নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন পঞ্চম অধ্যায় : রাসায়নিক বিক্রিয়া।
প্রশ্ন-১. একমুখী বিক্রিয়া কী?
উত্তর : যে বিক্রিয়ায় শুধুমাত্র বিক্রিয়ক পদার্থ বা পদার্থসমূহ উৎপন্ন পদার্থে পরিণত হয় তাকে একমুখী বিক্রিয়া বলে।
প্রশ্ন-২. বিজারক কাকে বলে?
উত্তর : যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাকে বিজারক বলে।
প্রশ্ন-৩. জারক কাকে বলে?
উত্তর : যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে জারক বলে।
প্রশ্ন-৪. উভমুখী বিক্রিয়া কাকে বলে?
উত্তর : যে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে উৎপাদে একই সাথে উৎপন্ন পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে পুনরায় বিক্রিয়কে পরিণত হয় তাকে উভমুখী বিক্রিয়া বলে।
প্রশ্ন-৫. নন-রেডক্স বিক্রিয়া কী?
উত্তর : এক বা একাধিক বিক্রিয়ক থেকে নতুন যৌগ উৎপন্ন হওয়ার সময় বিক্রিয়কে বিদ্যমান মৌলসমূহের মধ্যে ইলেকট্রন আদান প্রদান না হলে বিক্রিয়াকে নন-রেডক্স বিক্রিয়া বলে।
প্রশ্ন-৬. রেডক্স বিক্রিয়া কী?
উত্তর : যে সব বিক্রিয়ায় মৌলসমূহের যোজ্যতার পরিবর্তন ঘটে, অর্থাৎ পরমাণুসমূহের ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে সে সকল বিক্রিয়াকে রেডক্স বিক্রিয়া বলে।
প্রশ্ন-৭. তাপোৎপাদী বিক্রিয়া কী?
উত্তর : বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপশক্তি উৎপন্ন হলে তাকে তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলে।
প্রশ্ন-৮. তাপহারী বিক্রিয়া কী?
উত্তর : বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপশক্তি শোষিত হলে তাকে তাপহারী বিক্রিয়া বলে।
রাসায়নিক সাম্যাবস্থা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : যদি কোন উভমুখী বিক্রিয়ার সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিকের গতিবেগ সমান হয়, তবে বিক্রিয়ার সেই অবস্থাকে রাসায়নিক সাম্যাবস্থা বলা হয়। যেমন– ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে ভাঙ্গলে ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
পলিমারকরণ বিক্রিয়া কাকে বলে? পলিমারকরণ বিক্রিয়ার উদাহরণ।
উত্তর : যে সকল ক্রিয়া বা বিক্রিয়ায় এক বা একাধিক যৌগের দুই বা ততোধিক অণু একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি বড় আকারের অণু সৃষ্টি করে তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলা হয়।
উদাহরণ : উচ্চ তাপ ও চাপের প্রভাবে ভিনাইল ক্লোরাইডের অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃ্হৎ আণবিক ভরবিশিষ্ট নতুন যৌগ পলিভিনাইল ক্লোরাইড (PVC) গঠন করে।
সমানুকরণ বিক্রিয়া কাকে বলে? সমাণুকরণ বিক্রিয়ার অপর নাম কি?
উত্তর : যে বিক্রিয়ায় কোন পদার্থের একটি অণুতে পরমাণুগুলোর অভ্যন্তরীণ গঠন পরিবর্তিত হয়ে নতুন একটি অণুর সৃষ্টি করে অর্থাৎ একটি সমাণু থেকে অপর একটি সমাণু তৈরি হয়, সেই বিক্রিয়াকে সমাণুকরণ বিক্রিয়া বলে। সমাণুকরণ বিক্রিয়ার অপর নাম পুনর্বিন্যাস বিক্রিয়া।
জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর : জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
১. জারণ বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন ত্যাগ ঘটে। কিন্তু, বিজারণ বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন গ্রহণ ঘটে।
২. জারণ বিক্রিয়ায় মৌলের জারণ মান বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, বিজারণ বিক্রিয়ায় মৌলের জারণ মান বিক্রয়ক থেকে উৎপাদে হ্রাস পায়।
৩. জারণ বিক্রিয়ায় বিজারকসমূহ জারিত হয়। কিন্তু, বিজারণ বিক্রিয়ায় জারক বিজারিত হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়া ও নিউক্লিয় বিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণুর বহিঃস্থ অনুমোদিত কক্ষপথের ইলেকট্রনের অংশগ্রহন করে। এই বিক্রিয়ার ফলে নতুন কোনো পরমাণু বা মৌলের সৃষ্টি হয় না বরং নতুন অণু গঠন করে। অপর দিকে নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় কৃত্রিম উপায়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন কোনো মৌল গঠন করে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট শক্তির পরিমাণ অত্যন্ত কম এবং এর মান eV ক্রমের। অপর দিকে নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট শক্তির পরিমান অত্যন্ত বেশী এবং এর মান MeV ক্ৰমের অর্থাৎ 106eV ক্রমের।
তাপমাত্রা বাড়ালে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায় কেন?
উত্তর : তাপ প্রদান কিংবা অপসারণ করলে বিক্রিয়ার গতিবেগও পরিবর্তিত হয়। তাপমাত্রা বাড়ালে বিক্রিয়ার গতিবেগ বাড়ে। কোন বিক্রিয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে বিক্রিয়ক অনুসমূহের পরস্পরের মধ্য সংঘর্ষ হওয়া। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিক্রিয়ক অণুসমূহের গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। ফলে তাদের মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ হয় এবং বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। সাধারণত প্রতি ১০° সে. তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিক্রিয়ার গতি ২ গুণ বৃদ্ধি পায়।
রাসায়নিক সাম্যাবস্থা প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত হয় কী?
উত্তর : একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষাকালীন অবস্থায় প্রভাবকের উপস্থিতিতে কোনো উভমুখী রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হয়, সমপরীক্ষাকালীন অবস্থায় বিক্রিয়াটিকে প্রভাবকের অনুপস্থিতিতে সম্পন্ন করলে সেই একই সাম্যাবস্থা পাওয়া যায়। কাজেই সমপরীক্ষাকালীন অবস্থায় প্রভাবকের উপস্থিতিতে অথবা অনুপস্থিতে উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থায় বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের আপেক্ষিক পরিমাণ অভিন্ন হয়। তবে অনুঘটকের উপস্থিতিতে বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থা দ্রুত অর্জিত হয়।