবনের প্রত্যেক ধাপে ধাপে প্রতিটি পদে পদে তাকওয়ার সুচিন্তিত শিক্ষা।” এছাড়া মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য, শক্তি, শান্তি ও প্রগতি তথা ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়ার বৈষয়িকতা ও আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা পাওয়া যায় ঈদুল ফিতর থেকে। ধনীর পক্ষ থেকে গরিবের প্রতি ঈদগায় যাওয়ার পূর্বেই যাকাত প্রদান করে দয়া ও সহানুভূতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মিলে ঈদুল ফিতরে।’ সকল মানুষের সমান অধিকার এ স্লোগানের উপাদান ঈদুল ফিতরে বিদ্যমান। জাতীয় কবির কণ্ঠে তা বিবৃত হয়েছে এভাবে- ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই, / সুখ-দুখ সমভাগ করে নেব সকলে ভাই,/ নাই অধিকার সঞ্চয়ের।/ ঈদ্-অল্-ফিতর আনিয়াছে তাই নববিধান,/ ওগো সঞ্চয়ী উদ্বৃত্ত যা করিবে দান, / ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার। ঈদের দিনে গোসল, নতুন পোশাক পরিধান, সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও উন্নত মন-মানসিকতার শিক্ষা অর্জিত হয়। আসলে ঈদুল ফিতরের আনন্দ কাদের জন্যে। আমরা কি আদৌ ঈদের গুরুত্ব তাৎপর্য ও শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে চাই? মিশকাত শরীফের উর্দু তরজমা ও ব্যাখ্যা সম্বলিত ‘ মোজাহেরে হক’ গ্রন্থ থেকে একটা আরবি কবিতা এখানে প্রযোজ্য।
কবিতাটি এই-
১. লাইছাল্ ঈদু লিমান লাবিছাল্ জাদীদ
ইন্নামাল্ ঈদু লিমান আমিনা মিনাল্ ওয়ীদ।
২. লাইছাল্ ঈদু লিমান তাবাখ্খরা বিল্উদ
ইন্নামাল্ ঈদু লিত্-তায়িবিল্লাজি লাইয়াউদ।
৩. লাইছাল্ ঈদু লিমান তাজাইয়ানা বিজিনাতিদ্ দুন্ইয়া
ইন্নামাল্ ঈদু লিমান তাজাও ওয়াদা বিজাদিত্ তাকওয়া।
৪. লাইছাল্ ঈদু লিমান রাকিবাল মাত্বায়া
ইন্নামাল্ ঈদু লিমান তারাক্াল খাত্বায়া।
৫. লাইছাল্ ঈদু লিমান বাছাতাল্ বিছাত্
ইন্নামাল ঈদু লিমান জাওয়াজাস্ সিরাত।
অর্থাৎ ১. ‘‘ যে ব্যক্তি নতুন পোশাক পরিধান করেছে তার জন্য ঈদ নয়, ঈদ সে ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহর শাস্তি হতে নিরাপদ থাকে।
২. যে ব্যক্তি ঈদের সাথে সুগন্ধি ব্যবহার করে তার জন্য ঈদ নয়, ঈদ সেই তাওবাকারী ব্যক্তির জন্য, যে পুনরায় পাপাচারে লিপ্ত না হয়।
৩. দুনিয়ার সাজ সজ্জায় যে ব্যক্তি সজ্জিত হয় ঈদ সেই ব্যক্তির জন্য নয়, ঈদ সেই ব্যক্তির জন্য যে, আখিরাতের সম্বল তাকওয়া সঞ্চয় করেছে।
৪. সোয়ারীদের উপর আরোহনকারীর জন্য ঈদ নয়, ঈদ সেই ব্যক্তির জন্য যে পাপাচার ত্যাগ করেছে।
৫. যার জন্য বিছানা পাতানো হয়েছে, তার জন্য ঈদ নয়, ঈদ সেই ব্যক্তির জন্য যে পুলসিরাত অতিক্রম করেছে।
বিশ্বনবী রাহমাতুল্লিল আলামীনের ভাষ্যমতে ঈদুল ফিতরের দিনের নাম হল ইয়াওমুল জায়িজাহ্ বা প্রতিদান দিবস। এ দিনে যেন আমরা ভুলে না যাই ঐক্য, শান্তি, প্রগতি ও তাহযিব-তমদ্দুনকে। এ দিনটি হোক আমাদের জন্য আনন্দের বিশ্বাসের, ভ্রাতৃত্ববোধের। প্রতিটি মুমিনের আত্মা ভরপুর হোক তাকওয়ায়, রাব্বুল ইজ্জতের পাক দরবারে এটাই মোদের কামনা।
ঈদুল ফিতর নামাজের আগে ফিতরা আদায়ঃ
ফিতরা কিঃ
রমজান মাস শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে মাথাপিছু যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্য গরিব-মিসকিনদের সাদকা করা হয়, একে ‘সাদাকাতুল ফিতর’ বলে। রোজা পালনে বা সিয়াম সাধনায় অত্যন্ত সতর্কতা সত্ত্বেও যেসব ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি বা ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়, তার প্রতিকার ও প্রতিবিধান বা ক্ষতিপূরণের জন্য রমজান মাসের শেষে সাদাকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে। ধনীদের পাশাপাশি গরিবেরাও যেন ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে, সে জন্য ইসলামি শরিয়তে ঈদুল ফিতরে ধনীদের ওপর ‘সাদাকাতুল ফিতর’ ওয়াজিব করা হয়েছে।
ফিতরা নির্ধারণের রহস্যঃ
ইসলাম মানবতাবাদী ধর্ম। সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা প্রদান করে। ধনী-গরিব সকলে যেন ঈদ উৎসবে সমানভাবে আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেজন্য এই সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিতরা মূলত রোজার জাকাত। জাকাত যেমন মালকে পবিত্র করে, ঠিক তেমনি ফিতরাও রোজাকে পবিত্র করে।
এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক কথা ও অশ্লীল ব্যবহার হতে পবিত্র করার এবং গরিবের মুখে অন্ন দেওয়ার জন্য। (সূত্র : মেশকাত: আবু দাউদ)
ওয়াকি ইবনুল জাররাহরা বলেন, সিজদায়ে সাহু যেমন নামাজের ক্ষতিপূরণ, তেমনি সাদাকাতুল ফিতর রোজার ক্ষতিপূরণ।
ফিতরা কার উপর ওয়াজিবঃ
নিসাব পরিমাণ তথা সম্পদশালী ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে, নাবালক সন্তানদের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। পরিবারস্থ স্ত্রী, কন্যা ও রোজগার বিহীন সাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করা উত্তম। তবে ওয়াজিব নয়। (সূত্র: হিদায়া, আলমগীরী-১)
ফিতরার পরিমাণঃ
এর পরিমাণ ছোট-বড়, নারী-পুরুষ প্রত্যেকের পক্ষ থেকে আধা সা’ গম-আটা বা এক সা’ যব, কিশমিশ, খেজুর, চাল, বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি বা তার মূল্য। (সূত্র: শামি-২)
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলতে জীবিকা নির্বাহের আবশ্যকীয় উপকরণ যথা আবাস গৃহ, পরিধেয় বস্ত্র, খাদ্য দ্রব্য, ঘরের ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৮ গ্রাম সোনা) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (৬১৩ গ্রাম) অথবা সম পরিমাণ নগদ অর্থ বা সম্পদ থাকাকে বোঝায়। ( সূত্র: আলমগীরী-১, শামি-২)
বর্তমান হিসাব মতে, এক সা মানে (৩.৩০০ কেজি) তিন কেজি ৩০০ গ্রাম এবং আধা সা মানে (১.৬৫০ গ্রাম) এক কেজি ৬৫০ গ্রাম। জাকাতের অনুরূপ সাদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে পুরো বছর নিসাবের মালিক থাকা আবশ্যক নয়। কেবল ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের পূর্বে মুহূর্তে নিসাব পরিমাণ মাল থাকা বিবেচ্য।
সাদাকাতুল ফিতরের মাসায়েলঃ
পবিত্র মাহে রমজানে সাদাকায়ে ফিতর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বা আমল। নিম্নে এর কিছু বিধি-বিধান উল্লেখ করা হলো-
- (১) যদি কেহ ঈদের আগেই ফিতরা প্রদান করে, তা জায়েজ, এমনকি উত্তম ও বটে।
- (২) একজনের ফিতরা একজনকে বা কয়েক জনকে এবং কয়েক জনের ফিতরা একজনকেও দেওয়া জায়েজ। (ইমদাদুল-২-মাহামুদিয়া-৩)
- (৩) রোজা ও ফিতরা দুটি পৃথক ইবাদত, তাই যদি কোনো কারণে রোজা না রাখলেও ফিতরা দিতে হয়। (আলমগীরী-১)
- (৪) ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে না পারলে ফিতরা মাফ হবে না। পরে তা আদায় করা ওয়াজিব তবে ঈদের ২-৩ দিন পূর্বে আদায় করা উত্তম, যাতে গরিব ফিতরার টাকা দিয়ে কেনাকাটা করে ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে।
- (৫) যব, গম, আটা, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদির বাজার মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ যা বর্তমান বাজারে সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ফিতরা হিসেবে আদায় করা যায়।
- (৬) সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময় হল ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিক হওয়ার পর। সুবহে সাদিকের পূর্বে কেউ মারা গেলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে না। সুবহে সাদিকের পর কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে কিংবা কেউ মুসলমান হলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব।
- (৭) মালদার ব্যক্তি নিজে এবং নিজের নাবালিগ সন্তানের পক্ষ থেকে সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
- (৮) নিজ পরিবারভুক্ত নয় এমন লোকের পক্ষ থেকে তার অনুমতি ছাড়া ফিতরা দিলে আদায় হবে না।
- (৯) যারা তাদের খাদেম বা চাকর বাকরের পৃষ্ঠ-পোষকতা ও ভরণ-পোষণ করে তারা তাদের পক্ষ থেকে সাদকা দিয়ে দিবে।
- (১০) স্ত্রী লোক যদি সচ্ছল হয় তাহলে শুধু সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। তার নিজের ব্যতীত স্বামী, সন্তান বা মা-বাবার পক্ষ থেকে দেওয়া তার ওয়াজিব নয়।
- (১১) গরিব-মিসকিন এক কথায় যার নিকট নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই এমন ব্যক্তিকে সদকায়ে ফিতর দেওয়া জায়েজ আছে।
পরিশেষে, মহান আল্লাহর তায়ালার কাছে এই কামনা করি, পবিত্র মাহে রমজানে নেক আমল হিসেবে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
ঈদের মাসআলা-মাসাইলঃ
- ১. মসজিদের বিছানা, চাটাই, শামিয়ানা ইত্যাদি ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া দুরুস্ত। (ফাতাওয়ায়ে শামী-৩/৩৫৯)
- ২. যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় অথবা একমুষ্ঠির কম রেখে কর্তন করে তাকে ইমাম বানানো জায়েয নেই। ঈদ এবং অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রে একই হুকুম। ইমামতের বেলায় উত্তরাধিকারীর দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। বরং শরী‘আতের দৃষ্টিতে ইমামতীর যোগ্য হওয়া জরুরী। (আদ্দুররুল মুখতার-২/৫৫৯)
- ৩. ঈদের নামাযের পূর্বে নিজ ঘরে বা ঈদগাহে ইশরাক ইত্যাদি নফল পড়া নিষিদ্ধ। ঈদের জামা‘আতের পরেও ঈদগাহে নফল নামায পড়া মাকরূহ। হ্যাঁ, ঘরে ফিরে ইশরাক, চাশত নফল পড়তে কোন অসুবিধা নেই। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৯)
- ৪. ঈদের নামাযের সালাম ফিরানোর পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব। ঈদের খুতবার পরে মুনাজাত করা মুস্তাহাব নয়। (মুসনাদে আহমদ হাদীস-২২১৮)
- ৫. শর‘ঈ ওযর ব্যতীত ঈদের নামায মসজিদে আদায় করা সুন্নাতের খেলাফ। (আদ্দুররুল মুখতার)২/১৬৯)
- ৬. যদি ইমাম অতিরিক্ত তাকবীরসমূহ ভুল বশতঃ না বলে, আর ঈদের জামা‘আত অনেক বড় হয়, তাহলে ফেতনা ফাসাদের আশংকায় সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। সুতরাং সিজদায়ে সাহু করবে না। আর যদি এমন হয় যে উপস্থিত সকলেই সিজদায়ে সাহু সম্পর্কে অবগত হতে পারে তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। (আদ্দুররুল মুখতার-২/৯২)
- ৭. ঈদের দ্বিতীয় রাকা‘আতের রুকুর তাকবীর ওয়াজিব। যদি কোন ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকা‘আতের রুকুতে শরীক হয় তাহলে সে প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলবে। অতঃপর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। এরপর রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে শামিল হবে। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৭৪)
- ৮. যদি কেউ প্রথম রাকা‘আতে রুকুর পূর্বে জামা‘আতে শরীক হয় এবং তাকবীরে তাহরীমার পর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলার সুযোগ না পায় তাহলে রুকুতে গিয় অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। তবে সে ক্ষেত্রে কান পর্যন্ত হাত উঠাবে না। (আদ্দররুল মুখতার-১/২৭৪)
- ৯. যদি প্রথম রাকা‘আত ছুটে যায় তাহলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে প্রথমে, সূরা, কিরাআত পড়বে। অতঃপর রুকুর পূর্বে তিন বার হাত তুলে তিন তাকবীর দিবে। তারপর রুকুর তাকবীর বলে রুকু সিজদা করে যথা নিয়মে নামায সম্পন্ন করবে। (রুদ্দুল মুহতার-২/১৭৪)
- ১০. ঈদের ময়দানে জানাযার নামায পড়া জায়েয। প্রথম ঈদের নামায অতঃপর জানাযার নামায এরপর খুতবা হবে। (রদ্দুল মুহতার-৪/৩৫৬)
- ১১. বর্তমানে খতীব সাহেবগণ ঈদের খুতবার শুরুতে ও মাঝে মাঝে যে তাকবীরে তাশরীফ বলে থাকেন নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা হলো, প্রথম খুতবার শুরুতে নয় বার, দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে সাত বার এবং দ্বিতীয় খুতবার শেষে মিম্বার থেকে নামার পূর্বে চৌদ্দ বার শুধু “আল্লাহু আকবার” বলবে। এটাই মুস্তাহাব। খুতবার সময় বা খুতবার মাঝে তাকবীরে তাশরীক বলবে না। হ্যাঁ, ঈদের নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে তাকবীরে তাশরীক একবার বলবে। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৭৫)
- ১২. নামাযের পর ঈদের দুই খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। যদি খুতবা শোনা না যায়, তাহলে চুপচাপ বসে থাকবে। অনেক লোক সালামের পর খুতবা না শুনেই চলে যায়। যা সুন্নাতের খেলাফ। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৫৯)
- ১৩. খুতবার মধ্যে মুসল্লীদের কথা বার্তা বলা নিষেধ। এমন কি নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম উচ্চারিত হলে মুখে দরূদ পড়া নিষেধ। তবে অন্তরে পড়তে পারবে। তেমনিভাবে খুতবার মধ্যে দান বাক্স বা রুমাল চালানোও নিষেধ এবং গুনাহের কাজ। (মুসনাদে আহমদ হাদীস নং-১০১৪০, আদ্দররুল মুখতার-২/১৫৯)
- ১৪. উভয় খুতবা শেষ হলে ঈদের নামাযের সকল কাজ শেষ হল, এরপর ঈদের আর কোন কাজ বাকী নাই। সুতরাং খুতবা শেষ হলে সকলেই নিজের বাড়িতে ফিরে আসবে। বর্তমানে দেখা যায় যে ঈদের খুতবার পরে লম্বা মুনাজাত হয়। এটা মুস্তাহাব নয়। তারপর লোকদের মধ্যে মু‘আনাকা বা কোলাকুলীর ভীড় লেগে যায় অথচ ঈদের সুন্নাতের মধ্যে কোলাকুলী করার কথা নাই। সুতরাং এটা ঈদের সুন্নাত মনে করা ভুল। বরং এটা দেখা-সাক্ষাতের সুন্নাত। কোন ভাইয়ের সাথে অনেক দিন পরে সাক্ষাত হলে প্রথমে সালাম বিনিময় করবে। তারপর মুসাফাহা করবে। তারপর কোলাকুলী করবে। সুতরাং ঈদের নামাযের পূর্বে সাক্ষাত হলে তখনই এটা সেরে ফেলবে। আর যদি ঈদের খুতবার পর এরূপ কারোর সাথে সাক্ষাত হয় তাহলে কোলাকুলী করবে। এরূপ করবে না যে, সাক্ষাত হলো নামাযের পূর্বে কিন্তু কোলাকুলী করা হলো খুতবার পরে।(ফাতাওয়ায়ে শামী-৬/৩৮১, আহসানুল ফাতাওয়া-১/৩৫৪, সিলসিলাতুল আদাবিল ইসলামিয়াহ (মাকতাবায়ে শামেলা থেকে)
ঈদের সুন্নতসমূহ:
- ১. অন্য দিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে উঠা। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৫৯, বাইহাকী হাদীস নং-৬১২৬)
- ২. মিসওয়াক করা। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৯)
- ৩. গোসল করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নাম্বার-১৩১৫)
- ৪. শরী‘আত সম্মত সাজ-সজ্জা করা। (সহীহ বুখারী শরীফ হাদীস নাম্বার-৯৪৮)
- ৫. সামর্থ অনুযায়ী উত্তম পোষাক পরিধান করা। উল্লেখ্য, সুন্নাত আদায়ের জন্য নতুন পোষাক জরুরী নয়। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৯)
- ৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৮)
- ৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় জিনিস, যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত দ্বারা আহার করা উত্তম।(সহীহ বুখারী হাদীস নং-৯৫৩, আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৮)
- ৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নাম্বার-১১৫৭)
- ৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৮)
- ১০. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা সুন্নাত। বিনা উযরে মসজিদে আদায় করা উচিত নয়। (সহীহ বুখারী হাদীস নাম্বার-৯৫৬)
- ১১. যে রাস্তায় ঈদগাহে যাবে সম্ভব হলে ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা। (সহীহ বুখারী হাদীস নাম্বার-৯৮৬)
- ১২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৯০)
- ১৩. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর বলতে থাকা (اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ) (উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) তবে ঈদুল আযহাতে যাওয়ার সময় এই তাকবীর উচ্চস্বরে পড়তে থাকবে। (বাইহাকী হাদীস নং-৬১৩০)
ঈদের মুস্তাহাবসমূহ:
- ১. সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমাণে দান খয়রাত করা। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৯)
- ২. আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদ মনে করে আনন্দ এবং খুশি প্রকাশ করা। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৯)
- ৩. নিজ মহল্লার মসজিদে ফজরের নামায আদায় করা। ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে সর্বদা আদায় করা অত্যন্ত জরুরী এবং ওয়াজিব। তবে দুই ঈদের ফজরের নামায মহল্লার মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করা অতি উত্তম। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৯-২৯০)
শেষ কথাঃ
মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমরা ঈদের নামাজের পাশাপাশি প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো। নিজের ঈমান ঠিক রেখে চলার চেষ্টা করব।