জীববিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর (পর্ব-৩৩)

প্রশ্ন-১। ফটোট্রপিক চলন বা ফটোট্রপিজম কি?

উত্তরঃ ফটোট্রপিক চলন এক ধরনের বক্রচলন। উদ্ভিদের কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখার সবসময় আলোর দিকে চলন ঘটে এবং মূলের চলন সবসময় আলোর বিপরীত দিকে হয়। কাণ্ডের আলোর দিকে চলনকে পজিটিভ ফটোট্রপিজম এবং মূলের আলোর বিপরীত দিকে চলনকে নেগেটিভ ফটোট্রপিজম বলে।

প্রশ্ন-২। প্রোফেজ এর শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য কি কি?

উত্তরঃ প্রোফেজ এর শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে–

  • ক্রোমোজোমগুলো সরু আঁকাবাঁকা সুতার মতো ও বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত।
  • প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি করে ক্রোমাটিড সহযোগে গঠিত এবং এরা সেন্ট্রোমিয়ার নামক বিন্দুতে যুক্ত।
  • নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেন দেখা যায়।
প্রশ্ন-৩। মধ্যকর্ণ সম্পর্কে লিখ।
উত্তরঃ বহিঃকর্ণ ও অন্তঃকর্ণের মাঝখানে মধ্যকর্ণ অবস্থিত। মধ্যকর্ণ একটি বায়ুথলি যার মধ্যে তিনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাড় বা অস্থি রয়েছে। এই অস্থিসমূহের মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ বা ঢেউ অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়।

প্রশ্ন-৪। ইথিলিন বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ ইথিলিন হলো এক ধরনের ফাইটোহরমোন যা গ্যাসীয় অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। এটি ফল পাকাতে সাহায্য করে। এ হরমোন ফল, ফুল বীজ পাতা এবং মূলেও দেখা যায়। ইথিলিন বীজ ও মুকুলের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে, চারা গাছকে অত্যাধিক লম্বা করে, চারা গাছের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল সৃষ্টির সূচনা করে। ইথিলিন পাতা, ফুল ও ফলের ঝরে পড়া ত্বরান্বিত করে।

প্রশ্ন-৫। অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের কাজ লিখ।

উত্তরঃ দেহের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ; থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ; অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি, ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ; জনন গ্রন্থির বৃদ্ধি, ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ; মাতৃদেহে দগ্ধ ক্ষরণ ও নিয়ন্ত্রণ; এবং যৌনলক্ষণ প্রকাশে সহায়তা করা।

প্রশ্ন-৬। ফ্যাগোসাইট কি?

উত্তরঃ ফ্যাগোসাইট হচ্ছে এমন এক ধরনের কোষ যা দেহের জন্য বহিরাগত বস্তুকণা যেমন ব্যাকটেরিয়া, কার্বন, ধূলিকণা, ইত্যাদিকে ভক্ষণ করে এবং কখনও কখনও হজম করতে পারে। দুটি প্রধান ফ্যাগোসাইটিক কণিকা হচ্ছে নিউট্রোফিল ও ম্যাক্রোফেজ। এগুলো অস্থিমজ্জা থেকে উৎপন্ন হয়।

প্রশ্ন-৭। Ulothrix কি?

উত্তরঃ Ulothrix একটি অশাখ ও ফিলামেন্ট বিশিষ্ট সবুজ শৈবাল।

প্রশ্ন-৯। শ্রেণিবিন্যাসের জনক কাকে বলা হয়, কারণসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ শ্রেণিবিন্যাসের ইতিহাসে অ্যারিস্টটল, জন রে ও ক্যারোলাস লিনিয়াসের অবদান উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সুইডিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস সর্বপ্রথম প্রজাতির বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন এবং দুই অংশ বিশিষ্ট দ্বিপদ নামকরণ প্রথা প্রবর্তন করেন। তাই ক্যারোলাস লিনিয়াসকে শ্রেণিবিন্যাসের জনক বলা হয়।

প্রশ্ন-১০। অর্ধভেদ্য পর্দা কি? অর্ধভেদ্য পর্দার উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে পর্দা দিয়ে কেবল দ্রবণের দ্রাবক অণু চলাচল করতে পারে কিন্তু দ্রব অণু চলাচল করতে পারে না সে পর্দাই হচ্ছে অর্ধভেদ্য পর্দা। কোষপর্দা, ডিমের খোসার ভেতরের পর্দা, মাছের পটকার পর্দা ইত্যাদি অর্ধভেদ্য পর্দার উদাহরণ।

প্রশ্ন-১১। জীব সম্প্রদায় কি?

উত্তরঃ বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন গােত্রের জীব সমষ্টিগতভাবে বসবাস করে। নির্দিষ্ট স্থানে জীবসমূহের সমষ্টিগত সহবস্থানকে জীব সম্প্রদায় বলা হয়। “জীব সম্প্রদায় হলাে একটি নির্দিষ্ট স্থানে এবং পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহের সমাবেশ, যারা প্রত্যেকে একে অন্যের প্রতি সহনশীল, নির্ভরশীল ও পরস্পর ক্রিয়াশীল”।

প্রশ্ন-১৩। মধ্যচ্ছদা বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বর পৃথককারী পেশীবহুল পর্দাই হলো মধ্যচ্ছদা। মধ্যচ্ছদা প্রশ্বাস গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি দেখতে অনেকটা প্রসারিত ছাতার মতো। মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হলে নিচের দিকে নামে তখন বক্ষগহ্বরের আয়তন বৃদ্ধি পায়। এটি প্রসারিত হলে উপরের দিকে উঠে ও বক্ষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

প্রশ্ন-১৪। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন বলতে দেহের আকার-আকৃতি, উচ্চতা, ওজন বৃদ্ধি এবং যৌন পরিবর্তনকে বোঝায়। সাধারণত ১০-১১ থেকে ১৪-১৫ বছর সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল হিসেবে ধরা হয়। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তন দ্রুত হয়। এ সময় শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তন হয়।

প্রশ্ন-১৫। বায়ুপরাগী ও পতঙ্গপরাগী ফুলের পার্থক্য কি?

উত্তরঃ বায়ুপরাগী ও পতঙ্গপরাগী ফুলের পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃ

বায়ুপরাগী ফুল
১. এ ধরনের ফুল আকারে ছোট হয়।
২. এসব ফুল হালকা ও মধুগ্রন্থিহীন।
৩. এসব ফুল সুগন্ধহীন।
৪. উদাহরণ- ধান।

পতঙ্গপরাগী ফুল
১. এ ধরনের ফুল আকারে বড় হয়।
২. এসব ফুল রঙ্গিন মধুগ্রন্থি যুক্ত।
৩. এসব ফুল সুগন্ধিযুক্ত।
৪. উদাহরণ- জবা ও কুমড়া।

প্রশ্ন-১৬। ফাইটোহরমোন কাকে বলে?

উত্তরঃ উদ্ভিদদেহে উৎপাদিত বিশেষ যে জৈব রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ, বিভিন্ন অঙ্গ সৃষ্টি ইত্যাদি হয়ে থাকে তাকে ফাইটোহরমোন বলে। কেউ কেউ ফাইটোহরমোনকে উদ্ভিদ বৃদ্ধিকারক বস্তু হিসাবে আখ্যায়িত করতে চান। উদ্ভিদে যেসব ফাইটোহরমোন পাওয়া যায় সেগুলো হলো– অক্সিন, জিবেরেলিন, সাইটোকাইনিন এবং অ্যাবসিসিক এসিড।

প্রশ্ন-১৭। পরাগনালী কি?

উত্তরঃ পরাগনালী পুংজনন কোষকে ফুলের গর্ভাশয়ে বহন করে। পরাগরেণুর কেন্দ্রিকাটি মাইটোটিক পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়ে একটি বড়কোষ ও একটি ক্ষুদ্রকোষ সৃষ্টি করে। বড় কোষটিকে নালিকোষ এবং ক্ষুদ্র কোষটিকে জেনারেটিভ কোষ বলে যা দুটি পুংজনন কোষ উৎপন্ন করে। অন্যদিকে নালিকোষটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পরাগনালি গঠন করে।

প্রশ্ন-১৮। এসিডিটি হলে এন্টাসিড খেতে বলা হয় কেন?

উত্তরঃ আমাদের পাকস্থলি যখন খাদ্য হজমের প্রয়োজনীয় এসিডের অতিরিক্ত এসিড তৈরি করে তখন তাকে এসিডিটি বলে। এসিডিটি হলে বেশির ভাগ সময় ডাক্তার এন্টাসিডের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এন্টাসিডে সাধারণত ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড থাকে যা ক্ষারধর্মী। এই ক্ষারধর্মী এন্টাসিড, পাকস্থলির এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে এসিডকে প্রশমিত করে।

প্রশ্ন-১৯। Drug Resistance বা ঔষধ প্রতিরোধী ক্ষমতা কি?

উত্তরঃ Drug Resistance হলো জীবদেহের বিভিন্ন ওষুধের প্রয়োজন ব্যতিরেকে ব্যবহারের ফলে তৈরি ক্ষতিকর প্রভাবকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। এ ধরনের প্রতিরোধ এক বা একাধিক রাসায়নিক পদার্থের প্রতি হতে পারে।
Drug Resistance-এর নানাবিধ কারণ রয়েছে-
১. ওষুধের বিপাকের হার বেড়ে যাওয়া।
২. বিকল্প বিপাকক্রিয়ার পথ সৃষ্টি হওয়া।
৩. কোষের ভেতরে R-factor নামক রেজিস্ট্যান্ট জিন তৈরি হওয়া।

প্রশ্ন-২০। কক্লিয়া ও ভেস্টিব্যুলার অ্যাপারেটাস এর পার্থক্য কি?

উত্তরঃ কক্লিয়া ও ভেস্টিব্যুলার অ্যাপারেটাস এর পার্থক্য নিম্নরূপঃ

কক্লিয়া

  • শ্রবণের সাথে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ।
  • শামুকের খোলকের মতো প্যাঁচানো। দুটি পর্দা দিয়ে তিনটি অনুদৈর্ঘ্য নালিতে বিভক্ত।
  • কক্লিয়ার নালির অভ্যন্তরে সংবেদী রোমকোষ সমন্বয়ে গঠিত কর্টির অঙ্গ থাকে।
  • কক্লিয়া শ্রবণ উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্ককে প্রেরণ করে।

ভেস্টিব্যুলার অ্যাপারেটাস

  • দেহের ভারসাম্যের অঙ্গ।
  • থলে-সদৃশ ইউট্রিকুলাস, স্যাকুলাস এবং তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালি মিলে গঠিত।
  • ইউট্রিকুলাস, স্যাকুলাস গহ্বরে সংবেদী রোমকোষ সম্বলিত ম্যাকুলা থাকে। অর্ধবৃত্তাকার নালির অ্যাম্পুলায় কিউপুলা এবং সংবেদী কোষ থাকে।
  • দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *